রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা ( saturation) ও হৃদস্পন্দন পরিমাপক যন্ত্রের নাম -
রক্তচাপ বা ব্লাড প্রেসারঃ
রক্তনালির ভিতর দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হওয়ার সময় প্রাচীর গাত্রে যে পার্শ্বচাপ প্রয়োগ করে তাকে রক্তচাপ বলে। হৃৎপিণ্ডের বিশেষত ভেন্ট্রিকল (নিলয়)-এর সংকোচনের ফলেই রক্ত ধমনির মধ্যদিয়ে অব্যাহতভাবে বহমান থাকে। ভেন্ট্রিকলের সংকোচন (systole) অবস্থায় রক্তচাপ বেশি থাকে এবং এ চাপকে সিস্টোলিক চাপ (systolic pressure বলে । অপরদিকে ভেট্রিকলের প্রসারণ (diastole) কালে রক্তচাপ সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। একে বলা হয় ডায়াস্টোলিক চাপ (diastolic pressure)। একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের স্বাভাবিক সিস্টোলিক চাপ হচ্ছে ১১০-১২০ mmHg (মিলিমিটার পারদ স্তম্ভ) এবং স্বাভাবিক ডায়াস্টোলিক চাপ ৭০-৮০ mmHg. রক্ত স্বাভাবিক সীমার উপরে থাকলে তাকে উচ্চ রক্তচাপ (hypertension) এবং স্বাভাবিক সীমার নিচে থাকলে তাকে নিম্ন রক্তচাপ (hypotension) বলে । মানুষের রক্তচাপ মাপার যন্ত্রকে স্ফিগমোম্যানোমিটার (sphygmomanometer) বলা হয়। বয়স, লিঙ্গ, পেশা, খাদ্যাভাস, জীবনযাপন পদ্ধতি ইত্যাদি কারণে মানুষের রক্তচাপের তারতম্য ঘটে।
ব্যারোরিসেপ্টরঃ
মানুষের রক্তবাহিকার প্রাচীরে বিশেষ সংবেদী স্নায়ু প্রান্ত (sensory nerve ending) থাকে। এগুলো রক্তচাপ পরিবর্তনে বিশেষভাবে সাড়া দেয় এবং দেহে রক্ত চাপের ভারসাম্য রক্ষা করে। এই সংবেদী স্নায়ু প্রান্তকে ব্যারোরিসেপ্টর বলে ) এসব স্নায়ু প্রান্ত অস্বাভাবিক রক্তচাপ শনাক্ত করে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে যে বার্তা পাঠায় তার প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র হৃৎস্পন্দন মাত্রা ও শক্তি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রক্তচাপ স্বাভাবিককরণে ভূমিকা পালন করে। সামগ্রিক প্রক্রিয়াটি ব্যারোরিফ্লেক্স (bororeflex) নামে পরিচিত।
ব্যারোরিসেপ্টর দুরকম-উচ্চচাপ ব্যারোরিসেপ্টর এবং নিম্নচাপ ব্যারোরিসেপ্টর ।
১. উচ্চচাপ ব্যারোরিসেপ্টর (High Pressure Baroreceptors) : অনুপ্রস্থ অ্যাওটিক আর্চ এবং ডান ও বাম অন্তঃস্থ ক্যারোটিড ধমনির ক্যারোটিড সাইনাস-এ এসব ব্যারোরিসেপ্টর অবস্থান করে। রক্তের চাপ বেড়ে গেলে অর্থাৎ রক্তনালির প্রসারণ ঘটলে সেখানকার ব্যারোরিসেপ্টরগুলো উদ্দীপ্ত হয় এবং এই উদ্দীপনা মস্তিষ্কের মেডুলাতে সঞ্চালিত হয় এবং এখানে ভ্যাসোমটর (vasomotor) কেন্দ্রটি দমিত হয়। ফলশ্রুতিতে সিমপ্যাথেটিক স্নায়ু বরাবর হৃৎপিন্ড ও রক্তনালিতে চেষ্টীয় (motor) বা আজ্ঞাবহ উদ্দীপনা পরিবহনের হার হ্রাস পায়। আজ্ঞাবহ উদ্দীপনার কমতিতে হৃৎপিন্ডের পাম্পিং ক্রিয়া এবং রক্তনালির মধ্য দিয়ে রক্ত সংবহনের মাত্রা হ্রাস পায়। এভাবে রক্তচাপ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। রক্ত চাপ পড়ে গেলে (যেমন-মানসিক আঘাতে) ক্যারোটিড ও অ্যাওটিক ব্যারোরিসেপ্টর থেকে সংকেত যথাক্রমে গ্লসোফ্যারিঞ্জিয়াল ও ভ্যাগাস স্নায়ুর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মেডুলা অবলংগাটায় জড়ো হয়। মেডুলা অবলংগাটা তথ্যগুলো হৃৎপেশি, কার্ডিয়াক পেসমেকার, দেহের ধমনিকা বা আর্টারিওল (ধমনির শূক্ষ্ণ শাখা) ও শিরায় প্রেরণ করে। ফলশ্রুতিতে হৃৎস্পন্দন দ্রুত হয় ও সজোরে সংকুচিত হয় এবং ধমনির রক্তচাপ স্বাভাবিক হয়ে আসে।
২. নিম্নচাপ ব্যারোরিসেপ্টর বা আয়তন রিসেপ্টর (Low-Pressure Baroreceptors or Volume Receptors): বড় বড় সিস্টেমিক শিরা, পালমোনারি রক্তবাহিকা এবং ডান অ্যাট্রিয়াম ও ভেন্ট্রিকলের প্রাচীরের ব্যারোরিসেপ্টরগুলো এ ধরনের। এসব রিসেপ্টর রক্তের আয়তন (blood volume) নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে। রক্তের আয়তন কমে গেলে রক্তচাপও কমে যায় । তখন আয়তন রিসেপ্টর মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস-এ বার্তা প্রেরণ করে। ফলে পিটুইটারি গ্রন্থির নিউরোহাইপোফাইসিস কর্তৃক অ্যান্টিডাইউরিটিক বা ভ্যাসোপ্রেসিন হরমোন নিঃসরণ বেড়ে যায় । উক্ত হরমোন বৃক্কনালিকা কর্তৃক পানি ও লবণ পুনঃশোষণ বাড়িয়ে রক্তের আয়তন বৃদ্ধির মাধ্যমে রক্তচাপ বাড়ায়। ভ্যাজোপ্রেসিন হরমোন সরাসরি রক্তনালিকার সংকোচন ঘটিয়েও রক্তচাপ বৃদ্ধি করে । রক্তের আয়তন তথা চাপ কমে গেলে স্বয়ংক্রিয় বা সিমপ্যাথেটিক স্নায়ু উদ্দীপ্ত হওয়ায় বৃক্কের অন্তর্বাহী ধমনি থেকে রেনিন এনজাইম ক্ষরণ বেড়ে যায়। রেনিন এনজাইমের কার্যকারিতায় রক্তের আয়তন বাড়িয়ে রক্তচাপ বৃদ্ধি করে। অর্থাৎ আয়তন রিসেপ্টরের প্রভাব রয়েছে রক্ত সংবহন ও রেচন উভয় তন্ত্রে ।