হযরত মুহাম্মদ (স) শিশু বয়স থেকেই মানুষের মুক্তির জন্য, শান্তির জন্য ভাবতেন। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে তাঁর এ ভাবনা আরও গভীর হয়। মূর্তি পূজা ও কুসংস্কারে লিপ্ত এবং নানা দুঃখকষ্টে জর্জরিত মানুষের মুক্তির জন্য তাঁর সব ভাবনা। মানুষ তাঁর স্রষ্টাকে ভুলে যাবে, হাতে বানানো মূর্তির সামনে মাথা নত করবে, এটা হয় না। কী করা যায়, কীভাবে মানুষের হৃদয়ে এক আল্লাহর ভাবনা জাগানো যায়। কী করে কৃষ্ণর শিরক থেকে তাদের মুক্ত করা যায়। এ সকল বিষয়ের চিন্তা-ভাবনায় তিনি মগ্ন। বাড়ি থেকে তিন মাইল দূরে নির্জন হেরা পর্বতের গুহায় নির্জনে ধ্যান করতেন। কখনো কখনো একাধারে দুই-তিন দিনও সেখানে ধ্যানে মগ্ন থাকতেন। এভাবে দীর্ঘদিন ধ্যানমগ্ন থাকার পর অবশেষে চল্লিশ বছর বয়সে রমযান মাসের কদরের রাতে আঁধার গুহা আলোকিত হয়ে উঠল ।
আল্লাহর ফেরেশতা জিবরাঈল (আ) আল্লাহর মহান বাণী ওহি নিয়ে আসলেন। মহানবি (স) কে লক্ষ্য করে বললেন—'ইকরা' (পড়ুন)। তিনি মহানবি (স) কে সূরা আলাক-এর প্রথম পাঁচটি আয়াত পাঠ করে শোনালেন -
বাংলা উচ্চারণ :
ইকরা বিসমি রাব্বিকাল্লাযী খালাক। খালাকাল ইনসানা মিন আলাক। ইকরা ওয়া রাব্বুকাল আকরাম। আখি আল্লামা বিল কালাম। আল্লামাল ইনসানা মা- লাম ইয়ালাম ।
অর্থ :
১. পাঠ করুন আপনার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।
২. যিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে আলাক (এঁটে থাকা বস্তু ) থেকে।
৩. পাঠ করুন, আপনার প্রতিপালক তো মহিমান্বিত।
৪. যিনি শিক্ষা দিয়েছেন কলমের সাহায্যে।
৫. শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না। (সূরা আলাক, আয়াত: ১-৫)
নবিজি ঘরে ফিরে খাদিজার কাছে সব ঘটনা প্রকাশ করলেন এবং বললেন, “আমাকে বস্ত্রাবৃত করো, আমি আমার জীবনের আশঙ্কা করছি।” তখন খাদিজা নবিজিকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, “না, কখনও না। আল্লাহর কসম। তিনি কখনও আপনার অনিষ্ট করবেন না। কারণ আপনি আত্মীয়- স্বজনের সাথে ভালো ব্যবহার করেন, আর্ত-পীড়িত ও দুস্থদের সাহায্য করেন, মেহমানদের সেবা-যত্ন করেন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে সাহায্য করেন।” হযরত খাদিজার এই উক্তি দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, নবুয়ত লাভের আগেও মহানবি (স) নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে মানবিক মহৎ গুণাবলির অনুশীলন করতেন, মানবতার সেবায় নিয়োজিত থাকতেন। বর্বর আরবদের মধ্যে থেকেও তিনি নির্মল ও সুন্দর জীবনযাপন করতেন। তিনি ছিলেন সমগ্র মানবজাতির জন্য আদর্শ।
আরও দেখুন...