ইসলাম উদার মানবতা বোধসম্পন্ন, পরমতসহিষ্ণু একটি আন্তর্জাতিক জীবনব্যবস্থা। ইসলাম সকল ধর্ম ও ধর্মাবলম্বীদের প্রতি উদার, সহনশীল ও শ্রদ্ধাশীল। ইসলামে যেমন আছে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় বা জাতীয় নীতিমালা, তেমনি আছে ন্যায়-নীতিভিত্তিক উদার, পরমতসহিষ্ণু, আন্তধর্মীয় ও আন্তর্জাতিক নীতিমালা। মানবতার ঐক্য, সংহতি, বিশ্বশান্তি ও বিশ্বভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় ইসলামের ভূমিকা অপরিসীম ৷ বিভিন্ন ধর্মের এবং ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য পারস্পরিক সম্পর্ক কিরূপ হওয়া উচিত, সে সম্পর্কে ইসলামে সুস্পষ্ট নীতিমালা বিদ্যমান ।
ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষ মূলগতভাবে একই পিতা-মাতা আদম (আ) ও হাওয়া (আ)— এর সন্তান। যদিও পরিবেশ ও পরিস্থিতির প্রভাবে তাদের মধ্যে বিভিন্নতা এসেছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “হে মানব জাতি, আমি তোমাদের একজন নর ও একজন নারী হতে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদের বহু গোত্রে ও সম্প্রদায়ে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পর পরিচিত হতে পার।' (সূরা হুজুরাত, আয়াত : ১৩)
ইসলাম মানবতার ঐক্যে বিশ্বাস করে, বিভেদ পছন্দ করে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
অর্থ : মানুষ ছিল একই উম্মতের অন্তর্ভুক্ত (সূরা বাকারা, আয়াত: ২১৩)
মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স) শুধু আরব দেশ, আরব জাতি বা শুধু মুসলমানদের জন্যই প্রেরিত হননি। তিনি গোটা মানব জাতির জন্য প্রেরিত ছিলেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“আমি আপনাকে গোটা মানবজাতির কাছেই পাঠিয়েছি।” (সূরা সাবা, আয়াত: ২৮)
ইসলামের মতো এমন উদারতার নজির আর কোথাও পাওয়া যাবে না। ইসলামের অন্যতম মূলনীতি হচ্ছে :
অর্থ : “রাসুলদের মধ্যে কোনো পার্থক্য করি না।” ( সূরা বাকারা, আয়াত: ২৮৫)।
সকল রাসুলের প্রতি বিশ্বাস করা মুসলিমদের ইমানের অঙ্গ। পারস্পরিক বিশ্বাস ও পারস্পরিক শ্রদ্ধা পোষণ করা সুসম্পর্ক গড়ে তোলার পূর্বশর্ত। বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা, বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা না থাকলে সুসম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে না। ইসলামের সংস্কৃতি ও আচার-অনুষ্ঠানেও পারস্পরিক সুসম্পর্ক গড়ে তোলার উপাদান পূর্ণ মাত্রায় বিদ্যমান।
হযরত মুহাম্মদ (স) মদিনায় হিজরত করেই মদিনা ও তার আশেপাশে বসবাসকারী গোত্রগুলোর সাথে একটি বিশ্বখ্যাত সনদপত্র সম্পাদন করেন, যা ইতিহাসে “মদিনা সনদ” নামে খ্যাত। এ সনদ সাম্যের মহান নীতি, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, জানমালের নিরাপত্তা, সকল ধর্মের স্বাধীনতা ও ধর্মীয় সহিষ্ণুতার ঘোষণা ও রক্ষাকবচ। এ সনদের মাধ্যমে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ভাষা-নির্বিশেষে সকল নাগরিকের সমান অধিকার তথা মানবাধিকার স্বীকৃত ও প্রতিষ্ঠিত হয়।
শুধু শান্তিকালীন নয়, যুদ্ধকালীন সময়ও ইসলাম অন্য ধর্ম, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং ধর্ম যাজকদের রক্ষা নিশ্চিত করত। এদের ধ্বংস বা আক্রমণ করা কড়াকড়িভাবে নিষিদ্ধ ছিল ।
মহানবি (স) ও মুসলিমগণ আক্রান্ত না হলে কারও বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতেন না। মহানবি (স) যুদ্ধের তুলনায় সন্ধি ও সুসম্পর্ক গড়ে তোলাকে বেশি অগ্রাধিকার দিতেন। হুদায়বিয়ায় তিনি কাফেরদের অন্যায় আবদার মেনে নিয়েও শান্তির উদ্দেশ্যে সন্ধি করেছিলেন। তিনি হাবশার রাজা আসহাম নাজ্জাশির সাথে অত্যন্ত মধুর সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন এবং তাঁর কাছে পত্র লিখেছিলেন। তাবুক বিজয়ের পর আয়লা অধিপতি ইউহান্নার সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। এভাবে বাহরাইন ও নাজরানের অধিবাসীদের সাথে সন্ধি চুক্তির মাধ্যমে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন।
মহানবি (স) হিজরতের পরেই মদিনা ও তার আশপাশের বিভিন্ন গোত্র ও রাষ্ট্রের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। তিনি রোম ও পারস্য সম্রাটসহ রাজন্যবর্গের কাছে উপঢৌকন পাঠাতেন এবং তাঁদের উপঢৌকন গ্রহণ করতেন। অনেকের কাছে শান্তিদূত ও পত্র পাঠিয়েছিলেন।
পরিকল্পিত কাজ : বিভিন্ন ধর্ম ও ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইসলামে যে নীতিমালা আছে তার একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করবে।
আরও দেখুন...