On This Page
এসএসসি(ভোকেশনাল) - পোল্ট্রি রিয়ারিং অ্যান্ড ফার্মিং-২ - প্রথম পত্র (নবম শ্রেণি) | NCTB BOOK

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এ দেশে প্রচুর পরিমানে হাওর-বাওড়, নদী-নালা, বিল-ঝিল, পুকুর-জলাশয় রয়েছে। প্রচুর প্রাকৃতিক পানির উৎস থাকায় এদেশে হাঁস পালন করা অধিক সুবিধাজনক। এছাড়াও বাংলাদেশের জলবায়ু ও পরিবেশ হাঁস চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এ দেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। বর্ষাকালে বাংলাদেশের প্রায় তিন চতুর্থাংশ জলমগ্ন হয়ে থাকে। এ সময় খাল-বিলে আটকা পানিতে মানুষের খাদ্য নয় এমন অনেক জলজ প্রাণী (শামুক, ঝিনুক) ও উদ্ভিদ (শৈবাল) জন্মে থাকে। এ সমস্ত জলজ প্রাণী হাঁসের অতি প্রিয় উপাদেয় খাদ্য। আবহমান কাল থেকে এ দেশের গ্রাম গঞ্জে সনাতন পদ্ধতিতে হাঁস পালন প্রচলিত আছে। বর্তমানে আধুনিক পদ্ধতিতে বেশ কিছু হাঁসের লাভজনক খামার গড়ে উঠেছে যেখান থেকে ডিম ও মাংসের চাহিদা অনেকাংশে পুরণ হচ্ছে।

এই অধ্যায় শেষে আমরা-

  • হাঁস পালনের বিভিন্ন পদ্ধতি বলতে পারব। 
  • হাঁসের বাচ্চার ব্রুডার ঘর সঠিকভাবে প্রস্তুত করতে পারব
  • ব্রুডার ঘরে যন্ত্রপাতি, উপকরণ ও হাঁসের বাচ্চা সঠিকভাবে প্রতিস্থাপন করতে পারব 
  • ব্রুডার ঘরে সঠিকভাবে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ও আনুষঙ্গিক কাজ করতে পারব
  • হাঁসের ব্রুডিং দক্ষতা অর্জন করতে পারব 
  • হাঁসের ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুযুক্ত করতে পারব 
  • বাসস্থানের জীব নিরাপত্তা রক্ষা করতে পারব

 

 

Content added By

১.১ হাঁস পালন পদ্ধতি 

নদী-নালা, খাল-বিল, হাওড়-বাওড় ও অজস্র পুকুর আর জলাশয়ে সমৃদ্ধ আমাদের এ বাংলাদেশ। দেশের ভৌগলিক অবস্থা বিবেচনায় নিম্নাঞ্চলে অর্থাৎ যেখানে নদী-নালা, খাল-বিল, হাওড়-বাওড় আছে সে সব এলাকার মানুষ কম পুঁজিতে হাঁস পালন করে অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। আজকাল আমাদের দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য হাঁস পালন জীবিকার অন্যতম উপায়। আমাদের দেশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তেমনভাবে হাঁসের খামার গড়ে না উঠলেও গ্রামের কৃষকেরা প্রচলিত পদ্ধতিতে হাঁস পালন করে থাকেন।

সাধারনত হাঁস পালনে নিম্নের পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করা হয়ে থাকে । যথা: 

ক) উন্মুক্ত পদ্ধতি (Open Method) 

খ) অর্ধ-আবদ্ধ পদ্ধতি (Semi-intensive Method) 

গ) আবদ্ধ পদ্ধতি (Intensive Method) 

ঘ) হার্ডিং পদ্ধতি (Herding Method) 

ঙ) লেন্টিং পদ্ধতি (Lenting Method)

 

শ্রেণির তাত্ত্বিক কাজ 

  • হাঁস পালনের জন্য বাংলাদেশ উপযুক্ত কেন? 
  • হাঁস পালনের পদ্ধতিগুলোর নাম লেখ ।

ক) উন্মুক্ত পদ্ধতিতে হাঁস পালন 

এটি হাঁস পালনের সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি। আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে এ পদ্ধতিতে হাঁস পালন করা হয়ে থাকে। এ পদ্ধতিতে দিনের বেলা হাঁসগুলোকে ছেড়ে দেয়া হয় এবং নিজেদের প্রয়োজনীয় খাদ্য সংগ্রহ করে খায়। সন্ধ্যা বেলায় যখন হাঁসগুলো ঘরে ফিরবে তখন প্রতিদিন কিছু তৈরি সুষম খাবার সরবরাহ করতে হবে। সন্ধ্যা বেলায় কিছু খাবার সরবরাহ করার নিয়ম চালু রাখলে খাবার ও আরামদায়ক বাসস্থানের লোভে এরা ঘরে ফিরে আসবে। রাতে বাড়িতে নির্দিষ্ট জায়গায় আবদ্ধ করে রাখা হয়। এই পদ্ধতিতে হাঁসকে অতিরিক্ত তেমন খাবার দেয়া হয় না বললেই চলে।

এ পদ্ধতিতে বাড়ন্ত ও পূর্ণবয়স্ক হাঁস পালন করা সুবিধাজনক। যেসব অঞ্চলে পতিত জলাশয় রয়েছে এবং খালবিল বেশি সেখানে এ পদ্ধতিতে হাঁস পালন সবচেয়ে ভালো। ডিমপাড়া হাঁসগুলোকে সকাল ৯.০০ টা পর্যন্ত ঘরে আবদ্ধ করে রাখতে হয় কারণ হাঁস সকাল বেলায় ডিম পাড়তে পছন্দ করে ।

উন্মুক্ত পদ্ধতির সুবিধাসমূহ-

  • এ পদ্ধতিতে হাঁস পালনে খাদ্য খরচ কম হয় । 
  • বাসস্থানের জন্য খরচ কম হয়। 
  • ব্যবস্থাপনায় কম শ্রমিকের প্রয়োজন হয় ৷ 
  • মুক্ত আলো বাতাসে চলাচল করতে পারে বিধায় আবদ্ধ পদ্ধতির তুলনায় এ পদ্ধতিতে হাঁসের বৃদ্ধি ভালো হয়।

উন্মুক্ত পদ্ধতির অসুবিধাসমূহ-

  • হাঁসগুলোকে বিভিন্ন শিকারী প্রাণি খেয়ে ফেলতে পারে। 
  • খারাপ আবহাওয়ায় হাঁসের ক্ষতি হবার সম্ভাবনা থাকে। 
  • সব সময় পর্যবেক্ষণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। 
  • মুক্ত জায়গায় ডিম পাড়লে ডিমের সংখ্যা কম হতে পারে ।

 

খ) অর্ধ-আবদ্ধ পদ্ধতিতে হাঁস পালন 

এই পদ্ধতিতে হাঁসগুলো রাতের বেলায় ঘরে আবদ্ধ থাকে এবং দিনের বেলায় ঘর সংলগ্ন একটি নির্দিষ্ট ফাঁকা জায়গার মধ্যে ছেড়ে দেয়া হয়। এটি তারের জাল দ্বারা ঘেরা থাকে। এ নির্দিষ্ট গন্ডিকে রেঞ্জ বা রান বলে। এ গন্ডির ভেতরে প্রতিটি হাঁসের জন্য প্রায় ১০ বর্গফুট জায়গার প্রয়োজন হয়। এ পদ্ধতি বাড়ন্ত ও প্রাপ্তবয়স্ক হাঁসের জন্য উপযোগী। রেঞ্জ বা গন্ডির ভেতরে সিমেন্ট দিয়ে বড় ধরনের পানির পাত্র তৈরি করা হয়। এখানে হাঁসগুলো সাঁতার কাটতে পারে এবং খাবার পানি খেতে পারে। প্রতিটি হাঁসকে দৈনিক ১৪০-১৬০ গ্রাম খাদ্য সরবরাহ করতে হয় ।

অর্ধ-আবদ্ধ পদ্ধতির সুবিধাসমূহ-

  • বাণিজ্যিক ভিত্তিতে হাঁস পালন করা সুবিধাজনক । 
  • হাঁসের যত্ন নেওয়া সহজ । 
  • খাদ্য গ্রহণ সমভাবে হয় ।
  • শিকারী প্রাণির কোনো ভয় থাকে না। 
  • স্বাস্থ্যকর পরিবেশ প্রদান করা যায় ।

অর্ধ-আবদ্ধ পদ্ধতির অসুবিধাসমূহ-

  • বেশি পরিমাণ খাবার সরবরাহ করতে হয় । 
  • যন্ত্রপাতি ও নির্মাণ খরচ বেশি হয়। 
  • মুক্তভাবে চলাচলের সীমাবদ্ধতা থাকে।

 

গ) আবদ্ধ পদ্ধতি 

এই পদ্ধতিতে পরিবেশ নিয়ন্ত্রিত ঘরে হাঁসগুলোকে সবসময় আবদ্ধ অবস্থায় রাখা হয়। বাচ্চা হাঁস (৪-৬ সপ্তাহ) পালনের জন্য এই পদ্ধতি খুবই উপযোগী। আবদ্ধ পদ্ধতি তিন ধরনের হয়ে থাকে। যেমন- 

i. মেঝে পদ্ধতি 

ii. খাঁচা পদ্ধতি বা ব্যাটারি পদ্ধতি 

iii. তারজালির মেঝে পদ্ধতি

 

i. মেঝে পদ্ধতি: 

এই পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চাগুলো আবদ্ধ অবস্থায় মেঝেতে পালন করা হয়। এ ধরনের মেঝেতে লিটার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। খাবার এবং পানি দিয়ে লিটার যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য ঘরের এককোণে তারজালের উপর পানি পাত্র ও খাদ্য পাত্র রাখা হয়।

মেঝেতে হাঁস পালনের সুবিধাসমূহ-

  • হাঁসগুলোকে ভালোভাবে পরিচর্যা করা যায় । 
  • এই পদ্ধতিতে খরচ কম লাগে । 
  • এই পদ্ধতিতে শ্রমিক কম লাগে ।

মেঝেতে হাঁস পালনের অসুবিধাসমূহ-

  • ঘরের লিটার ঘন ঘন পরিবর্তন করতে হয়। 
  • বাসস্থান সহজেই স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে যায় তাই বাসস্থান সহজেই কলুষিত হয়।

 

ii. খাঁচা বা ব্যাটারি পদ্ধতি 

খাঁচা পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চাগুলো আবদ্ধ অবস্থার মাচায় পালন করা হয়। এ ধরনের বাঁচার খাদ্য ও পানি দেয়ার আলাদা ব্যবস্থা থাকে। খাবার এবং পানি দিয়ে লিটার যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য ঘরের এককোণে তারুজ্জালের উপর পানি পাত্র ও খাদ্য পাত্র রাখা হয়। এ পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চাগুলোকে খাঁচায় পালন করা হয়ে থাকে। প্রতিটি বাচ্চার জন্য ০.৭৫ বর্গফুট জারগার প্রয়োজন হয়। বাচ্চা পালনের জন্য এ পদ্ধতি খুবই সুবিধাজনক ।

খাঁচায় হাঁস পালনের সুবিধাসমূহ-

  • এই পদ্ধতিতে বাচ্চা হাঁস পালন করা সহজ। 
  • অনেকগুলো বাচ্চা একসাথে পালন করা যায়। 
  • সহজে বর্জ্য পদার্থ পরিষ্কার করা যায়।

খাঁচায় হাঁস পালনের অসুবিধাসমূহ-

  • এই পদ্ধতিতে বড় হাঁস পালন করা যায় না । 
  • এই পদ্ধতির প্রাথমিক খরচ বেশী হয়।

 

iii. তারের জালের মেঝেতে হাঁস পালন 

এক্ষেত্রে হাঁসের বাচ্চাগুলোকে তারের জাল দিয়ে নির্মিত মেঝেতে পালন করা হয়ে থাকে। প্রতিটি বাচ্চার জন্য ০.৫-০.৭৫ বর্গফুট জায়গার প্রয়োজন হয়। এ পদ্ধতিতে ঘরের মেঝে থেকে উঁচু করে তারের জাল দেয়া হয় এবং তারের জালের ফাঁক যাতে ১.৫ বর্গ ইঞ্চির বেশি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মাচার চারপাশে ১-২ ফুট উঁচু করে বেড়া দিতে হবে যেন হাঁসের বাচ্চা বাইরে পড়ে না যায়। এই পদ্ধতিতে হাঁস পালন করলে প্রাথমিক খরচ একটু বেশি হয়।

তারের জালের মেঝেতে হাঁস পালনের সুবিধাসমূহ-

  • বাচ্চা হাঁস পালনের জন্য এ পদ্ধতি সুবিধাজনক । 
  • হাঁসের ঘর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে সুবিধা হয় । 
  • খাদ্য ও পানি সরবরাহের সুবিধা হয়।

তারের জালের মেঝেতে হাঁস পালনের অসুবিধাসমূহ-

  • তারের জাল বাবদ খরচ বেশি হয়। 
  • সাধারণত বেশি বয়স্ক হাঁস পালন করা যায় না ।

ঘ) লেন্টিং পদ্ধতি 

যে সব এলাকায় বড় বড় হাওড়-বাওড়, বিল-ঝিল থাকে সে সব এলাকায় এই পদ্ধতিতে হাঁস পালন করা হয়ে থাকে। এ পদ্ধতিতে হাওড়, বিলে ভাসমান ঘর তৈরি করে হাঁস পালন করা হয়। প্রতিটি ফ্লকে বা দলে ১০০- ২০০ টি হাঁস পালন করা হয়ে থাকে। এ পদ্ধতিতে হাঁস মুক্ত জলাশয় থেকে নিজেদের খাদ্য সংগ্রহ করে খেয়ে থাকে। তবে অল্প পরিমাণ অতিরিক্ত খাদ্য সরবরাহ করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। এই পদ্ধতিতে হাঁসের ডিম উৎপাদন ভালো হয়। হাঁসগুলো সঠিক সংখ্যায় ও সময়মত ফিরছে কিনা সে দিকে লক্ষ্য করার জন্য একজন পাহারাদার প্রয়োজন হয়।

লেন্টিং পদ্ধতির সুবিধাসমূহ-

  • এই পদ্ধতিতে হাঁসের ডিম উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। 
  • খাবার খরচ কম লাগে। 
  • বাসস্থান নির্মাণ বাবদ খরচ কম হয়।

লেন্টিং পদ্ধতির অসুবিধাসমূহ-

  • এই পদ্ধতিতে বাচ্চা হাঁস পালন করা যায় না। 
  • কিছু অতিরিক্ত খাদ্য সরবরাহ করতে হয় । 
  • হাঁস হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

 

ঙ) হার্ডিং পদ্ধতি 

বাড়ন্ত এবং পূর্ণ বয়স্ক হাঁস পালনের জন্য এ পদ্ধতি বেশ ভালো। এ পদ্ধতিতে হাঁস পালনের জন্য কোনো রকম ঘরের প্রয়োজন হয় না। হাঁসগুলোকে সবসময় গতিশীল রাখা হয় অর্থাৎ যে সমস্ত জলাশয়ে খাদ্য আছে হাঁসগুলোকে পর্যায়ক্রমে সে সমস্ত জলাশয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সারা দিন খাদ্য খাওয়ার পরে রাতের বেলা হাঁসগুলোকে কোনো একটি উঁচু জায়গায় সকাল ৯টা পর্যন্ত আটকিয়ে রাখা হয় কারণ হাঁসগুলো সকাল বেলায় ডিম পাড়ে। একটি নির্দিষ্ট এলাকায় কিছু দিন প্রাকৃতিকখাদ্য খাওয়ানোর পর অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। এ পদ্ধতিতে একজন লোক ১০০-৫০০ টি হাঁস রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারে ।

হার্ডিং পদ্ধতিতে হাঁস পালনের সুবিধাসমূহ-

  • খাদ্য খরচ নেই। 
  • ঘর নির্মাণের প্রয়োজন হয় না ।

হার্ডিং পদ্ধতিতে হাঁস পালনের অসুবিধাসমূহ-

  • দলচ্যুত হয়ে হারিয়ে যেতে পারে । 
  • শিকারি প্রাণির কবলে পড়তে পারে। 
  • ঝড়ের কবলে পড়লে প্রানহানি ঘটতে পারে।

 

 

 

Content added By

১.২ হাঁসের বাচ্চা ব্রুডিং

সাধারণত হাঁসের বাচ্চাকে নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত তাপ দিয়ে লালন-পালন করাকে ব্রুডিং বলে। শীতকালে ৪-৫ সপ্তাহ এবং গ্রীষ্মকালে ২-৩ সপ্তাহ পর্যন্ত হাঁসের বাচ্চার ব্রুডিং করতে হয়। বাচ্চার দেহে তাপ নিয়ন্ত্রণের কলা কৌশল বৃদ্ধি পায় না বলে ব্রুডিং করতে হয়ে।

দু'ভাবে তাপ প্রদান করে হাঁসের বাচ্চা ব্রুডিং করা যায়। 

ক) প্রাকৃতিক নিয়মে অর্থাৎ ক্রডিহাস/মুরগির সাহায্যে তাপ প্রদানের মাধ্যমে ব্রুডিং । 

খ) কৃত্রিম উপায়ে অর্থাৎ বৈদ্যুতিক হিটার, বৈদ্যুতিক বাল্ব, কেরোসিনের বাতি ইত্যাদির মাধ্যমে তাপ প্রদানের মাধ্যমে ব্রুডিং ।

ব্রুডিং এর সুফল-

  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠে। 
  • বিভিন্ন পীড়ণ থেকে সুরক্ষিত রাখে। 
  • সমস্ত বাচ্চা সমানভাবে বেড়ে ওঠে। 
  • সঠিক শারীরিক গঠন হয়। 
  • বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করা যায়। 
  • ঠান্ডা, গরম, বৃষ্টি, প্রতিকূল আবহাওয়া থেকে বাচ্চাকে রক্ষা করা যায়।

প্রাকৃতিক নিয়মে হাঁসের বাচ্চার ব্রুডিং 

গ্রামাঞ্চলে হাঁসের ডিম ফোটানোর জন্য ব্রুডি মুরগি নির্বাচন করা হয়, কারণ হাঁস ডিমে তা দেওয়ায় কম অভ্যন্ত। একটি মুরগি ১০-১৫ টি হাঁসের ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফোটাতে পারে। বাচ্চা ফোটার পর প্রথমে মুরগিকে বাচ্চাসহ কয়েকদিন বন্ধ ঘরে রেখে খাবার ও পানি প্রদান করতে হবে। ৫-৭ দিন পর একটি সীমাবদ্ধ এলাকায় বাচ্চাসহ মুরগিকে ছাড়া যেতে পারে।

মুরগির সাথে বাচ্চাগুলো বাইরে ছেড়ে দেয়ার পর যদি বাচ্চাগুলো ঠাণ্ডা অনুভব করে তবে মুরগির পাখার নিচে চলে আসে এবং তাপমাত্রা নিরাশ করে। যদি পরিবেশের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকে তবে বাচ্চাগুলো মুরগির সাথে স্বাভাবিকভাবে ঘুরে বেড়ায় ও খাদ্য গ্রহণ করে। যদি তাপমাত্রা বেশি অনুভব করে তবে বাচ্চাগুলো মুরগির সাথে গাছের ছায়ার নিচে চলে যায় এবং বেশি করে পানি গ্রহণ করতে চায়। ২-৩ সপ্তাহ পর বাচ্চার সঙ্গে মুরগি রাখার আর প্রয়োজন হয় না। তারপর থেকে বাচ্চাগুলোকে পানিতে ছেড়ে দিয়ে সাঁতার কাটার অভ্যাস করাতে হয় ।

শ্রেণির তাত্ত্বিক কাজ

  • ব্রুডিং কাকে বলে? 
  • সাধারণত কত সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত হাঁসের বাচ্চাকে ঐটি করতে হয়। 
  • ব্রুডিং এর সুফল লেখ। 
  • প্রাকৃতিক উপায়ে হাঁসের বাচ্চার ত্রুটিং বর্ণনা কর। 
  • হাঁসের বাচ্চাকে কখন সাতার কাটার জন্য ছেড়ে দেয়া হয়।

 

 

Content added By

১.৩ ব্রুডার ঘর প্রস্তুতকরণ 

ব্রুডার ঘরে বাচ্চা আনার পূর্বে ব্রুডার ঘর প্রস্তুত করতে হয়। বাচ্চা আনার পূর্বে ঘরের মেঝে, দেয়াল, বেড়া এবং উপরের সিলিং ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। জীবাণুনাশক ঔষষ যেমন ফিনাইল, আরোসান বা অন্য কোনো ভাগ জীবাণুনাশক পানির সঙ্গে মিশিয়ে ঘরের মেঝে, দেখাল, বেড়া ইত্যাদিতে ছিটিয়ে দিয়ে পরকে জীবাণুযুক্ত করতে হবে। ব্রুডার ঘর এবং ঐটিং পাতিসমূহ ৩-৪% ফিনাইল দ্রবণ দিয়ে সঠিকভাবে ঘরের দেয়ালের উপর তার জালের বেড়া থাকলে এবং জানালায় কপাট না থাকলে বাচ্চাকে শীত অথবা বৃষ্টির কবল থেকে নিরাপদ রাখার জন্য জালের সাথে চট ঝুলিয়ে দিতে হবে। চট অবশ্যই পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত হতে হবে। অন্য সময় চট উঠিয়ে রাখতে হবে যাতে বাইরের আলো-বাতাস ঘরে ঢুকতে পারে ।

ব্রুডার ঘরে যে লিটার ব্যবহার করা হবে তা রোদে ভালোভাবে শুকিয়ে বাচ্চা আনার পূর্বে মেঝেতে ৫-৮ সে.মি. পুরু করে বিছিয়ে রাখতে হবে। লিটারের উপর চট বা বস্তা বিছিয়ে তার উপর পানি পাত্র ও খাদ্য পাত্র দিয়ে ঘর প্রস্তুত রাখতে হবে। ৭৫টি বাচ্চার জন্য ১টি পানি পাত্র এবং প্রতি ৪০টি বাচ্চার জন্য ১টি খাদ্য পাত্র স্থাপন করতে হবে।

ব্রুডিং যন্ত্রপাতিসমূহ বাচ্চা আনার পূর্বে ব্রুডার ঘরে স্থাপন করতে হয়। ব্রুডার ঘরে বাচ্চা নেয়ার ১২-২৪ ঘন্টা পূর্বে থেকেই ব্রুডার জ্বালিয়ে ঘর গরম করে রাখতে হয়। বাচ্চা রাখার সময় সেডের তাপমাত্রা ২৪ থেকে ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর মধ্যে রাখতে হবে।

শ্রেণির তাত্ত্বিক কাজ

  • ব্রুডার ঘরে খাদ্য পাত্র ও পানি পাত্রের হিসাব কীভাবে নিরূপন করবে? 
  • ব্রুডারে বাচ্চা নেয়ার কত ঘন্টা পূর্বে ঘরের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে হবে? 
  • ব্রুডার ঘরের আদর্শ তাপমাত্রা কত?

 

 

Content added By

১.৪. ব্রুডার ঘরে যন্ত্রপাতি ও উপকরণ স্থাপন

বাচ্চা ফোটার পর থেকে ৫-৬ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত বাচ্চার কাঙ্খিত পরিবেশ নিশ্চিত করাই হচ্ছে ব্রুডিং ব্যবস্থাপনা। ব্রুডিংকালে হাঁসের বাচ্চার পর্যাপ্ত যত্ন নিশ্চিত করতে হবে। এ সময় হাঁসের বাচ্চার মৃত্যুহার খুব বেশি। এই সময়ে হাঁসের বাচ্চার ঘরের তাপ, আর্দ্রতা, আলো, বায়ু চলাচল সঠিক হতে হবে। উপরোক্ত বিষয়াদি পূরণের জন্য নিম্নোক্ত ব্রুডিং যন্ত্রপাতিসমূহ ব্রুডার ঘরে স্থাপন করা প্রয়োজন হয়।

১. থার্মোমিটার স্থাপন: ব্রুডার ঘরের তাপমাত্রা সঠিক আছে কি না তা জানার জন্য ব্রুডার ঘরে থার্মোমিটার স্থাপন করতে হয়।

২. হাইগ্রোমিটার স্থাপন: ব্রুডার ঘরের আর্দ্রতা সঠিক আছে কি না তা জানার জন্য আর্দ্রতা মাপক যন্ত্র যেমন হাইগ্রোমিটার স্থাপন করতে হয়। ব্রুডার ঘরের আর্দ্রতা ৪৫-৭৫% এর মধ্যে রাখতে হয়।

 

৩. চিকগার্ড: ব্রুডারে বাচ্চাগুলো নিজ্ঞাণের জন্য চিকগার্ড নির্মাণ করা হয়। ব্রুডার ঘরে বাচ্চা যাতে ব্রুডার এর নিকট থেকে দূরে সরে না যার অর্থাৎ বাচ্চাগুলো যাতে প্রয়োজনীয় ভাগ পার সে জন্য প্রভার এর চার পার্শ্বে হার্ডবোর্ড দ্বারা পোলাকার বেষ্টনী তৈরি করা হয়। এই বেষ্টনীকে চিক পার্ড বলা হয়। এই চিক গার্ডের উচ্চতা কমপক্ষে ৭ ইঞ্চি হলে ভালো হয়। চিক পার্ডের মধ্যে খাবার পাত্র এবং পানি পাত্র স্থাপন করতে হবে। ৩০০ সে.মি. বা ১০ ফুট ব্যাসের ১টি চিকগার্ডে ৩০০-৪০০টি হাঁসের বাচ্চাকে স্বাভাবিকভাবে ব্রুডিং করা যায়। তবে বাচ্চা বড় হওয়ার সাথে সাথে চিক গার্ডের পরিধি বাড়ানোর প্রয়োজন হবে। এই চিকগার্ড নেটের মাধ্যমেও তৈরি হতে পারে। শীতের দিনে চিকগার্ড হার্ড বোর্ডের এবং পরমের দিনে নেটের তৈরি হওয়া ভালো। চিকগার্ডকে ব্রুডার গার্ডও বলা হয়। ৪ সপ্তাহের মধ্যে চিকার্ড সরিয়ে বাচ্চা সমস্ত ঘরে ছেড়ে দিতে হবে।

৪. ব্রুডারঃ ব্রুডার হল তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ যা যা দ্বারা ব্রুডার ঘরের তাপমাত্রা ঠিক রাখা হয়। চারটি ১০০ ওয়াট বাশ্বের সাহায্যে এক মিটার পরিধির একটি ফ্রস্টার তৈরি করে তাতে ৩০০ (তিনশত) বাচ্চা পালন করা যায়। কাঠ, টিন, বার্ডবোর্ড ইত্যাদির সাহায্যে ব্রহ্মার বানানো যায়। এক ফুট উঁচু পারার উপর শুধু কাঠ বা হার্ডবোর্ডের সাহায্যে অথবা কাঠ এবং হার্ডবোর্ডের সমন্বয়ে সহজভাবে ইলেকটিক ব্রুডার তৈরি করা যায়। ব্রুডারে ছাতার মত অংশটিকে হোতার বলে। বাহুসহ হোন্ডার হোভারের গায়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়।

৫. খাবার পাত্র হাঁসের বাচ্চার সংখ্যা অনুযায়ী ব্রুডার ঘরে সঠিক ভাবে খাবার পাত্রগুলো স্থাপন করতে হবে। প্রথম ২-৩ দিন কাগজের উপরে, থালা বা ট্রেতে খাবার দিতে হয়। তারপর থেকে খাবার পাত্রে খাবার দিতে হয়। ২ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত প্রতিটি বাচ্চার জন্য এক লিনিয়ার ইঞ্চি জায়গার দরকার হয়। ২-৬ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত প্রতি বাচ্চার জন্য দিতে হয় ১.৫ সিনিয়ার ইঞ্চি ।

৬. পানি পাত্রঃ ব্রুডার ঘরে খাবার পাত্রের চেয়ে পানি পাত্র স্থাপনের প্রয়োজন হবে অর্ধেক। অর্থাৎ পানি পাত্রের জায়গা হবে খাবার পাত্রের অর্ধেক।

৭. লিটার : ঘরের মেঝেতে যে তুষ বা কাঠের গুঁড়া বিছানা হিসেবে দেয়া হয় তাকে লিটার বলে। লিটার মেঝেতে ৫-৮ সে.মি. পুরু করে বিছিয়ে দিতে হবে। ভিজা, স্যাঁতস্যাঁতে ও ময়না হলে লিটার পাল্টিয়ে দিতে হবে।

শ্রেণির তাত্ত্বিক কাজ

  • ব্রুডার ঘরে যে সকল যন্ত্রপাতি স্থাপন করতে হয় সেগুলোর তালিকা প্রস্তুত কর। 
  • ১০ ফুট ব্যাসের ১টি চিকগার্ডে কতটি বাচ্চা ব্রুডিং করা যায়? 
  • কীভাবে তুমি একটি ব্রুডার প্রস্তুত করবে তা ধারাবাহিকভাবে লেখ ।

 

 

Content added By

১.৫ বয়স অনুযায়ী ব্রুডিং তাপমাত্রা

হাঁসের বাচ্চার সুষ্ঠু বৃদ্ধির জন্য পরিমিত তাপমাত্রার প্রয়োজন। তাপমাত্রার অতিরিক্ত কম বা বেশি হলে বাচ্চা অসুস্থ হয়ে যায়। ব্রুডার ঘরের তাপমাত্রা নির্ণয় করার জন্য থার্মোমিটার থাকে। হাঁসের বাচ্চাকে গ্রীষ্মকালে ২-৪ সপ্তাহ এবং শীতকালে ৪-৬ সপ্তাহ ব্রুডিং করা হয়। ব্রুডিংকাল অত্যন্ত সংবেদনশীল বিধায় গভীর পর্যবেক্ষণে রাখতে হয়।

ব্রুডার ঘরে নিম্নলিখিতভাবে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা হয়-

শীতকালে ১০০টি বাচ্চার জন্য ১০০ ওয়াট বা প্রয়োজনবোধে তদূর্দ্ধ ওয়াটের বাল্বের ব্যবস্থা করতে হয়। হোভার উঁচু নিচু করে তাপমাত্রা কমানো বাড়ানো যায়। গরমকালে ৩০০টি বাচ্চা পালনের জন্য হোভারের চার কোণায় চারটি ৬০ ওয়াট এর বাল্ব দিয়েই ব্রুডিং করা যায়।

 

১/২ ডিগ্রি তাপমাত্রা কম বা বেশি হলে বাচ্চার বৃদ্ধিতে তেমন অসুবিধা হয় না। ব্রুডিং এর পর বাচ্চা পরিবেশের তাপমাত্রার সাথে সহজেই খাপ খাইয়ে নিতে পারে। যে অপমাত্রার বাচ্চাগুলো ব্রুডার ঘরে আরাম অনুভব করবে সে তাপমাত্রাতেই ঘর গরম রাখতে হবে। তাই ঘরে থার্মোমিটার না থাকলেও বাচ্চার অবস্থান দেখে ব্রুডার ঘরের তাপমাত্রা বোঝা যায়। নিচে তা বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

১. ব্রুডার ঘরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে বাচ্চাগুলো ব্রুডার, হিটার বা তাপের উত্স থেকে দূরে অবস্থান করবে এবং মুখ হা করে শ্বাস নিতে থাকবে এবং হাঁপাতে থাকবে। নিচের ছবিতে চিত্রটি দেখানো হল-

এ সময়ে বাচ্চাগুলো খাদ্য গ্রহণ কমিয়ে দেয়। এ অবস্থায় ব্রুডার-এর মধ্যে বাচ্চাগুলোর জন্য আরামদায়ক তাপমাত্রা সৃষ্টির লক্ষ্যে তাপমাত্রা কমিয়ে দিতে হবে। ব্রুভারে যদি বৈদ্যুতিক বাদ ব্যবহার করা হয় তা হলে বাশ্বের সংখ্যা কমিয়ে দিয়ে অথবা হোভার উঁচু করে তাপমাত্রা কমানো যায়।

২. ব্রুডার ঘরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেরে কম হলে বাচ্চাগুলো ব্রুডার হিটার এর নিকটে ঘনভাবে জড়ো হয়ে থাকবে এবং চিচি শব্দ করে ডাকতে থাকে। অনেক সময় বাচ্চাগুলো হোতারের নিচে গাদাগাদি করে জম হতে গিয়ে চাপা পড়ে বা শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যেতে পারে। তাছাড়া বাচ্চাগুলো হোভারের নিচে থাকার কারণে পানি ও খাবার না খেয়ে দুর্বল হয়ে যায়। এ অবস্থায় তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য ব্রুডারে বাষ্পের সংখ্যা বাড়াতে হবে। ঘরে যাতে ঠান্ডা বাতাস না ঢুকে সেজদা নেট লাগানো অংশে ভারী পর্দা লাগানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

 

৩. ব্রুডার ঘরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক বা পরিমিত পরিমাণে থাকলে বাচ্চাগুলো মরে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করে এবং ঠিকমত খাদ্য গ্রহণ ও পানি গ্রহন করে।

 

শ্রেণির তাত্ত্বিক কাজ

  • বিভিন্ন বয়সে ব্রুডিং তাপমাত্রা দেখ। 
  • ব্রুডারে তাপমাত্রা বেশী হলে বাচ্চার আচরণে কী প্রভাব পরিলক্ষিত হয়?
  • ব্রুডারে তাপমাত্রা কম হলে বাচ্চার আচরণে কী প্রভাব পরিলক্ষিত হয়?
  • কীভাবে ভূমি বুঝবে যে ব্রুডারে সঠিক তাপমাত্রা বিরাজ করছে?

 

 

Content added By

১.৬ ব্রুডার ঘরে খাদ্য পাত্র ও পানি পাত্র স্থাপন 

ব্রুডার ঘরে খাবার পাত্র ও পানি পাত্র বাচ্চার সংখ্যার উপর ভিত্তি করে ঘরে স্থাপন করতে হবে।

খাবার পাত্র স্থাপন 

ব্রুডার ঘরে বাচ্চাগুলোকে প্রথম ১-২ দিন খবরের কাপক্ষের উপর এবং পরবর্তীতে ২ সপ্তাহ পর্যন্ত ট্রেতে করে খাদ্য সরবরাহ করা হয়। ১০০ টি বাচ্চা ১টি ট্রেতে খেতে পারে এমন ট্রে ঘরে স্থাপন করতে হবে। অর্থাৎ ১০০টি বাচ্চার জন্য ১০০ লিনিয়ার ইঞ্চি বিশিষ্ট ট্রে ব্যবহার করতে হবে। ২ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত খাদ্য প্রদানের জন্য ব্যবহার করা যায়। তারপর খাবার পাত্র ব্যবহার করতে হয়।

                       প্রতিটি হাঁসের জন্য বয়স অনুযায়ী খাবার পাত্রের জায়পার পরিমাণ

ডিম থেকে ফোটার পর বাচ্চা ৭২ ঘন্টা পর্যন্ত কোনো খাবার না খেরেই থাকতে পারে। এজন্যেই একদি বয়সের বাচ্চা (Day old chick) এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সহজেই পরিবহন করা যায়।

পানি পাত্র স্থাপন 

পানি পাত্রের জায়গা হবে খাবার পাত্রের অর্ধেক। হাঁসের বেলায় পানি সরবরাহের পর খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। এক্ষেত্রে পানি পাত্রের গভীরতা কমপক্ষে ৩ (তিন) ইঞ্চি হতে হবে যাতে হাঁস মাথা ঢুকিয়ে পানি পান করতে পারে। তা না হলে হাঁসের খাদ্য গ্রহণ অনেকটা কমে যায়।

                      বয়স অনুযায়ী পানি পাত্রের জায়গার পরিমাণ নিম্নরূপ:

শ্রেণির তাত্ত্বিক কাজ

  • ব্রুডার ঘরে পানি পাত্র স্থাপনের কৌশল লেখ । 
  • ব্রুডার ঘরে খাদ্য পাত্র স্থাপনের কৌশল লেখ 
  • Day old chick বলতে কী বোঝায়? 
  • বয়স অনুযায়ী পানি পাত্রে জায়গার পরিমান লেখ।

 

 

Content added By

১.৭ হাঁসের বাচ্চা আবাসনের সময় করণীয় পদক্ষেপ

বাচ্চা আবাসনের পূর্বেই হার্ডবোর্ড বা তারের নেট দিয়ে চিক পার্ড তৈরি করে মেঝেতে পরিমাণমত (২-৩ ইঞ্চি পুরু করে) তুব/কাঠের ভূষি বিছিয়ে এর উপর খবরের কাগজ কয়েক স্তরে অথবা পাতলা চট বিছিয়ে নিতে হবে। এ কাগজ দিনে একবার বদলিয়ে দিতে হবে। পাতলা চট দৈনিক একবার পরিষ্কার করে শুকিয়ে পুনরায় বিছাতে হবে।

বাচ্চা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বা হ্যাচারি থেকে বাচ্চা সংগ্রহ করে এনে পূর্ব থেকে প্রস্তুতকৃত ব্রুডার ঘরে ৪৫ মিনিট বাচ্চাগুলোকে বাক্সের মধ্যেই রাখতে হবে। কারণ অন্য পরিবেশ থেকে আনার পর ব্রুডারের পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে কিছু সময় লাগবে। এ সময় পর কিছু বাচ্চাকে ব্রুডারে ছাড়তে হবে। পনেরো মিনিট পর সবগুলো বাচ্চা ব্রুডারে ছাড়তে হবে। এতে পরের বাচ্চাগুলো পূর্বের বাচ্চাগুলোকে অনুসরণ করে দ্রুত পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে। চিকগার্ডের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পানি পাত্র ও খাদ্য পাত্র স্থাপন করতে হবে।

পানি পাত্রগুলো দিনে ২-৩ বার পরিষ্কার করতে হবে। সপ্তাহে একবার পানি পাত্রগুলো জীবাণুনাশক ঔষধ, আইওসান দিয়ে ধুইয়ে নিতে হবে। বাচ্চা বড় হওয়ার সাথে চিকগার্ডের পরিধি বৃদ্ধি করে ৪-৫ সপ্তাহের মধ্যে সারা ঘরে লিটার বিছিয়ে বাচ্চাগুলোকে ছেড়ে দিতে হবে। সেই সাথে সমস্ত ঘরে প্রয়োজনীয় সংখ্যক খাদ্য পাত্র ও পানি পাত্র স্থাপন করতে হবে।

স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ রক্ষার্থে প্রতিদিন ঘরের লিটারে আচঁড়া দিয়ে নেড়ে উল্টে-পাল্টে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। লিটার ভিজে গেলে তা সাথে সাথে পরিবর্তন করে সেখানে শুকনা লিটার বিছিয়ে দিতে হবে।

বাচ্চা বড় হওয়ার সাথে সাথে ঘরের পর্দাগুলো খুলে দিতে হবে যাতে ঘরের মধ্যে প্রয়োজনমত বায়ু চলাচল করতে পারে যা লিটার শুকনা রাখতে সাহায্যে করে ।

শীতকালে ৪-৫ সপ্তাহ এবং গ্রীষ্মকালে ২-৩ সপ্তাহ কৃত্রিম উপায়ে তাপ দেয়ার প্রয়োজন হতে পারে। দুই সপ্তাহ বয়স থেকে হাঁসের বাচ্চাকে পানিতে চড়ার অভ্যাস করাতে হবে।

 

শ্রেণির তাত্ত্বিক কাজ

  • ব্রুডারে বাচ্চা ছাড়ার পূর্বে কী কী কাজ করতে হয় তা ধারাবাহিকভাবে লেখ । 
  • সাধারণত চিকগার্ড তৈরির জন্য কোন কোন উপাদান ব্যবহার করা হয়? 
  • লিটার ভিজে গেলে কী করতে হবে?

 

 

Content added By

১.৮ ব্রুডার ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্তকরণ

জীবাণুনাশক: যে সব ঔষধ বা রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করলে জীবাণু/রোগ জীবাণু মারা যায় তাই হলো জীবাণুনাশক। যথা; ফিনাইল, আয়োসান, স্যাভলন, ডেটল, সুপারসেপ্ট ইত্যাদি। জীবাণুনাশক ঔষধ ব্যবহারের সাথে খামারে স্বাস্থ্য সম্মত পরিবেশ বজায় রাখার জন্য উন্নত ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করা দরকার । জীবাণুনাশক ঔষধ উন্নত ব্যবস্থাপনার বিকল্প নয় । 

কখন জীবাণুনাশক ঔষধ ব্যবহার করতে হয়?

  • প্রতিবার নতুন হাঁসের ঝাঁক খামারে তোলার পূর্বে উপযুক্ত জীবাণুনাশক ঔষধ বা রাসায়নিক দিয়ে ধুয়ে বা স্প্রে করে রোগ জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে।
  • খামারে কোন মহামারি দেখা দিলে । 
  • খামারে সংক্রামক রোগের উপস্থিতি প্রমাণিত হলে। 
  • অসুস্থ হাঁস দ্বারা ব্যবহৃত আসবাবপত্র বা যন্ত্রপাতি জীবাণুনাশক ঔষধ দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। 
  • ডিম ফোটানোর যন্ত্র প্রতিবার ডিম বসানোর পূর্বে জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে। 
  • ফোটানোর জন্য নির্ধারিত ডিম জীবাণুনাশক ঔষধ দিয়ে প্রয়োজন মত ধুয়ে নিতে হবে ।

একটি আদর্শ জীবাণুনাশক নিম্নলিখিত গুণসম্পন্ন হতে হবে-

  • দামে সস্তা হতে হবে। 
  • দ্রুত পানির সাথে মিশে বা মিশ্রিত হয়ে যাওয়ার ক্ষমতা থাকতে হবে। 
  • মানুষ ও অন্যান্য পশু পাখির জন্য বিষাক্ত হবে না।
  • সহজ প্রাপ্য হবে । 
  • কার্যকর হতে হবে।
  • পাত্রের বা ঘরের অবকাঠামোর জন্য ক্ষতিকর হবে না । 
  • গুদামজাত করার কারণে ব্যবহার সময় সীমার মধ্যে গুণগতমান নষ্ট হবে না ।
  • বিশ্রী দুর্গন্ধ মুক্ত হবে। সুগন্ধ হওয়া বাঞ্চনীয়। 
  • বিষক্রিয়ার ক্ষমতা অনেক দিন পর্যন্ত জমে থাকবে না ।
  • মাংস/ডিমের মাধ্যমে বিষাক্ততা ছড়াবে না।

আজকাল বাজারে অনেক ধরনের জীবাণুনাশক ঔষধ কিনতে পাওয়া যায়। বিভিন্ন পদ্ধতিতে হাঁসের খামারকে রোগ জীবাণুমুক্ত রাখা যায় কিন্তু সব পদ্ধতি সব ক্ষেত্রে সমভাবে কার্যকরী নয়। প্রতিটি জীবাণুনাশক ঔষধ তৈরির কোম্পানি কর্তৃক দেয়া নির্দেশিকা অনুসারে ব্যবহার করতে হবে। কোম্পানি কর্তৃক নির্দেশনা অনুসরণ না করলে খামার রোগ জীবাণুমুক্ত হবে না বরং খামারে বিদ্যমান রোগ জীবাণুগুলো অধিক শক্তিশালী হয়ে খামারের হাঁসগুলোর মধ্যে রোগ সৃষ্টি করতে পারে। জীবাণুনাশক ঔষধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধক শক্তি সম্পন্ন বিভিন্ন রোগ জীবাণু পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে জনস্বাস্থ্যকে হুমকির সম্মুখীন করে তুলবে।

এদেশে বহুল ব্যবহৃত কতকগুলো রোগ জীবাণুনাশক ঔষধের নাম, ব্যবহার বিধি নিম্নের ছকে দেওয়া হলো-

 

জীবাণুনাশক ঔষধ ব্যবহারে সতর্কতাসমূহ-

  • অধিকাংশ রোগ জীবাণুনাশক ঔষধ মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, তাই ব্যবহার করার সময় যাতে চোখে, মুখে না ঢোকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
  • জীবাণুনাশক ঔষধ ব্যবহারের পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঘর থেকে বের হয়ে আসতে হবে। 
  • ফরমালিন ও পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট একত্রে মিশ্রিত হলে (ফিউমিগেশন) মারাত্মক বিষাক্ত গ্যাস সৃষ্টি হয় যা মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। তাই ফিউমিগেশন প্রক্রিয়াটি সাবধানতার সহিত করতে হয়।
  • রোগ জীবাণুনাশক ঔষধ ব্যবহার করার পর ঘরটি কয়েক দিনের জন্য খালি রাখতে হবে। 
  • চুন পাউডার/কাপড় কাচার সোডা লিটারের সাথে ব্যবহার করলে পানির পরিবর্তে লিটারের তুষ বা কাঠের গুড়ার ওজনের সাথে অনুপাত নির্দিষ্ট করতে হবে।
  • নতুন বা পুরাতন যেকোনো ঘর হোক না কেন “অল ইন অল আউট” পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। একটি ঘরে এক ব্যাচ হাঁস পালন করে বিক্রয় করার কমপক্ষে ১৪ দিন পর অন্য ব্যাচ উঠাতে হবে। এ পদ্ধতি শুধু রোগ প্রতিরোধই করে না বরং রোগের জীবাণুকেও ধ্বংস করতে সহায়তা করে ।

ঘর পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করতে নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে-

  • হাঁস বিক্রয় করার পর সমস্ত সরঞ্জাম বের করতে হবে । 
  • পুরাতন লিটার ফার্ম থেকে কমপক্ষে ৫০০ মিটার দূরে সরিয়ে ফেলতে হবে।
  • ঘরের দেয়াল, পর্দা, ভেন্টিলেটর, দরজা, জানালা, নেট, ফ্যান, বাল্ব ইত্যাদি ঝেড়ে মুছে পরিষ্কার করতে হবে।
  • ঘরে কোনো মেরামত, সংস্কার প্রয়োজন হলে তার ব্যবস্থা নিতে হবে। 
  • পরিষ্কার পানি দিয়ে দেয়াল, মেঝে, খাদ্য পাত্র ও পানি পাত্র ধুয়ে দিতে হবে। পাইপ দিয়ে উচ্চ চাপযুক্ত পানি প্রবাহের মাধ্যমে ঘর পরিষ্কার করা উত্তম।
  • জীবাণুনাশক (পভিসেপ, সুপারসেপ্ট, আয়োসান) দিয়ে খাবার পাত্র, পানি পাত্র, দেয়াল, মেঝে, ছাদ, পর্দা ও খামারের আশেপাশ জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
  • ভিজা মেঝেরে উপর ১০০ বর্গফুট ১ কেজি হারে শুকনা কস্টিক সোডা ছড়াতে হবে এবং ১৫ মিনিট অপেক্ষার পর মেঝে শুকিয়ে গেলে কস্টিক সোডার উপর হালকা করে পানি স্প্রে করে ঘর ধুয়ে ফেলতে হবে।
  • ঘরের চারপাশে ৫-৬ ফুট পরিমাণ জায়গায় খাস কেটে পরিষ্কার করতে হবে এবং পুরাতন মুরগির ময়লা থাকলে তা পরিষ্কার করে ব্লিচিং পাউডার ছিটানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
  • বাচ্চা উঠানোর ৬ দিন পূর্বে সমস্ত জিনিসপত্র আবার জীবাণুযুক্ত করে শুষ্ক করে ভিতরে রাখতে হবে। 
  • বাচ্চা ব্রুডিং এর ১ দিন পূর্বে পিটার বিছাতে হবে। ঘরে সমস্ত সরঞ্জামাদি স্থাপন করে বাচ্চা গ্রহণের ১২ ঘন্টা পূর্বে সম্পূর্ণ ঘর, চট বা পলিথিন দিয়ে ঘিরে ফিউমিগেশন উপকরণ ব্যবহার করে ঘর কিউমিগেশন করতে হবে। 
  • ফিউমিগেশনের জন্য প্রতি ১০০ ঘনফুট স্থানের জন্য ৬০ গ্রাম পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট ও ১২০ সি:সি: ফরমালডিহাইড ব্যবহার করতে হয়। 
  • ফিউমিগেশন করার ৩০ মিনিট পর পর্দা সরিয়ে সম্পূর্ণ গ্যাস বের করে দিতে হবে। 
  • ফিউমিগেশনের পর বাচ্চা তোলার ২/৩ ঘন্টা পূর্ব পর্যন্ত ঘর তালাবদ্ধ রাখতে হয়।
  • বাচ্চা উঠানোর কয়েকদিন পূর্ব থেকেই ঘরের ফুটবাথে জীবণুনাশক রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
  • বাচ্চা উঠানোর পর প্রতিদিন ১ বার করে ঘরের বাইরের চতুপার্শ্বে ৫% ফরমালিন যারা স্প্রে করতে হবে।
  • নিরাপত্তার স্বার্থে ঘরের আশেপাশে কোনো প্রাণি বা লোক চলাচল বন্ধ রাখতে হবে।

শ্রেণির তাত্ত্বিক কাজ

  • জীবাণুনাশক ঔষধ কাকে বলে? 
  • জীবাণুনাশক ঔষধ কখন ব্যবহার করতে হয়? 
  • একটি আদর্শ জীবাণুনাশক ঔষধের ৫টি গুণাবলী লেখা। 
  • জীবাণুনাশক ঔষধ ব্যবহারের সময় কী কী সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়?
  • ফিউমিগেশন করার পদ্ধতি লেখ। 
  • “অল ইন অল আউট” পদ্ধতি বলতে কী বোঝায়?

 

 

 

Content added By

১.৯ বাসস্থান এবং এর পারিপার্শ্বিকের স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বাজায় রাখার কৌশল 

বাসস্থান এবং এর আশেপাশের স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বজায় রাখতে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে-

  • খামার যাতে পানি জমে স্যাঁতস্যাঁতে না হয় সে জন্য প্রয়োজনীয় পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকতে হবে। 
  • হাঁসের জাত ও উদ্দেশ্য হিসেবে প্রয়োজনীয় পরিমাপের ঘর পূর্ব-পশ্চিমে লম্বালম্বি করে তৈরি করতে হবে, যাতে হাঁস পর্যাপ্ত আলো বাতাস পায় ৷
  • হাঁসের খামারের উপরিভাগে তারের জাল দিতে হবে যাতে বাতাস চলাচল করতে পারে। 
  • ঘরে যাতে বৃষ্টির ঝাপটা পড়ে লিটার ভিজে না যায় সে ব্যবস্থা নিতে হবে।
  • গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা খুব বৃদ্ধি পেলে তাপ কমানোর জন্য ঘরের চালে পানি ছিটাতে হবে। 
  • ঘরের চারিদিকে পানি ছড়াতে হবে। 
  • ঘরের মধ্যে ফগিং মেশিন দিয়ে পানি স্প্রে করে কুয়াশা তৈরি করতে হবে।
  • ঘরের ভেতরে ও বাইরে ফ্যান চালাতে হবে। 
  • খামারে নতুন বাচ্চা উঠানোর আগে খামার সঠিকভাবে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। প্রথমে পানি দ্বারা পরিষ্কার করে পরে পানির সাথে জীবাণুনাশক মিশিয়ে খামার জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
  • হ্যাচারি থেকে সুস্থ সবল বাচ্চা সংগ্রহ করতে হবে। তা না হলে সালমোনেলোসিস, মাইকোপ্লাজমোসিস ইত্যাদি রোগ হ্যাচারি থেকে খামারে আসতে পারে। 
  • খামারে ভালো খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। অতিরিক্ত আর্দ্রতাযুক্ত খাদ্যের মাধ্যমে অ্যাসপারজিলোসিস ও বিষক্রিয়াসহ জটিল রোগ হতে পারে ।
  • খামারে মানুষের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রতিবার খামারে প্রবেশ ও বাহির হওয়ার সময় জীবাণুনাশক ব্যবহার করে হাত ও পা অবশ্যই জীবাণুমুক্ত করতে হবে। 
  • খামারে যাতে বন্য প্রাণী ও ইঁদুর প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
  • বর্জ্য পদার্থ, বিষ্ঠা, লিটার নিয়মিত পরিষ্কারসহ হাঁসের ঘরের ভেতরের পরিবেশ অবশ্যই স্বাস্থ্যসম্মত হতে হবে।
  • খামারে কোনো হাঁস অসুস্থ হলে যত দ্রুত সম্ভব পৃথক করে ফেলতে হবে। হাঁস মারা গেলে তা সাথে সাথে সরিয়ে নিয়ে অবশ্যই মাটির নিচে পুঁতে ফেলতে হবে বা পুড়িয়ে ফেলতে হবে। খামারে কোনো 
  • জটিল সমস্যা দেখা দিলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।

 

শ্রেণির তাত্ত্বিক কাজ

  • হাঁসের খামারের ঘর কোনদিকে লম্বালম্বি করে তৈরি করতে হয়? 
  • গ্রীষ্মকালে ঘরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে তাপ কমানোর জন্য কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে? 
  • হাঁসের খামার কীভাবে জীবাণুমুক্ত করতে হয়? 
  • বাসস্থান এবং এর পারিপার্শ্বিকের স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বজায় রাখার কৌশল বর্ণনা কর?

 

 

 

Content added By

১.১০ খামারের জীব নিরাপত্তা (বায়োসিকিউরিটি)

বর্তমান বিশ্বে খামার সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে একটি বহুল আলোচিত শব্দ বায়োসিকিউরিটি। খামার স্থাপনের পরিকল্পনা থেকে শুরু করে খামার পরিকল্পনা, উৎপাদন ও উৎপাদিত দ্রব্যের বাজারজাতকরণ, এমনকি ভোক্তার কাছে উৎপাদিত দ্রব্য পৌছে দেওয়া পর্যন্ত প্রক্রিয়াগুলো আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত তথা জীবাণুমুক্ত ও অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদানের প্রভাবমুক্তভাবে সম্পন্ন করাই জীব নিরাপত্তা ব্যবস্থা । 

জীব নিরাপত্তা ব্যবস্থার উদ্দেশ্য-

  • বহিরাগত রোগজীবাণু যেমন : বার্ড ফ্লু জাতীয় রোগের কবল থেকে খামার রক্ষা করা । 
  • মানুষের মাধ্যমে ছড়ায় এমন রোগ জীবাণু যেমন- সালমোনেলা থেকে খামারকে রক্ষা করা।
  • খামারের সার্বিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা প্রদান । 
  • রোগ প্রতিরোধের মাধ্যমে চিকিৎসা ব্যয় কমানো, লাভজনক উপায়ে খামার গড়ে তোলা, জনস্বাস্থ্যের প্রতি ঝুঁকি কমানো।

নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর প্রতি খেয়াল রাখলে জীব নিরাপত্তা ব্যবস্থা সঠিকভাবে মেনে চলা যাবে :

১. খামারের স্থান নির্বাচন :

  • পূর্ব পশ্চিমে লম্বালম্বি করে ঘর তৈরি করতে হবে। 
  • চারিদিকে খোলা মেলা, প্রচুর আলো-বাতাস চলাচলে সক্ষম এমন স্থান বেছে নিতে হবে। 
  • লোকালয় থেকে দূরে কিন্তু খামারের পণ্য বাজারজাতকরণের ভালো যোগাযোগ সুবিধাসম্পন্ন ও শহর থেকে অনতি দূরে খামারের স্থান নির্বাচন করতে হবে।
  • খামারে পর্যাপ্ত পানি ও বিদ্যুতের সুবিধা থাকতে হবে। 
  • অপেক্ষাকৃত উঁচু স্থানে খামার স্থাপন করতে হবে।

২. রোগ জীবাণুর উৎস ও প্রতিরোধের উপার নির্বাচন : 

রোগ জীবাণুর উৎসসমূহঃ

  • বাহক পাখি, বাইরে থেকে আমদানিকৃত জীবাণুবাহী ডিম ও ১ দিন বয়সের বাচ্চা, আক্রান্ত ভিম ও হাঁস, মানুষের হাত-পা ও পোশাকাদি, ধুলাবালি, পালক, বিষ্ঠা ও জৈব বর্জ্য, বন্যপাখি, শিকারি জীবন্ত, ইঁদুর ইত্যাদি ।
  • দূষিত পানি, খাদ্য, বাতাস ইত্যাদি। 
  • রোগ জীবাণু দ্রুত সরবরাহের যন্ত্রপাতি কথা- ট্রাক, খাচা, ডিমের পাত্র ইত্যাদি ।

রোগ বিস্তার প্রতিরোধের উপায় : 

(ক) যাতায়াত নিয়ন্ত্রণঃ

  • বাতায়াত নিণের জন্য খামারের প্রবেশদ্বার বন্ধ রাখতে হবে। 
  • সব ধরনের দর্শনার্থী প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
  • খামারের কর্মীদের খামারে ব্যবহৃত জুতা ও পোশাকাদি আলাদা রাখতে হবে এবং সেগুলো খামারের বাইরে বের করা যাবে না।
  • আমারে প্রবেশের পূর্বে ও পরে হাত পা জীবাণুনাশক দিয়ে ধুতে হবে ও শরীরের বহিরাংশে জীবাণুনাশক স্প্রে করতে হবে।
  • খামারের বন্যপ্রাণি, পোষাপাখি ও অন্যান্য জীব-জন্তু প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
  • এক খামারে একই বয়সের হাঁস পালন করতে হবে। যদি তা সম্ভব না হয় তবে একটি ঘরে একই বয়সের হাঁস রাখতে হবে।

 

খ) খামারে অবাধ প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ :

  • দর্শনার্থীদের জন্য একটি তথ্য বই সংরক্ষণ করতে হবে। খামার পরিদর্শনকারীর নাম-পরিচয়, সাক্ষাৎকারের তারিখ-সময় ইত্যাদি তথ্য বইয়ে লিপিবদ্ধ করে খামারের নির্দিষ্ট স্থানের বাইরে অবাধ যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
  • খামারকর্মী ও খামার পরিদর্শনকারী বহিরাগত উভয়কেই কাজ করার সময় বা খামার পরিদর্শনের সময় জীবাণুমুক্ত জুতা ও পোশাকাদি পরিধান করতে হবে। পরিদর্শন ও কাজের শেষে পুনরায় এদের জীবাণুমুক্ত করা আবশ্যক ।
  • উপকরণ সরবরাহকারী বাস/ট্রাক ড্রাইভার ও সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের যথাসম্ভব জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে। 
  • বন্যপাখি নিয়ন্ত্রণের জন্য খামার ঘরের চারদিকে আলো বিকিরণকারী অ্যালুমিনিয়ামের ফয়েল বেঁধে দিতে হবে।

গ) চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীর তৎপরতা :

  • পোল্ট্রি খামারের সার্বিক ব্যবস্থাপনা অথবা চিকিৎসার কাজে নিয়োজিত চিকিৎসক অথবা স্বাস্থ্যকর্মীকে জৈব-নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে পূর্ণ সচেতন থাকতে হবে।
  • প্রতিটি আলাদা শেডে ঢোকার পূর্বে ও পরে জীবাণুনাশক ঔষধ দিয়ে হাত-পা ধৌত করতে হবে। সম্ভব হলে আলাদা অ্যাপ্রন, হাত পায়ের মোজা ও মাথার আবরণী ব্যবহার করতে হবে।
  • খামারে নিয়োজিক কর্মীবৃন্দ, খামারে প্রবেশকারী যানবাহন, চালক ও সংশ্লিষ্ট সহায়ক কর্মীবৃন্দের যেকোনো ধরনের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলবেন।
  • ময়নাতদন্ত করার জন্য বাতাসের অনুকুলে এমন জায়গা বেছে নিতে হবে যেখান থেকে বাতাসের মাধ্যমে খামারে জীবাণু প্রবেশের কোন সম্ভাবনা নেই। ময়নাতদন্ত শেষে স্থানটি জীবাণুনাশক দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে।

 

৩. নিয়মিত টিকা প্রয়োগ : 

খামারে হাঁসকে টিকা প্রয়োগের মাধ্যমে রোগ-মুক্ত রাখা একটি আধুনিক, জটিল ও অত্যন্ত বিজ্ঞানসম্মত প্রক্রিয়া। আধুনিককালে পোল্ট্রি শিল্পের সাফল্য সময়মত ও সফলভাবে টিকা প্রয়োগ ছাড়া সম্ভব নয়। তাই টিকা প্রয়োগকালে সর্বোচ্চ সতর্কতা পালন করা বাঞ্ছনীয়।

টিকা প্রদানের সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে-

  • হ্যাচারির সংশ্লিষ্ট দায়িত্বরত স্বাস্থ্যকর্মীকে ১ দিন বয়সী বাচ্চার প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পর্কে খামারিদের ধারণা দিতে হবে। মায়ের বা বাচ্চার শরীরের এন্টিবডি টাইটার লেভেল নির্ণয় করে প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী বাচ্চার টিকা প্রদান কর্মসূচি নির্ণয় করতে হবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট হ্যাচারির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে।
  • সঠিকভাবে উৎপন্ন, সংরক্ষিত, পরিবাহিত টিকা প্রদান করতে হবে।
  • আমাদের দেশের স্থানীয় পর্যায়ে আক্রমণকারী জীবাণুর স্ট্রেইন সম্বন্ধে ভালোভাবে ধারণা নিয়ে সেই অনুযায়ী টিকা প্রদান করতে হবে। অপরিচিত স্ট্রেইন দ্বারা প্রস্তুত টিকা প্রদান করলে বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
  • নির্দেশনা অনুযায়ী শ্রেণিভেদে টিকা প্রদানের সঠিক মাধ্যম অনুসারে টিকা প্রদান করতে হবে। যেমন- জীবন্ত টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে খাবার পানি, স্প্রে বা চোখে ফোঁটা প্রদানের মাধ্যমে ও মৃত জীবাণু দ্বারা প্রস্তুতকৃত টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রয়োগ করতে হবে ।
  • অসুস্থ হাঁসকে টিকা প্রয়োগ করা যাবে না । 
  • টিকা প্রদানের পূর্বে ভিটামিন এ, ডি ও ই ব্যবহার করা ভালো । 
  • টিকা প্রদানের পর ভিটামিন সি, ভিটামিন ই ও সেলেনিয়াম ব্যবহার করা ভালো ৷

৪. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা :

  • প্রতি সপ্তাহে হাঁসের খাদ্য ও পানি গ্রহণের পরিমাণ, ওজন ইত্যাদি পরিমাপ করতে হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী খাদ্যের পরিমাণ কমাতে বা বাড়াতে হবে।
  • সঠিকভাবে আলো প্রদান করতে হবে ।
  • কোনরূপ রোগ লক্ষণ প্রকাশের সাথে সাথেই নিকটস্থ পশু চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৫. নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা :

  • পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা লাভজনক খামারের পূর্বশর্ত। তাই খামারের ভেতরে ও বাইরের চারদিকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অপরিহার্য্য। মেঝে বা লিটার পদ্ধতির ঘরের ক্ষেত্রে প্রতি ব্যাচে নতুন লিটার দেয়া ও ঘর সম্পূর্ণ পরিষ্কার করা উচিত।
  • খামারের সকল যন্ত্রপাতি, যেমন- মুরগির খাঁচা, ডিম রাখার পাত্র, খাদ্য পাত্র ও পানি পাত্র ইত্যাদি নিয়মিত জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
  • বছরে অন্তত একবার শেডসহ সকল যন্ত্রপাতি জীবাণুনাশক দিয়ে ধুতে হবে অথবা ফিউমিগেশন করে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। 
  • খামারে ব্যবহৃত পুরোনো লিটার যথাসম্ভব নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিতে হবে। অপসারণ কালে ব্যবহৃত লিটার দ্বারা কোনভাবেই যেন খামারের পরিবেশ নষ্ট না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে।
  • সমস্ত ঘর ঝাড়ু দিতে হবে। খামারের প্রতিটি অংশ, যেমন- মেঝে, বৈদ্যুতিক পাখা, বাল্বসহ অন্যান্য সরঞ্জাম, দরজা জানালার মাঝে থাকা ধুলাবালি, মাকড়সার জাল প্রভৃতি পরিষ্কার করতে হবে। নষ্ট বাল্বের জায়গায় নতুন বাল্ব লাগাতে হবে ।
  • শেডের ভেতরে জীবাণুনাশক স্প্রে করলে ঘরের পিছন দিকে স্প্রে করা শুরু করে সামনের দিকে এসে শেষ করা উচিত। ঘরের ভেতরে প্রথমে ছাদ, পরে দেয়াল এবং সবশেষে মেঝেতে স্প্রে করতে হবে।
  • শুকনো মেঝেতে অন্তত চার ইঞ্চি পুরু শুষ্ক শোষণক্ষম লিটার বিছিয়ে দিতে হবে। লিটার হিসাবে ধানের তুষ সর্বোত্তম।
  • লিটারে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ হলে কীটনাশক নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় প্রয়োগ করা যায়। কীটনাশক ও জীবাণুনাশক একত্রে ব্যবহার করা যাবে না। প্রয়োজনে কীটনাশক দেয়ালে স্প্রে করা যেতে পারে। 
  • ঘরের চারপাশে পর্দা হিসাবে পলিথিন বা নাইলনের বস্তা ব্যবহার না করে চটের বস্তা ব্যবহার করা উচিত। খাঁচা পদ্ধতির ঘরের ক্ষেত্রে প্রতি ব্যাচ বাড়ন্ত হাঁস পালন শেষে সমস্ত ঘর পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করা অতীব জরুরি। লেয়ারের ক্ষেত্রে প্রতিটি ফ্লক উঠানোর পূর্বে সমস্ত ঘর ও যন্ত্রপাতি জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করা উচিত।

৬.স্বাস্থ্য সম্মত ও আদর্শ খাদ্য প্রদান : 

বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া (যেমন- সালমোনেলোসিস) ও ছত্রাকজনিত (যেমন- এসপারজিলোসিস, আফলা টক্সিকোসিস) রোগের জীবাণু খামারের মাধ্যমে পরিবাহিত হয়। সত্যিকারের ভালো খাবার বলতে জীবাণুমুক্ত ও সুষম খাদ্যের প্রয়োজনীয় উপাদানসমূহের সমন্বয়ে গঠিত খাদ্যকে বুঝায়।

৭. হাঁসের ঘরের স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবস্থাপনা : 

ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস ধ্বংসকারী জীবাণুনাশক অপেক্ষাকৃত উষ্ণ তাপমাত্রাতেই বেশি কার্যকর। তাপমাত্রা ৭০ ডিগ্রি ফারেনহাইট এর উপরে এবং আর্দ্রতা ৭৫% এর উপরে থাকলে ফরমালডিহাইড গ্যাস সবচেয়ে কার্যকর। 

ক) ক্লোরক্স (সোডিয়াম হাইপো ক্লোরাইড দ্রবণ): ১ কন্টেইনার ক্লোরক্স দিয়ে ৮০ লিটার জীবাণুনাশক দ্ৰবণ তৈরি করা যায়। বাঁশের তৈরি হাঁসের ঘরের মেঝে, চালা ইত্যাদি জীবাণুযুক্ত করার জন্য ক্লোরক্স খুবই কার্যকরী। 

খ) ভায়োডিন (আয়োডিন দ্রবণ) : ১ বোতল ভায়োডিন ১০% সলিউশন দিয়ে ৫ লিটার জীবাণুনাশক দ্রবণ তৈরি করা যায়। 

গ) চুন দিয়ে মাচার নিচের মাটি জীবাণুমুক্ত করা খুবই জরুরি। ১০০-২০০ হাঁস পালন উপযোগী একটি ঘরের মাঁচার নিচের মাটি জীবাণুমুক্ত করার জন্য ২০ কেজি পাউডার চুন ছিটিয়ে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশাতে হবে।

 

৮. বিশুদ্ধ খাবার পানি এবং পানি পাত্রের সঠিক ব্যবস্থাপনা :

  • পান করার জন্য হাঁসের খামারে টিউবওয়েলের পানি অথবা বাতাস দূষিত নয় এমন এলাকার সঠিক উপায়ে রাখা বৃষ্টির পানি অথবা পৌর কর্তৃপক্ষ সরবরাহকৃত পানি অথবা ছাঁকা অথবা ১০০ লিটার পানির সাথে অন্তত ৩০০ মি. গ্রা. ক্লোরিন পাউডার মিশ্রিত করে ৩-৬ ঘণ্টা সংরক্ষণ করার পর সেই পানি সরবরাহ করা উচিত।
  • শেডে হাঁস থাকা অবস্থায় সপ্তাহে একবার বেকিং সোডা (সোডিয়াম বাই কার্বনেট) প্রয়োগ করা যেতে পারে। এতে ড্রিংকার, বাল্ব ও পাইপ লাইনে আঠালো বস্তু জমতে পারবে না। পানির সাথে অ্যান্টিবায়োটিক বা ভিটামিন দেয়ার ঠিক পূর্বেই বেকিং সোডা মিশ্রিত পানি পরিচালনা করতে হবে। প্রতি গ্যালন মজুদ দ্রবণের সাথে এক টেবিল চামচ বেকিং সোডা দিতে হবে। 
  • লিটার পদ্ধতিতে হাঁস পালনে পানি সরবরাহের সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।

 

৯. নতুন ব্যাচের ব্যবস্থাপনা : 

পুনরায় হাঁস বা বাচ্চা তোলার পূর্বে ঘর এবং যন্ত্রপাতি ব্যবহার উপযোগী হয়েছে কিনা যাচাইয়ের জন্য নিম্নবর্ণিত চূড়ান্ত বা বাচ্চা তোলার পূর্বে ঘর এবং যন্ত্রপাতি ব্যবহার উপযোগী হয়েছে কিনা যাচাইয়ের জন্য নিম্নবর্ণিত পর্যবেক্ষণ প্ৰয়োজন-

  • সমস্ত বৈদ্যুতিক সংযোগ পরীক্ষা করতে হবে। মেরামতের প্রয়োজন হলে তাৎক্ষণিকভাবে তা করতে হবে। 
  • হাঁসের খাঁচা, খাদ্য পাত্র, পানি পাত্র, মেঝে, দেয়াল ইত্যাদি পরিষ্কার করতে হবে। ভালোভাবে পরিষ্কার করার জন্য উচ্চ চাপযুক্ত পানির প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে।
  • পানি পাত্র ও সরবরাহ লাইন প্রয়োজনে মেরামত করতে হবে। 
  • থার্মোমিটার, থার্মোস্ট্যাট, গ্যাস ব্রুডার, স্টোভ ইত্যাদি ব্যবহার উপযোগী করতে হবে। 
  • আগের ব্যাচের হাঁসের বিষ্ঠাগুলি পুড়িয়ে ফেলতে হবে বা জীবাণুমুক্ত করতে হবে অথবা কম্পোস্ট বা জৈব সার তৈরির কাজে লাগাতে হবে।
  • হাঁসের খাঁচা, খাদ্যপাত্র, পানি পাত্র, মেঝে, দেয়াল ইত্যাদি জীবাণুনাশক দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে। 
  • টিন, লোহা বা তামার তৈরি দ্রব্যসমূহ জীবাণুনাশক দেয়ার কয়েক ঘন্টা পর ধৌত করে ফেলতে হবে। 
  • দ্রব্যসমূহ ভালোভাবে শুকানোর পর নতুন বাচ্চা তুলতে হবে।

 

শ্রেণির তাত্ত্বিক কাজ

  • জীব নিরাপত্তা বা বায়ো সিকিউরিটির উদ্দেশ্য লেখ।  
  • হাঁসের খামারের স্থান নির্বাচনের জন্য কোন বিষয়গুলোর প্রতি খেয়াল রাখতে হয়? 
  • কোন কোন উৎস হতে হাঁসের খামারে রোগ জীবাণু প্রবেশ করতে পারে? 
  • খামারে টিকা প্রদানের সময় কী কী বিষয় মেনে চলতে হয়?

 

 

 

 

Content added By

জব ১ : হালের পরে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও উপকরণ স্থাপন

পারদর্শিতার মানদণ্ড:

  • হাঁস পালনের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি চিহ্নি করা
  • হাঁস পালনের জন্য বিভিন্ন যন্ত্রপাতির ব্যবহার নিশ্চিত করা
  • হাঁস পালনের জন্য বিভিন্ন যন্ত্রপাতির স্থাপন কৌশল সম্পর্কে দক্ষতা অর্জন করা

ক) ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই)

 

(খ) প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি :

(গ) প্রয়োজনীয় কাঁচামাল (Raw materials)

সাফল্যজনকভাবে হাঁস পালন করতে হাঁসের ঘরের বিভিন্ন প্রকার যন্ত্রপাতি স্থাপন করতে হয়। এ ক্ষেত্রে খাদ্যপাত্র, পানি পাত্র, থার্মোমিটার, ব্রুডার, ফ্যান, বাল্ব ইত্যাদি হাঁসের সংখ্যা অনুসারে সঠিক সংখ্যায় উপযুক্ত স্থানে স্থাপন করা হয়, যাতে ঘরের পরিবেশ স্বাস্থ্যসম্মত থাকে ।

কাজের ধারাঃ 

১) সহজে আলো বাতাস চলাচল করতে পারে এমন একটি ঘর নির্বাচন কর । 

২) ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও জীবানুমুক্ত করে নাও ৷ 

৩) মেঝেতে লিটার স্থাপন কর । 

৪) বাচ্চার সংখ্যা অনুসারে মেঝেতে ব্রুডার স্থাপন কর । 

৫) ব্রুডারের চারদিকে ঘিরে চিকগার্ড স্থাপন কর ৷ 

৬) ব্রুডার গার্ডের কেন্দ্রস্থলে ঘরের সিলিংয়ের সাথে হোভার ঝোলাতে হবে। ব্রুডার গার্ড ও হোভারের দূরত্ব হবে ২-৩ ফুট । 

৭) হোভারের সাথে ব্রুডার হিটার (বাল্ব, গ্যাস, বার্নার ইত্যাদি) সংযুক্ত কর। ৩০০ বাচ্চার জন্য ১০০ ওয়াটের তিনটি বাল্ব স্থাপন কর । 

৮) হোভারের নিচে লিটারের উপর খবরের কাগজ বিছাও ৷ 

৯) খবরের কাগজের উপর প্রয়োজন অনুযায়ী খাদ্য পাত্র ও পানি পাত্র স্থাপন কর ৷

১০) খাদ্য পাত্র হাঁসের পিঠ সমান উচ্চতায় স্থাপন কর । 

১১) পানি পাত্র এমনভাবে স্থাপন কর যেন হাঁস এর নিচ দিয়ে সহজে যাতায়াত করতে পারে। অর্থাৎ গলা সমান উচ্চতায় ঝুলিয়ে দাও ৷

১২) হাঁসের বুক সমান উচ্চতায় থার্মোমিটার ঝুলিয়ে দাও । 

১৩) খোলামেলা ঘরের সমস্ত ফাঁকা স্থান পর্দা দ্বারা ঢেকে দাও ।

 

সাবধানতাঃ 

১) "Safety First" কথাটি সবসময় মাথায় রাখতে হবে। 

২) চিকগার্ড গোলাকার করে স্থাপন করতে হবে। 

৩) সাবধানে যন্ত্রপাতি ব্যবহার কর যেন নষ্ট না হয়। 

৪) হাঁসের সংখ্যা ও বয়স অনুসারে খাদ্য পাত্র ও পানি পাত্র স্থাপন করতে হবে।

 

 

 

Content added By

জব ২: হাঁসের বাচ্চার ব্রুডিং

পারদর্শিতার মানদণ্ড:

  • বাচ্চাকে ব্রুডিং করার জন্য কক্ষ প্রস্তুত করা 
  • ব্রুডার ঘরে যন্ত্রপাতি স্থাপন নিশ্চিত করা 
  • বয়স অনুযায়ী তাপমাত্রা, টিকা প্রদান ও ঔষধ প্রয়োগ নিশ্চিত করা 
  • বাচ্চার অবস্থান দেখে তাপমাত্রা বুঝে সঠিক পদক্ষেপ নিশ্চিত করা

(ক) ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই)

(খ) প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি :

(গ) প্রয়োজনীয় কাঁচামাল (Raw materials)

কাজের ধারা: 

ক) সহজে আলো বাতাস চলাচল করতে পারে এমন একটি ঘর নির্বাচন কর । 

খ) ঘরটি ভালভাবে পরিষ্কার কর। 

গ) জীবাণুনাশক দিয়ে জ্বরটি ভালভাবে জীবানুমুক্ত কর । 

ঘ) গল্পটি শুকানোর পর মেঝেতে এক লিটার ৩-৪ ইঞ্চি পুরু করে বিছিয়ে দাও । 

ঙ) ঘরটির সুবিধাজনক স্থানে একটি ব্রুডার স্থাপন কর। 

চ) বাচ্চার সংখ্যানুসারে ব্রুভারের চতুর্দিকে প্রয়োজনীয় দূরত্বে চিকগার্ড স্থাপন কর । 

ছ) চিকগার্ডের ভেতরে পিটারের উপর পেপার বিছিয়ে দাও । 

জ) পেপারের উপর প্রয়োজন অনুযায়ী খাবার পাত্র ও পানি গাত্র স্থাপন কর।

ঝ) থার্মোমিটার ও হাইগ্রোমিটার বাচ্চার গলার সমান উচ্চতায় ঝুলিয়ে দাও। 

ঞ) বাচ্চা ছাড়ার ১২ ঘন্টা পূর্বে ব্রুডার চালু করে থার্মোমিটার ও হাইগ্রোমিটারের সাহায্যে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা পরিমাপ কর । 

ট) প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা উঠলে চিকগার্ডের ভেতরে একদিনের বাচ্চা ছেড়ে দাও ।

ব্রুডিংকালে তাপমাত্রা কম বেশি হলে বাচ্চার অবস্থান নিমরূপ লক্ষ্য করা যায়। এরকম হলে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ কর।

ঠ) ব্রুডিংকালে বাচ্চাকে তালিকা মোতাবেক প্রয়োজনীয় ষ্টার্টার রেশন ও বিশুদ্ধ পানি পরিবেশন ক। 

ড) নির্ধারিত তালিকা মোতাবেক ঔষধপত্র ও টিকা প্রদান করো। 

ঢ) বাচ্চা অসুস্থ হলে প্রয়োজেনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা নাও । 

ণ) বাচ্চার বৃদ্ধি যথাযথ কি না তা খেয়াল রাখ এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করো ।

ত) বাচ্চা বড় হলে প্রয়োজন অনুসারে চিকগার্ডের দূরত্ব বাড়িয়ে দাও এবং পাঁচ সপ্তাহ পর ব্রুডার এবং চিকগার্ড সরিয়ে ফেল। 

থ) এরপর বাচ্চাকে গ্রোয়ার শেডে স্থানা করো। 

দ) সকল তথ্য রেকর্ড শীট ও রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ করো।

সতর্কতাঃ 

১) লিটার ভিজে গেলে দ্রুত সরিয়ে নতুন লিটার দিতে হবে। 

২) পানি পাত্র প্রতিদিন জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। 

৩) টিকাদান কর্মসূচী সঠিকভাবে অনুসরণ করতে হবে।

 

 

 

Content added By

জব ০৩: হাঁসের ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্তকরণের দক্ষতা অর্জন।

পারদর্শিতার মানদণ্ড

  • হাঁসের ঘর ভালোভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা 
  • জীবাণুনাশক মিশ্রণের দক্ষতা অর্জন করা 
  • জীবাণুনাশক প্রয়োগ করে ঘর জীবাণুমুক্ত করা

(ক) ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই)

(খ) প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি

 

গ) প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ( Raw materials)

কাজের ধারাঃ 

১) বিশ্বস্থ উৎস হতে জীবাণুনাশক সংগ্রহ কর। 

২) নিরাপত্তামূলক পোষাক (পিপিই) পরিধান করে নাও।

৩) ফরটি ঝাড়ু দিরে ভালোভাবে পরিস্কার করে নাও। 

৪) নির্দেশিত পরিমান পানি একটি বালতিতে নাও । 

৫) নির্দেশিত যাত্রায় জীবাণুনাশক ঐ পানিতে মেশাও। 

৬) মিশ্রণটি ভালোভাবে নাড়াচাড়া কর।

৭) তারপর জীবাণুনাশক মিশ্রিত পানি স্প্রে মেশিনে তোল । 

৮) এবার ঘরের মেঝে এবং দেয়ালে জীবাণুনাশক স্প্রে কর ।

 

সতর্কতাঃ 

১) জীবাণুনাশক অবশ্যই মাত্রা মোতাবেক মিশাতে হবে। 

২) জীবাণুনাশক যেন শরীরে না লাগে ও নিশ্বাসে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

 

 

Content added By
Please, contribute to add content into অনুশীলনী.
Content

১. কয়টি পদ্ধতিতে হাঁস পালন করা হয়? 

২. রেঞ্জ বা রান কী? 

৩. কয়েকটি জীবাণুনাশকের নাম লেখ । 

৪. ব্রুডিং কী? 

৫. লেষ্টিং পদ্ধতিতে প্রতিটি ফ্লকে কতটি হাঁস থাকে? 

৬. ১ম সপ্তাহে ব্রুডার ঘরের তাপমাত্রা কত ডিগ্রি রাখতে হবে?

 

 

Content added By

১. লেন্টিং পদ্ধতির সুবিধাসমূহ লেখ। 

২. মেঝেতে হাঁস পালনের সুবিধাগুলো লেখ। 

৩. বয়স অনুযায়ী ব্রুডার ঘরের তাপমাত্রা লেখ । 

৪. "অল ইন অল আউট” পদ্ধতি সংক্ষেপে দেখ । 

৫. ব্রুডিং কেন করা হয়?

 

 

Content added By

১. হাঁস পালনের পদ্ধতিগুলো আলোচনা করো । 

২. থার্মোমিটার ছাড়া ব্রুডার ঘরে স্বাভাবিক তাপমাত্রা আছে কি না কীভাবে তা বোঝা যায় বর্ণনা করো । 

৩. বাচ্চা উঠানোর আগে ব্রুডার ঘর প্রস্তুতকরণ সম্পর্কে বিস্তারিত লেখ । 

৪. হাঁসের ঘর জীবাণুমুক্ত করার ধাপগুলো আলোচনা করো । 

৫. বাসস্থান এবং এর পারিপার্শ্বিকের স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বাজায় রাখার কৌশল লেখ ।

 

 

 

Content added By

Promotion