আমাদের ইতিহাস
১ ) ভাষা আন্দোলন
ক) উপরের ছবিগুলো পর্যবেক্ষণ করি ও নিচের ছকে লিখি-
১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। পাকিস্তান দুটি অংশে বিভক্ত ছিল। একটি পূর্ব পাকিস্তান এবং অপরটি পশ্চিম পাকিস্তান। পাকিস্তানের জনসংখ্যার বেশিরভাগ লোকই বাঙালি। বাঙালিদের মাতৃভাষা বাংলা। বাঙালিরা পূর্ব পাকিস্তানে বাস করত। কিন্তু পাকিস্তানের শাসকেরা পশ্চিম পাকিস্তানের উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি করে। এ সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অনেকেই গ্রেফতার হন। তার কিছুদিন পরেই পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকায় আসেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে এক সভায় উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দেন। ছাত্রসমাজ সরাসরি তার প্রতিবাদ করে। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকার রাজপথে মিছিল বের করা হয়। দাবি একটাই-রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই। পুলিশ মিছিলে গুলি চালায়। শহিদ হন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ আরও অনেকে। ভাষার দাবিতে শহিদ হন বলে আমরা তাঁদেরকে ভাষাশহিদ বলি। শহিদদের স্মৃতির উদ্দেশে তাঁদের রক্তভেজা স্থানে শহিদ মিনার নির্মাণ করা হয়। পরে পাকিস্তানি পুলিশ ও সেনাবাহিনী সেটি ভেঙে ফেলে। ১৯৫৬ সালে বাংলা ও উর্দু উভয় ভাষাই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯৬৩ সালে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার নির্মিত হয়।
খ) বিষয়বস্তু পড়ি ও কখন কী ঘটেছিল তা ধারাবাহিকভাবে সাজাই-
ভাষাশহিদ আবদুস সালাম ১৯২৫ সালের ২৭শে নভেম্বর ফেনী জেলার লক্ষ্মণপুর গ্রামে (বর্তমানে সালাম নগর) জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা মুনশি আবদুল ফাজেল ও মা দৌলতের নেছা। ভাষাশহিদ আবুল বরকত ১৯২৭ সালের ১৩ই জুন ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার বাবলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম সামসুজ্জোহা এবং মা হাসিনা বিবি। ভাষাশহিদ রফিক উদ্দিন আহমদ ১৯২৬ সালের ৩০শে অক্টোবর মানিকগঞ্জ জেলার পারিল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম আবদুল লতিফ ও মা রাফিজা খাতুন। ভাষাশহিদ আবদুল জব্বার ১৯১৯ সালের ১০ই অক্টোবর ময়মনসিংহ জেলার পাঁচুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম হাছেন আলী এবং মা সাফাতুন নেছা।
গ) ভাষাশহিদদের সম্পর্কে তথ্য খুঁজে বের করি ও নিচের চিত্রে লিখি-
ঘ) উর্দু পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হলে আমাদের যা যা অসুবিধা হতো তা নিচে লিখি-
২) শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
ছবি-১ প্রভাতফেরি ও পুষ্পস্তবক অর্পণ ছবি- ২ শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন
ক) উপরের ছবিগুলো পর্যবেক্ষণ করি ও নিচের ছকে বর্ণনা করি-
ছবিগুলো কীসের? | |
অনুষ্ঠানগুলো কখন হয়? | |
কোথায় ফুল দিচ্ছে? | |
কেন ফুল দিচ্ছে? |
পূর্বের পাঠে জেনেছি যে, ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষার দাবিতে শহিদ হন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ আরও অনেকে। সেই থেকে ২১শে ফেব্রুয়ারি আমাদের শহিদ দিবস। এ উপলক্ষ্যে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী রচনা করেন একুশের গান, 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি'। ভাষাশহিদদের স্মরণে ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার তৈরি করা হয়। দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও ছোটো বড়ো শহিদ মিনার রয়েছে।
১৯৯৯ সাল থেকে বাংলাদেশের উদ্যোগে শহিদ দিবস 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে স্বীকৃতি পায়। বিশ্বব্যাপী ২১শে ফেব্রুয়ারি 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে পালিত হয়। এটি আমাদের গর্বের বিষয়। আমরা জাতীয়ভাবে পালন করি 'শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস'। শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পৃথিবীর সকল মানুষের মাতৃভাষার মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে। মাতৃভাষা চর্চা ও তাকে রক্ষা করতে শিখিয়েছে। মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এ দিবস মানুষের মধ্যে পৃথিবীর সব ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত করে।
আমরা রাষ্ট্রীয়ভাবে যথাযথ মর্যাদায় এ দিবসটি উদ্যাপন করি। শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে আমরা খালি পায়ে হেঁটে প্রভাতফেরিতে যাই। প্রভাতফেরিতে 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি' গানটি গাই। শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাই ভাষাশহিদদের। এ দিবসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চিত্রাঙ্কন, রচনা প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হয়। এ দিন জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। আমরা ভাষাশহিদদের অবদান চিরদিন মনে রাখব।
খ) ২১শে ফেব্রুয়ারি সম্পর্কিত তথ্য নিচের চিত্রের খালি ঘরে লিখি-
গ) শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব সম্পর্কে তিনটি বাক্য তৈরি করি-
1 | |
2 | |
3 |
ঘ) বিদ্যালয়ে প্রভাতফেরিতে শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর ভূমিকাভিনয় করি।
৩। আমাদের স্বাধীনতা দিবস