নবম-দশম শ্রেণি (দাখিল) - গার্হস্থ্য বিজ্ঞান - নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা | NCTB BOOK

ডায়াবেটিস একটি বিপাক জনিত রোগ। শরীরে ইনসুলিন নামক হরমোনের অভাবে বিপাকজনিত ত্রুটি ঘটে, ফলে রক্তে গুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়। ডায়াবেটিস কোনো সংক্রামক রোগ নয়। একবার ডায়াবেটিস হলে তা একেবারে সেরে যায় না, তবে চিকিৎসা সংক্রান্ত নিয়ম মেনে চললে একে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। খাদ্যনিয়ন্ত্রণ ও নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন ছাড়া কোনোভাবেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় না। যে কেউ যে কোনো বয়সে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারে তবে নিম্নলিখিত কারণে ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায় –

  • বংশগত কারণ- যাদের মা-বাবা ও খুব নিকটজনের ডায়াবেটিস আছে, তাদের মধ্যে এই রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেশি
  • অতিরিক্ত শারীরিক ওজন
  • শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম না করা
  • অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের উপায় – ডায়াবেটিস সম্পূর্ণ নিরাময় করা যায় না। তবে এই রোগ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখা - যায়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য চারটি নিয়ম মানতে হয়

  • খাদ্য ব্যবস্থা
  • ঔষধ
  • শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম
  • রোগ সম্পর্কে শিক্ষা

 

উল্লিখিত প্রতিটি ক্ষেত্রেই শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। তাহলে সহজেই ডায়াবেটিস সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে।

(ক) ডায়াবেটিসে খাদ্য ব্যবস্থাপনা – ডায়াবেটিস হলে রক্তে গুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়। এই গুকোজ - প্রধানত খাবার থেকে আসে। আর তাই ডায়াবেটিস হলে খাদ্য গ্রহণে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে হয়। ডায়াবেটিস হওয়ার আগে ও পরে পুষ্টি চাহিদার কোনো তারতম্য ঘটে না। কিন্তু খাদ্য গ্রহণে নিয়ম মেনে চলার উদ্দেশ্য হলো ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা ও স্বাস্থ্য ভালো রাখা ।

খাদ্য গ্রহণের নিয়ম-

  • বেশি খাওয়া যাবে বা ইচ্ছামতো খাওয়া যাবে -যে খাবারগুলোতে প্রচুর আঁশ আছে সেই খাবারগুলো বেশি - খেলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়ে না, তাই সেইগুলো বেশি করে খাওয়া যাবে। সব রকমের শাকসবজি যেমন- চিচিংগা, ধন্দুল, পেঁপে, পটোল, শিম, লাউ, শসা, খিরা, করল্লা, উচ্ছে, কাঁকরোল, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ইত্যাদি। ফলের মধ্যে জাম, জামরুল, আমলকী, লেবু, জাম্বুরা ইত্যাদি।
  • হিসাব করে খেতে হবে – কিছু খাবার আছে খাওয়ার পর খুব দ্রুত রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ না বাড়লেও সেই খাবারগুলো পরিমাণে বেশি খেলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়, তাই সেই খাবারগুলো হিসাব করে খেতে হবে। যেমন- ভাত, রুটি, চিড়া, মুড়ি, খৈ, বিস্কুট, আলু, মিষ্টি আলু, মিষ্টি কুমড়া, দুধ, ছানা, পনির, মাংস, মাছ, ডিম, ডাল, বাদাম, মিষ্টি ফল যেমন- কলা, পাকা আম, পাকা পেঁপে ইত্যাদি । ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও সাদা চাল ও সাদা আটার চেয়ে লাল চালের ভাত ও ভুসিসহ আটার রুটি বেশি উপকারী। এগুলো রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ দ্রুত বাড়ায় না ।
  • পরিহার করতে হবে – কিছু কিছু খাবার আছে যা খাওয়ার পর খুব দ্রুত রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়, সেই খাবারগুলো পরিহার করতে হবে। যেমন- চিনি, গুড়, মিসরি, রস, সরবত, সফট্ ড্রিংকস, জুস, সব রকমের মিষ্টি, পায়েস, ক্ষীর, পেস্ট্রি, কেক ইত্যাদি।
  • শরীরের ওজন বেশি থাকলে তা কমিয়ে স্বাভাবিক ওজনে আনতে হবে। আবার শরীরের ওজন কম থাকলে তা বাড়িয়ে স্বাভাবিক ওজনে আনতে হবে। সব সময় শরীরের ওজন স্বাভাবিক মাত্রায় রাখতে হবে।
  • নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট পরিমাণে খাবার খেতে হবে। নিজের ইচ্ছামতো কোনো বেলার খাবার বাদ দেওয়া যাবে না। এক বেলায় বেশি খাওয়া বা অন্য বেলায় কম খাবার খাওয়া অথবা এক দিন কম এক দিন বেশি খাবার খাওয়া যাবে না ।

এক কথায় বলা যায় যে, নিয়মতান্ত্রিকভাবে খাদ্য গ্রহণে সহজেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় ৷

(খ) শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম অত্যন্ত - গুরুত্বপূর্ণ। ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রমের ফলে ইনসুলিনের কার্যকারিতা ও নিঃসরণের পরিমাণ বেড়ে যায় ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়।

(গ) ওষুধ - সকল ডায়াবেটিস রোগীকেই খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম ও শৃঙ্খলা মেনে চলতে হয়। তবে কোনো কোনো ডায়াবেটিস রোগীকে খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম ও শৃঙ্খলা মেনে চলার পাশাপাশি খাবার বড়ি অথবা ইনসুলিন ইনজেকশন নিতে হয়। যে রোগীকে চিকিৎসার জন্য যে ওষুধ অর্থাৎ খাবার বড়ি অথবা ইনসুলিন ইনজেকশন যাই দেওয়া হোক না কেন তাকে তার জন্য নির্ধারিত ডোজ ও এর সাথে খাদ্য গ্রহণ, ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রমের সঠিক নিয়ম খুবই সচেতনভাবে মেনে চলতে হবে। তা না হলে ঔষধ রোগ নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে জীবনের ঝুঁকির কারণও হতে পারে ।

(ঘ) রোগ সম্পর্কে শিক্ষা -ডায়াবেটিস সারা জীবনের রোগ তাই এই রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে - রোগীকে ও রোগীর নিকট আত্মীয়দেরও অবশ্যই রোগ সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। কারণ ডায়াবেটিস চিকিৎসার জন্য শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই।

শৃংখলা মেনে চলা- ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন অর্থাৎ জীবনযাপনে শৃঙ্খলা মেনে চলাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। জীবনযাপনে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর দিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে-

নিয়মিত ও পরিমাণমতো সুষম খাদ্য গ্রহণ এবং এ সংক্রান্ত বিধি-নিষেধ মেনে চলা

নিয়মিত ও প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম করা

চিকিৎসকের পরামর্শ ও ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী খাবার বড়ি অথবা ইনসুলিন ইনজেকশন গ্রহণ করা

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা

পায়ের নিয়মিত বিশেষ যত্ন নেওয়া

ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসা বন্ধ না করা

নিয়মিত রক্তের গুকোজ পরীক্ষা করা ও রিপোর্ট সংরক্ষণ করা

ধূমপান ও মদপান পরিহার করা

প্রতিদিন জীবনযাত্রায় যথাসম্ভব নির্দিষ্ট রুটিন মেনে চলা ডায়াবেটিস চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা গ্রহণ করা

শরীরিক যে কোনো জরুরি অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা

 

কাজ – ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনের পদ্ধতি বর্ণনা কর।

 

Content added By

Promotion