SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি - তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি: বিশ্ব ও বাংলাদেশ প্রেক্ষিত | NCTB BOOK

প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যে কোনো দেশের সার্বভৌমত্ব ও জনগণের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করে থাকে। সন্ত্রাস, সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধের বিষয়টিও এর অন্তর্ভুক্ত।

বিশ্বের প্রতিটি দেশের প্রতিরক্ষার সাথেই প্রতিরক্ষা শিল্প খুবই ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত। এটি একদিকে যুদ্ধাস্ত্র উৎপাদন করে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে এবং অন্যদিকে অর্থনীতিতেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। এই শিল্পের সাথে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি যুক্ত হওয়ায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিরক্ষা শিল্পে ভিন্নমাত্রা পেয়েছে। পৃথিবীর অনেক দেশ সরাসরি যুদ্ধাস্ত্র উৎপাদন করতে না পারলেও তাদের মানব সম্পদ ব্যবহার করে প্রতিরক্ষার সাথে সম্পর্কিত সফটওয়্যার প্রস্তুত এবং বিপণন করে দেশের অর্থনীতিতেও বড় ভূমিকা পালন করছে।

প্রতিরক্ষা এবং আইসিটি একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করছে। যেমন একসময় বোমার কোনো নিজস্ব বুদ্ধিমত্তা ছিল না, তাকে যেখানে নিক্ষেপ করা হতো সেটি সেখানে আঘাত করত। এখন আইসিটির সহায়তায় স্মার্ট বোমা তৈরি করা সম্ভব হয়েছে, যেটি নির্দেশ শুনে নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে আঘাত করতে পারে। সাম্প্রতিক কালে মনুষ্যবিহীন এয়ারক্র্যাফট (Unmanned Aerial Vehicle - UVA) বা ড্রোন (Drone) ব্যবহার করে যুদ্ধের পরিস্থিতিই পাল্টে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। আকাশ থেকে মহাকাশকেন্দ্রিক এবং হার্ডওয়্যার থেকে সফটওয়্যার বেজড যুদ্ধ এখনকার যুদ্ধের নিত্যদিনের চিত্র। আধুনিক যুদ্ধে স্যাটেলাইট এবং ইন্টারনেটের প্রভাব অপরিসীম। প্রতিরক্ষা শিল্পে এসবের লক্ষণীয় প্রভাবগুলো নিম্নরূপ :

১. সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজে সিমুলেশান এবং ভার্চুয়াল রিয়েলিটি পরিবেশ তৈরি করে ব্যাপকভাবে তথ্য প্রযুক্তিকে ব্যবহার করা হয়। এটি নিরাপদ, অর্থ সাশ্রয়ী এবং ২৪ ঘণ্টা চালু রাখা সম্ভৰ

২. মানুষকেন্দ্রিক যুদ্ধক্ষেত্র ব্যবস্থাপনার পরিবর্তে আধুনিক যুদ্ধে নেটওয়ার্কভিত্তিক যুদ্ধ পরিচালনা করা হয়। এক্ষেত্রে কমান্ডার তার অফিসে অবস্থান করে যুদ্ধের সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে যুদ্ধ পরিচালনায় তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেন।

৩. স্যাটেলাইট যোগাযোগ ব্যবস্থার দ্বারা দূর চিত্র 1.13: বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতিসংঘের মিশনে যুদ্ধবিজ দেশের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনরত থেকে যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতি সরাসরি সম্প্রচার, পর্যবেক্ষণ ও কমান্ডিং করা সম্ভব হয়।

৪. শত্রুবাহিনীকে পর্যুদস্ত করার জন্য তাদের কমান্ড সেন্টারের যোগাযোগ ব্যবস্থা ইলেক্ট্রনিক জ্যামিং করে অচল করে দিতে পারে।

৫. মিসাইল বা ক্ষেপণাস্ত্র তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে অত্যন্ত কার্যকর ও নিখুঁতভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে।

৬. অত্যন্ত গোপনে শত্রুপক্ষের শিবিরে আঘাত হানার জন্য ড্রোন ব্যবহার করা যায়।

৭. মিসাইল, রকেট বা ড্রোন আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পালটা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজে

তথ্য প্রযুক্তিকে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়।

বর্তমানে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী একত্রে বাংলাদেশ আর্মড ফোর্সেস বা বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী নামে পরিচিত। এই বাহিনীর উপর আমাদের দেশের প্রতিরক্ষার দায়িত্ব ন্যস্ত আছে। আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিকায়ন করে তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিক প্রযুক্তিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার জন্য মিলিটারি ইন্সটিটিউট অফ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি (MIST) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

এখানে উল্লেখ্য যে প্রতিরক্ষা বাহিনীর নানা ধরনের গবেষণার কারণে অনেক নতুন নতুন প্রযুক্তি গড়ে উঠেছে এবং পৃথিবীর সাধারণ মানুষ লাভবান হয়েছে। ইন্টারনেট এবং জিপিএস সেরকম দুইটি উদাহরণ। অন্যদিকে এটাও সত্যি যে পৃথিবীতে যুদ্ধাস্ত্রের একটি বিশাল বাণিজ্য থাকার কারণে পৃথিবীর বিশাল সম্পদ অপচয় করে প্রতিনিয়ত নতুন যুদ্ধাস্ত্র তৈরি হয়। সেই অস্ত্র প্রকৃত যুদ্ধাবস্থায় পরীক্ষা করার জন্য নির্দিষ্ট সময় পরে পরে পৃথিবীর নানা প্রান্তে যুদ্ধ লাগিয়ে রাখার দুর্ভাগ্যজনক উদাহরণও রয়েছে।

Content added || updated By