একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি - কমিউনিকেশন সিস্টেমস ও নেটওয়ার্কিং | NCTB BOOK

আধুনিক যুগের বিশ্বায়ন ব্যবস্থায় অবাধ প্রবাহ একটি অনিবার্য জীবনানুষঙ্গ। জীবনের সর্বস্তরে তথ্য শেয়ারের এই বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছোট-বড় নানা ধরনের অজয় কম্পিউটার নেটওয়ার্ক প্রচলিত আছে। এ সব নেটওয়ার্কের সাথে বিপুল পরিমাপ কম্পিউটারসহ আরো অনেক আধুনিক ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতিও সংযুক্ত থাকে। কম্পিউটার ও অন্যান্য ডিভাইসের নেটওয়ার্কসমূহকে নিম্নবর্ণিত বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে শ্রেণিবিভাগ করা যায়।

  • নেটওয়ার্কের ভৌগোলিক বিস্তৃতি
  • সার্ভিস প্রদান ও নিয়ন্ত্রণ কাঠামো
  • নেটওয়ার্কের মালিকানা।

নেটওয়ার্কের ভৌগোলিক বিস্তৃতি

নেটওয়ার্কভুক্ত কম্পিউটারগুলোর ভৌগোলিক অবস্থানের উপর ভিত্তি করে কম্পিউটার নেটওয়ার্ককে প্রধানত

পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়।

১. পার্সোনাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (Personal Area Network-PAN)

২. লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (Local Area Network - LAN)

৩. ক্যাম্পাস এরিয়া নেটওয়ার্ক (Campus Area Network - CAN)

৪. মেট্রোপলিটন এরিয়া নেটওয়ার্ক (Metropolitan Area Network-MAN)

৫. ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক (Wide Area Network-WAN)

১. পার্সোনাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (Personal Area Network-PAN) : কোনো ব্যক্তির দৈনন্দিন ব্যবহৃত ব্যক্তিগত বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলোর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে যে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হয়, তাকে পার্সোনাল এরিয়া নেটওয়ার্ক বা PAN বলে। PAN -এর ডিভাইসগুলোর মধ্যে ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, ওয়েব ক্যামেরা, সাউন্ড সিস্টেম, পিডিএ, মোবাইল, স্ক্যানার, প্রিন্টার ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এর পরিধি সবোর্চ্চ 10 মিটার।

২. লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (Local Area Network-LAN) : দৈনন্দিন জীবনে আমরা লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক বা LAN -ই বেশি ব্যবহার করে থাকি। ছোট অফিস-আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কিংবা একটি বিল্ডিং বা স্বপ্ন দূরত্বে অবস্থিত কয়েকটি ভবনে স্থাপিত অসংখ্য কম্পিউটারের মধ্যে এই নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হয়। এতে অনেক ডিভাইস অ্যাকসেস পাওয়া যায় এবং রিপিটার ব্যবহার করে এর বিস্তৃতি সর্বোচ্চ 1 কিমি করা যায়। LAN এর টপোলজি সাধারণত স্টার, বাস, ট্রি ও রিং হয়ে থাকে। এই ধরণের নেটওয়ার্কে তার মধ্যম হিসেবে টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল, কো-এক্সিয়াল ক্যাবল বা ফাইবার অপটিক ক্যাবল এবং তারবিহীন মাধ্যম হিসেবে রেডিও ওয়েভ ব্যবহৃত হয়।

৩. ক্যাম্পাস এরিয়া নেটওয়ার্ক (Campus Area Network-CAN) : অনেক LAN -এর সমন্বয়ে CAN গঠিত হয়। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন, একাডেমিক ভবন, লাইব্রেরি ভবন, স্টুডেন্ট সেন্টার, আবাসিক হলসমূহ, জিমনেসিয়াম এবং অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত ভবনে স্থাপিত LAN গুলোকে সংযুক্ত করতে CAN ব্যবহার করা হয়। এর বিস্তৃতি 1 থেকে 5 কিমি দূরত্ব পর্যন্ত হতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বড় অফিস কমপ্লেক্সের একাধিক ভবনে LAN ব্যবহারকারীদের কাজের সময়ের জন্য কিংবা ব্যয়বহুল এক বা একাধিক পেরিফেরাল ডিভাইস অনেক ব্যবহারকারীর জন্য CAN ব্যবহার করা হয়। যেমন- Googleplex এবং Microsoft's -এর নেটওয়ার্ক।

৪. মেট্রোপলিটন এরিয়া নেটওয়ার্ক (Metropolitan Area Network-MAN) : মেট্রোপলিটন এরিয়া বলতে একটি শহর বা ছোট অঞ্চলজুড়ে বিস্তৃত এলাকাকে বোঝায়, এ রকম একটি বড় এলাকার বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত অনেকগুলো কম্পিউটার নিয়েই MAN গঠিত হয়। MAN এর বিস্তৃতি LAN এর চেয়ে বড় কিছু WAN এর চেয়ে ছোট হয়। প্রায় 50 কিমি দূরত্ব পর্যন্ত MAN এর নেটওয়ার্ক থাকতে পারে। এই ধরণের নেটওয়ার্কে যখন তারবিহীন সংযোগ দেওয়া হয়, তখন তাকে WMAN (Wireless Metropolitan Area Network) বলা হয়। ট্রান্সমিশন মিডিয়া হিসেবে ব্যবহৃত হয় টেলিফোন লাইন, অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল, রেডিও ওয়েভ বা টেরিস্ট্রিয়াল মাইক্রোওয়েভ। নেটওয়ার্ক ডিভাইস হিসেবে রাউটার, সুইচ, হাব, ব্রিজ, গেটওয়ে ইত্যাদি এই নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত হয়।

৫. ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক (Wide Area Network-WAN) : ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক দিয়ে বড় ধরনের এলাকাজুড়ে নেটওয়ার্কের ব্যবস্থা করা হয়। একটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল বা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত কম্পিউটারের মধ্যে গড়ে তোলা নেটওয়ার্কই ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক বা WAN নামে পরিচিত। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় WAN -এর উদাহরণ হলো ইন্টারনেট।

সার্ভিস প্রদান ও নিয়ন্ত্রণ কাঠামো নেটওয়ার্কে বিদ্যমান ডিভাইসসমূহ কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে এবং সেগুলোর সার্ভিস মডেল কেমন হবে, তার উপর ভিত্তি করে কম্পিউটার নেটওয়ার্ককে নিম্নরুপে ভাগ করা যায়। যথা :

১. পিয়ার-টু-পিয়ার নেটওয়ার্ক (Peer to Peer Network)

২. ক্লায়েন্ট সার্ভার নেটওয়ার্ক (Client Server Network)

৩. হাইব্রিড নেটওয়ার্ক (Hybrid Network)

১. পিয়ার-টু-পিয়ার নেটওয়ার্ক (Peer to Peer Network) : পৃথক সার্ভার কম্পিউটার ব্যতীত দুই বা ততোধিক কম্পিউটারের মধ্যে রিসোর্স শেয়ার করার জন্য যে নেটওয়ার্ক গঠন করা হয় তা হলো পিয়ার-টু- পিয়ার নেটওয়ার্ক।

২. ক্লায়েন্ট-সার্ভার নেটওয়ার্ক (Client Server Network): একাধিক ক্লায়েন্ট/ওয়ার্কস্টেশন ও একটি কেন্দ্রীয় সার্ভারের সমন্বয়ে ক্লায়েন্ট সার্ভার নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়। এখানে সার্ভার কম্পিউটারে কেন্দ্রীয়ভাবে ডেটা জমা রাখা হয় এবং এসব ডেটা নেটওয়ার্কে অবস্থিত ক্লায়েন্ট কম্পিউটার কর্তৃক রিসোর্স হিসেবে ব্যবহার (শেয়ার) করা হয়। একে সার্ভার-বেজড নেটওয়ার্কও বলা হয় । স্টোরেজ মিডিয়া, হোস্ট ও টার্মিনাল (ক্লায়েন্ট/ইউজার/ নোড) সংখ্যার উপর ভিত্তি করে ক্লায়েন্ট-সার্ভার নেটওয়ার্ককে আবার সেন্ট্রালাইজড নেটওয়ার্ক (Certrallzed Network) এবং ডিস্ট্রিবিউটেড নেটওয়ার্ক

(Distributed Network) এই দুভাগে ভাগ করা যায় :

 ক. সেন্ট্রালাইজড নেটওয়ার্ক (Centralized Network) : এ ধরনের নেটওয়ার্কে সাধারণত একটি প্রধান কম্পিউটার থাকে, যাকে হোস্ট কম্পিউটারও বলে এবং কিছু টার্মিনাল   দিয়ে গঠিত হয়।

 খ. ডিস্ট্রিবিউটেড নেটওয়ার্ক (Distributed Network) : এ ধরনের নেটওয়ার্ক পরস্পর সংযুক্ত কিছু ওয়ার্কস্টেশন বা টার্মিনাল, বিভিন্ন শেয়ারড্ স্টোরেজ ডিভাইস এবং   প্রয়োজনীয় ইনপুট ও আউটপুট যন্ত্রাংশ নিয়ে গঠিত হয়ে থাকে ।

৩. হাইব্রিড নেটওয়ার্ক (Hybrid Network) : এটি মূলত পিয়ার-টু-পিয়ার ও ক্লায়েন্ট-সার্ভার নেটওয়ার্কের সমন্বয়ে গঠিত। এক্ষেত্রে হোস্ট কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ ও প্রসেসিং-এর পাশাপাশি ডিস্ট্রিবিউটেড নেটওয়ার্কের বৈশিষ্ট্য (যেমন- গ্লোবাল স্টোরেজ মিডিয়া) বিদ্যমান থাকায় কর্পোরেট ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে এর জনপ্রিয়তা রয়েছে। এই নেটওয়ার্কে ক্লায়েন্ট সার্ভারের প্রাধান্য বেশি থাকে।

নেটওয়ার্কভুক্ত কম্পিউটারগুলোর মালিকানা বা নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের উপর ভিত্তি করে কম্পিউটার

নেটওয়ার্ককে প্রধানত পাবলিক নেটওয়ার্ক (Public Network) এবং প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (Private

Network) এই দুই ভাগে ভাগ করা যায়।

১. পাবলিক নেটওয়ার্ক (Public Network) : যে নেটওয়ার্কে ব্যবহারকারীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রিত নয় এবং যেকোনো সময় যেকোনো কম্পিউটার নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হতে পারে, তাকে পাবলিক নেটওয়ার্ক বলে। এ ধরনের নেটওয়ার্ক পরিচালিত হয় অনেক প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে, অর্থাৎ এর একক মালিকানা থাকে না। এর ব্যবহারকারীকে সাধারণত ফিস্ বা মূল্য পরিশোধ করতে হয় না। WAN বা ইন্টারনেট এ ধরনের নেটওয়ার্কের উদাহরণ।

২. প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (Private Network) : যে নেটওয়ার্কে ব্যবহারকারীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রিত এবং কোনো কম্পিউটারকে নেটওয়ার্কে যুক্ত করতে কর্তৃপক্ষের অনুমতির প্রয়োজন হয়, তাকে প্রাইভেট নেটওয়ার্ক বলে। কেউ ইচ্ছা করলেই এই নেটওয়ার্কে অ্যাকসেস করতে পারে না। এ ধরনের নেটওয়ার্ক পরিচালিত হয় একটি প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় ও তত্ত্বাবধানে। এর সিকিউরিটি সিস্টেম মজবুত এবং এতে ট্রাফিক নেই বললেই চলে। ডেটা আদান-প্রদানে ডিলে (Delay) কম হয়। PAN, LAN বা CAN এ ধরনের নেটওয়ার্ক।

Content added By