গোড়ালীর পেশি নিম্নের কোনটি?

Created: 2 years ago | Updated: 7 months ago
Updated: 7 months ago

পেশি টিস্যুঃ মেসোডার্ম থেকে উদ্ভূত যে টিস্যু সংকোচন-প্রসারণক্ষম ও অসংখ্য তন্তুর সমন্বয়ে গঠিত তাকে পেশি বা পেশি টিস্যু বলে।


পেশির সাধারণ বৈশিষ্ট্য : মায়োব্লাস্ট (myoblast) নামক আদিকোষ রূপান্তরিত হয়ে তন্তুর মতো লম্বা পেশিকোষ সৃষ্টি করে । তাই পেশিকোষকে পেশিতন্ত্র বলে প্রতিটি কোষ সুস্পষ্ট নিউক্লিয়াসযুক্ত এবং সারকোলেমা (sarcolemma) নামক ঝিলিতে আরত: এর ভেতরের সাইটোপ্লাজমকে সারকোপ্লাজম (sarcoplasm) বলে। সারকোপ্লাজমের মধ্যে পরস্পর সমান্তরালভাবে অবস্থিত অসংখ্য মায়োফাইব্রিল (myofibril) নামক সূক্ষ্ণ তন্তু থাকে। গুচ্ছবদ্ধ অ্যাকটিন (actin) ও মায়োসিন (myosin) নামক প্রোটিন ফিলামেন্ট দিয়ে মায়োফাইব্রিল গঠিত। পেশিটিস্যু প্রায় ৭৫ শতাংশ পানি ও অবশিষ্টাংশ কঠিন পদার্থে গঠিত।

কাজ : পেশিই প্রাণিদেহের বিভিন্ন অঙ্গের সঞ্চালনের জন্য দায়ী। অস্থিসংলগ্ন পেশির সংকোচন-প্রসারণের ফলে প্রাণী স্থানান্তরে গমন করতে পারে।

গঠন, অবস্থান ও কাজের তারতম্যের ভিত্তিতে পেশিকে তিন শ্রেণিতে ভাগ করা যায় ১. মসৃণ বা অনৈচ্ছিক; ২. হৃৎপেশি এবং ৩. রৈখিক বা ঐচ্ছিক ।

১. মসৃণ (ভিসেরাল) বা অনৈচ্ছিক পেশি (Non-striated or Involuntary muscle): এ পেশির কোষগুলো মাক আকৃতির, ১৫-২০০ um পর্যন্ত দীর্ঘ। কোষের চওড়া অংশের ব্যাস ৮-১০ umi প্রত্যেক কোষে নিউক্লিয়াসের সংখ্যা একটি এবং এটি কোষের চওড়া অংশে অবস্থান করে। কোষের আবরণী বা সারকোলেমা অস্পষ্ট। কোষের সাইটোপ্লাজম বা সারকোপ্লাজম-এ অসংখ্য অতি সূক্ষ্ম মায়োফাইব্রিল পেশিতন্তুর দৈর্ঘ্য বরাবর বিস্তৃত। মায়োফাইব্রিলে কোনো আড়াআড়ি রেখা দেখা যায় না। পৌষ্টিকনালি, রক্তনালি, শ্বাসনালি, মূত্রথলি, জরায়ু প্রভৃতি অঙ্গের প্রাচীরে এ পেশি পাওয়া যায় মসৃণ পেশিগুলো আন্তরযন্ত্রীয় (visceral) অঙ্গের প্রাচীরে থাকে বলে এগুলোকে ভিসেরাল পেশিও বলে।
কাজ : এ টিস্যুর সংকোচন-প্রসারণ ক্ষমতা ধীর ও দীর্ঘস্থায়ী। বিভিন্ন বস্তুর যাতায়াত নিয়ন্ত্রণে এ টিস্যু অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। যেমন- খাদ্যবস্তু এ টিস্যুর মাধ্যমে পেরিস্ট্যালসিস (peristalsis) প্রক্রিয়ায় পৌষ্টিকনালির উপরের অংশ থেকে নিচের দিকে ধাবিত হয়। এ পেশির সংকোচন প্রাণীর ইচ্ছানির্ভর নয় বলে একে অনৈচ্ছিক পেশি বলা হয়ে থাকে।

২. হৃৎপেশি বা কার্ডিয়াক পেশি (Cardiac muscle) : অনৈচ্ছিক গঠনের দিক থেকে এটি অনেকটা রৈখিক পেশির মতো। পেশিতন্তুর মায়োফাইব্রিলের গায়ে আড়াআড়ি রেখা থাকে; কিন্তু পেশিতন্তুগুলো পরস্পর অনিয়মিতভাবে যুক্ত থেকে জালের মতো গঠন সৃষ্টি করে। সারকোলেমা বেশ সূক্ষ্ম এবং নিউক্লিয়াসটি কোষের কেন্দ্রস্থলে অবস্থান করে। কোষগুলোর দৈর্ঘ্য প্রায় ০.৮ মিলিমিটার এবং ব্যাস ১২-১৫ um হয়। কোষগুলোর সংযোগস্থলে কোষপর্দা ঘন সন্নিবিষ্ট হয়ে এক বিশেষ অনুপ্রস্থ রেখার সৃষ্টি করে । একে ইন্টারক্যালেটেড ডিস্ক Intercalated disc) বলে) এ ডিস্ক হৃৎপেশির অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। একমাত্র হৃৎপিন্ডের প্রাচীরে এ ধরনের পেশি টিস্যু পাওয়া যায়।
কাজ : এ টিস্যুর সংকোচন-প্রসারণ ক্ষমতা পরিমিতভাবে দ্রুত, কখনও ক্লান্ত হয় না । হৃৎপিণ্ডের সংকোচন-প্রসারণ খাটিয়ে প্রাণিদেহে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করা হৃৎপেশির কাজ। হৃৎপেশির কার্যকারিতা প্রাণীর ইচ্ছানির্ভর নয় তাই কাজের দিক থেকে এ পেশি অনৈচ্ছিক ।

৩. কঙ্কাল বা রৈখিক (চিহ্ণিত) বা ঐচ্ছিক পেশি (Striated or Voluntary muscle) : প্রাণিদেহের যে অংশগুলোকে সাধারণত আমরা মাংস বলে থাকি প্রকৃতপক্ষে সেগুলোই কঙ্কাল বা রৈখিক বা চিহ্ণিত পেশি। কোষগুলো দেখতে নলাকার (cylindrical), ১-৪ সেন্টিমিটার এবং ১০-৪০ মাইক্রোমিটার ব্যাসবিশিষ্ট হয়। তাই কোষগুলোকে সূক্ষ্ম তন্তুর দেখায় এবং পেশিতন্তু (muscle fibre) বলে আখ্যায়িত করা হয়। তন্তুগুলো আলাদা বা বিক্ষিপ্ত না থেকে গুচ্ছবদ্ধ থাকে। পেশিতন্তুর এধরনের গুচ্ছকে (bundle) ফ্যাসিকুলাস (fasciculus; বহুবচনে fasciculi) বলা হয়। প্রতিটি গুচ্ছ পেরিমাইসিয়াম (perimycium) নামক যোজক টিস্যু নির্মিত আবরণে আবৃত। অনেকগুলো ফ্যাসিকুলি একত্রিত হয়ে একটি বড় গুচ্ছ গঠন করে। এপিমাইসিয়াম (epimyerum) নামক আরেক ধরনের যোজক টিস্যু নির্মিত আবরণে আবৃত থাকে। ঐচ্ছিক পেশিগুলো দেহাভ্যন্তরে এভাবে গুচ্ছাকারে অবস্থান করে। প্রতিটি পেশিতন্তু সারকোলেমা (sarcolemma) নামক সুস্পষ্ট এক আবরণে আবৃত থাকে। এর ঠিক নিচে কয়েকশ গোলাকার বা ডিম্বাকার নিউক্লিয়াস দেখা যায়। প্রতিটি পেশিকোষের অভ্যন্তরে কতকগুলো অতি সূক্ষ্ম তত্ত্ব ব মায়োফাইব্রিল (myofibril) পাওয়া যায়। (প্রধানত অ্যাকটিন (actin) ও মায়োসিন (myosin) নামক প্রোটিন দিয়ে মায়োফাইব্রিল গঠিত হয়। অণুবীক্ষণযন্ত্রের নিচে এ উপতত্ত্বগুলোর সমস্ত দেহ জুড়ে পর্যায়ক্রমিকভাবে অবস্থিত কতকগুলো অনুপ্রস্থ রেখা দেখা যায়। এ রেখাগুলো (দাগগুলো) থাকার জন্যই এ পেশিটিস্যুকে রৈখিক পেশি বা চিহ্নিত পেশি বলে।
অবস্থান : বড় বড় অস্থির সংযোগস্থলে এ ধরনের পেশি বেশি পাওয়া যায়, আর সে কারণেই এদের কঙ্কাল পেশি (skeletal muscle)-ও বলা হয়ে থাকে। চোখে, জিহ্বায়, গলবিলেও এগুলো অবস্থান করে।

কাজ : এ ধরনের পেশির সংকোচন-প্রসারণ ক্ষমতা খুব দ্রুত ও শক্তিশালী । হাত ও পা-এর বড় বড় অস্থিসহ দেহের অন্যান্য অস্থির সঞ্চালনের জন্য ঐ পেশিটিস্যুই দায়ী। প্রাণীর চলন এ পেশির মাধ্যমে ঘটে। এ পেশির কাজ প্রাণীর ইচ্ছা অনুযায়ী নিয়ন্ত্রিত হয়, তাই রৈখিক পেশিকে ঐচ্ছিক পেশি বলে আখ্যায়িত করা হয়।

 

Content added By
Promotion