কোনটি অ্যাসিলোমেট প্রাণি?

Created: 2 years ago | Updated: 2 years ago
Updated: 2 years ago


প্রাণীর শ্রেণীবিন্যাসের ভিত্তি (Basis of Animal Classification):

১.দেহের আকার (Body shape):

ক. অণুবীক্ষণিক প্রাণী (Macro-animal) : এসব প্রাণী এত ক্ষুদ্র যে অণুবীক্ষণযন্ত্র ছাড়া দেখা যায় না। যেমন- মাছের ফুলকার প্রোটিস্টার জীবাণু Trichodina anabasi ।


খ. বৃহত্তর প্রাণী (Macro-animal) : এসব প্রাণী আকারে বড় এবং খালি চোখে ভালোভাবে দেখা যায়। যেমন- Cavia porecellus (গিনিপিগ)।


২.সংগঠন ক্রমমাত্রা (Grades of organization):

ক. কোষীয় মাত্রার গঠন (Cellular grade of organization) : যে দেহগঠনে কিছু কোষ সম্মিলিত হয়ে নির্দিষ্ট কাজ করে সে ধরণের দেহগঠনকে কোষীয় মাত্রার গঠন বলে। এক্ষেত্রে এক ধরণের শ্রম বিভাজন দেখা যায়, যেমন কিছু কোষ জনন কাজে, অন্য কোষগুলো পুষ্টি সংক্রান্ত কাজে ব্যস্ত থাকে। Porifera পর্বভুক্ত প্রাণী এ ধরনের গঠন সম্বলিত সদস্য।

খ. কোষ টিস্যু মাত্রার গঠন (cell-tissue grade of organization) : সদৃশ কোষগুলো যখন একটি অভিন্ন কাজ সম্পন্নের জন্য সুনির্দিষ্ট প্যাটার্ন বা স্তরে গোষ্ঠীবদ্ধ বিন্যস্ত হয়ে টিস্যু নির্মাণ করে সে ধরণের গড়নকে কোষ-টিস্যু মাত্রার গঠন বলে।  


গ. টিস্যু-অঙ্গ মাত্রার গঠন (Tissue-organ grade of organization) : স্বচ্ছন্দ জীবনযাপনের জন্য যখন একাধিক টিস্যু-নির্মিত বিভিন্ন অঙ্গের সমাহার ঘটে তখন সে গঠনকে টিস্যু-অঙ্গ মাত্রার গঠন বলে। Platyhelminthes পর্বভুক্ত প্রাণীদেহে এ গঠন মাত্রা সর্বপ্রথম আবির্ভূত হয়েছে। এক্ষেত্রে চক্ষুবিন্দু, প্রোবোসিস, জননাঙ্গ ইত্যাদি টিস্যু-অঙ্গ মাত্রার গঠনের উদাহরণ।


ঘ. অঙ্গ-তন্ত্র মাত্রার গঠন (Organ-sytem grade of organization) : উচ্চতর প্রাণীগোষ্ঠীতে এ ধরনের গঠন দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে অঙ্গগুলো একত্রে কিছু কাজ সম্পাদনের জন্য অঙ্গ-তন্ত্র (organ system) সৃষ্টির মাধ্যমে দেহকে সর্বোচ্চ মাত্রার গঠনে উন্নত করেছে। তন্ত্রগুলো (systems) দেহে শ্বসন, সংবহন, পরিপাক প্রভৃতি মৌলিক কাজের সঙ্গে জড়িত থাকে। অধিকাংশ পর্বে (Phyla) এ ধরনের গঠন দেখা যায়। এ মাত্রার গঠন সসর্বপ্রথম আবির্ভূত হয়েছে নিমারটিয়ান (Nemartean) নামক এক সামুদ্রিক প্রাণীগোষ্ঠীতে।


৩.জীবন পদ্ধতি (way of living):

ক. মুক্তজীবী (Free living) : এসব প্রাণী স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ায় এবং এরা পারস্পরিক সহযোগিতা বা সাহচর্যে বাস করে না। যেমন- কবুতর (Columba livia)


খ. পরজীবি (Parasite) : এসব প্রাণী খাদ্যের জন্য অন্য প্রাণীর দেহে আশ্রয় গ্রহণ করে এবং আশ্রয়দাতার দেহ থেকে খাদ্য শোষণ করে বেঁচে থাকে। যেমন- যকৃত কৃমি (Fasciola hepatica)।


৪.ক্লিভেজ ও ভ্রূণীয় বিকাশ (Cleavage and Development): যে প্রক্রিয়ায় যৌন জননকারী প্রাণীর এককোষী জাইগোট মাইটোসিস কোষ বিভক্তির মাধ্যমে বিভাজিত হয়ে অসংখ্য বহুকোষী ভ্রূণ সৃষ্টি করে তাকে ক্লিভেজ বা সম্ভেদ বলে। ডিমে কুসুমের পরিমাণের ভিত্তিতে ক্লিভেজ সম্পূর্ণ বা হলোব্লাস্টিক (holoblastic) কিংবা আংশিক বা মেরোব্লাসটিক (meroblastic) হতে পারে।

বিভাজন তলের উপর ভিত্তি করে ক্লিভেজ নিচে বর্ণিত তিন ধরনের –

অরীয় ক্লিভেজ (Radial cleavage) : এ ধরনের ক্লিভেজে বিভাজন তলগুলো জাইগোটকে সবসময় সুষম ও অরীয়ভাবে ভাগ করে। এর ফলে উৎপন্ন ব্লাস্টোমিয়ারগুলো সুষম আকৃতির ও অরীয়ভাবে সাজানো হয়। উদাহরণ : Arthropoda পর্বের প্রাণীদের ক্লিভেজ।

দ্বিপার্শ্বীয় ক্লিভেজ (Bilateral cleavage) : এ ধরনের ক্লিভেজে দ্বিতীয় বিভাজন পর্যন্ত অরীয় ক্লিভেজ ঘটে কিন্তু তৃতীয় বিভাজন হতে মধ্য রেখা বরাবর অনুপ্রস্থভাবে ক্লিভেজ সম্পন্ন হয়। এর ফলে চারটি করে দুই সারি কোষ সৃষ্টি হওয়ায় দ্বি-পার্শ্বীয় প্রতিসাম্যতা দেখা দেয়। উদাহরণ : Chordata পর্বের প্রাণীদের ক্লিভেজ।

সর্পিল ক্লিভেজ (Spiral cleavage) : এ ধরনের ক্লিভেজও দ্বিতীয় বিভাজন পর্যন্ত অরীয় ক্লিভেজ ঘটে এবং তৃতীয় বিভাজন হতে চক্রাকার ঘুর্ণনের ফলে অ্যানিমেল মেরুর (animal pole) ব্লাস্টোমিয়ারগুলো, ভেজিটাল মেরু হয়। উদাহরণ : Annelida ও Mullusca পর্বের প্রাণীদের ক্লিভেজ।


৫.ভ্রূণস্তর (Germ layers):

ক. দ্বিস্তরী বা দ্বিভ্রূণস্তরী প্রাণী (Diploblastic animal) : যেসব প্রাণীর ভ্রূণের গ্যাস্ট্রুলা পর্যায়েকোষগুলো এক্টোডার্ম ও এন্ডোডার্ম নামক দুটি স্তরে বিন্যস্ত থাকে। স্তরদুটির মাঝে থাকে আঠালো জেলির মতো অকোষীয় মেসোগ্লিয়া (mesoglea)। Cnidaria পর্বের প্রাণীরা দ্বিস্তরী (যেমন- Hydra)


খ. ত্রিস্তরী বা ত্রিভ্রূণস্তরী প্রাণী (Triploblastic animal) : ভ্রূণে গ্যাস্ট্রুলা পর্যায়ে কোষগুলো তিনটি কোষীয় স্তরে বিন্যাস্ত থাকে। তিনটি স্তরের মধ্যে বাইরের স্তরটিকে এক্টোডার্ম (ectoderm), মাঝেরটিকে মেসোডার্ম (mesoderm) এবং ভিতরেরটিকে এন্ডোডার্ম (endoderm) বলে। Platyhelminthes (ফিতাকৃমি- Taenia solium) থেকে শুরু করে Chordata (মানুষ – Homo sapiens) পর্ব পর্যন্ত প্রাণী সকল প্রাণী ত্রিস্তরী।

৬.প্রতিসাম্য (Symmetry): প্রতিসাম্য বলতে প্রাণীদেহের মধ্যরেখীয় তলের দুপাশে সদৃশ বা সমান আকার-আকৃতিবিশিষ্ট অংশের অবস্থানকে বোঝায়।


ক. গোলীয় প্রতিসাম্য (Spherical symmetry) : একটি গোলককে যেভাবে কেন্দ্রের মধ্য দিয়ে অতিক্রান্ত যে কোনো তল বরাবর সদৃশ বা সমান অংশে ভাগ করা যায়। যেমন-Vlovox globator. (ফটোসিন্থেটিক প্রোটিস্ট)।এছাড়া Radiolaria (উদাহরণ- Acrosphaera trepanata) এবং Heliozoa (উদাহরণ- Gymnosphaera albida) জাতীয় প্রোটিস্টান জীবে এ ধরনের প্রতিসাম্য দেখা যায়।

খ. অরীয় প্রতিসাম্য (Radial symmetry) : কোনো প্রাণীর দেহকে যদি কেন্দ্রীয় লম্ব অক্ষ বরাবর কেটে সদৃশ দুইয়ের বেশি সংখ্যক অর্ধাংশে ভাগ করা যায়। হাইড্রা (Hydra), জেলিফিশ (Aurelia), সী অ্যানিমন (Metridium)।

গ. দ্বিঅরীয় প্রতিসাম্য (Biradial symmetry) : কোনো প্রাণীদেহে যখন কোনো অঙ্গের সংখ্যা একটি কিংবা একজোড়া হওয়ায় অনুদৈর্ঘ্য অক্ষ বরাবর শুধু দুটি তল পরস্পরের সমকোণে অতিক্রম করতে পারে, ফলে ঐ প্রাণীদেহে ৪টি সদৃশ অংশে বিভক্ত হতে পারে। এ ধরণের প্রতিসাম্য হচ্ছে দ্বিঅরীয় প্রতিসাম্য। Ctenophora (টিনোফোরা) পর্বভুক্ত প্রাণীর দেহ, যেমন- ceoloplana)

ঘ. দ্বিপার্শ্বীয় প্রতিসাম্য (Bilateral symmetry) : যখন কোনো প্রাণীর দেহকে কেন্দ্রীয় অক্ষ বরাবর শুধু একবার ডান ও বামপাশে (অর্থাৎ স্যাজিটাল তল) দুটি সদৃশ অংশে ভাগ করা যায়, তখন তাকে দ্বিপার্শীয় প্রতিসাম্য বলে। যেমন- প্রজাপতি (Pieris brassicae), ব্যাঙ (Fejervarya asmati), মানুষ (Homo sapiens) প্রভৃতি।

ঙ. অপ্রতিসাম্য (Asymmetry) : যখন কোনো প্রাণীর দেহকে অক্ষ বা দেহতল বরাবর ছেদ করলে একবারও দুটি সদৃশ অংশে ভাগ করা যায় না তখন তাকে অপ্রতিসাম্য বলে । উদাহরণ -স্পঞ্জ (Cliona celata), আপেল শামুক (Pila globosa) ইত্যাদি।

৭.খন্ডকায়ন (Metamerism or Segmentation) :

কোনো প্রানীর দেহ যদি লম্বালম্বি অক্ষ বরাবর একই রকম খন্ডাংশের পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে গঠিত হয়, তখন এ অবস্থাকে খন্ডকায়ন বা মেটারিজম (metamerism) বলে। প্রতিটি খন্ডকে বলা হয় মেটামিয়ার (metamere) বা সোমাইট (somite)।

ক. সমখন্ডকায়নবিশিষ্ট (Homonomous metamere) : যে সব প্রাণীর দেহখন্ডকগুলো সদৃশ বা একই ধরনের হয়, সেসব প্রানীকে সমখন্ডকায়নবিশিষ্ট বলে। উদাহরণ- কেঁচোর খন্ডকায়ন।

খ. অসমখন্ডকায়নবিশিষ্ট (Heteronomous metamere) : যেসব প্রাণীদেহ খন্ডগুলো অসম বা ভিন্ন ধরনের হয়, সেসব প্রানীকে অসম খন্ডকায়নবিশিষ্ট বলে। উদাহরণ- পতঙ্গের খন্ডকায়ন।


৮.অঞ্চলায়ন বা ট্যাগমাটাইজেশন (Tagmatization): Arthropoda পর্বের প্রাণীদেহ বাহ্যিকভাবে খন্ডায়িত, কিছু খন্ডক একত্রে মিলিত হয়ে দেহে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি অঞ্চল সৃষ্টি করে। প্রতিটি অঞ্চল কে ট্যাগমাটা (tagmata) বলে। এমন অঞ্চলীকরন বলে অঞ্চালয়ন।

৯.প্রান্তিকতা (Polarity): যে প্রান্তে মুখ থাকে তাকে মাথা ও তার বিপরীত প্রান্তকে পায়ু বা লেজপ্রান্ত বলা হয়। এরকমভাবে যেকোনো প্রাণীর দেহের দুই প্রান্তের গঠনের ভিন্নতাই প্রান্তিকতা নামে পরিচিত। সাধারণত প্রাণীদেহের প্রান্তিকতা পাঁচ ধরনের।


ক. সম্মুখ প্রান্ত (Anterior end) : দেহের যে প্রান্তে মাথা থাকে।

খ. পশ্চাৎ প্রান্ত (Posterior end) : মাথার বিপরীত প্রান্ত।

গ. পৃষ্ঠীয় প্রান্ত (Dorsal end) : দেহের উপরের দিকের তল।

ঘ. অঙ্কীয় প্রান্ত (Ventral end) : দেহের নিচের দিকের তল।

ঙ. পার্শ্বীয় প্রান্ত (Lateral end) দেহের দুই পাশে অতল।


১০.তল (Planes): যে অঞ্চল বরাবর প্রাণীদেহকে ডান ও বাম বা অনুদৈর্ঘ্য ও অনুপ্রস্থ বা সম্মুখ ও পশ্চাত অঞ্চল বরাবর দু ভাগে ভাগ করা যায়, তাকে তল বলে।

ক. মধ্যরেখীয় তল (Median or Sagittal plane): কেন্দ্রীয়, পৃষ্ঠীয় ও অঙ্কীয় অক্ষ বরাবর দেহকে পাড়শি ওভাবে সদৃশ ডান ও বাম অর্ধাংশে ভাগ করা যায়

খ. সম্মুখ তল (Frontal plane): লম্বালম্বি অক্ষ বরাবর দেহকে পৃষ্ঠীয় ও অঙ্কীয় এ দুটি অংশে ভাগ করা যায়  

গ. অনুপ্রস্থ তল (Transverse plane) : দেহের মধ্যে কোন বরাবর দেহকে সম্মুখ ও পশ্চাৎ অর্ধাংশে ভাগ করা যায়।

Content added By
Promotion