নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা - ভাষা আন্দোলন ও পরবর্তী রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ | NCTB BOOK

আটচল্লিশ ও বায়ান্ন সালের ভাষা আন্দোলনে তৎকালীন এদেশের নারী সমাজের প্রত্যক্ষ এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল । মিছিল, স্লোগান, সভা-সমিতিতে তারাও পুরুষের পাশাপাশি সংগ্রাম করেছেন । ঢাকার বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, বিশেষ করে কামরুন্নেসা স্কুল এবং ইডেন কলেজের ছাত্রীদের ভূমিকা ছিল সংগ্রামী। মিছিল মিটিংয়ে উপস্থিত থেকে নাদিরা বেগমসহ আরও অনেকে পোস্টার, ফেস্টুন লিখন এবং নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলা ভাষা আন্দোলনের পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন । ঢাকার বাইরেও নারী সমাজের ভূমিকা ছিল সক্রিয় এবং প্রতিবাদী । যশোরে ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীদের মধ্যে একজন ছিলেন হামিদা রহমান । বগুড়ার বিশেষ ভূমিকায় ছিলেন রহিমা খাতুন, সালেহা খাতুনসহ অনেকে । ভাষা আন্দোলনে সিলেটের নারীদেরও ব্যাপক ভূমিকা ছিল । এ আন্দোলনে সংগ্রামী ভূমিকা রাখেন হাজেরা মাহমুদ, যোবেদা খাতুন চৌধুরী, শাহেরা বানু, সৈয়দা লুৎফুন্নেছা খাতুন, সৈয়দা নাজিরুন্নেছা খাতুন, রাবেয়া খাতুনসহ আরও অনেকে । পোস্টার ও প্রচারপত্রের মাধ্যমে আন্দোলন সচল রাখার তৎপরতা চালানোর সময় ১৯৪৯ সালের ১৩ই আগস্ট গ্রেফতার হন লিলি চক্রবর্তী। এসব সংগ্রামী ভূমিকার পাশাপাশি ঐ সময় বিভিন্ন স্থানে নারীরা ভাষা আন্দোলনকারীদের সহযোগিতা করেন । তাঁদের মধ্যে নিবেদিতা নাগ, সারা তৈফুর মাহমুদ, সাহেরা বানু উল্লেখযোগ্য ।

১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি যাঁরা পূর্ববাংলা ব্যবস্থাপক পরিষদের অধিবেশন বর্জন করেন, তাঁদের মধ্যে আনোয়ারা খাতুন ছিলেন অন্যতম। তিনি ব্যবস্থাপক সভায় বাংলা ভাষার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেন । বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সাথে ছাত্রীরাও দুঃসাহসী ভূমিকা রাখেন । ২১শে ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভাঙ্গায় যাঁরা সাহসী ভূমিকা রেখেছিলেন, তারা হলেন শামসুন্নাহার, রওশন আরা, সুফিয়া ইব্রাহিমসহ অনেকে । তাছাড়া নারায়ণগঞ্জে ভাষা আন্দোলনের নেত্রী মমতাজ বেগম গ্রেফতার হলে পুলিশ- জনতার মধ্যে প্রচণ্ড সংঘর্ষ হয়েছিল ।

Content added || updated By