সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ইসলাম শিক্ষা - আখলাক | NCTB BOOK

আখলাকে যামিমাহ অর্থ নিন্দনীয় চরিত্র বা মন্দ চরিত্র। মানুষের চরিত্রের খারাপ ও বর্জনীয় দিকগুলোই হলো আখলাকে যামিমাহ। মিথ্যাচার, প্রতারণা, ক্রোধ, লোভ লালসা, পরনিন্দা, মানুষকে কষ্ট দেয়া প্রভৃতি আখলাকে যামিমাহ-এর উদাহরণ । প্রিয় শিক্ষার্থী, চলো আমরা মানুষের নিন্দনীয় চরিত্র বা বর্জনীয় আচরণসমূহ সম্পর্কে জেনে নিই ।

মানুষকে কষ্ট দেওয়া

মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। আল কুরআনের ভাষায় মহান আল্লাহ তা'আলা বনী আদম তথা সকল মানুষকে সম্মানিত করেছেন। তাই কোনো মানুষকে অসম্মান করা মূলত মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। এই অপরাধ দুইভাবে হয়ে থাকে।

১. কথার মাধ্যমে

২. কাজের মাধ্যমে

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘যারা মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে পীড়া দেয়, এমন কোনো অপরাধের জন্য যা তারা করেনি; তারা অপবাদ ও স্পষ্ট পাপের বোঝা বহন করে।' (সূরা আহযাব’ আয়াত: ৫৮)

আমরা যদি আমাদের সমাজব্যবস্থার দিকে তাকাই, তাহলে দেখতে পাব মানুষ প্রতিনিয়ত ইচ্ছা-অনিচ্ছায় এ-জাতীয় পাপের সাথে জড়িত হচ্ছে। কথার মাধ্যমে কষ্ট দেওয়া বলতে বোঝায় কাউকে গালি দেওয়া, গিবত তথা পরনিন্দা করা, অপবাদ দেওয়া, ব্যাঙ্গ করা, খোঁটা দেওয়া ইত্যাদি।

কাজের মাধ্যমে কষ্ট দেওয়া বলতে বোঝায় প্রতারণা, জুলুম, রাস্তা বন্ধ করা, দোষ-ত্রুটি অনুসন্ধান, সম্পদ জবরদখল, শত্রুতা পোষণ, হত্যা করা, লেখনী ও ফেসবুকে অসম্মানজনক কথা লেখা ইত্যাদি।

এসব কথা ও কাজের মাধ্যমে মানুষকে মূলত কষ্ট দেওয়া হয়। অথচ মহানবি (সা.) বলেছেন, ‘মুসলমান হলো সেই ব্যক্তি যার জিহবা ও হাত থেকে অপর মুসলমান নিরাপদে থাকে।' (বুখারি) তাই প্রকৃত মুসলমান হতে হলে অপর মুসলমানকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন। এ ছাড়া মানুষের কষ্ট দূর করাকে হাদিসে ঈমানের অঙ্গ বলা হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ঈমানে সত্তরের বেশি শাখা প্রশাখা আছে। তার মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট শাখা হলো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা আর সর্বনিম্ন শাখা হলো রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা।' (ইবনে মাজাহ)

রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু দেখলে সরিয়ে ফেলতে হবে। না হলে নানা রকম দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। যেমন কেউ রাস্তায় কলার খোসা ফেলে রাখলে তা আমরা সরিয়ে রাখব। না হলে পথচারী পা পিছলে পড়ে যেতে পারে। তাই কাউকে আমরা কষ্ট দেবো না। আল্লাহ বলেছেন, ‘যারা বিশ্বাসী নর-নারীকে বিপদাপন্ন করেছে এবং পরে তওবা করে নাই তাদের জন্য আছে জাহান্নামের শাস্তি, আছে দহনযন্ত্রণা।' (সূরা বুরুজ, আয়াত: ১০)

বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে সারাবিশ্বে অবাধ তথ্যপ্রবাহ হচ্ছে। যেকোনো খবর মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে যাচ্ছে সারা বিশ্বে। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে ব্যবহার করে গুজব বা বিভিন্ন ভুল তথ্য প্রচার করে মানুষের মান সম্মানকে ক্ষুণ্ণ করা হচ্ছে যা ইসলামি চিন্তা-চেতনার বিরোধী। কেননা, মহানবি (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা মুসলমানদেরকে কষ্ট দেবে না, তাদেরকে লজ্জাও দিবে না এবং তাদের গোপন দোষ অনুসন্ধানে প্রবৃত্ত হবে না।' (তিরমিযি)

যারা মানুষকে কষ্ট দেয়, তারা দুনিয়া ও আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই পার্থিব জীবনে তাদের সাথে মানুষের সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে না। ফলে তাদের দুঃসময়ে কেউ পাশে দাঁড়ায় না। আখিরাতে তারা আমলশূন্য হয়ে আল্লাহর দরবারে হাজির হবে, যদিও তারা এই পৃথিবীতে অনেক ভালো কাজ করে। যেমন হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের উপর জুলুম করে, সে যেন তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয় তার ভাইয়ের পক্ষে তার নিকট হতে পুণ্য কেটে নেয়ার আগেই। কারণ, সেখানে কোনো দিনার বা দিরহাম নেই। তার কাছে যদি পুণ্য না থাকে তাহলে অত্যাচারিত ব্যক্তির পাপ এনে তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে।

অতএব প্রাত্যহিক জীবনে আমরা মিলেমিশে বসবাস করব। কাউকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকব।

প্রতারণা

প্রতারণা একটি অপরাধ। সমাজের চারিদিকে প্রতারণা ছড়িয়ে পড়েছে। ডিজিটাল ও প্রযুক্তির যুগে প্রতারণার ধরনও পাল্টাচ্ছে। যে রুপেই করা হোক না কেন, প্রতারণা একটি মারাত্মক অপরাধ। এর জন্য যেমন আইনি শান্তি রয়েছে, তেমনি ধর্মীয় শাস্তি আরও কঠিন ও ভয়াবহ। বর্তমানে একশ্রেণির মানুষ প্রতারণার মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করছে। আবার কিছু মানুষ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে প্রতারণা করছে। স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের নামেও অনেক মানুষ প্রতারণা করছে।

সমাজে কিছু লোক সুযোগ পেলেই প্রতারনার আশ্রয় নেয়। তারা জালিয়াতি ও মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে নানাভাবে প্রতারণা করে মানুষের ক্ষতি সাধন করে। বতর্মানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে ব্যবহার করেও প্রতারণা করছে একশ্রেণির প্রতারক চক্র। ইসলাম সকল প্রকার প্রতারণাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে মানব জীবনে সততা ও সত্যবাদিতার চর্চা করার গুরুত্বারোপ করে।

কেউ প্রতারণা করলেও আল্লাহ সে সম্পর্কে বেশি অবগত। তাই কারও সাথে কোনোভাবেই প্রতারণা করা যাবে না। আল্লাহ যে সকল বিষয়ে সর্বজ্ঞাত সে বিষয়ে ঘোষণা দিয়ে বলেছেন –

অর্থ: ‘আল্লাহ, নিশ্চয়ই আসমান ও যমিনে কিছুই তাঁর নিকট গোপন থাকে না।'(সূরা আলে-ইমরান, আয়াত: ৫)

অর্থ: ‘রাসুল (সা.) প্রতারণামূলক ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করেছেন।' (মুসলিম)

অন্য এক হাদিসে আছে। রাসুল (সা.) বলেন –

অর্থ: ‘প্রতারণার ঠিকানা জাহান্নাম।' (ইবনু হিব্বান )

রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও এক হাদিসে বলেন,

অর্থ: ‘যে ব্যক্তি প্রতারণা করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।' (মুসলিম )

এ সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, ওয়াসিলা ইবনুল আসকা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি: “যে ব্যক্তি কোনো দোষযুক্ত জিনিস বিক্রি করল, অথচ ক্রেতাকে তা অবগত করল না, সে সর্বদা আল্লাহর ক্ষোভে পতিত থাকবে, অথবা তিনি বলেছেন: ফিরিশতারা অনবরত তার ওপর অভিশাপ দিতে থাকবে।' (ইবনে মাজাহ )

মানবজীবনে সততা বজায় রাখলে তার পুরস্কার অবশ্যই পাওয়া যায়। মহান রাব্বুল আলামিন প্রত্যেক মানুষকে তার সততার পুরস্কার দেবেন। আমরা সর্বপ্রকার প্রতারণ থেকে নিজেকে বিরত রাখব এবং সৎ ও সুন্দরভাবে জীবনযাপন করব।

কাজ: প্রতারণা না করলে কি কি পুরস্কার পাওয়া যায় তার তালিকা তৈরি কর।

 

অপপ্রচার ও গুজব ছড়ানো

বর্তমান সমাজে অপপ্রচার ও গুজবের ভয়াবহতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। অপপ্রচার ও গুজবের মাধ্যমে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অস্থিরতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। তথ্য-প্রযুক্তির এই যুগে গুজব ছড়ানোর সবচেয়ে আলোচিত মাধ্যম হলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে গুজব দ্রুত দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে। বাজারে দ্রব্য মূল্যের দাম বৃদ্ধির অস্থিরতা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক অস্থিরতার মতো চরম অনাকাঙ্ক্ষিত গুজবও সৃষ্টি করা হচ্ছে।

গুজব রটানো ইসলামের দৃষ্টিতে সুস্পষ্ট নিষিদ্ধ কাজ। কারণ, কোনো বিষয়ের সঠিক জ্ঞান না থাকলে তা প্রচার করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম । পবিত্র কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তা'আলা বলেন,

অর্থ: ‘হে মুমিনগণ! যদি কোনো অবিশ্বস্ত লোক তোমাদের নিকট কোনো বার্তা আনয়ন করে, তোমরা তা পরীক্ষা করে দেখবে, পাছে অজ্ঞতাবশত তোমরা কোনো সম্প্রদায়কে ক্ষতিগ্রস্ত করে বসো এবং পরে তোমাদের কৃতকর্মের জন্য তোমাদেরকে অনুতপ্ত হতে হয়।' (সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ০৬)

উপরোক্ত আয়াত থেকে আমরা অনেক কিছুই শিখতে পারি। কোনো বিষয় আমাদের সামনে এলে সাথে সাথে তা প্রচার না করে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে ও বুঝে প্রচার করা ইসলামি দায়িত্ব ও কর্তব্য। সচেতন মানুষের এই দায়িত্বশীলতার দরুণ অন্য মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই না করে প্রচার করার ফলে নিজের ব্যক্তিত্ব ও সম্মান নষ্ট হয়ে যায়। সমাজে সবাই অবিশ্বাস করতে থাকে। হাদিসে এসেছে –

অর্থ: ‘কোনো ব্যক্তির মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত হওয়ার জন্য এতটুকু যথেষ্ট যে, সে কোনো কথা শোনা মাত্রই (যাচাই না করে) বলে বেড়ায়।' ( আবু দাউদ)

কাজ: অপপ্রচার ও গুজব ছড়ানোর পরিণতি কী হতে পারে তা জোড়ায় জোড়ায় আলোচনা করো।

 

খাদ্যে ভেজাল মেশানো

ভেজাল হচ্ছে নৈতিকতা ও মানবতাবিরোধী ঘৃণ্য এক অপরাধের নাম। কোনো সুস্থ মানুষ এ ধরনের অপরাধ করতে পারে না। আমাদের সমাজে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও মুনাফালোভী মানুষ রয়েছে যারা অধিক লাভের আশায় খাদ্যে ভেজাল দিয়ে থাকে। শুধু খাদ্যে নয় নানা দ্রব্যে এখন ভেজাল ও অসাধু পন্থা অবলম্বন করা হচ্ছে। খাদ্যে ভেজাল মেশানোর ফলে মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে। খাদ্যে ভেজাল মেশানের ফলে মানুষ মরণব্যাধি ক্যানসারেও আক্রান্ত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ইসলাম এ সমস্ত কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে, হযরত ইবন উমর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন – 

অর্থ: ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) একদিন এক স্তূপ খাদ্যসামগ্রীর পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন। যার মালিক একে খুব পরিপাটি করে সাজিয়ে রেখেছিল এবং এর প্রশংসা করছিল। তিনি এতে হাত ঢুকিয়ে দিলেন। দেখা গেল যে, এর ভিতরে নিম্নমানের খাদ্যও রয়েছে। তিনি তখন বললেন, এটি পৃথকভাবে বিক্রি করো। কেননা, যে আমাদের সাথে প্রতারণা করে সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।’(আহমাদ)

কাজ ১: শিক্ষকের নেতৃত্বে দলগতভাবে সবাই মিলে খাদ্যে ভেজাল মেশানো-সংক্রান্ত ইসলামের নির্দেশনাগুলো ব্যবসায়ীদের অবগতকরণ সংক্রান্ত চর্চা।

কাজ ২: ছোট ছোট কিউ কার্ডের মাধ্যমে ভেজাল মেশানোর নেতিবাচক দিক লিখন ও তা সবাইকে বিতরণ।

 

অহংকার

অহংকার-এর বাংলা প্রতিশব্দ অহমিকা, বড়াই, গর্ব, দম্ভ, আত্মম্ভরিতা ইত্যাদি। এর আরবি নাম আল-কিবর-যার অর্থ বড়ত্ব, নিজেকে অন্যের চেয়ে বড় মনে করা। পরিভাষায় অহংকার হলো—অন্য কোনো মানুষ থেকে কোনো দিক থেকে নিজেকে বড়, উত্তম বা উন্নত মনে করা অথবা কাউকে কোনোভাবে নিজের চেয়ে হেয় মনে করা। হাদিসের ভাষায় –

অর্থ: ‘অহংকার হলো সত্যকে দম্ভের সাথে পরিত্যাগ করা এবং মানুষকে তুচ্ছ জ্ঞান করা।' (মুসলিম)

অহংকারের পরিণতি

মানব চরিত্রের নিন্দনীয় দিক সমূহের মাঝে অহংকার একটি অত্যন্ত জঘন্য দিক। এটি সর্বাধিক নিন্দনীয় স্বভাব। এটি মানব স্বভাবে লুকিয়ে থাকা ছয়টি রিপুর মাঝে একটি। অহংকার একটি নিন্দনীয় মানসিক অনুভূতি। তবে কথা, কাজ ও চাল-চলনের মাধ্যমে এর বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এটি একটি মারাত্মক পাপ এবং এটি কুফরিসহ আরও অনেক পাপের মূল উৎস। বলা হয়, অহংকার হচ্ছে এ জগতের প্রথম পাপ। ইহকাল ও পরকালে অহংকারের অনিষ্ঠতা ভয়াবহ। তাই একে পরিহার করা অত্যাবশ্যক।

অহংকারীকে যেমন আল্লাহ তা'আলা ভালোবাসেন না তেমনি মানুষও তাকে পছন্দ করে না। আল-কুরআনে মহান আল্লাহ অহংকারীদের অপছন্দ করার কথা বারবার জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন –

অর্থ: ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ পছন্দ করেন না যারা দাম্ভিক, অহংকারী।' (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩৬)

অহংকার করে অতীতে বহু জাতি-গোষ্ঠী ধ্বংস হয়ে গেছে। আল-কুরআনে বর্ণিত আদ, সামুদ, ইরাম এবং অন্যান্য অমিত শক্তিধর ও প্রভাব-প্রতিপত্তিশালী জাতিসমূহের ধ্বংসের অন্যতম কারণ ছিল অহংকার আর সীমালঙ্ঘন। ফিরাউন ও নমরুদও অহংকার আর বাড়াবাড়ি করেই ধ্বংস হয়েছে। অহংকার মানুষের মনুষ্যত্বকে ধ্বংস করে দেয়। অহংকারের কারণেই ইবলিস অভিশপ্ত 

বিতাড়িত শয়তানে পরিণত হয়েছিল। তাই অহংকার পতনের মূল।

অহংকার আগুন সদৃশ যা মানুষের অন্যান্য সৎ গুণাবলিকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দেয়। মানব চরিত্রে অহংকার প্রবল হলে তখন তার হিতাহিত জ্ঞান হ্রাস পায় এবং তার সুস্থ-স্বাভাবিক বিবেক ও বোধশক্তি লোপ পায়। ফলে সে নিজের চাল-চলন, কথাবার্তা, আচার-আচরণ সব কিছুর উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যা খুশি তা-ই করতে শুরু করে। পরিণতিতে দুনিয়াতে সে পদে পদে লাঞ্ছিত ও অপমানিত হতে থাকে। মানুষ তাকে ঘৃণা করে এবং তার থেকে দূরে চলে যায়।

অহংকারী ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না বরং তাদের জন্য এ জীবনে রয়েছে মর্মন্তুদ ও অপমানজনক শাস্তির ব্যবস্থা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হাশরের ময়দানে অহংকারী লোকগুলো পিঁপড়ার মতো করে জড়ো হবে। আপমান তাদের চারদিক হতে ঘিরে ধরবে। তাদেরকে জাহান্নামের এমন একটি স্থানে নিয়ে যাওয়া হবে যার নাম বা’লাস, তার মধ্য থেকে সবচেয়ে উত্তপ্ত অগ্নিশিখা উঠবে এবং তাদেরকে জাহান্নামীদের পুঁজ রক্ত পান করতে দেওয়া হবে, যার নাম তিনাত আল খাবাল।’(তিরমিযি)

হাদিস শরীফে রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন –

অর্থ: ‘ঐ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না যার অন্তরে অনু পরিমাণ অহংকার রয়েছে।' (মুসলিম)

অহংকার মানবতার পরিপন্থী কাজ। মানুষের ধন-দৌলত,বিত্ত-বৈভব, সন্তান-সন্তুতি, রূপ-সৌন্দর্য, জ্ঞান-গরিমা, শক্তি-সামর্থ্য-সব কিছুই আল্লাহ তা'আলার দান। তাই অহংকার করার মতো মানুষের নিজের কিছুই নেই। অহংকার একমাত্র মহান আল্লাহর অধিকার। এ জন্য তাঁর এক নাম ‘আল মুতাকাব্বির’ বা আত্মঅহংকারী। অর্থাৎ মুতাকাব্বির বলা হয় সেই মহান সত্তাকে যাঁর জন্যই কেবল অহংকার, দর্প,গর্ব, শ্রেষ্ঠত্ব, মহত্ত্ব সুনির্দিষ্ট।

ইসলাম সব ধরনের অহংকার থেকে দূরে থাকতে নির্দেশ দিয়েছে। মহান আল্লাহ মানুষকে অহংকার পরিহার করে বিনয়ী ও নম্র হওয়ার প্রতি তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ভূপৃষ্ঠে দম্ভভরে বিচরণ করো না; তুমি তো কখনোই পদভারে ভূপৃষ্ঠ বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বতপ্রমাণ হতে পারবে না।' (সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত: ৩৭)

আমরা সব ধরনের অহংকার পরিহার করে চলব। বিশেষত অহংকারবশে মানুষকে অবজ্ঞা করব না; উদ্ধতভাবে চলাফেরা করব না; বরং সংযতভাবে চলাফেরা করব এবং সবার সাথে নিচু স্বরে বিনম্র ভাষায় কথা বলব।

কাজ: যেসব আচরণ ও কাজের মাধ্যমে অহংকার প্রকাশ পায়, জোড়ায় কাজের মাধ্যমে তার একটি তালিকা তৈরি করে সেসব আচরণ ও কাজ থেকে মুক্ত থাকতে তোমার প্রতিশ্রুতিমূলক বক্তব্য বন্ধুদের সামনে তুলে ধরো।

 

হিংসা

হিংসা মানব চরিত্রের এক জঘন্যতম দিক। মানুষে মানুষে কলহের বীজ বপন করে এই হিংসা। প্রকৃতপক্ষে হিংসা অর্থ অন্যের উন্নতি ও কল্যাণ সহ্য করতে না পারা, অন্যের প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করা ইত্যাদি এটিকে পরশ্রিকাতরতাও বলা হয়। ইসলামি পরিভাষায় অপরের ভালো কিছু দেখে তা ধ্বংস কামনা করা ও নিজে এর অধিকারী হওয়ার বাসনা করা। আরবি ভাষায় হিংসা শব্দটি হাসাদ হিসেবে সর্বাধিক পরিচিত। মহানবি (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা পরস্পর হিংসা করো না, একে অন্যের প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণ করবে না এবং পরস্পর বিরুদ্ধাচরণ করবে না। বরং সবাই আল্লাহর বান্দা, পরস্পর ভাইভাই হয়ে থাকবে।' (বুখারি ও মুসলিম)

নেতিবাচক প্রভাব: হিংসা একটি মানসিক রোগ। এই রোগ থেকে আরও অনেক রোগের উৎপত্তি হতে পারে। তাই বর্তমানে গবেষকরা শান্তিময় জীবন লাভের জন্য হিংসা-বিদ্বেষ পরিত্যাগের পরামর্শ দেন। আরবিতে একটি প্রবাদ আছে الغيرة تحترق بنار الغيرة অর্থাৎ হিংসুক হিংসার আগুনে জ্বলে। তাই হিংসুকের জীবনে দুর্দশা নেমে আসে। ইসলামের আলোকে চিন্তা করলে হিংসুকের ইমানও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়। যেমন মহানবি (সা.) বলেছেন, ‘কোনো বান্দার কলবে (হৃদয়ে) ইমান ও হিংসা একসাথে থাকতে পারে না।' (নাসাঈ) সাধারণত আমরা অনেক কষ্ট করে সৎকর্মসমূহ সম্পাদন করি। যদি আমরা মনে হিংসা লালন করি, তাহলে সৎকর্মসমূহ নষ্ট হয়ে যাবে। সুতরাং মহানবি (সা.) আমাদেরকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেন, “তোমরা হিংসা থেকে বেঁচে থাকো। কেননা, আগুন যেমন লাকড়ি গ্রাস করে পুড়িয়ে দেয়, হিংসা ও তেমনি মানুষের সৎকর্মসমূহকে গ্রাস করে বা নষ্ট করে দেয় (আবু দাউদ) শুধু তাই নয় হিংসুক ব্যক্তিকে বিশেষ ক্ষমার রাতেও ক্ষমা করা হয় না। যেমন মহানবি (সা.) বলেছেন, শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাতে (১৪ শাবান দিবাগত রাতে) বা শবে বরাতে মহান আল্লাহ তা'আলা তার বান্দাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করেন এবং সব বান্দাকে ক্ষমা করেন, শুধু শিরকে লিপ্ত ব্যক্তি এবং ঐ ব্যক্তি যে অন্য(মুসলিম) ভাইয়ের সাথে বিদ্বেষ পোষণ করে তাকে ছাড়া।' (সিলসিলাতুল আহাদিস সাহিহ)।

হিংসা পরিত্যাগের সুফল: হিংসা পরিত্যাগ করলে জীবনের সমগ্র সুখ ও শান্তি বিরাজমান থাকে। জাতীয় ঐক্য গড়ে ওঠে। দেশ ও জাতি সমৃদ্ধি অর্জন করে। আর একজন মুসলিমের চুড়ান্ত সফলতা হলো, আখিরাতের সফলতা। হিংসা বিদ্বেষ পরিত্যাগের মাধ্যমে একজন মুমিন এই চুড়ান্ত সফলতা অর্জন করতে সমর্থ হয়। প্রিয়নবি (সা.) একদা এক সাহাবিকে জান্নাতি বলে ঘোষণা করেন। তিনি কী আমল করেন এসম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি (জান্নাতি সাহাবি) উত্তরে বলেন, আল্লাহ তা'আলা যাকে কোনো উত্তম বস্তু দান করেছেন, আমি তার প্রতি কখনই হিংসা পোষণ করি না। (ইবনে মাজাহ)

হিংসা পরিত্যাগের উপায়

১. প্রতিদিন মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করা; যেমন আল কুরআনে বর্ণিত হয়েছে

অর্থ: ‘আর হিংসুকের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই যখন সে হিংসা করে।' (সূরা আল-ফালাক, আয়াত: ৫)

২. বেশি বেশি সালামের প্রচলন ঘটানো। হাদিসের আলোকে সালামের প্রচলন হলে পারস্পরিক ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে। হিংসা কমে যাবে।

৩. সম্ভব হলে শরিয়ত সম্মত হাদিয়ার (উপহার) আদান-প্রদান করা। রাসুল (সা.) বলেছে, ‘তোমরা পরস্পর হাদিয়া দাও এতে তোমাদের মাঝে ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে।'

ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে হিংসা সম্পূর্ণরূপে হারাম (নিষিদ্ধ)। অতএব, আমরা এই হিংসা থেকে বাঁচার চেষ্টা করব।

 

ক্রোধ

ক্রোধের শাব্দিক অর্থ রাগ। এটা একটি খুবই শক্তিশালী নেতিবাচক আবেগ। মানুষের আশা ভঙ্গ, নিষ্ফলতা ও ব্যর্থতায় ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হলো ক্রোধ। সাধারণত ঝগড়া, তিরস্কার ও অহংকারের ফলে ক্রোধের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। এই ক্রোধের ফলে জীবনে নেমে আসতে পারে চরম বিপর্যয়।

ক্রোধের অপকারিতা: মানুষের নিন্দনীয় চরিত্রের অন্যতম হলো ক্রোধ। ক্রোধের সময় মানুষের হিতাহিত জ্ঞান লোপ পায়। তাই সে অসংযত হয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটায়। এ কথা সত্য যে রাগ জীবন থেকে কিছু না কিছু কেড়ে নেয়। ক্ষেত্র বিশেষে রাগ প্রদর্শন প্রয়োজন হয়। তবে এর অপব্যবহারে এমনকি এই ক্রোধ আমাদের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ ইমানকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। যেমন- মহানবি (সা.) বলেছেন, ‘সিরকা মধুকে যেমন নষ্ট করে, ক্রোধও ইমানকে নষ্ট করে।’(বায়হাকি) একদা এক সাহাবি আমাদের প্রিয় মহানবি (সা.) কে বলেছেন, ‘আপনি আমাকে কিছু ভালো কাজের নির্দেশনা দিন। তিনি বললেন, ‘তুমি রাগ করো না'। এই ব্যক্তি (সাহাবি) কয়েকবার এই পরামর্শ চাইলেন কিন্তু নবিজি (সা.) প্রতিবারই বলেলেন, রাগ করোনা।' (বুখারি) 

ক্রোধ সংবরণের উপকারিতা: মুমিন জীবনের সফলতা হলো আখিরাতে মুক্তির মাধ্যমে অর্জিত হয়। যারা নিজেদের ক্রোধকে সংবরণ করতে পারে তাদের জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ওয়াদা হলো জান্নাত। যেমন- মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা ধাবমান হও স্বীয় প্রতিপালকের ক্ষমার দিকে এবং সেই জান্নাতের দিকে যার বিস্তৃতি, যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় ব্যয় করে এবং যারা ক্রোধ সংবরণকারী এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল, আল্লাহ সৎকর্ম পরায়ণদের ভালোবাসেন।' (আল ইমরান, আয়াত: ১৩৪)। এছাড়া ক্রোধ সংবরণ করা একটি সাহসিকতাপূর্ণ কাজ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন-

অর্থ: ‘সে প্রকৃতবীর নয় যে কুস্তিযুদ্ধে খুব লড়তে পারে। বরং সেই প্রকৃত বীর যে ক্রোধের সময় নিজেকে সংযত রাখতে পারে।' (বুখারি ও মুসলিম) এক গবেষণায় দেখা গেছে যারা ক্রোধ লালন করে না তাদের শারীরিক রোগ-ব্যাধি কম হয়।

ক্রোধ দমনের উপায়: পবিত্র হাদিসের আলোকে ক্রোধ দমনের উপায়গুলো নিম্নরূপ –

১. অযু করা। মহানবি (সা.) বলেছেন, ‘ক্রোধ শয়তানের পক্ষ থেকে আসে। শয়তান হলো আগুনের তৈরি। আর আগুনকে ঠান্ডা করে পানি। যদি কারও ক্রোধ বা রাগ আসে তার উচিত অযু করে নেওয়া।' (বুখারি)

২. স্থান পরিবর্তন করা। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তোমাদের কারও রাগ আসে, তখন দাঁড়ানো অবস্থায় থাকলে বসে পড়বে। তাতেও যদি রাগ না কমে, তাহলে সে যেন শুয়ে পড়ে।

৩. আউজুবিল্লাহ পড়া। মহানবি (সা.) রাগ কমানোর জন্য আউজুবিল্লাহ পড়ার উপদেশ দিতেন, যা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।

৪. চুপ থাকা। মহানবি (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা শিক্ষা দাও এবং সহজ করো। দ্বীনের বিষয়ে কঠিন করে না। যখন রাগান্বিত হও তখন চুপ থাকো, যখন রাগান্বিত হও চুপ থাকো, যখন রাগান্বিত হও চুপ থাকো। (মুসনাদ আহমদ)

অতএব আমরা ক্রোধের ভয়াবহতা উপলব্ধি করব। ক্রোধ বর্জন করে সুখে থাকব।

 

লোভ

মানুষের খারাপ অভ্যাসগুলোর মধ্যে লোভ অন্যতম। লোভ মানুষকে অধঃপতনের দিকে নিয়ে যায়। একজন লোভী মানুষ সকল কিছুতেই লোভ করতে থাকে। সে কোনো কিছুতে তৃপ্ত হয় না। দুনিয়ার যে কোনো জিনিস পায় না কেননা সে আরও পেতে চায়। যার ফলে সে কোনো দিন সুখী হতে পারে না। উদাহরণস্বরূপ একজন মানুষের যদি একটি জামা থাকে, তাহলে সে আরও একটি জামা পেতে চায়। এভাবে একটি পাবার পরে সে আরও পেতে চায়। একপর্যায়ে সে যখন অনেক জামার মালিক হয়ে যায় সে তখন আরও জামা পেতে চায়। সে কখনো শুকরিয়া আদায় করে না। এভাবে করে একজন মানুষ তার নৈতিকতা হারায়। মানবজীবনে এভাবে প্রতিটি কাজে মানুষ লোভ করতে থাকে। একজন মুমিন বান্দা কখনো লোভী হবে না। আল্লাহ যে নিয়ামত দিয়েছেন তাতে সে শুকরিয়া আদায় করবে। একই সাথে চেষ্টা করে যাবে যাতে ভাগ্যের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারে। এর ফলে নিজের ভাগ্য উন্নয়ন হবে এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন সম্ভব হবে। কেননা, মানব জীবন সংক্ষিপ্ত। মানুষের সংক্ষিপ্ত জীবনে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারলে ইহকাল ও পরকাল উভয়ই কল্যাণ নিশ্চিত হবে।

লোভী ব্যক্তি নিজের অবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে চায় না। তার কাছে যা আছে তাতে সে সুখী হয় না। সে অন্যায়ভাবে আরও পেতে চায়। অতিরিক্ত কিছু পাওয়ার আকাঙ্ক্ষায় অবৈধভাবে উপার্জনের দিকে হাত বাড়ায়। লোভ মানুষকে পাপের দিকে নিয়ে যায় আর পাপ জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। সম্পদ ও উচ্চভিলাসী জীবন- যাপনের বিষয়ে মানুষকে সতর্ক করে আল-কুরআনে নির্দেশনা এসেছে। কুরআন শরিফের সূরা তাকাসূরে মহান রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে মোহাচ্ছন্ন রাখে, যতক্ষণ না তোমরা কবরে উপনীত হও।' (সূরা তাকাসুর, আয়াত: ১-২)

লোভ ও লালসা করাকে ইসলামে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা লোভ-লালসা থেকে বেঁচে থাকো, কেননা, এ জিনিসই তোমাদের পূর্ববর্তীদের ধ্বংস করেছে এবং পরস্পর রক্তপাত ঘটানোর ব্যাপারে উসকিয়ে দিয়েছে। লোভ-লালসার কারণেই তারা হারামকে হালাল সাব্যস্ত করেছে।' (মুসলিম)

 

কাজ: লোভের নেতিবাচক দিকসমূহ নিয়ে জোড়ায় জোড়ায় কথোপকথন ।

 

এতক্ষণ আমরা বেশ কিছু আখলাকে হামিদাহ এবং আখোলাকে যামিমাহ সম্পর্কে জানলাম। এবার তাহলে আখলাকে হামিদাহ অনুশীলন এবং আখলাকে যামিমাহ থেকে বিরত থাকার পালা। সপ্তম শ্রেণির আর যেটুকু সময় বাকি সেটুকু সময়ে তুমি শ্রেণিকক্ষে সহপাঠী বন্ধুদের সাথে এবং বিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে আখলাকে হামিদাহ এর চর্চা করবে। অর্থাৎ ষষ্ঠ এবং সপ্তম শ্রেণি থেকে যে যে আখলাকে হামিদাহ এর বিষয়ে পড়ে ও শিখে এসেছ, সেগুলো এবার বাস্তবে প্রয়োগ করবে। শিক্ষক এ বিষয়ে তোমাকে সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়ে সহায়তা করবেন।

Content added By

আরও দেখুন...