কার্য বিশ্লেষণের পদ্ধতি ও প্রকারভেদ

এইচএসসি (বিএমটি) ভোকেশনাল - হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট-২ প্রতিষ্ঠানের ইউনিট লেভেল কর্মীদের কাজের বিশ্লেষণ | - | NCTB BOOK
2.1k
2.1k

কার্য বিশ্লেষণের পদ্ধতি (Methods of Job Analysis )

কোনো নির্দিষ্ট কাজের দায়িত্ব ও কার্য পরিচালনা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ ও পর্যালোচনা করার প্রক্রিয়াকে কার্য বিশ্লেষণ বলা হয়। হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে কার্য বিশ্লেষণ বিশেষ প্রয়োজন। প্রতিষ্ঠানে যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মী নিয়োগ থেকে শুরু করে কর্মীদের বেতন ও ভাতা নির্ধারণ, ফলাফল মূল্যায়ন, প্রশিক্ষণ প্রদান ও দায়িত্ব পালন নিশ্চিত করার জন্য কার্য বিশ্লেষণ দরকার হয়। কার্য বিশ্লেষণের নির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে। নিচে এ পদ্ধতিগুলোর বর্ণনা দেওয়া হলো-

১. প্রশ্নমালা পদ্ধতি (Questionnaire method): কার্য বিশ্লেষণের প্রথম পদ্ধতি হলো প্রশ্নমালা পদ্ধতি বা Questionnaire method এ পদ্ধতি অনুযায়ী কর্মীদের কাছ থেকে কাজ সম্পর্কিত তথ্য, কৌশল, সুবিধা-অসুবিধা প্রভৃতি বিষয়ে তথ্য জানার জন্য একটি প্রশ্নমালা তৈরি করা হয়। এতে সংশ্লিষ্ট কার্য সংক্রান্ত অনেকগুলো প্রশ্ন থাকে। এ প্রশ্নপত্র কর্মীদের মধ্যে সরবরাহ করা হয়। কর্মীগণ এসব প্রশ্নের উত্তর লিখিতভাবে প্রদান করে। এক্ষেত্রে কর্মীগণ প্রয়োজনে তত্ত্বাবধায়ক বা কর্মকর্তার সহায়তা নিতে পারে। এ প্রশ্নমালা বিতরণ করার উদ্দেশ্য কর্মীদেরকে আগেই বুঝিয়ে দিতে হবে। এ ব্যবস্থায় তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে উত্তর দিতে আগ্রহী হয়। 

চিত্র: প্রশ্নমালার নমুনা

২. সাক্ষাৎকার পদ্ধতি (Interview method) : কার্য বিশ্লেষণের একটি সুপ্রতিষ্ঠিত পদ্ধতি হলো সাক্ষাৎকার পদ্ধতি। সাক্ষাৎকার পদ্ধতিতে ব্যবস্থাপক কর্মীদেরকে তার কক্ষে ডেকে আনেন এবং কার্য সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। এর প্রেক্ষিতে তাদের উত্তর লিপিবদ্ধ করেন। এ পদ্ধতিতে কর্মীগণও সরাসরি ব্যবস্থাপকের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ পান। এভাবে একটি কার্য সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়।

৩. পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি (Observation method): কার্য বিশ্লেষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হলো পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে কর্মীদের কার্যাবলি পর্যবেক্ষণের জন্য কিছু সুদক্ষ পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা হয়। তারা কাজ চলাকালীন সময়ে কর্মীর কার্য সম্পাদন প্রক্রিয়া প্রত্যক্ষভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। এর ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট পদের কাজ, কার্য পরিবেশ, সুযোগ-সুবিধা, দায়িত্ব, কর্তব্য প্রভৃতি লিখে দেন। এর বিপরীতে কর্মীর যোগ্যতা অর্থাৎ শারীরিক সক্ষমতা, কৌশলগত দক্ষতা, সময়ের ব্যবহার এসব বিষয় পর্যবেক্ষণ করে শিটে লিখে রাখেন। পরবর্তীতে এ পর্যবেক্ষণ শিট পর্যালোচনার মাধ্যমে কার্য বিশ্লেষণ করা হয়।

৪. সম্মিলিত পদ্ধতি (Combined method): কার্যকর ফল পাওয়ার জন্য ওপরে আলোচিত একাধিক পদ্ধতির সমন্বয়ে কার্য সম্বন্ধে তথ্যাবলি সংগ্রহ করা যেতে পারে। সম্মিলিত বা যুগ্ম পদ্ধতি ব্যবহারে সঠিক ও সম্পূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। তাই কার্য সম্বন্ধে সুনির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহে অনেকে সাক্ষাৎকার ও পর্যবেক্ষণের সমন্বয়ে কার্য বিশ্লেষণ করে থাকেন। অন্যান্য পদ্ধতিতে যেসব বিষয় তাৎক্ষণিকভাবে বোঝা যায় না সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তা জানা যায়। আবার, পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে অন্যান্য পদ্ধতিতে সংগৃহীত তথ্যাবলির যথার্থতা যাচাই করা যায়।

৫. তালিকা পদ্ধতি (Check list method): এ পদ্ধতিতে একটি পদের কার্যাবলির বিস্তারিত তালিকা বা চেকলিস্ট প্রণয়ন করা হয়। এরপর কর্মীদেরকে তাদের কাজের বিভিন্ন দিকগুলোতে টিক চিহ্ন (√) দিতে বলা হয়। কার্য সম্বন্ধে তথ্য সংগ্রহ ও বিন্যাসের জন্য পরীক্ষা তালিকা একটি সহজ পদ্ধতি। তবে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হলে দক্ষ ও অভিজ্ঞ লোক দিয়ে কাজের বিবরণী তৈরি করতে হয়।

চিত্র : তালিকা পদ্ধতি

৬. ডায়রি পদ্ধতি (Diary method) : এ পদ্ধতিতে কোনো কর্মীকে তার প্রাত্যহিক কার্যকলাপ, কার্য প্রক্রিয়া এবং কার্য সম্পাদনের সময় সংক্রান্ত বিবরণ ডায়রি বা রোজনামচার আকারে লিপিবদ্ধ করে রাখতে বলা হয়। এ কাজ বিশ্বস্ততার সাথে করা হলে প্রশ্নপত্র (Questionnaire) ও পরীক্ষা তালিকা পদ্ধতিতে (Check list method) সংঘটিত ভুলত্রুটি পরিহার করা সম্ভব। ব্যবস্থাপনা ও নির্বাহী পদের জন্য রোজনামচা পদ্ধতি খুবই উপযোগী। তবে এ পদ্ধতিতে সময়ের অপব্যয় ও কার্যভার বৃদ্ধি পায় ।

৭. জটিল ঘটনা পদ্ধতি (Critical incidents method): এ পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠানের অত্যন্ত জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাসমূহ বিশ্লেষণ করে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। কার্য বিশ্লেষক প্রতিটি কার্যে কর্মীর প্রত্যেক প্রকার আচরণের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতির মাত্রা নির্ধারণ সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করে থাকেন। ১৯৫৪ সালে ফ্যানাজেন (Flanagen) এ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। তার মতে, “প্রত্যেকটি কার্যে কিছু জটিল আচরণের উপস্থিতি থাকে বিধায় এর থেকে সঠিক কার্য আচরণ সম্পর্কে জানা যায়।”

৮. বিশেষজ্ঞ সম্মেলন পদ্ধতি (Specialists conference method): এ পদ্ধতিতে কার্য সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন তত্ত্বাবধায়ক ও বিশেষজ্ঞদের গুরুত্বপূর্ণ মতামতের ভিত্তিতে কার্য বিশ্লেষণ করা হয়। অর্থাৎ, এ পদ্ধতিতে কোনো সুনির্দিষ্ট কার্য বিশ্লেষণের লক্ষ্যে কার্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দিক; যেমন- কারিগরি দিক, কৌশলগত দিক, অর্থনৈতিক দিক প্রভৃতি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের মতামত গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হয়। কোনো নির্দিষ্ট কার্যের বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞগণ সংশ্লিষ্ট দিকসমূহ সম্পর্কে পরিষ্কার ও পরিপূর্ণ ধারণা রাখেন। ফলে তাদের সম্মিলিত মতামতের ভিত্তিতে প্রাপ্ত কার্য বিশ্লেষণ যথেষ্ট সমৃদ্ধ হয়ে থাকে। তবে যদি প্রথম অনুমিতিটি সত্য না হয়; অর্থাৎ, নির্বাচিত বিশেষজ্ঞগণ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যথার্থ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা না রাখেন সেক্ষেত্রে কার্য বিশ্লেষণটি সুষ্ঠু ও সঠিক না হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

চিত্র : বিশেষজ্ঞদের সম্মেলন

কার্য বিশ্লেষণের পদ্ধতিগুলোর সাফল্য নির্ভর করে কার্য বিশ্লেষক এবং উত্তরদাতা বা অংশগ্রহণকারীদের যোগ্যতা বা দক্ষতার ওপর। তাদের জ্ঞানের গভীরতা কার্য বিশ্লেষণকে সহজ করে তোলে। কার্য বিশ্লেষণের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের জন্য উল্লিখিত পদ্ধতিসমূহের এক বা একাধিক পদ্ধতি ব্যবহার করা যায়। তবে একাধিক পদ্ধতি ব্যবহারে কার্য বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ সঠিক হয়।

কার্য বিশ্লেষণের প্রকারভেদ (Types of Job Analysis )

কার্য বিশ্লেষণ হলো এক ধরনের তথ্যভাণ্ডার। এখান থেকে সহজে এবং দ্রুত কোনো কর্মী সংক্রান্ত তথ্য ও তার কাজের অবস্থা সম্পর্কে জানা যায়। কার্য বিশ্লেষণের প্রকার ও ধরনগুলো নিচে বর্ণনা করা হলো—

→ পদের নাম ও অবস্থা (Name and position of the job) : কার্য বিশ্লেষণের প্রধান ও প্রথম কাজ হলো পদের নাম ও তার অবস্থান নির্দিষ্ট করা। এক্ষেত্রে পদের ও অবস্থানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নাম রাখা উচিত । 

→ কাজের বর্ণনা (Description of the job) : পদের নামকরণের পর এই পদের কী কী কাজ তা বর্ণনা করতে হয়। কাজের বর্ণনা অবশ্যই সংক্ষিপ্ত এবং সুস্পষ্ট হতে হবে।

→ দায়িত্ব ও কর্তব্য (Responsibility and duty) : প্রত্যেক পদেরই আলাদা ও বিশেষ কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য থাকে। কার্য বিশ্লেষণের এই পর্যায়ে পদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে আলোচনা থাকে ।

→ অন্যান্য পদের সাথে সম্পর্ক (Relation with others post) : সংগঠনের প্রত্যেক পদের সাথেই অন্যান্য পদের সম্পর্ক থাকে। সংগঠন চার্ট থেকে এই সম্পর্কের ব্যাপারে সহজেই বোঝা যায়। কার্য বিশ্লেষণে একটি পদের সাথে অন্য একটি পদের কী সম্পর্ক সে সম্বন্ধে সুস্পষ্ট এবং সংক্ষিপ্ত বর্ণনা প্রদান করা হয় ।

→ কাজের পরিবেশ (Work enviroment) : একজন কর্মীকে কোন পরিবেশে কাজ করতে হবে তা আগে থেকেই জানা প্রয়োজন। তাই কাজের পরিবেশ বর্ণনাও কার্য বিশ্লেষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। → ঝুঁকি (Risks) : অর্পিত কাজটি কতখানি ঝুঁকিপূর্ণ বা আদৌ তাতে ঝুঁকি আছে বা নেই সে সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে জানতে হবে। তাই ঝুঁকি বর্ণনা কার্য বিশ্লেষণের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

→ ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য (Personal attributes) : কোনো একটি নির্দিষ্ট পদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যক্তির কী কী বৈশিষ্ট্য বা গুণাবলি থাকা উচিত তা এখানে উল্লেখ করতে হয়। যেমন- শিক্ষা, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, যোগ্যতা, ধৈর্য প্রভৃতি। এগুলো কার্য বিশ্লেষণের বড় অংশ জুড়ে থাকে।

→ শারীরিক দক্ষতা ও অবস্থা (Physical competence and condition) : একেকটি কাজের জন্য একেক ধরনের শারীরিক দক্ষতা ও অবস্থার প্রয়োজন হয়। কায়িক শ্রম এবং দাপ্তরিক কাজের ক্ষেত্রে ভিন্ন দৈহিক গুণাবলি দরকার। এভাবে কোন কাজের জন্য শারীরিক দক্ষতা কেমন হওয়া উচিত তা উল্লেখ করতে হবে।

→ মানসিক দক্ষতা ও অবস্থা (Mental skills and condition) : কোনো একটি কাজের ক্ষেত্রে শারীরিক দক্ষতার পাশাপাশি মানসিক দক্ষতাও একটি বড় ব্যাপার। কেউ যদি মানসিকভাবে কাজ করতে অক্ষম হয়, তার কাছ থেকে কখনোই ভালো কাজ আশা করা যায় না। কার্য বিশ্লেষণে এই বিষয়টি সম্পর্কে স্পষ্টভাবে আলোচনা থাকে।

→ তত্ত্বাবধায়ক (Supervisor) : পদগুলো তত্ত্বাবধায়নের দায়িত্ব একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ওপর ন্যস্ত থাকে। তাই একজন তত্ত্বাবধায়কের অধীনে কোন কোন পদ আছে তা নির্দিষ্ট করতে হয়। পরিশেষে বলা যায়, কার্য বিশ্লেষণ হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এতে বিভিন্ন পদ্ধতি ও কৌশল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এছাড়াও কার্য বিশ্লেষণ ওপরে বর্ণিত বিভিন্ন পর্যায়ের ও প্রকারের হয়ে থাকে। এগুলোর সমন্বয় হলো একটি পূর্ণাঙ্গ কার্য বিশ্লেষণ ।

Content added By
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion
;