প্রতিষ্ঠান/ব্যবস্থাপনার নীতি

এইচএসসি (বিএমটি) ভোকেশনাল - হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট-১ - প্রতিষ্ঠানের কাঠামোর ধারণা | NCTB BOOK

নীতি বলতে কোনো কাজ সম্পাদনের দিকনির্দেশনাকে বোঝায়। এটি মূলত চিন্তা বা কাজ করার দিকনির্দেশনা। নীতি অনুযায়ী কাজ করা আইনত বাধ্যতামূলক নয়। তবে এর অনুসরণ সাফল্য অর্জনকে সহজ করে তোলে । তাই একটি শক্তিশালী ও সফল সংগঠন এবং এর গতিশীলতা সুনির্দিষ্ট কিছু নীতির ওপর নির্ভরশীল। এগুলোর অনুসরণে সংগঠন বেশি কার্যকর হতে পারে। সংগঠন কাঠামো সঠিকরূপে তৈরি ও কার্যকরভাবে পরিচালনার জন্য নিচের নীতিমালা বা আদর্শ বিবেচনা করা উচিত—

▪️ লক্ষ্যের নীতি (Principle of goal) : প্রতিষ্ঠানের মূল ইচ্ছা বা কাঙ্ক্ষিত ফলকে লক্ষ্য বলে। প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অনুযায়ী সংগঠনিক কাঠামো গড়ে তোলা উচিত। একটি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সংগঠন যেভাবে তৈরি করা হয়, একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সংগঠনকে সেভাবে গঠন করা হয় না। তাই প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্যের আলোকে সংগঠন প্রণীত হতে হবে।

▪️কর্তৃত্ব ও দায়িত্বের সমতার নীতি (Principle of authority and responsibility) : আদেশ দেওয়ার বৈধ ক্ষমতাকে কর্তৃত্ব ( Authority) বলে। আর কোনো কাজ সন্তোষজনকভাবে সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা বা দায়বদ্ধতাকে (Responsibility) দায়িত্ব বলে। একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান বা ব্যবস্থাপনা সংগঠন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে নির্বাহীদের কর্তৃত্ব ও দায়িত্বের মধ্যে সমতা বা ভারসাম্য বজায় রাখা অপরিহার্য। কর্তৃত্ব বেশি অথচ দায়-দায়িত্ব কম থাকলে নির্বাহীরা সাধারণত স্বৈরাচারী হয়ে ওঠেন। আবার দায়িত্ব বেশি কিন্তু কর্তৃত্ব কম হলে নির্বাহীদের পক্ষে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন সম্ভব হয় না।

চিত্র: কর্তৃত্ব অনুযায়ী দায়িত্ব পালন

▪️জোড়া ম‍ই শিকলের নীতি (Principle of scalar chain) : এ নীতি অনুযায়ী ব্যবস্থাপনার শীর্ষ স্তর থেকে নিম্ন স্তর পর্যন্ত কর্তৃত্ব একই সরলরেখায় ধাপে ধাপে প্রবাহিত হয়। এক্ষেত্রে প্রতিটি বিভাগ, উপবিভাগ এবং ব্যক্তিকে একে অন্যের সাথে সংযুক্ত করে দিতে হয়। কেউ যাতে কর্তৃত্ব রেখার বাইরে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখা হয়। ফলে পর্যায়ক্রমিক নেতৃত্ব নিশ্চিত এবং একই ধারায় সব কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

▪️ শ্রম বিভাজনের নীতি (Principle of division of labour) : প্রতিষ্ঠানের কাজের ধরন অনুযায়ী কাজগুলোকে সঠিকভাবে চিহ্নিত ও বিভক্ত করার নীতি হলো শ্রম বিভাজনের নীতি। এরপর যোগ্যতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে একেক বিভাগে একেকজন বিশেষজ্ঞ কর্মী নিয়োগ করা হয়। এ বিভাজনের আলোকে প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন বিভাগ-উপবিভাগ তৈরি এবং দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব নির্ধারণ করা হয়। তাই কাজগুলোকে এমনভাবে বিভাজন করা উচিত যাতে প্রত্যেক ব্যক্তিই বিশেষ জ্ঞান অর্জন ও প্রয়োগের সুযোগ পায় ।

▪️ বিশেষায়ণের নীতি (Principle of specialization) : নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে জ্ঞান বা দক্ষতা অর্জন করাকে বিশেষায়ণ বলা হয়। কর্মীদের দক্ষতা, যোগ্যতা, মেধা ও অভিজ্ঞতার আলোকে কোনো কাজের দায়িত্ব দেওয়াকে বিশেষায়ণের নীতি বলে। সংগঠনে একই কাজ নিয়মিতভাবে করার ফলে একেকজন কর্মী বিশেষজ্ঞ কর্মীতে পরিণত হয়।

▪️তত্ত্বাবধান পরিসরের নীতি (Principle of span of supervision) : প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন স্তরে নিয়োজিত ব্যবস্থাপকরা সরাসরি কতজন অধস্তনের কাজ তত্ত্বাবধান করবেন তা সংগঠন কাঠামোতে নির্দিষ্ট করতে হবে। এক্ষেত্রে একজন ব্যবস্থাপকের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে কর্মরত অধীনস্থের সংখ্যা কাম্য সংখ্যায় স্থির রাখা উচিত। এতে তিনি তার অধীনস্থের কাজ সঠিকভাবে তত্ত্বাবধান করতে পারেন ।

▪️ভারসাম্যের নীতি (Principle of balance) : প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি বিভাগ-উপবিভাগ এবং ব্যক্তির কাজের মধ্যে সমতা রক্ষা করাকে ভারসাম্যের নীতি বলে। কারো কাজের চাপ বেশি আর কেউ কাজের অভাবে বসে আছে, এমন যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আবার, ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের কেন্দ্রীকরণ এবং বিকেন্দ্রীকরণ নীতির মধ্যেও ভারসাম্য রাখতে হবে। অন্যথায় প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা বিধান করে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।

চিত্র : কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার ভারসাম্য

 

▪️ নমনীয়তার নীতি (Principle of flexibility) : পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজনীয় সমন্বয়, সংশোধন বা পরিবর্তন আনার সুযোগকে নমনীয়তার নীতি বলে। প্রতিযোগিতাপূর্ণ ব্যবসায় জগতে সর্বদা রুচি ও চাহিদার পরিবর্তন, উৎপাদন ও বণ্টন পদ্ধতির পরিবর্তন ঘটে। এক্ষেত্রে পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে নেওয়ার মতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সংগঠন তৈরির শুরুতেই বিবেচনা করতে হবে।

▪️সরলতা ও স্পষ্টতার নীতি (Principle of simplicity and clarity) : সংগঠন কাঠামো এমন হওয়া উচিত যাতে তা সহজ ও সরল এবং সবার কাছে সহজে বোধগম্য হয়। অর্থাৎ, একটি প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন এমনভাবে তৈরি করা উচিত যাতে এর অন্তর্গত প্রত্যেক কর্মী তার ঊর্ধ্বতন ও অধীনস্থদের সম্পর্কে জানতে পারে। এছাড়া এ থেকে তাদের প্রত্যেকের দায়-দায়িত্ব সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করতে পারে।

▪️ব্যতিক্রমের নীতি (Principle of exception) : ব্যবস্থাপনার কাজে কোনো ভুল হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষ সরাসরি সহযোগিতা ও হস্তক্ষেপ করলে তাকে ব্যতিক্রমের নীতি বলে। এজন্য কম গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব অধস্তনদের হাতে দেওয়া উচিত। আর ব্যতিক্রমধর্মী এবং জটিল বিষয়াদি শীর্ষ ব্যবস্থাপনার সরাসরি নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত।

 ▪️মিতব্যয়িতার নীতি (Principle of economy) : প্রাতিষ্ঠানিক কাজ সম্পাদনে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় পরিহার করা এবং যৌক্তিক পর্যায়ে রাখাকে মিতব্যয়িতার নীতি বলে। সংগঠন কাঠামো তৈরি ও এর বাস্তবায়নের সবস্তরে মিতব্যয়িতা বা ব্যয় কমানোর দিকটি বিবেচনায় আনতে হবে। অন্যথায় প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা ও সাফল্য অর্জন অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হবে না।

▪️ সহযোগিতার নীতি (Principle of cooperation) : প্রাতিষ্ঠানিক সফলতা অর্জন অনেকাংশেই কর্মীদের সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাবের ওপর নির্ভর করে। তাই প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন কাঠামো এমন হওয়া প্রয়োজন যেখানে কর্মীরা একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল থাকে। এতে দলীয় সদস্যদের মধ্যে সহযোগিতা ও সমঝোতা বাড়ায় । এতে একযোগে লক্ষ্য অর্জনের পথ সুগম হয়। ফলে প্রতিষ্ঠানের সার্বিক উন্নয়ন সহজ হবে। 

তাই বলা যায়, প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন হলো ব্যবস্থাপনার মূল চালিকাশক্তি। একটি কার্যকর সংগঠনের ওপর প্রতিষ্ঠানের সাফল্য নির্ভর করে। তাই কোনো প্রতিষ্ঠানের সংগঠন সুষ্ঠুরূপে প্রণয়নের জন্য উল্লিখিত নীতিমালা বা আদর্শ মেনে চলা উচিত। এতে সংগঠনের মান কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছাবে।

Content added By

আরও দেখুন...

Promotion