পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও লক্ষ্য অর্জনের জন্য সুষ্ঠুভাবে প্রতিষ্ঠান গঠন বা সংগঠিতকরণ ও সঠিক সংগঠন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে উপকরণ ও সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত হয়, অপচয় কমে এবং উৎপাদনশীলতা বাড়ে। নিচে প্রতিষ্ঠান বা ব্যবস্থাপনা সংগঠিতকরণ ও সংগঠনের গুরুত্ব বর্ণনা করা হলো-
→ দায়িত্ব সুনির্দিষ্টকরণ (Specifying responsibility) : সঠিকভাবে কোনো কাজ করার বাধ্যবাধকতাকে দায়িত্ব বলে। সংগঠনের মাধ্যমে কাজকে প্রকৃতি অনুযায়ী বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। এরপর প্রতিটি বিভাগের কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব একেকজন বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়। এতে যাবতীয় কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন ও লক্ষ্য অর্জন সহজ হয়।
→ জবাবদিহিতা ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা (Establishing accountability and order) : সংগঠনের মাধ্যমে প্রতিটি কাজ ও দায়িত্বকে সুষ্ঠু ও সুনির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। ফলে কেউ তার কাজ বা দায়িত্ব এড়িয়ে চলতে পারে না। এছাড়া বিভিন্ন বিভাগ, কর্মী ও কাজের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করা হয়। আনুষ্ঠানিক সংগঠন শৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই বলা যায়, সঠিকভাবে সংগঠিতকরণের ফলে সর্বত্র জবাবদিহিতা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত হয়।
→লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনে সহায়তা (Assistance to achieve goals and objectives) : লক্ষ্য অর্জনের ধাপ বা মাইলফলককে উদ্দেশ্য বলে। ব্যবস্থাপনার সংগঠিতকরণ প্রক্রিয়ায় যাবতীয় কার্যাবলি প্রকৃতি অনুযায়ী বিভিন্ন বিভাগ ও উপবিভাগে ভাগ করা হয়। এরপর বিভিন্ন ব্যক্তির ওপর উক্ত বিভাগ ও উপবিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এভাবে প্রত্যেকের দায়িত্ব নির্দিষ্ট থাকায় উদ্দেশ্য অর্জন সহজ হয়।
→ উপকরণ ও সম্পদের যথাযথ ব্যবহার (Proper use of elements and resources) : সংগঠিতকরণের মাধ্যমে উপকরণ ও সম্পদসমূহের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত হয়। অর্থনৈতিক মূল্যসমৃদ্ধ জ্ঞান, দক্ষতা ও প্রতিভাসম্পন্ন কর্মীকে মানবসম্পদ বলা হয়। আদর্শ সংগঠনে কাজের ধরন অনুযায়ী যোগ্য ব্যক্তিকে কাজের জন্য নিয়োগ করা হয়। এর সাথে প্রয়োজনীয় কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব দিয়ে তার জবাবদিহিতাও নিশ্চিত করা হয়। ফলে কর্মীদের সামর্থ্য পুরোপুরি ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানের সাফল্য অর্জিত হয়।
→ সুষ্ঠু সমন্বয় (Proper coordination) : প্রাতিষ্ঠানিক কাজগুলোকে একই ধারায় লক্ষ্যের দিকে ধাবিত করাকে সমন্বয়সাধন বলে। সংগঠনের মাধ্যমে বিভিন্ন বিভাগ, কাজ ও কর্মীদের মাঝে পারস্পরিক সম্পর্ক তৈরি হয়। এজন্য সংগঠনে নিয়োজিত প্রত্যেক কর্মী কার্যক্ষমতা ও দায়িত্ব সম্পর্কে পূর্ণ সচেতন থাকেন। এছাড়া প্রত্যেকে তার ঊর্ধ্বতন অধস্তন সম্পর্কে এবং বিভিন্ন বিভাগ ও তাদের কাজ সম্পর্কে জানতে পারেন ।
→ সৃজনশীলতার বিকাশ (Development of creativity) : নতুনত্ব আনতে পারার যোগ্যতাকে সৃজনশীলতা বলা হয়। সংগঠনে কর্মীদের প্রতিভা বিকাশের মাধ্যমে নতুন উপায়, পদ্ধতি, নিয়ম উন্নয়ন ও প্রয়োগের যথেষ্ট সুযোগ তৈরি হয়। যেমন : শ্রম বিভাগের কারণে কর্মীরা সবসময় একই কাজ করার ফলে ঐ কাজ আরও সহজে করার উপায় নিজেরাই উদ্ভাবন করতে পারে। এতে তাদের মধ্যে সৃজনশীলতার বিকাশ হতে থাকে।
→ কার্যকর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা (Establishing effective control) : পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করাকে নিয়ন্ত্রণ বলা হয়। সংগঠন কাঠামোতে প্রতিটি বিভাগ ও কর্মীর কাজ, কর্তৃত্ব, ক্ষমতা ও দায়িত্ব নির্দিষ্ট থাকায় তাদের কাজ সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এছাড়া কে, কাকে, কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে তার নির্দেশনা সংগঠন কাঠামো থেকে পাওয়া যায়।
তাই সংগঠন প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ কাজকে সহজ করে তোলে। তাই বলা যায়, ব্যবসায়িক বা অব্যবসায়িক যেকোনো ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান তথা সংগঠিতকরণ ও সংগঠন অবশ্যই প্রয়োজন। আর ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ায় সংগঠন মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে। এর ওপর ভিত্তি করেই সাফল্য অর্জিত হয়। তাই সুষ্ঠু সংগঠন তৈরিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সচেতন থাকতে হয়।
আরও দেখুন...