রেচনতন্ত্র কোন জাতীয় পদার্থ শরীর থেকে বের করে?

Created: 2 years ago | Updated: 9 months ago
Updated: 9 months ago

রেচন ও অসমোরেগুলেশনে বৃক্কের ভূমিকা (Role of Kidney in Excretion and Osmoregulation):
কোষ থেকে নাইট্রোজেনঘটিত বিপাকীয় বর্জ্যের অপসারণের আরেক নাম রেচন(Excretion)। বিপাকীয় বর্জ্য দেহের জন্য অপ্রয়োজনীয়। দেহকোষ, টিস্যু ও অঙ্গে যে অসংখ্য রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে তার ফলে দেহের জন্য ক্ষতিকর যেসব বিষাক্ত পদার্থ উৎপন্ন হয় তা রেচনে এবং দেহের অসমোরেগুলেশনে (রক্তে পানি ও আয়নসাম্য রক্ষা) বৃক্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

রেচনে বৃক্কের ভূমিকা (Role of Kidney in Excretion):
বৃক্ক প্রধানত নাইট্রোজেনঘটিত বর্জ্য পদার্থ দেহ থেকে নিষ্কাশন করে । আমিষ জাতীয় খাদ্য বিপাকের ফলে দেহে নাইট্রোজেনঘটিত বর্জ্য সৃষ্টি হয়। অ্যামোনিয়া, ইউরিয়া, ইউরিক এসিড, ক্রিয়েটিনিন ইত্যাদি মানুষের প্রধান নাইট্রোজেনঘটিত বর্জ্য। এদের রেচন(Excretion) বর্জ্য বলে। এগুলো রক্তের মাধ্যমে সারাদেহে প্রবাহিত হয়। এগুলো বিষাক্ত ও দেহের জন্য ক্ষতিকর। তাই এসব রেচন পদার্থ দেহ থেকে নিষ্কাশন করা অত্যাবশ্যক। বৃক্ক এসব রেচন পদার্থ দেহ থেকে অপসারণ করে দেহকে সুস্থ রাখে । নিম্নলিখিত উপায়ে বৃক্ক এসব বর্জ্য নিষ্কাশন করে।

ইউরিয়া বর্জ্য : আমিষ জাতীয় খাদ্য পরিপাক হয়ে অ্যামিনো এসিডে পরিণত হয়। অ্যামিনো এসিড প্রধানত দেহ গঠন ও বৃদ্ধির কাজ করে থাকে। অ্যামিনো এসিডের বৈশিষ্ট্য হলো দেহে যতটুকু অ্যামিনো এসিড প্রয়ােজন ঠিক ততটুকুই ব্যবহৃত হতে পারে, অতিরিক্ত অ্যামিনো এসিড দেহে সঞ্চিত থাকতে পারে না। অতিরিক্ত অ্যামিনো এসিড যকৃতে ডি-অ্যামাইনেজ এনজাইমের উপস্থিতিতে ডি-অ্যামিনেশন (deamination) প্রক্রিয়ায় কিটো এসিড ও অ্যামিন মূলক (C, NH) সৃষ্টি করে। কিটো এসিড শক্তি উৎপাদনে ব্যবহৃত হয় এবং অ্যামিন মূলক (NH) হাইড্রোজেন আয়ন (H+) এর সাথে যুক্ত হয়ে অ্যামোনিয়া (NH3) সৃষ্টি করে। অ্যামোনিয়া (NH3) অত্যন্ত বিষাক্ত। এটি (CO2) এর সাথে যুক্ত হয়ে যকৃতে অরনিথিন চক্রের মাধ্যমে কম ক্ষতিকারক পানিতে দ্রবণীয় ইউরিয়াতে পরিণত হয়। ইউরিয়া রক্তের প্লাজমায় অবস্থান করে এবং সংবহন তন্ত্রের মাধ্যমে বৃক্কে পৌছে। এরপর মূত্র সৃষ্টির মাধ্যমে দেহ থেকে বহিষ্কৃত হয়।


ইউরিক এসিড বর্জ্য : যকৃতের কোষে নিউক্লিক এসিডের পিউরিন ক্ষারক বিপাকের ফলে ইউরিক এসিড সষ্টি হয়। এটি ইউরিয়া অপেক্ষা কম বিষাক্ত। ইউরিক এসিড রক্তের মাধ্যমে বৃক্কে পৌঁছে এবং দেহ থেকে বহিষ্কৃত হয়।
ক্রিয়েটিনিন বর্জ্য : দেহের পেশিতে অবস্থিত ক্রিয়েটিন (creatine) নামক অ্যামিনো এসিডের বিপাকের ফলে ক্রিয়েটিনিন বর্জ্য সৃষ্টি হয়। দেহে বিদ্যমান প্রায় ২% ক্রিয়েটিন বিপাক প্রক্রিয়ায় পেশিতে শক্তি উৎপাদনে ব্যবহৃত হয় এবং ক্রিয়েটিনিন সৃষ্টি করে। ক্রিয়েটিনিন রক্তের মাধ্যমে বৃক্কে পৌছে। বৃক্কে রক্ত থেকে ক্রিয়েটিনিন পরিস্রুত হয়ে মুত্রের সাথে দেহ থেকে বের হয়ে যায়। রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা দ্বারা বৃক্কের সুস্থতা নির্ণয় করা হয়। তাই রক্তের ক্রিয়েটিনিন মাত্রাকে বৃক্কের রোগ নির্ণয়ের নির্দেশক (diagnostic index of kidney) হিসেবে গণ্য করা হয়। রক্তে ক্রিয়েটিনিনের স্বাভাবিক মাত্রা পুরুষের 0.6 – 1.2 mg/dl এবং মহিলাদের 0.5 – 1.1 mg/dl. বৃক্কের মাধ্যমে বিভিন্ন বিষ, অতিরিক্ত ঔষধ, হরমোন ইত্যাদিও মূত্রের সাথে বহিষ্কৃত হয়।
অসমোরেগুলেশনে বৃক্কের ভূমিকা (Role of Kidney in Osmoregulation)
অসমোরেগুলেশন প্রক্রিয়া বলতে জীবন্ত কোষ বা দেহের অন্তঃ ও বহিঃপরিবেশের মধ্যে তা সমতা রক্ষাকে বুঝায়। দেহের অভ্যন্তরীণ পরিবেশের স্থিতি বজায় রাখতে (homeostasis) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দেহের পানি ও সোডিয়াম, পটাসিয়াম লবণ এবং ক্লোরাইড আয়নের মধ্যে একটি আন্তরসাম্য রক্ষার প্রক্রিয়াকে অসমোরেগুলেশন বলা হয়।

অসমোরেগুলেশন পদ্ধতি (Osmoregulation system) :
দেহে পানির সমতা রক্ষা করার জন্যে অ্যান্টিডাইইউরেটিক হরমোন (Antidiuretic Hormone, ADH) নামক একটি হরমোন রয়েছে । ADH-কে ভ্যাসোপ্রেসিন (vasopressin)-ও বলা হয়। দেহের পানির পরিমাণ কম হলে রক্তে ADH এর পরিমাণ বেড়ে যায়, ফলে বৃক্ক অল্প পরিমাণ (মিনিটে ০.৫ মিলিলিটার), মূত্র উৎপন্ন করে এবং দেহের পানির পরিমাণ ঠিক রাখে।

অন্যদিকে কোন কারণে পানির আধিক্য দেখা দিলে রক্তে ADH অতিমাত্রায় কমে যায় এবং দেহের পানির পরিমাণ বেড়ে যায় কারণ বৃক্কে পানি শোষণের ক্ষমতা কমে যায়। এ অবস্থায় মূত্রের পরিমাণ প্রতি মিনিটে ১৬ মিলিলিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। মস্তিষ্কের গোড়ায় হাইপোথ্যালামাস অংশে কিছু স্নায়ুকোষ এ ADH ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে। এখান থেকে নিউরোসিক্রেশন (neurosecretion) পদ্ধতির মাধ্যমে নিঃসৃত ADH পশ্চাৎ পিটুইটারি গ্রন্থির মধ্যে পরিবাহিত হয় এবং রক্তে অবমুক্ত হয়। হাইপোথ্যালামাসের মধ্যে উপস্থিত অসমোরিসেপ্টর (osmoreceptor) নামক স্নায়ুকোষ দেহ তরলের অভিস্রবণিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করে।

Content added By
Promotion