SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

তৃতীয় শ্রেণি (প্রাথমিক স্তর ২০২৪) - খ্রিষ্টধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা - NCTB BOOK

 

পঞ্চম অধ্যায়

মানুষ, প্রকৃতি ও জীবজগৎ

 

 

ঈশ্বরের সৃষ্টি কী অপূর্ব সুন্দর! দেখে আমরা মুগ্ধ হই। মানুষ, গাছপালা, জীবজন্তু সবকিছুই চমৎকার - অতি উত্তম! তিনি তাঁর মুখের কথায় এসব সৃষ্টি করলেন। নিজের প্রতিমূর্তিতে তিনি মানুষ সৃষ্টি করলেন। মানুষের জীবন ধারণ ও বেঁচে থাকার প্রয়োজনে তিনি সৃষ্টি করলেন বিশ্বপ্রকৃতি, গাছপালা, ফুল-ফল-ফসল, পশু-পাখি, পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা-সমুদ্র। প্রকৃতি ও জীবজগতের উপর মানুষের জীবন নির্ভরশীল। মানুষ, প্রকৃতি ও জীবজগৎ পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। প্রকৃতি ও জীবজগৎ ছাড়া মানুষের বেঁচে থাকা অসম্ভব। কারণ প্রকৃতি ও জীবজগৎ থেকেই মানুষ তার জীবন ধারণের জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় উপাদান পেয়ে থাকে। তাই মানুষ, প্রকৃতি ও জীবজগৎ সৃষ্টি সম্পর্কে জানা প্রয়োজন।

 

বিশ্বসৃষ্টির দিকে তাকিয়ে ধ্যান করি এবং মনে মনে সুন্দর সৃষ্টির জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।

আমরা দেখি এ বিষয়ে পবিত্র বাইবেলে কী লেখা আছে।

Content added || updated By

পাঠ: ১

জগৎ সৃষ্টি

আদিকালে ঈশ্বর আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করলেন। পৃথিবী ছিল শূন্য ও অন্ধকার। ঈশ্বর বললেন, আলো হোক। সঙ্গে সঙ্গে আলো হলো। ঈশ্বর অন্ধকার থেকে আলো ভিন্ন করে দিলেন। আলোর নাম রাখলেন 'দিন' এবং অন্ধকারের নাম 'রাত্রি'। ঈশ্বর দিনের জন্য সূর্য তৈরি করলেন এবং রাতের জন্য চাঁদ ও তারা। তিনি সূর্য, চাঁদ ও তারা আকাশের বুকে বসালেন, যেন পৃথিবী আলোকিত হয়।

তারপর ঈশ্বর বললেন, সমস্ত জল এক জায়গায় আসুক ও ভূমি জেগে উঠুক। তখন স্থলভাগ জেগে উঠলো এবং সাগরের সৃষ্টি হলো।

তারপর ঈশ্বর বললেন, মাটি থেকে ঘাস ও ফলের গাছ উৎপন্ন হোক। তখনই মাটিতে ঘাস ও সবরকমের গাছ জন্মাল। তখন ঈশ্বর চেয়ে দেখলেন, তাঁর সমস্ত কাজ চমৎকার। (আদিপুস্তক ১: ১-১২)

 

ঈশ্বর তাঁর মুখের কথায় সবকিছু সৃষ্টি করলেন। দিন, রাত, সূর্য, চাঁদ, গ্রহ-তারা, আকাশ, বাতাস, গাছপালা ও পানি সবই মানুষের জীবন যাপনে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। এদের ওপর মানুষের জীবন নির্ভরশীল। এই সুন্দর সৃষ্টির জন্য আমরা ঈশ্বরকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। যত্নের সাথে আমরা সৃষ্টির প্রতিটি উপাদান ব্যবহার করি।

 

ক) ভেবে উত্তর দেই। 

 

i) আদিকালে ঈশ্বর কী সৃষ্টি করলেন? 

ii) তখন পৃথিবী কেমন ছিলো? 

iii) ঈশ্বর আলোর নাম কী দিলেন? 

vi) ঈশ্বর অন্ধকারের নাম কী দিলেন? 

v) তিনি দিনের জন্য কী সৃষ্টি করলেন? 

vi) তিনি রাতের জন্য কী সৃষ্টি করলেন? 

vii) সূর্য, চাঁদ, তারা কেন আকাশে বসালেন? 

viii) মাটি থেকে কী উৎপন্ন হলো?

 

খ) গান করি।

 

সুন্দর পৃথিবী, সুন্দর ভগবান, যিনি এই আকাশ সৃষ্টি করলেন।

 

এ পাঠে শিখলাম 

 

- সৃষ্টির আগে পৃথিবী দেখতে শূন্য ও অন্ধকার ছিলো। তিনি দিন ও রাত্রি সৃষ্টি করলেন। 

- দিনে আলো দেবার জন্য সূর্য এবং রাতে আলো দেবার জন্য চাঁদ ও তারা সৃষ্টি করলেন। তিনি স্থলভাগের নাম দিলেন ভূমি এবং জলভাগের নাম দিলেন সাগর। মাটিতে গাছপালার জন্ম হলো।

Content added By

পাঠ: ২

জীবজগৎ ঈশ্বরের আশীর্বাদে ধন্য হলো

 

ঈশ্বরের সৃষ্টি বড়ই বিচিত্র। তিনি আকাশ, চাঁদ-সূর্য, ঘাস, গাছপালা সৃষ্টির পর ভাবলেন এবার তিনি কী সৃষ্টি করবেন! কী দিয়ে তিনি এই সুন্দর জগৎ ভরিয়ে তুলবেন। তখন তিনি নানারকম পশুপাখি ও জীব- জন্তু সৃষ্টি করার সিদ্ধান্ত নিলেন। ঈশ্বর বললেন, জলে, স্থলে ও আকাশে সকল প্রকারের প্রাণী জন্মগ্রহণ করুক। তখনই সমুদ্রে মাছ, আকাশে পাখি ও স্থলে সব রকমের পশু জন্মাল। ঈশ্বর তাদের আশীর্বাদ করে বললেন, তোমাদের সংখ্যা বাড়িয়ে জল, স্থল ও আকাশ পরিপূর্ণ করো। (আদিপুস্তক- ১: ২০-২২)

 

জীববৈচিত্র্যে পৃথিবী সমৃদ্ধ হলো। তারা মানুষের জীবনের একটা বড় অংশ। মানুষের জীবন জীবের উপর নির্ভরশীল। জীবজগত থেকে মানুষ তার খাদ্য পেয়ে থাকে। তারা প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করে। জীবজগৎ ঈশ্বরের আশীর্বাদ লাভ করেছে। আবার মানুষও জীবজগতের মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের আশীর্বাদ পেয়েছে।

 

ক) আশেপাশে যেসব পশু-পাখি ও প্রাণী রয়েছে তাদের দেখি। তাদের সাথে কীরূপ আচরণ করতে হবে তার উপর চারটি বাক্য লিখি। 

খ) মিল করি: বাম পাশের তথ্যের সাথে ডান পাশের তথ্যের মিল করি।

 

 

এ পাঠে শিখলাম

 

- ঈশ্বর পশু-পাখি ও জীব-জন্তু সৃষ্টি করে তাদের আশীর্বাদ করলেন, বংশবৃদ্ধি করে তারা যেন পৃথিবী ভরিয়ে তোলে। মানুষের জন্য পশুপাখি ও জীব-জন্তু আশীর্বাদস্বরূপ।

Content added By

পাঠ: ৩

ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্ট সর্বোত্তম সৃষ্টি মানুষ

 

সব সৃষ্টি শেষ করার পর ঈশ্বর দেখলেন, সবই অতি উত্তম হয়েছে। তিনি উপলব্ধি করলেন এই সৃষ্টি যত্ন ও রক্ষা করার জন্য কাউকে দরকার। তখন তিনি মানুষ সৃষ্টি করার কথা ভাবলেন। নিজের প্রতিমূর্তিতে তিনি মানুষ তৈরি করলেন। তিনি নর ও নারী উভয়কে সৃষ্টি করলেন। ঈশ্বরের সর্বোত্তম সৃষ্টি হলো মানুষ। তিনি মানুষ সৃষ্টি করে মানুষকে দায়িত্ব দিলেন বিশ্বসৃষ্টির যত্ন নিতে।

নিচে পবিত্র বাইবেল অনুসারে মানব সৃষ্টি ও পৃথিবীকে যত্ন নেবার বিষয় বর্ণনা দেয়া হলো।

ঈশ্বর বললেন, "এবার নিজের সাদৃশ্যে মানুষকে সৃষ্টি করবো। সে জল, স্থল ও আকাশের প্রাণীর উপর কর্তৃত্ব করবে।" ঈশ্বর মানুষকে নিজের সাদৃশ্যে সৃষ্টি করলেন। তিনি মাটি দিয়ে মানুষের দেহ তৈরি 

করলেন ও তার মধ্যে প্রাণ জাগিয়ে দিলেন; তাতে মানুষ জীবিত হয়ে উঠলো। ঈশ্বর তার নাম রাখলেন 'আদম'। (আদিপুস্তক ১: ২৬-২২) এবার সমস্ত জীবজন্তুর নাম রাখার জন্য ঈশ্বর তাদের আদমের কাছে নিয়ে এলেন। আদম তাদের প্রত্যেকের নাম রাখলেন। কিন্তু তার সঙ্গী হিসাবে সে কোনো জীব খুঁজে পেলেন না। তখন ঈশ্বর বললেন, "মানুষের পক্ষে একা থাকা ভালো নয়।" আদম যখন ঘুমাচ্ছিল, তখন ঈশ্বর তার বুক থেকে একটা পাঁজর নিয়ে নারীকে সৃষ্টি করলেন। যখন তাকে আদমের সামনে নিয়ে গেলেন, তখন আদম বললো, "সত্যি, এ হলো আমার হাড় ও আমার মাংস, এর নাম 'হবা' অর্থাৎ নারী, কারণ একে নর থেকে তৈরি করা হলো।” ঈশ্বর তাদের আশীর্বাদ করে বললেন, "তোমরা বংশ বৃদ্ধি কর, সারা জগতে ছড়িয়ে পড় এবং সকল বস্তুর উপর কর্তৃত্ব কর। জল, স্থল ও আকাশের যত জীব সকলেই তোমাদের অধীনে থাকবে।" (আদিপুস্তক- ২: ১৮-২৩)

 

এইভাবে ঈশ্বর তাঁর মুখের কথায় মানুষ সৃষ্টি করলেন। মানুষকে সৃষ্টজীবের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব দিলেন। দায়িত্ব দিলেন সকল কিছুর উপর কর্তৃত্ব করার।

 

ক) আদম ও হবা'র একটি ছবি আঁকি।

খ) ভেবে লিখি।

 

 

এ পাঠে শিখলাম

 

- ঈশ্বর তাঁর প্রতিমূর্তিতে সর্বশ্রেষ্ঠ জীব মানুষ সৃষ্টি করেছেন। নর ও নারী করে, তিনি তাদের সৃষ্টি করলেন। মানুষকে সব সৃষ্টির উপর কর্তৃত্ব করার দায়িত্ব দিলেন।

Content added By

পাঠ: ৪

প্রকৃতি, জীবজগৎ ও মানব জীবন

 

ঈশ্বর এই সুন্দর পৃথিবী আমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন। আমরা যেন ভালোভাবে বেঁচে থাকতে পারি। তিনি আমাদের জন্য আলো দিয়েছেন যেন সবকিছু পরিষ্কারভাবে দেখতে পাই। রাত সৃষ্টি করেছেন মানুষ ও সমগ্র সৃষ্টি যেন বিশ্রাম করতে পারে। প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নেবার জন্য বাতাস দিয়েছেন। বায়ু সেবন ছাড়া আমরা বাঁচতে পারি না। চারিদিকে নানারকম গাছপালা দেখতে পাচ্ছি, যেগুলি থেকে আমরা আমাদের খাবার পেয়ে থাকি। ভাবতেও অবাক লাগে এসব গাছের ফল কত সুস্বাদু! ভূমির ফসল থেকে আমরা আমাদের প্রতিদিনের খাবার যোগাড় করে থাকি। পশু-পাখি, নদী-সমুদ্রের মাছ আমাদের খাদ্য। আমরা যে কাপড়-চোপড় পরে আছি সেগুলিও এসেছে প্রকৃতি থেকে। পাহাড়, পর্বত, নদী-নালা সবকিছুই মানুষের উপকারে আসে। এক কথায় বলা যায় প্রকৃতির দান ও দয়ায় আমরা বেঁচে আছি। প্রকৃতি ছাড়া আমাদের জীবন অচল।

 

পরমেশ্বর বললেন, 'দেখো, সারা পৃথিবী জুড়ে যত উদ্ভিদ বীজ বহন করে, ও ফল-উৎপাদক যত গাছ ফলের বীজ বহন করে, তা সবই আমি তোমাদের দিচ্ছি; তা হবে তোমাদের খাদ্য। সমস্ত বন্যজন্তু, আকাশের পাখি ও মাটির বুকে চলাচল করে সমস্ত জীব এই সকল প্রাণীকে আমি খাদ্যরূপে সবুজ যত উদ্ভিদ দিচ্ছি।' আর সেইমতই হলো। পরমেশ্বর তাঁর তৈরি করা সমস্ত কিছুর দিকে তাকিয়ে দেখলেন; আর সত্যি, সেই সমস্ত কিছু খুবই উত্তম হয়েছে। (আদিপুস্তক- ১: ২৯-৩১)।

 

ঈশ্বর কিন্তু সেভাবেই ব্যবস্থা করেছেন। তিনি কত দয়ালু! সব সৃষ্টির সেরা করে তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন। তিনি চেয়েছেন মানুষ যেন বিশ্বপ্রকৃতি ও সমগ্র সৃষ্টির যত্ন করে, রক্ষা করে এবং তার উপর প্রভুত্ব করে। এটি মানুষের দায়িত্ব। কারণ সৃষ্টির মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের গৌরব ও মহিমা প্রকাশিত হয়।

 

ক) নিজে করি। 

 

i) জীবজগতের একটি ছবি আঁকি। 

ii) জীবজগৎ ও প্রকৃতি কীভাবে মানুষের উপকারে আসে তা আলোচনা করি। 

iii) প্রকৃতি ও মানবজীবন নিয়ে নীরবে ধ্যান করি ও ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাই।

 

খ) ভেবে লিখি।

 

এ পাঠে শিখলাম

 

- স্বয়ং ঈশ্বর প্রকৃতির উদ্ভিদ, পশু-পাখি ও জীবজন্তুকে মানুষের খাদ্য হিসেবে দিয়েছেন। মানুষের জীবন প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। প্রকৃতির দান ও দয়ায় মানুষ বেঁচে আছে।

Content added || updated By

পাঠ: ৫

ধ্বংসের কবলে প্রকৃতি, পরিবেশ ও জীবজগৎ

 

ঈশ্বরের অপূর্ব সৃষ্টি বর্তমানে মানুষ নানাভাবে ধ্বংস করছে। মানুষ লোভ ও নিজের স্বার্থের জন্য প্রকৃতির অপব্যবহার করছে। বর্তমানে নানারকম তথ্যপ্রযুক্তি, উড়োজাহাজ ও যানবাহনের কারণে মানুষের জীবন অনেক সহজ হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে; কিন্তু মানুষের জীবনযাত্রা অনেক জটিলও হয়ে গেছে। অতিমাত্রায় ভোগবাদ, আত্মকেন্দ্রিকতা, লোভ লালসা ও উদাসীনতার কারণে সৃষ্ট, প্রকৃতি, বন- বৃক্ষ নিধন, বাতাসে অতিরিক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড, কালোধোঁয়া, বায়ুদূষণ, দুর্গন্ধময় জল ও জলাবদ্ধতা দেখা যাচ্ছে। তাছাড়াও শব্দদূষণ, জীববৈচিত্র্য হ্রাস, অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি-বন্যা, বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্বপ্রকৃতিকে বিপদের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। পশু-পাখি ও জীব-জন্তুকে নানাভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে। তাই বিপন্ন প্রকৃতি আর্তনাদ করছে।

 

এই বিপন্ন অবস্থার কথা রোমীয়দের কাছে পত্রে সাধু পৌল বলেছেন- "বিশ্বসৃষ্টি অবক্ষয়ের হাত থেকে মুক্তির প্রত্যাশায় আছে। কারণ তাকে অসারের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। সে অবক্ষয় থেকে মুক্ত হয়ে ঈশ্বর সন্তানদের গৌরবময় স্বাধীনতায় অংশ নেবার অপেক্ষায় আছে। সমগ্র সৃষ্টি আজ আর্তনাদ করছে- প্রসব বেদনা ভোগ করছে। (রোমীয় ৮: ১৮-২৪)। এই বিপন্ন পৃথিবীকে সুরক্ষা দেবার ও যত্ন নেবার দায়িত্ব ঈশ্বর মানুষকে দিয়েছেন। প্রকৃতির আর্তনাদ শুনতে হবে। ধ্বংসের কবল থেকে প্রকৃতি, পরিবেশ ও জীবজগতকে রক্ষা করতে হবে।

 

 

 

 

 

ক) নিজে করি। 

 

ধ্বংস কবলিত ও বিপন্ন পৃথিবী নিয়ে আমাদের ভাবনা ও অনুভূতি আলোচনা করি।

 

খ) ভেবে বলি। 

 

পরিবেশ ও জীবজগৎ কীভাবে ধ্বংস হচ্ছে তার তিনটি কারণ বলি।

 

গ) ভেবে লিখি।

 

এ পাঠে শিখলাম

 

- মানুষের স্বার্থপরতার কারণে প্রকৃতি ও জীবজগৎ ধ্বংস হচ্ছে। সমগ্র সৃষ্টি আজ আর্তনাদ করছে যেন প্রসব বেদনায় কাতরাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে ও বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ছে। বিশ্ব প্রকৃতি ও জীবজগৎ রক্ষা করার দায়িত্ব মানুষের।

Content added By

পাঠ: ৬

প্রকৃতি, পরিবেশ ও জীবজগতের সুরক্ষা ও যত্ন

 

পূর্ব পাঠে আমরা জেনেছি প্রকৃতি, পরিবেশ ও জীবজগতের সাথে মানুষের জীবন নিবিড়ভাবে জড়িত। কিন্তু নানা কারণে ও নানাভাবে তা নষ্ট হচ্ছে। সৃষ্টিলগ্ন থেকে ঈশ্বর মানুষকে দায়িত্ব দিয়েছেন তা সুরক্ষা করতে ও যত্ন নিতে। আমরা কীভাবে পরিবেশ, প্রকৃতি ও জীবজগৎ সুরক্ষা করতে পারি, সে বিষয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে। যখন-তখন গাছ না কেটে বরং গাছ লাগাতে ও যত্ন নিতে হবে। বিনা প্রয়োজনে পশুপাখি হত্যা না করা। জমিতে নানারকম বিষ প্রয়োগ বন্ধ করা। কলকারখানার বর্জ্য ফেলে নদ-নদী ও সমুদ্রের পানি নষ্ট না করা। বরং সচেতনভাবে পরিবেশ ও জীবজগতকে সুরক্ষা করে ও যত্ন নিয়ে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে।

 

পবিত্র বাইবেলে লেখা আছে

 

পথে চলতে চলতে যখন কোনো গাছের উপরে বা মাটিতে এমন কোনো পাখির বাসা দেখতে পাও যে, যার মধ্যে বাচ্চা বা ডিম আছে, এবং সেই বাচ্চা বা ডিমের উপরে পাখিরা তা দিচ্ছে, তবে তুমি বাচ্চাদের সঙ্গে পাখিকে ধরবে না। তুমি সেই বাচ্চাগুলিকে নিজের জন্য নিতে পারবে, কিন্তু পাখিকে নিশ্চয়ই ছেড়ে দেবে, যেন তোমার মঙ্গল ও দীর্ঘ পরমায়ু হয়। (দ্বিতীয় বিবরণ: ২২: ৬-১১)।

 

মণ্ডলীর শিক্ষা

 

প্রকৃতি ও জীবজগৎ যেভাবে নষ্ট হচ্ছে তা দেখে, ক্যাথলিকমণ্ডলীর প্রধান ধর্মগুরু পুণ্যপিতা পোপ ফ্রান্সিস খুব চিন্তিত ও বিচলিত হয়ে পড়লেন। তিনি 'তোমার প্রশংসা হোক' নামে একটি সর্বজনীন পত্র লিখেছেন। এই পত্রে তিনি আমাদের অভিন্ন বসতবাটির যত্ন কীভাবে নিতে হবে তার নির্দেশনা দিয়েছেন। ধরিত্রীমাতা, বিশ্বপ্রকৃতি ও জীবজগৎকে রক্ষা ও যত্ন করার জন্য সকলের প্রতি তিনি আকুল আবেদন জানিয়েছেন। বিশ্বব্যাপী মানুষের কাছে এই পত্রটি গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছে। পৃথিবীর এই সংকটকালে এর প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব কত বেশি তা বুঝেছে। এই পত্রে তিনি লিখেছেন-

  • জগতের সমস্ত কিছুই পরস্পর সম্পর্কযুক্ত;
  • সমগ্র সৃষ্টি ঈশ্বরের অসীম ভালোবাসা ও অনুরাগের কথা বলে;
  • সমগ্র সৃষ্টির লক্ষ্য এক ও অভিন্ন, তাহলো স্বয়ং ঈশ্বর:
  • ঈশ্বরের সৃষ্টি জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করার অপরাধে মানুষ অপরাধী;
  • বনজঙ্গল, জমিজমা ও জলাভূমি ধ্বংস করা পাপ;
  • সবচেয়ে বড় কথা প্রকৃতি ও জীবজগতের বিরুদ্ধে পাপ করা মানে নিজেদের ও ঈশ্বরের বিরুদ্ধে পাপ করা।
  • পরিবেশ বিষয়ক সংকট জোরালো মন পরিবর্তনের আহ্বান;
  • প্রকৃতি ও পরিবেশ সৃষ্টির সময় ঈশ্বর যে শৃংখলা ঠিক করে দিয়েছেন মানুষ তা নষ্ট করতে পারে না।

 

 

কীভাবে আমরা জীবজগৎ ও প্রকৃতির যত্ন নিতে পারি-

 

  • পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা: নিজে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, নিজ বাড়ি, বিদ্যালয়, উপাসনালয় ও আশেপাশের পরিবেশ পরিষ্কার রাখতে সচেষ্ট হওয়া।
  • অপচয় রোধ: প্রয়োজনের অতিরিক্ত খরচ করা থেকে বিরত থাকা। পানি, বিদ্যুৎ ও অন্যান্য সম্পদ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়া।
  • দূষণমুক্ত পরিবেশ কমানো: যে সকল কাজ ও আচরণ পরিবেশ দূষিত করে সেগুলি পরিহার করা।
  • প্লাস্টিক জাতীয় দ্রব্য ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা।
  • স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ করা।
  • বাড়ি ও প্রতিষ্ঠানে বৃক্ষরোপন করা।
  • প্রকৃতি ও পরিবেশবিষয়ক শিক্ষালাভ ও সচেতন হওয়া।
  • অযথা পশু-পাখি হত্যা না করা।

 

 

এ পাঠে শিখলাম

 

ঈশ্বর নিজে মানুষকে প্রকৃতি, পরিবেশ ও জীবজগৎ সুরক্ষা ও যত্ন করার দায়িত্ব দিয়েছেন। এ বিষয়ে বাইবেল ও মণ্ডলীর শিক্ষা সম্পর্কে জেনেছি। কীভাবে প্রকৃতি, পরিবেশ ও জীবজগতের যত্ন নিতে পারি তা শিখেছি।

 

ক) সঠিক তথ্য দিয়ে খালি জায়গা পুরণকরি।

 

i) মানুষকে ঈশ্বর দায়িত্ব দিয়েছেন সৃষ্টি সুরক্ষা ও ______ করতে।

ii) জগতের সমস্ত কিছুই পরস্পর ______ ।

iii) ঈশ্বরের সৃষ্ট জীববৈচিত্র্য নষ্ট করার অপরাধে ______ অপরাধী।

iv) পানি, বিদ্যুৎ ও অন্যান্য সম্পদ ব্যবহারে ______ হবো।

ⅴ) প্রকৃতি ও জীবজগতের বিরুদ্ধে পাপ করা মানে ______ ও ______  বিরুদ্ধে পাপ করা।

 

খ) নিজে করি।

i) নিজের বাড়িতে ও বিদ্যালয়ে গাছ লাগাবো। 

ii) সবাই মিলে বিদ্যালয়ের আঙিনা পরিষ্কার করবো। 

iii) কী করে প্রকৃতি ও জীবজগৎ রক্ষা করা ও যত্ন নেয়া যায় তা আলোচনা করবো।

 

গ) একসাথে প্রার্থনা করি।

 

সর্বশক্তিমান ঈশ্বর, 

তুমি সমস্ত বিশ্বে সকল সৃষ্টি ও প্রাণীর মধ্যে উপস্থিত আছো। 

বিশ্বসৃষ্টির সৌন্দর্যে তোমাকে ধ্যান করতে আমাদের শেখাও। 

তোমার সবকিছুর জন্য আমাদের অন্তরে তোমার প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতার অনুভূতি জাগিয়ে দাও। 

আমরা যেন বিশ্বসৃষ্টির সবকিছুর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক বুঝতে পারি। 

শক্তি দাও, আমরা যেন আমাদের আবাসভূমি পৃথিবীর যত্ন নিতে পারি। 

এই প্রার্থনা করি তোমার পুত্র যীশুর নামে। আমেন।।

 

 

 

সমাপ্ত

Content added || updated By