SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or
Log in with Google Account

তৃতীয় শ্রেণি (প্রাথমিক স্তর ২০২৪) - হিন্দুধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা - NCTB BOOK
Please, contribute to add content into প্রকৃতি ও পরিবেশ এবং দেশপ্রেম.
Content

যা স্বাভাবিকভাবে সৃষ্টি হয়েছে তা প্রকৃতি। ঈশ্বর প্রকৃতি সৃষ্টি করেছেন। মানুষ প্রকৃতি সৃষ্টি করতে পারে না। প্রকৃতি পৃথিবীর স্বাভাবিক রূপ।

প্রকৃতিতে মানুষসহ যাদের জীবন আছে তারা জীব। অন্যরা জড়। প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে আমরা বেঁচে থাকি। আমরা বাতাসের সাহায্যে শ্বাস-প্রশ্বাস নিই। নদী থেকে জল পাই। মাটিতে ফসল হয়। সে ফসল থেকে আমাদের খাবার তৈরি হয়।

গাছ আমাদের অক্সিজেন দেয়। সেই অক্সিজেন আমরা গ্রহণ করি। গাছের কাঠ দিয়ে আমরা ঘরবাড়ি নির্মাণ করি। সেখানে আমরা বসবাস করি। আমরা যে মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ফলমূল খাই- সবই জীবের কাছ থেকে পাওয়া।

জড় বস্তুর কাছ থেকেও আমরা উপকার পাই। পাহাড়-পর্বত থেকে পাথর পাই। পাথর নানা কাজে লাগে। পর্বতের উপর বরফ জমে। বরফ গলে জল হয়। আকাশের সূর্য থেকে আমরা আলো পাই। এই আলোতে অন্ধকার দূর হয়। সূর্যের আলোতে গাছপালা জীবন পায়। ফলে প্রকৃতিকে জীবজগৎ থেকে পৃথক করা যায় না। হিন্দুধর্মমতে প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অভিন্ন। প্রকৃতিকে রক্ষা করা আমাদের ধর্মের অঙ্গ। এ কারণে প্রকৃতিকে আমরা নানাভাবে শ্রদ্ধা করি, স্তুতি করি। আমাদের প্রতিটি পূজাতে প্রাকৃতিক নানা উপকরণের প্রয়োজন হয়।

সরস্বতীপূজার উপচারগুলো একবার দেখা যাক। পলাশসহ নানারকম ফুল, আমের পল্লব, বেলপাতা, যবের শীষ ইত্যাদি। অন্যান্য পূজাতেও বিভিন্ন ফুল-ফল-পাতা-কাণ্ড ও শস্য লাগে। এসব কোনো না কোনো বিশেষ গুণসম্পন্ন। আবার কিছু কিছু পূজায় গাছ লাগে। যেমন কলা, তুলসী, বেল, বট ইত্যাদি। অর্থাৎ পূজা-অর্চনার জন্য আমাদেরকে গাছের কাছে যেতে হয়। তাই বিভিন্ন উপকারী গাছ বাঁচিয়ে রাখতে হয়।

আমাদের সকল দেবতার নির্দিষ্ট বাহন আছে। সেসব বাহন কোনো না কোনো প্রাণী। যেমন কার্তিকের ময়ূর, গণেশের ইঁদুর, সরস্বতীর রাজহাঁস। এসব প্রাণী আমাদের কাছে অনেক শ্রদ্ধার। বেঁচে থাকার জন্য মানুষ বিভিন্ন প্রাণীর ওপরেও নির্ভর করে। প্রত্যেক জীবের মধ্যে ঈশ্বর বিরাজ করেন। তাই জীবহত্যা মহাপাপ। অকারণে আমরা জীবহত্যা করব না।

Content added || updated By

ধান, গম, ডাল এসব ফসল। ফসল থেকে মানুষের খাবার তৈরি হয়।

ইঁদুর ফসল নষ্ট করে। চড়ুই পাখিও ফসল নষ্ট করে। একবার চীন দেশে এসব প্রাণীকে হত্যার অভিযান শুরু হয়। তারা ভেবেছিল এতে ফসলের উৎপাদন বাড়বে। কিন্তু পরের বছর থেকে ফসল উৎপাদন কমতে শুরু করে। পরে তারা বুঝতে পারে যেসব প্রাণীকে ক্ষতিকর মনে হয়, কিন্তু তারা ক্ষতিকর নয়। প্রকৃতিতে তাদেরও অবদান আছে। চড়ুই পাখি কীটপতঙ্গ খায়। ইঁদুর মাটির উর্বরতা বাড়ায়।

আমাদের ধর্মে সকল প্রাণীর প্রতি সম্মান দেখানো হয়েছে। দেবী মনসার সঙ্গে সাপকেও আমরা শ্রদ্ধা করি। কারণ সাপ আমাদের উপকার করে। সাপ ইঁদুর খায়।

প্রকৃতিতে প্রতিটি সৃষ্টির প্রয়োজন আছে। নইলে ঈশ্বর তা সৃষ্টি করতেন না। একটু চারদিকের জীবদের দিকে তাকিয়ে দেখো। দেখবে প্রত্যেকটি জীব আমাদের কোনো না কোনো উপকারে আসে। একটি জীব আর একটি জীবের ওপর নির্ভরশীল। কোনো একটি জীব বিলুপ্ত হলে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়।

ঘর-বাড়ি তৈরির জন্য জলাশয় ভরাট করা হচ্ছে। বন কাটা হচ্ছে। কৃষি কাজের জন্যও বন উজাড় হচ্ছে। এতে পশু-পাখির বাসস্থান কমে যাচ্ছে। অনেক প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে প্রকৃতি বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে।

বন-জঙ্গল কেটে ফেললে বৃষ্টিপাত কমে যায়। ভূমিক্ষয় হয়। সবুজ প্রান্তর পরিণত হয় মরুভূমিতে। গাছের অভাবে দিন দিন পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ছে। এজন্য বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়েই চলছে। এতে আমাদের খাদ্য, বাসস্থানের সংকট দেখা দিচ্ছে। তাই প্রকৃতিকে সংরক্ষণ করতে পারলে আমাদের অস্তিত্ব সুরক্ষিত হবে।

Content added By

স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন- জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।

 

ঈশ্বর জীবের অন্তরে অবস্থান করেন। তাই সকল জীবকে ভালোবাসব। ভালোবাসব ঈশ্বরের সকল সৃষ্টিকে। কারণ ঈশ্বরের সকল সৃষ্টিকে ভালোবাসা মানে ঈশ্বরকে ভালোবাসা। সকল সৃষ্টিকে ভালোবাসলে ঈশ্বর সন্তুষ্ট হন। ঈশ্বর আমাদের মঙ্গল করেন।

অনেকেই পথের কুকুরকে দেখলে ঢিল ছোঁড়ে। পাখি শিকার করে। চিড়িয়খানায় গেলে পশু-পাখিদের বিরক্ত করে। এসব করা উচিত নয়। এসব কাজ অন্যায়, পাপ। কেননা এদেরও প্রাণ আছে, অনুভূতি আছে। এদের কষ্ট হয়।

পোষা কুকুর আমাদের নিরাপত্তা দেয়। গরুছাগল গৃহপালিত প্রাণী। এরা আমাদের দুধ দেয়। গরুর গোবর থেকে সার হয়। কৃষিকাজে সাহায্য হয়। পাখি আমাদের আনন্দ দেয়। প্রকৃতিকে সুন্দর রাখে। পোকা-মাকড় খেয়ে ফসল উৎপাদন বাড়ায়। তাই পশু-পাখির যত্ন নিলে আমাদেরই উপকার হয়। এতে ঈশ্বরেরও সেবা করা হয়।

আমরা চাইলে খুব সহজে পশু-পাখির উপকার করতে পারি। তৃষ্ণার্ত প্রাণীর জন্য জলের ব্যবস্থা করা যায়। ফেলে দেয়া হাড়ি-কুড়ি দিয়ে পাখির জন্য বাসা বানানো যায়। খাবারের উচ্ছিষ্ট রেখে দিতে পারি বিভিন্ন পোষা প্রাণী, যেমন-কুকুর, বিড়ালের জন্য। একটু যত্ন নিলে অনেক অসুস্থ পশু বেঁচে যায়। শুকনো মৌসুমে গাছে জল দিতে পারি। বর্ষায় গাছের গোড়ার আগাছা পরিষ্কার করে দিতে পারি। এতে জীবসেবা হয়।

 

১. পাখি কীভাবে ফসল উৎপাদন বাড়ায়?

ক. ফসল খেয়ে                             খ. গাছে বসে

গ. পোকা-মাকড় খেয়ে                 গ. মাঠের উপর উড়ে গিয়ে

 

২. কুকুর আমাদের কী দেয়?

ক. কাপড়                                                  খ. নিরাপত্তা

গ. আশ্রয়                                                   গ. খাদ্য

 

 

৩. গরুর গোবর আমরা কী হিসেবে ব্যবহার করি?

ক. সার                                                 খ. মাটি

গ. ঘাস                                                 গ. কাঠ

Content added || updated By

যেখানে মানুষ জন্ম নেয় সেটাই তার জন্মভূমি। প্রত্যেকেই কোনো না কোনো দেশে জন্ম নেয়। যেখানে মানুষ জন্ম নেয় এবং বসবাস করে সেটা সেই মানুষের দেশ। দেশকে ভালোবাসাই দেশপ্রেম। রামায়ণে দেশপ্রেমের সুন্দর একটি গল্প আছে।

শ্রীরামের দেশপ্রেম

রামায়ণে রাম-রাবণের যুদ্ধের কথা আছে। যুদ্ধে রাবণের মৃত্যু হয়। রাবণের ভাই বিভীষণ লঙ্কার সিংহাসনে বসেন। তখন লঙ্কা খুবই সমৃদ্ধ একটি দেশ ছিল। আবহাওয়া ছিল মনোরম। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও ছিল দেখার মতো। শ্রীরামের জন্মভূমি ছিল অযোধ্যা। পিতৃসত্য পালনের জন্য তাঁকে জন্মভূমি ছাড়তে হয়েছিল। তাঁকে চৌদ্দ বছর বনবাসে থাকতে হয়েছিল। রাবণের সঙ্গে যুদ্ধশেষে তিনি লঙ্কায় থেকে যেতে পারতেন। বিভীষণ তাঁকে সেই অনুরোধ করেছিলেন। বিভীষণ ছিলেন রামের বন্ধু।

রাম বিভীষণের অনুরোধ গ্রহণ করেননি। রাম বলেন,

এ কথায় শ্রীরামের গভীর দেশপ্রেম বোঝা যায়। তাঁর কাছে স্বর্গের চেয়ে প্রিয় ছিল জন্মভূমি। নিজের দেশ। তাঁর কাছে জন্মভূমিই জননী। এভাবেই দেশকে ভালোবাসতে হয়।

রামায়ণে আরও আছে, রামচন্দ্র বনবাসে যাচ্ছেন। তখন বারবার ফিরে তাকিয়েছেন অযোধ্যার দিকে। প্রিয় অযোধ্যাকে প্রণাম জানিয়েছেন। আর কবে দেখা হবে। আর কবে দেখতে পাবেন প্রিয় জন্মভূমিকে। এর মধ্য দিয়েও রামচন্দ্রের দেশপ্রেম প্রকাশিত হয়।

 

 

Content added || updated By

 

মা আমাদের জন্ম দিয়েছেন। লালন-পালন করেছেন। অন্যদিকে দেশ আমাদের খাদ্য দেয়। আশ্রয় ও শিক্ষা দিয়ে বড় করে। তাই দেশকে মায়ের মতো ভালোবাসতে হয়। আমাদের শাস্ত্রেও দেশকে মায়ের মতো ভালোবাসতে বলা হয়েছে। তাই দেশপ্রেম আমাদের ধর্মের অঙ্গ।

আমরা সবসময় মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে চেষ্টা করি। একসময় আমাদের দেশমাতা পরাধীন ছিল। তাই দেশের মানুষ অনেক কষ্টে ছিল। দেশমাতার মুখে হাসি ফোটাতে এ দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেছিল। এ যুদ্ধে ৩০ লক্ষ মানুষ প্রাণ দিয়েছিলেন। অনেক রক্ত ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে।

বিভিন্ন দুর্যোগে দেশের মানুষের কষ্ট হয়। তখন আমাদের কর্তব্য তাদের পাশে দাঁড়ানো। এতে দেশমাতার মুখে হাসি ফোটে। কোভিড ১৯ মহামারির সময় আমরা একে অপরের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। ফলে অনেক দেশের চেয়ে আমাদের ক্ষতি কম হয়েছে। এভাবেই দেশকে ভালোবাসা উচিত।

মায়ের মতো দেশেরও সেবা করতে হবে। মাকে কেউ অসুন্দর দেখতে চায় না। দেশকেও আমরা অসুন্দর দেখতে চাই না। দেশকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। দেশের মানুষ ভালো না থাকলে দেশ ভালো থাকে না। তাই দেশের মানুষকে ভালোবাসতে হবে। দেশের মানুষের বিপদে সাহায্য করতে হবে।

দেশকে ভালোভাবে চালানোর জন্য আইন করা হয়। দেশের আইন আমাদের মানতে হবে। ট্রাফিক সিগন্যাল মেনে রাস্তা পার হতে হবে। কাজে ফাঁকি দিলে দেশের ক্ষতি হয়। তাই কাজে ফাঁকি দেয়া উচিত নয়। আমাদের ভালোভাবে পড়াশোনা করতে হবে। দেশপ্রেমিক হতে হবে।

আমরা অনেক সময় খাবার নষ্ট করি। ঘরে অকারণে আলো জ্বালিয়ে রাখি। পানির অপচয় করি। এতে দেশের সম্পদের অপচয় হয়। আমরা সম্পদের অপচয় করব না। আমরা মিতব্যয়ী হব। মিতব্যয়ী হলে দেশের সম্পদ বাঁচবে। এই সম্পদ ভবিষ্যতেও ব্যবহার করা যাবে।

এভাবে আমরা দেশকে ভালোবাসব।

 

Content added || updated By
Promotion
Content for the offcanvas goes here. You can place just about any Bootstrap component or custom elements here.