SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - রসায়ন - রসায়নের ধারণা | NCTB BOOK

ধরো, তুমি সকালবেলা ঘুম থেকে উঠলে। ঘুম থেকে উঠে ব্রাশে একটু পেস্ট লাগিয়ে দাঁত মাজলে। তারপর বই নিয়ে পড়তে বসলে। পড়ার সময় মা তোমাকে চা আর বিস্কুট দিল। তুমি তা খেলে। খেয়ে গোসল করতে গেলে। গোসল করতে গিয়ে দেখলে তোমাদের বাথরুমটা একটু নোংরা হয়ে আছে। তাই তুমি টয়লেট ক্লিনার দিয়ে টয়লেট পরিষ্কার করলে। গোসল করার সময় ব্যবহার করলে সুগন্ধি সাবান আর শ্যাম্পু। গোসল শেষে গায়ে একটু লোশন মেখে নিলে। তারপর সকালের নাশতা সেরে স্কুলে গেলে। স্কুলে শিক্ষক চক দিয়ে বোর্ডে লিখে তোমাদের পড়া বুঝিয়ে দিলেন। লক্ষ কর, তুমি যে জিনিসগুলো ব্যবহার করেছ যেমন– পেস্ট, ব্রাশ, বিস্কুট, টয়লেট ক্লিনার, সাবান, শ্যাম্পু, লোশন কিংবা চক সবই রসায়নের অবদান।

শুধু কি তাই? জমিকে উর্বর করার জন্য তৈরি করা হয়েছে সার। ক্ষেতের ফসল যেন পোকা-মাকড়ে নষ্ট না করে তার জন্য মানুষ তৈরি করেছে কীটনাশক (insecticides)। খাদ্যকে দীর্ঘ দিন সংরক্ষণ করার জন্য তৈরি করেছে প্রিজারভেটিভস (preservatives) জাতীয় রাসায়নিক পদার্থ। অর্থাৎ চাষাবাদ কিংবা খাদ্যের জন্য আমরা রসায়নের উপর নির্ভর করি।

আজ কলেরা, টাইফয়েড, যক্ষ্মা ইত্যাদি যে সমস্ত রোগ মানুষের জন্য অতি সাধারণ চিকিৎসাযোগ্য রোগ, একসময় এ ধরনের রোগেই লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা গেছে। রসায়নের জ্ঞান ব্যবহার করে মানুষ এ সকল রোগের ওষুধ সফলতার সাথে আবিষ্কার করেছে। এখন ওষুধের আবিষ্কার এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে ক্যানসারের মতো মরণব্যাধি থেকেও মানুষ অনেক ক্ষেত্রে রক্ষা পেয়েছে।

শিল্পকারখানা, যানবাহন, মানুষের ব্যবহার্য সামগ্রী থেকে প্রচুর পরিমাণে রাসায়নিক বর্জ্য আমাদের পরিবেশের ক্ষতিসাধন করছে। এর মাঝে রয়েছে কার্বন ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড, বিভিন্ন এসিড, বিভিন্ন ভারী ধাতু (যেমন- পারদ, লেড, আর্সেনিক, কোবাল্ট ইত্যাদি) সহ আরও অনেক ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য। এগুলো বায়ুর সাথে মিশে বায়ুদূষণ, পানির সাথে মিশে পানিদূষণ এবং অন্যান্য উপায়ে পরিবেশের ক্ষতিসাধন করেই চলেছে। এগুলো বিভিন্ন উদ্ভিদ বা মাছের শরীরে প্রবেশ করে তাদের ক্ষতিসাধন করছে। আবার বিভিন্ন ক্ষেত্রে অতিরিক্ত রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা আমাদের জন্য ক্ষতির কারণ।

যেমন— ফসলের ক্ষেতে ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় ধ্বংস করার কাজে কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। কিন্তু তা প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যবহার করলে ঐ অতিরিক্ত কীটনাশক বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে পুকুর, নদ-নদী, খাল-বিলের পানিতে গিয়ে পড়ে যা ঐ পানিকে দূষিত করে। আবার, বাতাসের সাথে মিশে বাতাসকে দূষিত করে অর্থাৎ কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহার পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। রসায়ন পাঠ করলে এ রকম প্রকৃতি ও বাস্তব জীবনের অনেক কিছুই তোমরা ব্যাখ্যা করতে পারবে।

তাহলে বুঝতে পারলে রসায়ন একদিকে যেমন অনেক প্রয়োজনীয় ও মূল্যবান জিনিস আবিষ্কার করছে, তেমনই তার অযৌক্তিক এবং অবিবেচকের মতো ব্যবহার পরিবেশেরও মারাত্মক ক্ষতিসাধন করছে। এখনো অনেক রোগের ওষুধ আবিষ্কার হয়নি। আরও রসায়ন অধ্যয়ন ও গবেষণা করে সেসব ওষুধ আবিষ্কারের চেষ্টা করা এখন আমাদের দায়িত্ব। কাজেই তোমরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো রসায়ন পাঠ করে একদিকে আমরা যেরকম মানবকল্যাণের জন্য প্রয়োজনীয় অনেক নতুন জিনিস তৈরি করতে পারব, একই সাথে পরিবেশের জন্য কোনটি ক্ষতিকর সেটি বুঝতে পারব। আর তোমরা রসায়ন অধ্যয়ন করে এ পৃথিবীকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। এটা তোমাদের কাছে সবার প্রত্যাশা।

Content added || updated By