পেশিকে অস্থির সাথে যুক্তকারীকে বলা হয় -

Created: 2 years ago | Updated: 1 year ago
Updated: 1 year ago

অস্থি ও তরুণাস্থি হচ্ছে বিশেষ ধরনের যোজক টিস্যু যাদের মাতৃকা (matrix) কঠিন বা অর্ধকঠিন পদার্থে তৈরি। এদের কঙ্কাল যোজক টিস্যু বলে।

অস্থি (Bone)র গঠন : অস্থি হচ্ছে দেহের সবচেয়ে সুদৃঢ় টিস্যু । এর মাতৃকা বা ম্যাট্রিক্স বিভিন্ন জৈব (৪০%) ও অজৈব (৬০%) পদার্থে গঠিত হওয়ায় সম্পূর্ণ টিস্যুটি কঠিন আকার ধারণ করে। জৈব অংশটি কোলাজেন (collagen) ও অসিমিউকয়েড (osimucoid)-এ গঠিত। অজৈব অংশটিতে প্রধানত ক্যালসিয়াম ফসফেট ও ক্যালসিয়াম কার্বোনেট রয়েছে। মাতৃকায় প্রধানত তিন ধরনের অস্থিকোষ থাকে- অস্টিওব্লাস্ট (osteoblast), অস্টিওক্লাস্ট (osteoclast) এবং অস্টিওসাইট (osteocytes)। পেরিঅস্টিয়াম (periosteum) নামক তন্তুময় যোজক টিস্যু নির্মিত পাতলা ও মসৃণ আবরণ প্রতিটি অস্থিকে ঘিরে রাখে। অস্থিতে প্রচুর রক্ত সরবরাহ বিদ্যমান। এ টিস্যু মেরুদন্ডী প্রাণীর দৈহিক কাঠামো নির্মাণ করে।

নিরেট অস্থি (Compact bone) : নিরেট অস্থির ম্যাট্রিক্স কতকগুলো স্তরে (৫-১৫টি) সাজানো। স্তরগুলোকে ল্যামেলি (lamellae) বলে। ল্যামেলি একটি সুস্পষ্ট নালির চারদিকে চক্রাকারে বিন্যস্ত। কেন্দ্রীয় এ নালিটি হচ্ছে হ্যাভারসিয়ান নালি (haversian canal)। প্রতিটি হ্যাভারসিয়ান নালি ও একে বেষ্টনকারী ল্যামেলির সমন্বয়ে একটি হ্যাভারসিয়ান তন্ত্র (haversian system) গড়ে উঠে। প্রত্যেক ল্যামেলায় (একবচন) ল্যাকুনা (lacuna) নামে কতগুলো ক্ষুদ্র গহ্বর পাওয়া যায়। অস্থিকোষ ল্যাকুনার ভিতরে অবস্থান করে। প্রতিটি ল্যাকুনার চারদিক থেকে সূক্ষ্ম কতকগুলো নালিকা বেরোয় । এদের ক্যানালিকুলি (canaliculi) বলে। এসব নালিকার মাধ্যমে একটি  হ্যাভারসিয়ান  তন্ত্রের  বিভিন্ন  ল্যাকুনা পরস্পরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে। অস্থির অভ্যন্তরে হ্যাভারসিয়ান নালিগুলো পরস্পরের আড়াআড়ি নালি দিয়ে যুক্ত থাকে৷ এসব নালিকে বলে ভকম্যানস ক্যানাল (Volkmann’s canal)। হ্যাভারসিয়ান তন্ত্রসমূহের অন্তর্বর্তীস্থানে কঠিন ম্যাট্রিক্স ও অস্টিওসাইট উপস্থিত থেকে অস্থি সুদৃঢ় করে। অস্থির কেন্দ্রস্থলে যে গহ্বর থাকে তার নাম মজ্জা গহ্বর। গহ্বরটি লাল বা হলুদ মজ্জা (red or yellow bone marrow)-য় পূর্ণ থাকে ফিমার ও হিউমেরাস এ ধরনের অস্থি।


স্পঞ্জি অস্থি (Spongy bone) : নিরেট অস্থির অভ্যস্তরে বিদ্যমান স্পঞ্জি অস্থি অপেক্ষাকৃত হালকা, অসংখ্য কুঠুরিযুক্ত স্পঞ্জের মতো। এসব অস্থির গঠন স্পঞ্জ বা মৌচাকের মতো বলে এদেরকে ক্যানসেলাস (cancellous) বা ট্রাবেকুলার (trabecular) অস্থি বলা হয়। মানবদেহের কঙ্কালতন্ত্রের মোট ওজনের প্রায় ২০% স্পঞ্জি অস্থি। স্পঞ্জি অস্থির গাঠনিক ও কার্যকরি এককে ট্রাবেকুলা (trabecula) বলে যা ল্যামিলি, অস্টিওসাইট, ল্যাকুনি ও ক্যানালিকুলির সমন্বয়ে গঠিত। ট্রাবেকুলাসমূহের মধ্যবর্তী স্থান লোহিত অস্থিমজ্জা দ্বারা পূর্ণ থাকে। অস্থি আবরণ পেরিঅস্টিয়াম থেকে রক্তনালিকা ট্রাবেকুলাতে প্রবেশ করে অস্থির কোষমূহকে পুষ্টি সরবরাহ করে। স্পঞ্জি অস্থিতে ক্যালসিয়াম লবণের পরিমাণ কম থাকে। এতে হ্যাভারসিয়ান তন্ত্র থাকে না। স্তন্যপায়ীদের করোটিকা, চ্যাপ্টা হাড়, বৃহৎ অস্থির প্রান্তভাগ এবং পাখিদের সকল অস্থি স্পঞ্জি ধরনের। শিশুদের প্রায় সকল অস্থিই স্পঞ্জি প্রকৃতির।
 

অস্থির কাজঃ
*অস্থি দেহের কাঠামো গঠন করে এবং দেহকে নির্দিষ্ট আকার ও আকৃতি প্রদান করে।
*দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গাদি (যেমন-মস্তিষ্ক, ফুসফুস, হৃৎপিণ্ড, সুষুম্নাকান্ড প্রভৃতি) অস্থি নির্মিত কঙ্কাল দ্বারা সুরক্ষিত থাকে।
*অস্থিসন্ধি গঠন এবং পেশির সাথে সমন্বয় দ্বারা অস্থি নির্মিত কাঙ্কালতন্ত্র প্রাণীর চলনে প্রধান ভূমিকা রাখে।
*অস্থির ভিতরে অবস্থিত লোহিত অস্থিমজ্জা (red bone marrow) থেকে প্রতিনিয়ত লোহিত রক্তকণিকা সৃষ্টি হয়। পীত অস্থিমজ্জা (yellow bone marrow) সঞ্চিত চর্বির আধার হিসেবে কাজ করে।
*রক্ত থেকে দূষিত পদার্থ নিষ্কাশন করে।
*ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ফসফরাস জাতীয় খনিজ লবণ অস্থিতে সঞ্চিত হয়।
*কঙ্কালতন্ত্রের সবচেয়ে ছোট অস্থি অস্তঃকর্ণের ম্যালিয়াস, ইনকাস ও স্টেপিস শ্রবণ প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়।

Content added By
Promotion