কোনটি আবিষ্কারের ফলে রিকম্বিন্যান্ট DNA তৈরি সম্ভব হয়েছে?

Created: 2 years ago | Updated: 7 months ago
Updated: 7 months ago

রিকম্বিনেন্ট DNA প্রযুক্তির প্রয়োগঃ

 বর্তমান বিশ্বে রিকম্বিনেন্ট DNA প্রযুক্তি বহুল আলোচিত ও আশাপ্রদ একটি বিষয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। মানুষ অনেক ক্ষেত্রে এ প্রযুক্তির সফল ব্যবহারের মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছে। অন্যদিকে ভবিষ্যতে DNA প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহারের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে এ প্রযুক্তির কয়েকটি প্রয়োগিক দিক নিচে আলোচনা করা হলো।

১. চিকিৎসাবিজ্ঞান : আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে রিকম্বিনেন্ট DNA প্রযুক্তি প্রভূত অবদান রাখছে এবং ভবিষ্যতে এর ব্যবহারে ব্যাপক সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। বিভিন্ন ধরনের ভ্যাকসিন, হরমোন, ইন্টারফেরন, অ্যান্টিজেন, অ্যান্টিবডি প্রভৃতি উৎপাদনে এ প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। অন্যদিকে রোগ শনাক্তকরণ ও জিন থেরাপির মাধ্যমে সুস্থ-সবল শিশুর জন্মদানে এ প্রযুক্তি বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। বহুমুত্র বা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত ইনসুলিন এই প্রযুক্তি ব্যবহার করেই উৎপাদন করা হয়।

২. কৃষিক্ষেত্রে : কৃষি উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে রিকম্বিনেন্ট DNA প্রযুক্তি সফলভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। যেমন- - অধিক ফলনশীল শস্য উৎপাদনে চাষাবাদকৃত ফসলের কোন প্রজাতির মধ্যে সালোসংশ্লেষণে বেশি সক্ষম, নাইট্রোজেন সংবন্ধন ক্ষমতা সম্পন্ন, ফল অধিক পৃষ্টকরণ ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য স্থানান্তরের মাধ্যমে অধিক ফলনশীল জাত উৎপাদন করা যায়।

পুষ্টিগুণ বৃদ্ধিতে : সুইস বিজ্ঞানী Ingo Potrykus ও জার্মান বিজ্ঞানী (Peter Beyer B-ক্যারোটিনসমৃদ্ধ এক প্রকার বিশেষ ধান আবিষ্কার করেন যাকে সোনালী ধান (Golden rice) বলা হয়। চাষাবাদকৃত ধানের জাতগুলোর মধ্যে এ বৈশিষ্ট্য অনুপস্থিত। কৃষি গবেষণায় এটি একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার এবং ভবিষ্যতে এ গবেষণার নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে।

আগাছানাশক প্রতিরোধী উদ্ভিদ সৃষ্টিতে : বিভিন্ন উদ্ভিদে আগাছানাশক প্রতিরোধী জিন প্রতিস্থাপরের মাধ্যমে উদ্ভিদকে আগাছানাশক প্রতিরোধি করা সম্ভব হয়েছে। এই প্রযুক্তিতে Streptomyces hygroscopicus নামক ব্যাকটেরিয়া থেকে পৃথক করা জিন টমেটো, তামাক ও আলুতে স্থানান্তর করে এই বিশেষ বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি করা হয়েছে। গ্লাইকোস্টে একটি আগাছা নিধনকারী পদার্থ যা পৃথিবীর সবচেয়ে মারাত্মক ৭৮ আগাছারমধ্যে ৭৬টি ধ্বংস করতে পারে।

রোগপ্রতিরোধি জাত উদ্ভাবনে ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ও নানা রকম কীট-পতঙ্গ প্রতিরোধী জাত উদ্ভাবনে এ প্রযুক্তি সাফল্যের সাথে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন- টোবাকো মোজাইক ভাইরাস (TMV)-এর আক্রমণ থেকে তামাক গাছ প্রতিরোধী হয়েছে।

দ্যুতিময় উদ্ভিদ সৃষ্টিতে : কোনাকি পোকার দেহে লুসিফারেজ এনজাইমের প্রভাবে লুসিকেরিন নামক পদার্থের ক্ষরিত হয়ে আলোর সৃষ্টি হয়। জোনাকি পোকার আলো সৃষ্টিকারী জিন রিকম্বিনেন্ট DNA প্রযুক্তির মাধ্যমে তামাক গাছে প্রতিস্থাপনের ফলে তামাক গাছ থেকে আলো বিচ্ছুরিত হয়। 

গুণগত মান উন্নয়নে : যে সমস্ত ভেড়া ক্লোভার জাতীয় ঘাস খায় তাদের লোম নিম্ন মানের হয় । কারণ এতে সালফার কম থাকে। রিকম্বিনেন্ট DNA প্রযুক্তি ব্যবহার করে সূর্যমুখী থেকে সালফার অ্যামিনো এসিড সৃষ্টিকারী জিনের মাধ্যমে ক্রোভার ঘাসে স্থানান্তর করা হয়েছে। এ ক্লোভার ঘাস খেলে সেসব ভেড়ায় উন্নতমানের লোম পাওয়া যায়।

বীজহীন রুপ সৃষ্টিতে : বর্তমানে রিকম্বিনেন্ট DNA প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনেক দেশে বীজহীন ফল তৈরি করা হচ্ছে। যেমন-জোপানে বীজহীন তরমুজ, আঙ্গুর উৎপাদন ইত্যাদি।

৩. এনজাইম প্রযুক্তি : উন্নত এনজাইম বা প্রোটিন (যেমন থোমাটিন যা ০.৬% সুক্রোজ দ্রবণের চেয়ে ৫,৫০০ গুণ বা স্যাকারিন থেকে ৩০০ গুণ বেশি মিষ্টি) ইত্যাদি উৎপাদনে রিকম্বিনেন্ট DNA প্রযুক্তি সাফল্যের সাথে ব্যবহৃত হয়েছে। অধিক ক্রিয়াশীল কিছু এনজাইম তৈরিতে এ পদ্ধতি গৃহীত হচ্ছে।

৪. পেস্টিসাইড শিল্পে: অর্থের অপচয় ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় তথা উপকারী অণুজীব বা কীট-পতঙ্গ টিকিয়ে রেখে রোগ জীবাণু দমনে বর্তমানে এ প্রযুক্তিতে উদ্ভাবিত ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস ব্যবহৃত হচ্ছে। ভবিষ্যতে এ প্রযুক্তির মাধ্যমে কীটনাশক উৎপাদনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

৫. পরিবেশ ব্যবস্থাপনায় : রিকম্বিনেন্ট DNA প্রযুক্তি ব্যবহার করে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বিভিন্ন অণুজীব সৃষ্টি করা হচ্ছে যা বিভিন্ন বর্জ্য, পয়ঃনিষ্কাশন, শিল্প বর্জ্য, তেল ইত্যাদি পরিশোধনের মাধ্যমে দূষণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অবদান রাখছে।

Content added || updated By
Promotion