SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or
Log in with Google Account

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - খ্রিষ্টধর্ম শিক্ষা - অঞ্জলি ১ | NCTB BOOK

উপহার ৪-৫

যীশু খ্রীষ্টের যাতনাভোগ ও ক্রুশীয় মৃত্যু

 

প্রিয় শিক্ষার্থী,

এখন চলো খ্রীষ্টধর্মের মৌলিক জ্ঞান ও আমাদের বিশ্বাসের ভিত্তি এবং মণ্ডলীর শিক্ষাসমূহ একটু জানা যাক। তোমাদের শিক্ষক এই বিষয়গুলো বাইবেল থেকে পাঠ ও ব্যাখ্যাসহ জানাবেন। কিছু এনিমেশন বা ভিডিও দেখাতে পারেন। একই সাথে কিছু প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে বিষয়গুলো স্পষ্ট করবেন। এই বইয়েও তোমরা বিষয়গুলো চাইলে পড়তে পারো। যখনই কোনো কিছু বুঝতে কষ্ট হবে তোমার মা-বাবা/অভিভাবক বা ভাই/ বোন বা শিক্ষককে জিজ্ঞেস করতে পারো। কোনো ছবি দেখে মনে প্রশ্ন আসলেও জিজ্ঞেস করতে সংকোচ করবে না।

তোমার বাসায় যদি কম্পিউটার বা স্মার্টফোন থাকে তাহলে তার মাধ্যমেও শিক্ষকের দেখানো ভিডিওগুলো তোমরা দেখতে পারো। এই সেশন দু'টোতে শিক্ষক তোমাদের কিছু প্রশ্নোত্তর ও ছবি অঙ্কন করার কাজ দিতে পারেন। কাজগুলো গুরুত্বের সাথে করার চেষ্টা করবে। মনে রাখবে এই কাজের উপর তোমাদের মূল্যায়ন হবে।

খ্রীষ্টধর্ম গ্রন্থ পবিত্র বাইবেল থেকে এবং পূর্ব জ্ঞান ও বিশ্বাস থেকে আমরা জানি যে আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট বহু যাতনাভোগ করেছেন। গেৎ শিমানী বাগানে তাঁর মর্ম বেদনা, গ্রেপ্তার, যুদাসের (যিহুদা) বিশ্বাসঘাতকতা, পিতরের অস্বীকার, প্রভু যীশুর বিচার, মৃতুদণ্ড এবং ক্রুশীয় মৃত্যুর উদ্দেশ্য ছিলো মানব জাতির পরিত্রাণ।

 

 

 

যীশুকে ক্রুশে গেঁথে দেওয়া হল

মথি ২৭:৩২-৩৮

 

'সেখান থেকে বেরিয়ে আসার সময়ে তারা সামনে দেখতে পেল সাইরিনির একজন লোককে, যার নাম সিমোন। তাকে তারা যীশুর ক্রুশখানি বয়ে নিয়ে যেতে বাধ্য করলো। যখন তারা গলগথা অর্থাৎ খুলিতলা ব'লে পরিচিত একটি জায়গায় এসে পৌঁছল, তারা তখন যীশুকে পিত্তি-মেশানো দ্রাক্ষারস খেতে দিলো, কিন্তু একটু চেখে দেখার পর তিনি তা খেতে চাইলেন না। তারা এবার তাকে ক্রুশে গেঁথে দিল। তারপর দান চেলে তাঁর জামাকাপড় তারা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিল। তারপর সেখানে বসে তাঁকে পাহারা দিতে লাগলো। তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের লিপিফলকটি তাঁর মাথার ওপর টাঙিয়ে দেওয়া হল। তাতে লেখা ছিল: 'এই যে ইহুদীরাজ যীশু।' সেই সময় তাঁর সঙ্গে দু'জন দস্যুকেও ক্রুশে দেওয়া হল একজনকে তাঁর ডান পাশে আর একজনকে বাঁ পাশে।' 

 

তোমাকে একটু সহজ করে বলি

শিক্ষার্থীরা, তোমরা পূর্বের শ্রেণিতে জেনেছো যে, যীশু খ্রীষ্ট পবিত্র ত্রিত্বের দ্বিতীয় ব্যক্তি। তিনি পুত্র ঈশ্বর। তিনি মানব জাতিকে পাপ থেকে উদ্ধারের জন্যে এ জগতে এসেছেন। কিন্তু মানুষ এত স্বার্থপর যে, তারা ঈশ্বরপুত্রকে চিনতে পারেনি বরং তাকে ক্রুশে দিয়েছে। তিনি যে বারোজন শিষ্য নিয়ে শিষ্যদল গঠন করেছিলেন তাদের মধ্যে একজন যার নাম 'যুদাস (যিহুদা)' তিনি যীশুকে গেৎশিমানি বাগানে ধরিয়ে দিয়েছিলো। আরেকজন শিষ্য, যার নাম 'পিতর' তিনি যীশুকে তিনবার অস্বীকার করেছিলেন। যে ইহুদীদের মাঝে যীশু এতো আশ্চর্য কাজ করেছেন, তারাই চিৎকার করে যীশুর ক্রুশ মৃত্যুর দাবি জানিয়েছিলো। যীশুর কাঁধে এক ভারি ক্রুশ চাপিয়ে দিয়ে সৈন্যরা তাকে চাবুক মারতে মারতে কালভেরিতে নিয়ে গিয়েছিল এবং 'খুলিতলা' নামক স্থানে দুইজন দস্যুর মাঝে ক্রুশে টাঙিয়েছিল। যন্ত্রণার এখানেই শেষ নয়, ক্রুশে টাঙিয়ে নিষ্ঠুর সৈন্যগণ তাকে জলের পরিবর্তে সিকা খেতে দিয়েছিলো, তার জামা-কাপড় সৈন্যরা দান চেলে ভাগ করে নিয়েছিলো। যীশুর কষ্ট হচ্ছে দেখে সাইরিনির 'সিমোন' নামে একজন যীশুভক্ত, যীশুর ক্রুশ বহনে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিলেন।

যীশুর শিষ্যগণ পালিয়ে গেলেও তার প্রতি গভীর বিশ্বাস ও ভালোবাসা থেকেই এই 'সিমোন' যীশুর ক্রুশের পথের সাথী হয়েছিলেন। তাঁর ক্রুশ বহন করার যে কষ্ট সেটার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন। যীশুর মর্মবেদনার সমব্যথী হয়েছিলেন। সিমোনের এ উদাহরণ কি তোমাদের কোনো অনুপ্রেরণা দেয় না, সমাজের দুঃখী, দরিদ্র, অভাবী ও অসহায় মানুষের পাশে এভাবে দাঁড়াতে?

আমরা যেন আমাদের মুক্তিদাতাকে তিরস্কার, অবিশ্বাস বা অপমান না করি বরং আমরাও যেনো তার মতো পরিত্রাণকারী, দয়ালু, ক্ষমাশীল ও সেবার মানুষ হতে পারি। সিমোন যেভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন, আমরাও যেনো যন্ত্রণাক্লিষ্ট মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারি।

 

 

ক্রুশবিদ্ধ যীশুর প্রতি বিদ্রূপ ও অপমান

মথি ২৭:৩৯-৪৪

 

'যারা সেই পথ দিয়ে যাচ্ছিল, তারা তাঁকে যা-তা ব'লে অপমান করতে লাগলো; মাথা নাড়তে নাড়তে বলতে লাগল: "মহামন্দির ভেঙে ফেলে তুই নাকি তিন দিনের মধ্যেই আবার তা গড়ে তুলতে পারিস! বেশ তো, তুই যদি সত্যিই ঈশ্বরের পুত্র হোস, এখন তাহলে নিজেকে বাঁচা, ক্রুশ থেকে নেমে আয়।” প্রধান যাজকেরাও শাস্ত্রী ও প্রবীণদের সঙ্গে একইভাবে উপহাস করে বলছিলেন: "ও অপরকে বাঁচিয়েছে, অথচ নিজেকে বাঁচাতে পারছে না! ও নাকি ইস্রায়েলের রাজা! দেখি, ও এখন ক্রুশ থেকে নেমে আসুক, তাহলেই ওকে আমরা বিশ্বাস করব। ও তো ঈশ্বরের ওপর ভরসা রেখেছে! তা ঈশ্বর যদি সত্যিই ওর জন্যে ভাবেন, তাহলে তিনিই এখন ওকে উদ্ধার করুন। ও তো বলেছেই: 'আমি ঈশ্বরের পুত্র!'" এমন কি, যে দু'জন দস্যুকে তাঁর সঙ্গে ক্রুশে দেওয়া হয়েছিল, তারাও সেই একইভাবে তাঁকে বিশ্রী ভাষায় টিটকিরি দিচ্ছিল।'

 

তোমাকে একটু সহজ করে বলি

 

ঈশ্বরপুত্র প্রভু যীশু খ্রীষ্টকে ক্রুশে টাঙানো হলো। ক্রুশের উপর প্রভু যীশুর কী মর্মযন্ত্রণা! কোনো দিকে মাথা ঘুরালে যন্ত্রণা কমে না বরং বাড়ে। এমন যন্ত্রণার মাঝে সৈন্যরা, প্রধান যাজকেরা, শাস্ত্রবিদগণ ও সাধারণ পথচারীগণ প্রভু যীশুর সমালোচনা করেছিলো। এমনকি একই শাস্তি ভোগ করছে সেই দুইজন দস্যুর একজন যীশুকে বিদ্রূপ ও অপমান করেছিলো। যীশুর কথা দিয়েই যীশুকে আক্রমণ করেছিলো; তাকে চ্যালেঞ্জ করে বলেছিলো, “মহামন্দির ভেঙে ফেলে তুই নাকি তিন দিনের মধ্যেই আবার তা গড়ে তুলতে পারিস! বেশ তো, তুই যদি সত্যিই ঈশ্বরের পুত্র হোস, এখন তাহলে নিজেকে বাঁচা, ক্রুশ থেকে নেমে আয়!” আসলে যীশু 'মহামন্দির' বলতে দেহ মন্দিরকে এবং "তিন দিন” বলতে মৃত্যুর তিন দিন পর তার আবার ফিরে আসার কথাই বুঝিয়েছিলেন।

 

যীশুর ঐশ্বরিক পরিচয় না জেনে এবং ক্ষমতা না বুঝেই যীশুকে নিয়ে তারা পরিহাস করেছিলেন। ঈশ্বর মানুষ হয়ে এ জগতে এসেছেন নিজেকে বাঁচানোর জন্যে নয়; বরং তিনি এসেছেন মানব জাতিকে বাঁচানোর জন্যে, পাপ থেকে উদ্ধারের জন্যে, মানুষের পরিত্রাণের জন্যে। হে মানব, তোমার প্রভুকে তুমি এমন যন্ত্রণা ও দুঃখ-কষ্ট দিয়েছিলে!

 

আমরাও কি যীশুকে কষ্ট দিই না? যখন আমরা বিশ্বাসের পথে না চলি, ধর্ম-কর্ম না করি, যখন আমরা অন্যের সমালোচনা করি, যখন আমরা বাইবেল পাঠ না করি, ধর্মের মৌলিক বিষয়গুলো অস্বীকার করি বা বিষয়গুলো নিয়ে দ্বন্দ্ব-কোলাহল করি, তখন আমরা যীশুকে কালভেরিতে নিয়ে যাই না, তাকে আমরা পুনরায় ক্রুশ বিদ্ধ করি এবং তাঁকে আমরা কষ্ট দিই?

 

 

যীশুখ্রীষ্টের ক্রুশীয় মৃত্যু

মথি ২৭:৪৫-৫০

 

'সেদিন বেলা বারোটা থেকে সারা দেশ ছেয়ে নামল অন্ধকার; বেলা তিনটে পর্যন্ত এমনি অন্ধকারই রইল। বেলা তিনটের কাছাকাছি সময়ে যীশু জোরে চিৎকার করে উঠলেন; 'এলি, এলি, লামা শবাক্তানী!' অর্থাৎ, 'ঈশ্বর আমার, ঈশ্বর আমার, কেন আমাকে পরিত্যাগ করেছ?' যারা সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল, তাদের কেউ কেউ এই কথা শুনে বলল: 'এখনও কিনা এলিয়কে ডাকছে!' তাদের একজন তখনই ছুটে গিয়ে একটা স্পঞ্জ নিয়ে সির্কায় তা ভাল ক'রে ভিজিয়ে নিল; তারপর একটা নলডাঁটার আগায় স্পঞ্জটা লাগিয়ে যীশুকে পান করতে দিল। কিন্তু অন্যেরা বলল: 'দাঁড়াও! দেখা যাক, এলিয় ওকে রক্ষা করতে আসেন কি না!' তখন যীশু আর একবার জোরে চিৎকার করে উঠলেন; তারপর তিনি প্রাণত্যাগ করলেন।'

 

 

তোমাকে একটু সহজ করে বলি

 

পিলাতের দরবারে যীশুর বিচারের পর ইহুদী সৈন্যরা যীশুকে মারতে মারতে কালভেরিতে নিয়ে গিয়েছিলো। তার কাঁধে ভারি ক্রুশ চাপিয়ে দিয়েছিলো মাথায় কাঁটার মুকুট পরিয়ে দিয়েছিলো। সৈন্যরা জোর করে তার বহন করা ক্রুশের উপর শুইয়ে তাঁর দুহাত ও দুপা পেরেক বিদ্ধ করে বেলা বারোটার সময় যীশুকে ক্রুশে টাঙিয়েছিলো। ক্রুশে টাঙানো অবস্থায় সৈন্যরা বর্শা দিয়ে যীশুর বুকে আঘাতও করেছিলো। যেখান থেকে বের হয়ে এসেছিল রক্ত ও জল। এভাবে অকথ্য যন্ত্রণা সহ্য করে যীশু শুক্রবার বেলা তিনটের সময় মৃত্যুবরণ করেছিলেন। আমাদের মুক্তিদাতা প্রভু যীশু যে দিনটিতে মৃত্যুবরণ করেছেন, সেই দিনটিকে বলা হয় 'পুণ্য শুক্রবার' বা 'গুড ফ্রাইডে'।

ঈশ্বরপুত্রের এমন যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যুতে সেদিন ঈশ্বরের সৃষ্ট প্রকৃতি বেলা ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত অন্ধকারময় হয়েছিল। মন্দিরের পর্দাটি উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দুভাগ হয়ে গিয়েছিল। আরও অনেক আশ্চর্য ঘটনা ঘটেছিল। যীশু ক্রুশের উপর যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যুর পূর্বে পিতা ঈশ্বরকে ডেকেছিলেন, সকল অপরাধীকে ক্ষমা করেছিলেন এবং সমস্তই সমাপ্ত হয়েছে বলে প্রাণত্যাগ করেছিলেন।

আমাদের প্রভু যীশু কত মহাপ্রাণ। যারা তাঁকে এত কষ্ট দিয়েছিলেন, হত্যা করেছিলেন, মৃত্যুর পূর্বে তিনি তাদের ক্ষমা করেছিলেন। এমন মহানুভবতার পরিচয় আমরা কি এই পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি দেখতে পাই? যীশু ক্রুশের উপর থেকেও আমাদের শিক্ষা দিয়ে গেছেন, যেন আমরাও মহানুভব হই, অনুভূতিপ্রবণ মানুষ হই, মানুষকে ভালোবাসি ও ক্ষমা করি।

Content added || updated By
Promotion