নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা - সামরিক শাসন ও পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ (১৯৭৫-১৯৯০) | NCTB BOOK

লে. জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১৯৮২ সালে ক্ষমতা দখল করে ১৯৯০ সালে পর্যন্ত বাংলাদেশ শাসন করেন । ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক আর ১৯৮৩ সালের ১১ই ডিসেম্বর থেকে ১৯৯০ সালের ৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিলেন রাষ্ট্রপতি। এরশাদ অল্প সময়ের জন্য বিচারপতি আহসান উদ্দিন চৌধুরীকে (২৭শে মার্চ, ১৯৮২ থেকে ১০ই ডিসেম্বর, ১৯৮৩) রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত রাখেন। সুবিধাজনক সময়ে তাঁকেও অপসারণ করতে দ্বিধা করেননি । একই সাথে এরশাদ জাতীয় সংসদ বাতিল করেন ।
 

প্রশাসনিক সংস্কার:

লে. জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় এসে বেসামরিক প্রশাসনের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন । তিনি ১৯৮২ সালের ২৮শে এপ্রিল প্রশাসনিক পুনর্গঠন কমিটি গঠন করেন । এই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে তিনি প্রশাসনিক কাঠামোতে কিছু পরিবর্তন করেন ।

ক. উপজেলা ব্যবস্থা : থানা প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে উপজেলা ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। উপজেলায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির অধীনে সরকারি আমলাদের মাধ্যমে প্রশাসন পরিচালিত হবে। ১৯৮২ সালে ৭ই নভেম্বর ৪৫টি থানাকে উপজেলা করার মধ্য দিয়ে এই ব্যবস্থার যাত্রা শুরু । পর্যায়ক্রমে ৪৬০টি থানা উপজেলায় পরিণত হয় । ১৯৮৩ সালে ১৪ই মার্চ থানার পরিবর্তে উপজেলা নামকরণ করা হয় ।

খ. মহকুমাকে জেলা ঘোষণা : প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণের জন্য মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় । এই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশকে মোট ৬৪টি জেলায় ভাগ করা হয় ।
 

গ. বিচার ব্যবস্থার সংস্কার : বিচার ব্যবস্থায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়। উপজেলায় পৃথক ম্যাজিস্ট্রেট ও মুন্সেফ আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয় । এছাড়া রংপুর, যশোর, বরিশাল, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম এবং সিলেটে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ প্রতিষ্ঠা করা হয় । কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের রায়ের কারণে ঢাকার বাইরের বেঞ্চগুলো বাতিল করা হয় ।

এরশাদ শিক্ষা, কৃষি, ভূমি, ঔষধনীতি প্রভৃতি ক্ষেত্রে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিলেন । কিন্তু নীতিগুলোর জনবিরোধী ধারার কারণে সামগ্রিকভাবে সাধারণ মানুষের সমর্থন পায়নি । কারণ প্রকৃত সুফল জনগণ পায়নি । এরশাদ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের ব্যাপকহারে নিয়োগ দিতে শুরু করেন। উদ্দেশ্য- সরকারি আমলাতন্ত্রের ওপর সামরিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা ।

 

উন্নয়ন কর্মকাণ্ড:
এরশাদ নানাভাবে নিজেকে একজন জনদরদি নেতা হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন। সভা-সমাবেশ ও সরকারি প্রচার মাধ্যমে বলা হয়েছে এরশাদের উন্নয়ন কর্মসূচির লক্ষ্য গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ভাগ্যের পরিবর্তন ১৯৮৩ সালের ১৭ই মার্চ তিনি জনগণের সার্বিক কল্যাণে ১৮ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন । জাতীয় সংহতি থেকে শুরু করে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, কর্মসংস্থানসহ পররাষ্ট্রনীতি পর্যন্ত সবকিছুই এর অন্তর্ভুক্ত ছিল ।
সরকারি টেলিভিশন, রেডিও, সংবাদপত্রে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ব্যাপক প্রচারণা চালানো হলেও সামগ্রিকভাবে তার আমলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা মোটেই সন্তোষজনক ছিল না । প্রকৃত উন্নয়ন না হওয়ার প্রধান কারণ দুর্নীতি আর সীমাহীন লুটপাট । এরশাদের সময়ে বৈদেশিক সাহায্যনির্ভরতা হতাশাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ঋণখেলাপি সংস্কৃতিতে সামরিক-বেসামরিক আমলা ও দলছুট রাজনীতিবিদরা লাভবান হয়েছেন । খাদ্য উৎপাদন, জিডিপি, গড় প্রবৃদ্ধি সব ছিল নিম্নগামী। তবে সামরিক খাতে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে । কারণ নিজের ক্ষমতার ভিত শক্তিশালী করার জন্য তিনি ব্যাপকভাবে সামরিক বাহিনীর সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করেছিলেন।

 

বৈদেশিক সম্পর্ক:
বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে জেনারেল এরশাদ নতুন কিছু করেননি । তিনি পূর্বের সরকারের পথই অনুসরণ করেন । ভারতের বিপরীতে চীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক আরও দৃঢ় করার উদ্যোগ নেন। বিশেষভাবে সামরিক বাহিনীর প্রশিক্ষণ, অস্ত্রশস্ত্রের জন্য চীনের ওপর নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পায় । পাকিস্তান, সৌদি আরব, ইরাকসহ মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক অব্যাহত থাকে। তবে তিনি অতিমাত্রায় মার্কিনপন্থী ছিলেন । মার্কিন সরকারকে সন্তুষ্ট করার জন্য ঢাকা থেকে সোভিয়েত কূটনীতিককে বহিষ্কার করেন । ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এরশাদ উত্তেজনা পরিহারের চেষ্টা করেন। তিনি ভারতের সঙ্গে বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেননি । বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এরশাদের একটি বড় সাফল্য হলো সার্ক গঠন। দক্ষিণ এশিয়ার সাতটি প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে একত্রিত করে প্রতিষ্ঠা করেন দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক)। এই সংস্থার প্রথম শীর্ষ সম্মেলন ১৯৮৫ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় । 

 

গণভোট:
সামরিক শাসকদের গতানুগতিক প্রথা অনুযায়ী এরশাদও বলপূর্বক ক্ষমতা দখলকে বৈধতা দেওয়ার জন্য গণভোটের আয়োজন করেন । এরশাদ রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধিতার কারণে রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে ব্যর্থ হন । অবশেষে ১৯৮৫ সালের ২১শে মার্চ গণভোট অনুষ্ঠিত হয় । স্বাভাবিক কারণেই সাধারণ জনগণ এই নির্বাচনে কোনো আগ্রহ দেখায়নি। তারপরও জেনারেল এরশাদ প্রদত্ত ভোটের শতকরা ৯৪ দশমিক ১৪ ভাগ ভোট লাভ করেন । সামরিক ও বেসামরিক আমলাদের কারসাজির মাধ্যমে তার পক্ষে বিপুল ভোট দেখানো সম্ভব হয়।

 

রাজনৈতিক দল গঠন:
ক্ষমতা দখলকে পাকাপোক্ত করার জন্য এরশাদ একটি রাজনৈতিক দলের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন । ১৯৮৪ সালের জুলাই মাসে ‘জনদল' নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন । এই দলের অঙ্গ সংগঠন হিসেবে গড়ে ওঠে নতুন বাংলা ছাত্রসমাজ, নতুন বাংলা যুব সংহতি, নতুন বাংলা শ্রমিক ফেডারেশন ইত্যাদি । সুবিধাবাদী, দলছুট বিভিন্ন নেতাকর্মী নিয়ে জনদল গঠিত হয়। এরপর তিনি ১৯৮৫ সালের ১৬ই আগস্ট প্রতিষ্ঠা করেন জাতীয় ফ্রন্ট। জনসমর্থনহীন কিছু রাজনৈতিক দল ও নেতা ফ্রন্টে যোগ দেন । অবশেষে, ১৯৮৬ সালের ১লা জানুয়ারি জেনারেল এরশাদের রাজনৈতিক দল ‘জাতীয় পার্টি’র যাত্রা শুরু হয় ।

 

নির্বাচন:
১৯৮৬ সালের ৭ই মে তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে এরশাদের জাতীয় পার্টি, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ৮ দলীয় জোট এবং জামায়াতে ইসলামীসহ মোট ২৮টি দল অংশগ্রহণ করে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ৭ দলীয় জোট নির্বাচন বর্জন করে । নির্বাচনে জাতীয় পার্টি মোট ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসন পেয়ে জয়লাভ করে। আওয়ামী লীগ এককভাবে ৭৬টি আসন লাভ করে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় আসন গ্রহণ করে । নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য দল এরশাদের বিরুদ্ধে মিডিয়া ক্যুর মাধ্যমে বিজয় ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ উত্থাপন করে । পর্যবেক্ষকগণও এ অভিযোগের যথার্থতাকে সমর্থন করেন । ১৯৮৬ সালের ১৫ই অক্টোবর রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান বিরোধী দলগুলো নির্বাচন বয়কট করে । প্রহসনমূলক এ নির্বাচনে এরশাদকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হয় ।

 

রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম:
লে. জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এর শাসনামলে সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম বলে ঘোষণা করা হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে তিনি ইসলামপন্থী দলগুলোর সমর্থন লাভের চেষ্টা করেন । মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশে এরশাদ এই সংশোধনী আনেন । বলার অপেক্ষা রাখে না ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করা ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী ।

 

স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন:
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের শাসকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছাত্র-জনতার প্রতিরোধ, আন্দোলন, সংগ্রাম, হরতাল মোকাবেলা করেছেন লে. জেনারেল এরশাদ । ১৯৮২ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত এরশাদবিরোধী আন্দোলনে ছাত্ররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন । যে কারণে এরশাদ বিভিন্ন সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেন । এরশাদবিরোধী আন্দোলনে রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন জোট গড়ে তোলে। আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৮ দলীয় জোট ও রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বে বাম সংগঠনের ৫ দলীয় জোট গড়ে ওঠে (যা পরে ১৫ দলীয় জোটে রূপান্তরিত হয়)। অন্যদিকে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ৭ দলীয় জোট গড়ে ওঠে।

আন্দোলন দমনে লে. জেনারেল এরশাদ দমন, পীড়ন, অত্যাচার ও হত্যার পথ বেছে নেন। ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশের ট্রাক তুলে দেওয়া, সরাসরি গুলি করার ঘটনাও কম হয়নি । ১৯৮৩ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে জাফর ,জয়নাল, মোজাম্মেল নিহত হন; বহু নেতাকর্মী আটক হয় । ছাত্র আন্দোলন দমনে এরশাদের নতুন বাংলা ছাত্রসমাজ সন্ত্রাসের পথ অবলম্বন করে । ১৯৮৫ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারি এরশাদের ছাত্র সংগঠনের হাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাউফুন বসুনিয়া নিহত হন। এরশাদবিরোধী আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য ২২টি ছাত্র সংগঠন মিলে গঠিত হয় সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ । ১৯৮৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো উপলব্ধি করে যে, এরশাদের বিরুদ্ধে অভিন্ন কর্মসূচি ছাড়া আন্দোলন সফল হবে না । উল্লেখ্য ১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পর থেকেই এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে সকল রাজনৈতিক দল, সাধারণ জনগণ এবং নাগরিক সমাজ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে । এরশাদের পদত্যাগ ও একটি অর্থবহ নির্বাচনের দাবিতে বিরোধী দল দুর্বার গণআন্দোলন শুরু করে । ১৯৮৭ সালে সংসদ থেকে একযোগে বিরোধী দল পদত্যাগ করলে ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া হয় । ১৯৮৮ সালের ৩রা মার্চ চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করা হয় । আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন বর্জন করে । ভোটারবিহীন, দলবিহীন এ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ২৫১টি আসন পেয়ে বিজয়ী হয় । সরকার অনুগত আ.স.ম. আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত বিরোধী জোট (কপ) পায় ১৯টি আসন। বাকি আসনের ৩টি জাসদ (সিরাজ), ২টি ফ্রিডম পার্টি এবং ২৫টি স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পান ।

 

নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থান ও এরশাদের পতন:

দীর্ঘ ৯ বছরের প্রায় পুরো সময়টা জনগণ লে. জেনারেল এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে । আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৫ দলীয় জোট, বিএনপির নেতৃত্বে ৭ দলীয় জোট, শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ), আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, কৃষক সংগঠনসহ এরশাদবিরোধী চেতনা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত পৌঁছে যায় । হরতাল- অবরোধে প্রশাসনে একপ্রকার স্থবিরতা দেখা দেয়। আন্দোলনের একপর্যায়ে ১৯৮৭ সালের ১০ই নভেম্বর বুকে ও পিঠে ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক' লেখাসহ ঢাকার জিপিও'র কাছে, জিরো পয়েন্টে পুলিশের গুলিতে নূর হোসেন নিহত হন। এতে জনগণ আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ।

১৯৮৭ সালের ১২ই নভেম্বর শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করে এবং ২৭শে নভেম্বর এরশাদ সরকার দেশে জরুরি অবস্থার ঘোষণা দেয়। ১৯৮৮ সালের ২৪শে জানুয়ারি চট্টগ্রামে শেখ হাসিনার এক সমাবেশে নির্বিচারে জনতার ওপর গুলি চালায়, অল্পের জন্য শেখ হাসিনা রক্ষা পান । এর বিরুদ্ধে সমগ্র দেশ প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে । ১৯৯০ সালের ১০ই অক্টোবর বিরোধী জোট ও দলগুলোর সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি রাজনৈতিক অঙ্গনকে উত্তপ্ত করে তোলে । এদিন মিছিলে গুলিবর্ষণে ৫ জন নিহত এবং তিন শতাধিক আহত হয় । ধারাবাহিক আন্দোলনের পথ ধরে ওই বছরই ২৭শে নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির পাশে অজ্ঞাতনামা আততায়ীর গুলিতে ডা. শামসুল আলম খান মিলন নিহত হলে এরশাদবিরোধী আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে রূপ ধারণ করে। ২৭শে নভেম্বর সরকার জরুরি অবস্থা ও কারফিউ জারি করে। ২৭শে নভেম্বর সাংবাদিকরা সংবাদপত্র বন্ধ করে দেন । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক সম্মিলিতভাবে মিছিল বের করে কারফিউ ও জরুরি আইন অমান্য করেন । রাজপথ চলে যায় জনতার দখলে। ঢাকা পরিণত হয় মিছিলের শহরে। এ অবস্থায় বিরোধী রাজনৈতিক ৩ জোটের রূপরেখা অনুযায়ী বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয় । ১৯৯০ সালের ৬ই ডিসেম্বর তাঁর কাছে এরশাদ ক্ষমতা হস্তান্তরে বাধ্য হন । ছাত্র-জনতার এই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এরশাদের পতনের ফলে দীর্ঘ স্বৈরশাসনের অবসান ঘটে ।

Content added By