অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা - ইবাদত | NCTB BOOK

যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত সাতটি । শর্তগুলোর বিবরণ নিচে দেওয়া হলো : 

১. মুসলমান হওয়া : যাকাত ফরজ হওয়ার প্রথম শর্ত হলো মুসলমান হওয়া। অমুসলিমদের উপর যাকাত ফরজ নয়। কাজেই কোনো ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করলে তাকে তার অতীত জীবনের যাকাত দিতে হবে না । যেদিন মুসলমান হবে সেদিন থেকে হিসাব করে যাকাত দিতে হবে।

২. নিসাবের মালিক হওয়া : যে পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে শরিয়তে যাকাত ফরজ হয়, সে পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া।

৩. নিসাব পরিমাণ সম্পদ প্রয়োজনের অতিরিক্ত হওয়া : যেসব দ্রব্যের উপর মানুষের জীবনযাপন নির্ভর করে, সেসব জিনিসপত্রকে প্রয়োজনীয় দ্রব্য বলে। যেমন : খাওয়া-দাওয়া, পোশাক-পরিচ্ছদ, বসবাসের বাড়িঘর, পেশাজীবীর যন্ত্রপাতি ইত্যাদি। যানবাহনের নৌকা, সাইকেল, মোটর, পশু, কৃষিকাজের সরঞ্জাম, পড়ালেখার সরঞ্জাম এসবও প্রয়োজনীয় জিনিসের অন্তর্ভুক্ত। এগুলোর উপর যাকাত ফরজ হবে না।

8. ঋণগ্রস্ত না হওয়া : ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলেও তার উপর যাকাত ফরজ হবে না। কারণ সে জীবনধারণের মৌলিক প্রয়োজনেই ঋণ গ্রহণ করেছে। তবে ঋণ পরিশোধ করার পর যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদ কারো হাতে থাকে তাহলে তাকে যাকাত দিতে হবে।

৫. মাল এক বছরকাল স্থায়ী থাকা : নিসাব পরিমাণ সম্পদ ব্যক্তির হাতে এক বছর কাল স্থায়ী না হলে, তার উপর যাকাত ফরজ হয় না। হাদিসে আছে, “ঐ সম্পদে যাকাত নেই যা পূর্ণ এক বছর মালিকানায় না থাকে।” (ইবনে মাজাহ)

৬. জ্ঞানসম্পন্ন হওয়া : যাকাত ফরজ হওয়ার অন্যতম শর্ত হচ্ছে জ্ঞানসম্পন্ন হওয়া । জ্ঞানবুদ্ধিহীন তথা পাগলের উপর যাকাত ফরজ নয়।

৭. বালেগ হওয়া : যাকাতদাতাকে অবশ্যই বালেগ তথা প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে। শিশু, নাবালেগ যত সম্পদের মালিকই হোক না কেন, বালেগ হওয়ার পূর্বে তার উপর যাকাত ফরজ হয় না।

 

যাকাতের নিসাব 
‘নিসাব' আরবি শব্দ। এর অর্থ নির্ধারিত পরিমাণ। শরিয়তের পরিভাষায় যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য সম্পদের নির্ধারিত পরিমাণকে নিসাব বলে। সারাবছর জীবনযাত্রার প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহের পর বছর শেষে যার হাতে নিসাব পরিমাণ সম্পদ উদ্বৃত্ত থাকে তাকে বলা হয় সাহিবে নিসাব বা নিসাবের মালিক । আর সাহিবে নিসাবের উপরই যাকাত ফরজ । নিসাবের পরিমাণ হলো, সোনা কমপক্ষে সাড়ে সাত তোলা অথবা রুপা কমপক্ষে সাড়ে বায়ান্ন তোলা অথবা ঐ মূল্যের অর্থ বা সম্পদ। ঐ পরিমাণ সম্পদ কারো নিকট পূর্ণ এক বছরকাল স্থায়ী থাকলে ঐ সোনা, রুপা বা সম্পদের মূল্যের চল্লিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত হিসাবে দেওয়া ফরজ। কিন্তু সম্পদ নিসাবের কম থাকলে যাকাত দেওয়া ফরজ নয়। এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই সম্পদ নষ্ট হয়ে গেলে যাকাত দিতে হবে না। কারো হাতে যদি বছরের প্রথমে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে, বছরের মাঝে কোনো কারণে নিসাব হতে কমে যায় এবং বছর শেষে আবার নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়ে গেলে তাকে যাকাত দিতে হবে।

স্ত্রীলোকের ব্যবহার্য সোনা, রুপার অলংকার জীবনের আবশ্যকীয় মৌলিক বস্তুর অন্তর্ভুক্ত নয়। কাজেই অলংকার নিসাব পরিমাণ হলে তাকে যাকাত দিতে হবে। সোনা, রুপা ব্যতীত অন্য কোনো ধাতু যথা: তামা, কাঁসা, পিতল ইত্যাদি ব্যবহার্য জিনিস হিসাবে থাকলে যাকাত দিতে হবে না। তবে ব্যবসায়ের সামগ্রী হলে যাকাত দিতে হবে। এর জন্য শর্ত হচ্ছে এসব সামগ্রী এক বছরকাল হাতে স্থায়ী থাকা এবং নিসাব পরিমাণ হওয়া।

উৎপন্ন শস্যের যাকাত
ধান, গম, যব, খেজুর ইত্যাদি শস্য সেচ প্রদান ছাড়া বৃষ্টির পানিতে জন্মালে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সব ফসলের দশ ভাগের এক ভাগ যাকাত আদায় করতে হবে। একে উশর বলা হয়। আর সেচ ব্যবস্থায় উৎপন্ন ফসলের বিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত আদায় করতে হয়।

কাজ : শিক্ষার্থীরা দলে বিভক্ত হয়ে যাকাতের নিসাব সম্পর্কে আলোচনা করবে।
Content added || updated By