আরশোলার মাশরুম বা ছত্রাক গ্রন্থির কাজ -

Created: 2 years ago | Updated: 5 months ago
Updated: 5 months ago

বাহ্যিক অঙ্গসংস্থান (External Morphology):

ঘাসফড়িং-এর দেহ সরু, লম্বাটে, বেলনাকার (cylindrical) এবং দ্বিপার্শ্বীয় প্রতিসম। পূর্ণাঙ্গ প্রাণী লম্বায় ৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। দেহের রঙ অনেকটা হলদে-সবুজ (yellowish green) ধরনের অথবা বাদামি রঙের মাঝে নানা ধরনের ফোঁটা (spots) বা ডোরাকাটা (markings) হতে পারে। মিশ্রিত এ রঙ তাদের পরিবেশের সাথে মানিয়ে চলতে এমনকি শত্রুর হাত থেকেও রক্ষা করতে সাহায্য করে। এছাড়াও কিছু ঘাসফড়িং আছে উজ্জ্বল নীল-হলুদ রঙের (যেমন- Poekilocerus pictus)।

ঘাসফড়িং-এর সারাদেহ কাইটিনযুক্ত কিউটিকল (cuticle)- এ আবৃত। বহিঃকঙ্কাল হাইপোডার্মিস (hypodermis) নিঃসৃত পদার্থে সৃষ্ট এবং প্রত্যেক দেহখন্ডকে স্ক্লেরাইট (sclerite) নামক কঠিন প্লেটের মতো গঠন সৃষ্টি করে। স্কেলেরাইটগুলোর সংযোগস্থল সূচার (suture) নামে পাতলা নরম ঝিল্লিতে আবৃত। সূচারের উপস্থিতির কারণে দেহখণ্ডক ও উপাঙ্গগুলো সহজেই নড়াচড়া করতে পারে। কিউটিকলের ভিতরে ও নিচে নানা ধরনের রঞ্জক পদার্থ (pigments) থাকায় ঘাসফড়িং-এ বর্ণময়তা দেখা যায়।

ঘাসফড়িং-এর দেহ খণ্ডকায়িত এবং অন্যসব পতঙ্গের মতো তিনটি অঞ্চলে বিভক্ত, যেমন—

ক. মস্তক (Head)- পুঞ্জাক্ষি, অ্যান্টেনা ও মুখোপাঙ্গ বহন করে।

খ. বক্ষ (Thorax)- তিনজোড়া পা ও দুজোড়া ডানার সংযোগ সাধন করে এবং বহন করে।

গ. উদর (Abdomen)- শ্বাসরন্ধ্র বা স্পাইরাকল (spiracle) এবং জনন অঙ্গসমূহ (genitaliae) ধারণ করে।

ক. মস্তক (Head): বাইরে থেকে অখন্ডিত (একক) মনে হলেও মূলত ৬টি ভ্রূণীয় খণ্ডকের (embryonic segments) সমন্বয়ে মস্তক গঠিত। এটি দেখতে নাশপাতি আকৃতির এবং হাইপোগন্যাথাস (hypognathous) ধরনের অর্থাৎ মুখছিদ্র নিম্নমুখী হয়ে মস্তকের নিচে অবস্থান করে। মস্তক একটি ছোট ও স্থিতিস্থাপক গ্রীবার সাহায্যে বক্ষলগ্ন হয়ে দেহের সমকোণে অবস্থান করে। ঘাসফড়িং গ্রীবার মাধ্যমে মস্তককে বিভিন্ন দিকে ঘোরাতে পারে। মস্তকের বহিঃকঙ্কালের নাম হেড ক্যাপস্যুল (head capsule) বা এপিক্রেনিয়াম (epicranium)। মস্তকের বহিঃকঙ্কাল কয়েকটি অংশে বিভক্ত, যেমন- পৃষ্ঠদেশের ত্রিকোণাকার অঞ্চলটি ভার্টেক্স (vertex), দুপাশে অবস্থিত জেনা (gena), কপালের দিকে চওড়া ফ্রন্স (frons) এবং ফ্রন্সের নিচে আয়তাকার প্লেটটি ক্লাইপিয়াস (clypeus)।
ঘাসফড়িং-এর মস্তক একজোড়া পুঞ্জাক্ষি, তিনটি সরলাক্ষি বা ওসেলি (ocilli), একজোড়া অ্যান্টেনা (antenna) ও এক সেট মুখোপাঙ্গ বহন করে। নিচে এদের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হলো।

১. পুঞ্জাক্ষি (Compound eye) : ঘাসফড়িং (Grasshopper)-এর মস্তকের উভয়দিকে পৃষ্ঠ-পার্শ্বদেশে, ১ম খণ্ডকে একজোড়া পুঞ্জাক্ষি থাকে। এগুলো অবৃন্তক এবং মস্তকের এক বিরাট অংশ দখল করে থাকে। দৃষ্টিশক্তির দিক থেকে ঘাসফড়িং আর্থোপোড অপেক্ষা উন্নত। এরা সম্ভবত রঙিন বস্তুও সঠিকভাবে দেখতে পায়। গঠনগত ও কার্যকারিতার দিক থেকে যে কোনো ঘাসফড়িং-এর পুঞ্জাক্ষি আরশোলা, চিংড়ি প্রভৃতি আর্থোপোড প্রাণীর মতো। অসংখ্য ওমাটিডিয়া (ommatidia)-র সমন্বয়ে একেকটি পুঞ্জাক্ষি গঠিত হয়। ওমাটিডিয়াই পুঞ্জাক্ষির গঠন ও কাজের একক।

২. ওসেলি (Ocelli; একবচনে-occllus) : ঘাসফড়িং-এর দুটি পুঞ্জাক্ষির মাঝখানে তিনটি সরলাক্ষি বা ওসেলি থাকে । প্রত্যেক ওসেলাস পুরু, স্বচ্ছ কিউটিকলনির্মিত লেন্স ও একগুচ্ছ আলোক সংবেদী কোষ নিয়ে গঠিত। প্রতিটি কোষ রঞ্জক পদার্থসমৃদ্ধ। ওসেলাসের তলদেশে মস্তিষ্কে গমনকারী স্নায়ুতন্ডু (nerve libre) অবস্থিত। এর অভ্যন্তরে আলোক সংবেদী কোষ থাকে যারা রেটিনার মতো কাজ করে।

৩. অ্যান্টেনা (Antenna; বহুবচনে-antennae) বা শুঙ্গ : ঘাসফড়িং-এর পুঞ্জাক্ষির সামনে, মাথার দুপাশে দুটি লম্বা অ্যান্টোনি প্রসারিত থাকে। অ্যান্টোনি দুটি সামনে রেখে চলাফেরা করে এবং ইচ্ছামতো এগুলোকে নাড়াতে পারে। এদুটি নাড়িয়ে এরা স্পর্শ, ঘ্রাণ ও শব্দতরঙ্গ অনুভর করে। স্কেল, পেডিসেন্স ও ফ্লাজেলাম-এ তিনটি অংশ নিয়ে প্রত্যেক অ্যান্টেনা গঠিত। পেডিসেল খাটো ও অবিভক্ত। ফ্লাজেলাম বেশ লম্বা ও প্রায় ২৫টি খণ্ডকে বিভক্ত।

৪. মুখোপাঙ্গ (Mouth parts) : মুখের চারদিক ঘিরে অবস্থিত নড়নক্ষম, সন্ধিযুক্ত উপাঙ্গগুলোকে একত্রে মুখোপাঙ্গ বলে। ঘাসফড়িং-এর মুখোপাঙ্গ মস্তকের অঙ্কীয়দেশে অবস্থিত। কচিপাতা বা কাণ্ড চর্বনে ব্যবহৃত হয় বলে ঘাসফড়িং-এর মুখোপাঙ্গকে চর্বন-উপযোগী (chewing) বা ম্যান্ডিবুলেট (mandibulate) মুখোপাঙ্গ বলে। পাঁচটি অংশের সমন্বয়ে মুখোপাঙ্গ গঠিত- ল্যাব্রাম, ম্যান্ডিবল, ম্যাক্সিলা, ল্যাবিয়াম ও হাইপোফ্যারিংক্স।


খ. বক্ষ (Thorax) : মস্তকের পিছনে মাংসল বক্ষ একটি খাটো, সরু ও নমনীয় গ্রীবা (neck)-র সাহায্যে যুক্ত। ঘাসফড়িং-এর বক্ষাঞ্চল তিনটি অংশে বিভক্ত; যথা-অগ্রবক্ষ (prothorax), মধ্যবক্ষ (mesothorax) এবং পশ্চাৎবক্ষ (metathorax)। প্রত্যেক অংশের পৃষ্ঠদেশ টার্গাম (tergum), অঙ্কীয়দেশ স্টার্নাম (stermum) ও পার্শ্বদেশ প্লিউরন (pleuron)-এ গঠিত। এগুলো পাতলা কিউটিকলের পর্দা দিয়ে পরস্পর সংযুক্ত। অগ্রবক্ষের টার্গাম অংশটি বেশ বড়, চওড়া এবং পিছনে ও পাশে প্রসারিত । এর নাম প্রোনোটাম (pronotum) বক্ষাঞ্চলে রয়েছে শ্বাসরন্ধ্র, ডানা ও পা।

১. শ্বাসরন্ধ্র বা স্পাইরাকল (Spiracle) : বক্ষের অঙ্কীয়-পার্শ্বদেশে দুজোড়া শ্বাসরন্ধ্র বা স্পাইরাকল অবস্থিত। প্রথম জোড়া প্রোনোটামের নিচে অগ্র ও মধ্যবক্ষের মাঝে এবং দ্বিতীয় জোড়া মধ্য ও পশ্চাৎবক্ষের মাঝে অবস্থিত ।

২. ডানা (Wings) : মধ্য ও পশ্চাৎবক্ষের পিঠের দিকে অর্থাৎ টার্গাম ও প্লিউরনের মধ্যবর্তীস্থান থেকে একজোড়া করে মোট দুজোড়া পাতলা কিউটিকল নির্মিত ডানা রয়েছে। ডানাগুলো প্রথম অবস্থায় দ্বিস্তরবিশিষ্ট প্রাচীর হিসেবে থলির মতো সৃষ্টি হয়, পরে পূর্ণাঙ্গ ডানায় পরিণত হয়। প্রত্যেক ডানা অসংখ্য ছোট নালির মতো ও রক্তে পূর্ণ শিরা-উপশিরায় গঠিত। দুজোড়া ডানার গঠন ও কাজ পৃথক ধরনের। মধ্যবক্ষীয় (mesothoracic) ডানা অর্থাৎ সামনের ডানাদুটি বেশ শক্ত, ছোট, সরু এবং কখনও উড়তে সাহায্য করে না। এগুলো পিছনের দুই ডানাকে ঢেকে রাখে। সেজন্য এগুলোকে এলিট্রা (elytra), ডানার আবরণ (wing covers) বা টেগমিনা (tegmina) হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। পিছনের বা পশ্চাৎবক্ষীয় (metathoracic) ডানাদুটি বেশ বড়, চওড়া, পর্দার মতো (membranous), স্বচ্ছ এবং উড়তে সাহায্য করে। বিশ্রামের সময় পিছনের ডানাজোড়া অগ্র ডানার নিচে গুটানো থাকে।


৩. পা (Legs) : বক্ষের প্রত্যেক অংশে একজোড়া করে মোট তিনজোড়া পা রয়েছে। প্রতিটি পা পাঁচখণ্ডে বিভক্ত। একেবারে গোড়ায় স্থূল, তিনকোণা কক্সা (coxa); এর পরের ত্রিভূজাকার ক্ষুদ্র ট্রোক্যান্টার (trochanter); পরের লম্বা, নলাকার ও দৃঢ় ফিমার (femur); তার পরবর্তী সরু টিবিয়া (tibia); এবং সবশেষে টার্সাস (tarsus) । টার্সাস তিনটি ছোট উপখণ্ডকে বিভক্ত । এগুলোকে টার্সোমিয়ার (tarsomeres) বলে । টার্সাসের মাথায় সূঁচালো নখর (claws) থাকে। এ ছাড়াও প্রত্যেক পায়ের টিবিয়া ও টার্সাস অংশের পার্শ্বদেশে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সূঁচালো কাঁটা থাকে। ঘাসফড়িং-এর পা হাঁটা ও আরোহণে ব্যবহৃত হয়। তবে ফিমার অংশ অনেক বড় ও মাংসল গড়নের হওয়ায় এরা লাফিয়ে দূরের পথ অতিক্রম করতে পারে। টিবিয়া ও টার্সাস শক্ত কাঁটাযুক্ত হওয়ায় খাদ্য ধরতে সাহায্য করে।


গ. উদর (Abdomen) : ঘাসফড়িং-এর উদর বেশ লম্বা, সরু এবং ১১টি খণ্ডকে বিভক্ত। প্রত্যেক খণ্ডকের পৃষ্ঠদেশে টার্গাম (tergum) এবং অঙ্কীয়দেশে স্টার্নাম (sternum) থাকে, কোন প্লিউরন থাকে না। ১ম উদরীয় খণ্ডকটি অসম্পূর্ণ; কারণ, এর স্টার্নাম পশ্চাৎবক্ষের সাথে যুক্ত থাকে । এতে শুধু টার্গাম থাকে । ঘাসফড়িং-এর উদরাঞ্চল নিচে বর্ণিত অঙ্গসমূহ বহন করে।

১. টিমপেনাম (Tympanum) : ১ম খণ্ডকের প্রতিপাশে একটি করে পর্দা রয়েছে যা শ্রবণ অঙ্গ বা শ্রবণ থলি (auditory sac)-কে আবৃত রাখে । এর নাম টিমপেনিক পর্দা বা টিমপেনাম ।

২. শ্বাসরন্ধ্র (Spiracle) : ১ম থেকে ৮ম দেহখণ্ডক পর্যন্ত প্রতিটি খন্ডকের পার্শ্বদেশে একজোড়া করে মোট আটজোড়া শ্বাসবন্ধ্র বা স্পাইরাকল থাকে যার প্রথমটি অন্যগুলো হতে আকারে বড় ।

৩. পায়ু ও বহিঃজনন অঙ্গ : ৯ম ও ১০ম উদরীয় খণ্ডকের টার্গাম আংশিকভাবে ও স্টার্নাম পুরোপুরি একীভূত। ১১শ খণ্ডকের টার্গাম পায়ুর উপরে প্লেটের মতো একটি আবরণ (supra anal plate) তৈরি করে। পুরুষ ও স্ত্রী ঘাসফড়িংয়ের উদর অঞ্চলের গঠনে কিছু পার্থক্য দেখা যায় । পুরুষ ঘাসফড়িং-এর ১০ম খন্ডের পেছন দিকের উভয় পাশে একজোড়া ছোট প্রক্ষেপক রয়েছে যা অ্যানাল সারকাস (anal cercus, বহুবচনে anal cerci) নামে পরিচিত। স্ত্রী ঘাসফড়িং-এর ৯ম স্টার্নাম লম্বাকৃতির যা স্ত্রীজননরন্ধ্র ধারণ করে। এদের উদরের শেষ প্রান্তে ৮ম ও ৯ম খন্ড অঙ্কীয়ভাবে একটি নলাকৃতি বিশেষ অঙ্গ তৈরি করে, যার নাম ওভিপজিটর (ovipositor)।

Content added By
Promotion