ইবাদত

পঞ্চম শ্রেণি (প্রাথমিক) - ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা - | NCTB BOOK
42
42
Please, contribute by adding content to ইবাদত.
Content

ইবাদত

5
5

'ইবাদত' শব্দের অর্থ আনুগত্য, দাসত্ব, বন্দেগি ইত্যাদি। আল্লাহ তায়ালার আনুগত্য স্বীকার করে তাঁর যাবতীয় আদেশ, নিষেধ মেনে চলাকে বলে ইবাদত। আল্লাহ আমাদের 'ইলাহ'। ইলাহ মানে মাবুদ। আর আমরা তাঁর আবদ। আবদ মানে অনুগত বান্দা। আমাদের কর্তব্য হলো আল্লাহ তায়ালা যেসব কাজ করলে খুশি হন, যা যা করতে বলেছেন তা করা, আর যা যা করতে নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকা। আল্লাহ তায়ালার আদেশ-নিষেধ মেনে চলাই ইবাদত।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। তিনি আমাদের লালন-পালন করেন। তিনিই আমাদের রব। আমাদের জীবন-মৃত্যুর মালিকও তিনিই। তিনি এই মহাবিশ্বকে আমাদের জন্য কতো সুন্দর করে সাজিয়েছেন। আসমান-জমিন, চাঁদ-সুরুজ, ফল-ফসল, গাছ-পালা, নদী-নালা, পাহাড়-পর্বত সবকিছুই আমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন। তিনি সবকিছুকে আমাদের অনুগত করে দিয়েছেন। আর তিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন শুধু তাঁরই ইবাদতের জন্য। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- 'আর আমি জিন ও মানবজাতিকে কেবল আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা যারিয়াত, আয়াত :৫৬)

আমাদের জন্য কতগুলো নির্ধারিত মৌলিক ইবাদত রয়েছে। যেমন- সালাত, সাওম, হজ, যাকাত, সাদাকাহ, দান-খয়রাত ও আল্লাহর পথে জিহাদ ইত্যাদি। এগুলো মহানবি (স) যেভাবে আদায় করেছেন, আমাদের যেভাবে আদায় করতে বলেছেন, আমরা ঠিক সেভাবেই আদায় করব ।

ইবাদত শুধু সালাত, সাওম ইত্যাদির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য রাসুল (স) এর দেখানো পথে যে কোনো ভালো কাজই ইবাদতের মধ্যে শামিল। ভালো কাজের উৎসাহ দেওয়াও ইবাদত। রাসুল (স) বলেছেন, ' যে ব্যক্তি কোনো ভালো কাজের পরামর্শ দেয়, সে ব্যক্তিও কাজটি সম্পাদনকারীর সমান পুরস্কার পাবে।' (মুসলিম)

আল্লাহ তায়ালা তাঁর ইবাদতের জন্যই আমাদের সৃষ্টি করেছেন। আমাদের সব সময়ই তাঁর ইবাদতে মশগুল থাকা কর্তব্য। প্রশ্ন উঠতে পারে, সব সময়ই কি ইবাদতে মশগুল থাকা সম্ভব? হ্যাঁ, দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টা ইবাদত করা সম্ভব। যেমন আমরা যদি বিসমিল্লাহ বলে হালাল খাদ্য খাই, খাওয়ার পরে শোকর করি তবে খাওয়ার সময়টুকু ইবাদতে গণ্য হবে।

পড়ার সময় বিসমিল্লাহ বলে পড়া শুরু করলে যতক্ষণ লেখাপড়া করব, ততক্ষণই ইবাদতে গণ্য হবে। বিসমিল্লাহ বলে স্কুলে যাত্রা শুরু করলে আল্লাহ তায়ালা আমাদের রাস্তার বিপদাপদ থেকে রক্ষা করবেন ।

কোনো অন্ধ লোককে রাস্তা পার হতে সাহায্য করলে আল্লাহর নিকট এর পুরস্কার পাওয়া যাবে, এটিও ইবাদত। রাস্তার ময়লা, আবর্জনা বা কষ্টদায়ক কোনো বস্তু অপসারণ করাও গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।

সৎপথে ব্যবসা-বাণিজ্য করা, চাষাবাদ এবং অন্য কোনো সৎ পেশায় নিয়োজিত হয়ে যথাযথ কর্তব্য পালন করাও ইবাদতের মধ্যে শামিল। এমনকি ঘুমানোর আগে পাক-পবিত্র হয়ে আল্লাহর নাম নিয়ে ঘুমালে নিদ্রার সময়টুকুও আল্লাহর ইবাদতের মধ্যে গণ্য। এভাবে আমরা সর্বক্ষণই আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকতে পারি ৷

ইবাদতে আল্লাহ তায়ালা খুশি হন। এতে দুনিয়ার জীবন সুখের হয়। পরকালে পরম শান্তিময় স্থান জান্নাত লাভ করা যায়। আর যারা ইবাদত করে না, আল্লাহর পথে চলে না, আল্লাহ তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হন। তারা দুনিয়াতে শান্তি পায় না। পরকালে তাদের জাহান্নামের কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে।

আমরা আন্তরিকতার সাথে ইবাদত পালন করব। আমাদের জীবন সর্বক্ষণই যাতে আল্লাহর ইবাদতে গণ্য হয় সে চেষ্টা অব্যাহত রাখব ।

Content added By

পাক-পবিত্ৰতা

17
17

আল্লাহর ইবাদতের জন্য পাক-পবিত্র থাকা প্রয়োজন। শরীর, পোশাক এবং স্থান বা পরিবেশ পাকসাফ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকলে মনও পবিত্র থাকে। মন পবিত্র থাকলে মনে শান্তি লাগে, ভালো কাজ করার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। অপবিত্র মন শয়তানের কারখানা । পাকসাফ না হয়ে সালাত আদায় করা যায় না। অপবিত্র অবস্থায় কুরআন মজিদ স্পর্শ করা যায় না। এজন্যই রাসুল (স) বলেছেন,

অর্থ : “পবিত্রতা ইমানের অঙ্গ। (মুসলিম, তিরমিজি)

দেহ, মন, পোশাক, স্থান বা পরিবেশের পরিচ্ছন্নতা ও নির্মলতাকে তাহারাত বা পবিত্রতা বলে। ওষু, গোসল, তায়াম্মুমের মাধ্যমে শরীর পবিত্র করা হয়। কাপড়-চোপড় ও পোশাক ধুয়ে পাকসাফ করা হয়। ময়লা-আবর্জনা ও নোংরা দূর করে পরিবেশ পাকসাফ করা হয়।

সালাত আদায়ের জন্য শরীর ও পোশাকের মতো স্থান বা পরিবেশ পবিত্র হওয়াও প্রয়োজন। অপবিত্র স্থানে সালাত আদায় করা যায় না। পরিবেশ পবিত্র না থাকলে শরীর ও পোশাক পবিত্র রাখা যায় না। আবার তায়াম্মুম করার জন্য পবিত্র মাটি বা মাটি জাতীয় পদার্থ প্রয়োজন। সুতরাং আমাদের শরীর, পোশাক, পানি, মাটিসহ গোটা পরিবেশ পাক সাফ রাখা প্রয়োজন। আমরা সব সময় শরীর, পোশাক ও পরিবেশ পাকসাফ রাখব। সব সময় পাকসাফ থাকার অভ্যাস গড়ে তুলব।

 

Content added By

সালাত

12
12

আল্লাহ তায়ালা তাঁর ইবাদত করার জন্যই আমাদের সৃষ্টি করেছেন। ইবাদত অর্থ আনুগত্য করা। আল্লাহ তায়ালার নিকট বান্দার আনুগত্য প্রকাশের যত মাধ্যম বা পন্থা আছে তার মধ্যে সালাত হলো সর্বশ্রেষ্ঠ। সালাতের মাধ্যমেই আল্লাহর প্রতি বান্দার চরম আনুগত্য প্রকাশ পায় ।

সালাত শব্দের অর্থ নত হওয়া, বিনয়-বিনম্র হওয়া, দোয়া করা, ক্ষমা প্রার্থনা করা, দরূদ পড়া। ইসলামের পরিভাষায় আহকাম, আরকানসহ বিশেষ নিয়মে আল্লাহর ইবাদত করাকে সালাত বলে। সালাতকে নামাজও বলে।

ইসলাম পাঁচটি রুকনের ওপর প্রতিষ্ঠিত। রুকন মানে খুঁটি। পাঁচটি রুকন হলো:

১. ইমান,     ২. সালাত,   ৩. সাওম,     ৪. হজ,  ও    ৫. যাকাত।

ইমানের পরেই সালাতের স্থান। সালাত সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। রাসুল (স) বলেছেন, 

অর্থ : “সালাত দীন ইসলামের খুঁটি। (বায়হাকী)

যে সালাত কায়েম করলো, সে দীনরূপ ইমারতটি কায়েম রাখল। আর যে সালাত ত্যাগ করল, সে দীনরূপ ইমারতটি ধ্বংস করল। কুরআন মজিদে বার বার সালাত কায়েমের হুকুম দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে:

অর্থ : “সালাত কায়েম করো”। (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ৭৮)

দিন-রাত পাঁচ ওয়াক্ত সালাত জীবনের প্রতি মুহূর্তে আল্লাহ তায়ালার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। বান্দার মনে আল্লাহর বিধানমতো চলার অনুপ্রেরণা জোগায়। সালাতের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহ তায়ালার বেশি নৈকট্য লাভ করতে পারে।

সালাতের মাধ্যমে মানুষ নিষ্পাপ হয়ে যায়। রাসুল (স) একদিন সাহাবিদের বললেন, “তোমাদের বাড়ির সামনে যদি একটি নদী থাকে, আর কোনো ব্যক্তি যদি ঐ নদীতে দৈনিক পাঁচবার গোসল করে, তবে কি তার শরীরে কোনো ময়লা থাকতে পারে? সাহাবিরা বললেন, না। কোনো ময়লা থাকতে পারে না। তখন রাসুল (স) বললেন, ঠিক তেমনি কোনো বান্দা যদি প্রতিদিন পাঁচবার সালাত আদায় করে তার আর কোনো গুনাহ থাকতে পারে না।”- বুখারি ও মুসলিম ।

রাসুল (স) আরও বলেছেন, কোনো বান্দা জামাআতের সাথে সালাত আদায় করলে আল্লাহ তায়ালা তাকে পাঁচটি পুরস্কার দিবেন।

১.  তার জীবিকার অভাব দূর করবেন। 

২. কবরের আজাব থেকে মুক্তি দেবেন। 

৩. হাশরে আমলনামা ডান হাতে দেবেন। 

8. পুলসিরাত বিভাগীর মতো দ্রুত পার করবেন। 

৫. তাকে বিনা হিসাবে জান্নাত দান করবেন।

জান্নাত লাভ করতে হলে নিয়মিত সালাত আদায় করতে হবে। মহানবি (স) বলেছেন,

অর্থ : “সালাত জান্নাতের চাবি"। (তিরমিজি, ইবনেমাচ্ছা, আবুদাউদ)।

রাসুল্লাহ (স) আরও বলেছেন, 'কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম সালাতের হিসাব নেওয়া হবে। যার সালাতের হিসাব সঠিক হবে তার অন্য সব হিসাবও ঠিক হবে। আর যার সালাতের হিসাব গরমিল হবে, তার অন্যসব হিসাবও গরমিল হবে।” (তাবারানি)

একাকী সালাত আদায়ের চেয়ে সকলে মিলে জামাআতের সাথে সালাত আদায় করলে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। এর মাধ্যমে মুসলিমগণ দৈনিক পাঁচবার মিলিত হওয়ার সুযোগ পায়, পরস্পরের খোঁজখবর নিতে পারে। একতা, ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টি হয়। পরস্পরে সম্প্রীতি সৃষ্টি হয়। সুখে-দুঃখে একে অন্যের সাহায্য করতে পারে। সালাত মানুষের চরিত্র সংশোধনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। সালাত মানুষকে সব রকম অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'নিশ্চয়ই সালাত অশ্লীলতা ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে।” (সূরা আনকাবুত, আয়াত : ৪৫)

পরিকল্পিত কাজ: শিক্ষার্থীরা পাঁচটি মৌলিক ইবাদতের নাম খাতায় লিখবে।

Content added By

সালাতের সময়

13
13

সময়মতো সালাত আদায় করা আল্লাহর হুকুম। যথাসময়ে সালাত আদায় না করলে আদায় হয় না। এ সম্বন্ধে আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'নিশ্চয়ই সঠিক সময়ে সালাত কায়েম করা মুমিনের জন্য ফরজ' ( সূরা আন নিসা, আয়াত : ১০৩)

রাসুল (স)-এর কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আল্লাহর কাছে কোন আমলটি উত্তম? তিনি উত্তরে বললেন, সময়মতো সালাত আদায় করা। (বুখারি, মুসলিম)

সালাত আদায়ের সময় সম্পর্কে আমাদের ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। নিম্নে সালাতের ওয়াক্তের বিবরণ দেওয়া হলো :

১. ফজর : ফজর সালাতের সময় শুরু হয় সুবহে সাদিক হওয়ার সাথে সাথে এবং সূর্য উদয়ের পূর্ব পর্যন্ত এর সময় থাকে। রাতের শেষে আকাশের পূর্ব দিগন্তে লম্বা আকৃতির যে আলোর রেখা দেখা যায় তাকেই বলে সুবহে সাদিক।

২. যোহর : দুপুরের সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়লেই যোহরের ওয়াক্ত শুরু হয়। ছায়া আসলি বাদে কোনো বস্তুর ছায়া দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত এর সময় থাকে। কোনো বস্তুর ঠিক দুপুরের সময় যে ক্ষুদ্র ছায়া থাকে তাকেই বলে ছায়া আসলি বা আসল ছায়া।

জুমুআর সালাতের আলাদা কোনো ওয়াক্ত নেই। যোহরের সময়ই জুমুআর সালাত আদায় করতে হয়।

৩. আসর : যোহরের সময় শেষ হলেই আসরের সময় শুরু হয় এবং সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত বিদ্যমান থাকে। তবে সূর্যের রং হলুদ হওয়ার আগেই আসর সালাত আদায় করতে হয়।

8. মাগরিব : সূর্যাস্তের পর থেকে মাগরিবের সময় শুরু হয় এবং পশ্চিম আকাশে যতক্ষণ লালিমা বিদ্যমান থাকে ততক্ষণ সময় থাকে ৷

৫. এশা : মাগরিবের সময় শেষ হলেই এশার সালাতের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং সুবহে সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত বিদ্যমান থাকে। তবে মধ্য রাতের আগেই আদায় করা উত্তম ৷

এশার সালাত আদায়ের পরে বিতর সালাত আদায় করতে হয় ।

সালাতের নিষিদ্ধ সময়

রাসুল (স) তিন সময়ে সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন : 

১. ঠিক সূর্যোদয়ের সময় 

২. ঠিক দ্বিপ্রহরের সময় 

৩. সূর্যাস্তের সময়।

তবে যুক্তিসংগত কোনো কারণে ঐদিনের আসরের সালাত আদায় না করা হলে তা ঐ সময় আদায় করা যাবে।

পরিকল্পিত কাজ : শিক্ষার্থীরা পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সময়ের শুরু ও শেষসহ খাতায় একটি চার্ট তৈরি করবে।

আমরা প্রতিদিন নিয়মিত যে সালাত আদায় করি তা নিচের ছকে দেখানো হলো—

ওয়াক্তসুন্নত (মুয়াক্কাদাহ)ফরজসুন্নত (মুয়াক্কাদাহ)ওয়াজিব
ফজর২ রাকআত২ রাকআত  
যোহর৪ রাকআত৪ রাকআত২ রাকআত 
আসর ৪ রাকআত  
মাগরিব ৩ রাকআত২ রাকআত 
এশা ৪ রাকআত২ রাকআত৩ রাকআত (বিতর সালাত)

ছকে বর্ণিত নিয়মিত সালাত ছাড়াও আরও কিছু সুন্নত ও নফল সালাত আছে, যা আমরা পরে জানব।

পরিকল্পিত কাজ : কোন ওয়াক্তে কত রাকআত ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নত সালাত আছে শিক্ষার্থীরা তার একটি তালিকা তৈরি করবে।

Content added || updated By

সালাত আদায়ের নিয়ম

39
39

সব কাজেরই নিয়ম-পদ্ধতি আছে। নিয়মমতো কাজ করলে সুফল পাওয়া যায়। সালাত একটি বড় ইবাদত। সালাত আদায়েরও নিয়ম-পদ্ধতি আছে। মহানবি (স) নিজে সালাত আদায় করে সাহাবিগণকে হাতে-কলমে শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ’আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখেছ, তোমরাও সেভাবে সালাত আদায় করবে।'

মহানবি (স)-এর শেখানো নিয়মে সালাত আদায় করতে হবে।

সালাতের সময় হলে আমরা পাক-পবিত্র হয়ে, পাকসাফ কাপড় পরব। তারপর পবিত্র জায়গায় কিবলামুখী হয়ে দাঁড়াব। মনে করতে হবে আমি আল্লাহ পাকের সামনে দাঁড়িয়ে আছি, তিনি আমাকে দেখছেন। তিনি আমার অন্তরের খবরও রাখছেন।

সালাতের নিয়ত করে আল্লাহু আকবর বলব। একে বলে তাকবিরে তাহরিমা ।

তাকবিরের সঙ্গে সঙ্গে ছেলেরা দুই হাত কান বরাবর ওঠাবে। এরপর দুই হাত নাভির ওপর বাঁধবে। মেয়েরা দুই হাত কাঁধ পর্যন্ত ওঠাবে। মেয়েরা হাত বাঁধবে বুকের ওপর ।

হাত বাঁধার নিয়ম

বাম হাতের তালু নাভির ওপর রাখব। আর ডান হাতের তালু বাম হাতের পিঠের ওপর রেখে কনিষ্ঠ ও বৃদ্ধাঙ্গুল দ্বারা বাম হাতের কবজি ধরব। মাঝের ৩টি আঙুল বাম হাতের কবজির উপর বিছিয়ে রাখব। মেয়েরা শুধু বাম হাতের উপর ডান হাত রাখবে।

এরপর সানা পড়ব। সানা হলো:

বাংলা উচ্চারণ: সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা, ওয়া তাআলা জাদ্দুকা, ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।

অর্থ : 'হে আল্লাহ! আমি তোমারই পবিত্রতা বর্ণনা করছি এবং তোমার জন্যই সকল প্রশংসা। তোমার নাম বরকত ও কল্যাণময়। তোমার সম্মান অতি উচ্চে। তুমি ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই।’

এরপর আউযুবিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজিম পড়ে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম পড়ব। পরে সূরা ফাতিহা পাঠ করে অন্য কোনো সূরা বা তার অংশ পাঠ করব। তারপর আল্লাহু আকবর বলে রুকু করব। রুকুতে অন্তত তিনবার ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম ' পড়ব।

রুকু করার নিয়ম

রুকুতে দুই হাত দুই হাঁটুর উপর এমনভাবে রাখতে হবে যাতে মাথা, পিঠ ও কোমর এক বরাবর হয়। কনুই পাঁজর থেকে ফাঁক করে রাখতে হবে।

মেয়েরা বাম পায়ের টাখনু ডান পায়ের টাখনুর সাথে মিলিয়ে রাখবে। এরপর মাথা ঝুঁকিয়ে দুই হাতের আঙুলগুলো মেলানো অবস্থায় দুই হাঁটুর উপর রাখবে। কনুই পাঁজরের সাথে মিলিয়ে রাখবে এবং মাথা এতটুকু ঝুঁকাবে, যাতে হাঁটু পর্যন্ত পৌঁছে।

এরপর 'সামিআল্লাহ্ লিমান হামিদা' বলে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে। দাঁড়ানো অবস্থায় 'রাব্বানা লাকাল হামদ' বলতে হবে। এরপর 'আল্লাহ্ আকবর' বলে সিজদাহ্ করতে হবে। সিজদাহ্ করার নিয়ম-

প্রথমে দুই হাঁটু মাটিতে বা জায়নামাজে রাখতে হবে। তারপর দুই হাত মাটিতে রাখতে হবে। তারপর দুই হাতের মাঝখানে মাথা রেখে নাক ও কপাল মাটিতে রাখতে হবে। সিজদাহর সময় দুই হাতের আঙুলগুলো মিলিত অবস্থায় কিবলামুখী করে রাখতে হবে। দুই পায়ের আঙুলগুলো কিবলামুখী করে মাটিতে লাগিয়ে রাখতে হবে। উভয় পা মিলিত অবস্থায় খাড়া থাকবে ।

মেয়েরা পা খাড়া রাখবে না। উভয় পা ডান দিকে বের করে দেবে এবং মাটিতে বিছিয়ে রাখবে।

ছেলেরা সিজদাহর সময় মাথা হাঁটু হতে দূরে রাখবে। হাতের কবজির উপরের অংশ মাটিতে লাগাবে না। পায়ের নলা উরু হতে পৃথক রাখবে।

মেয়েরা সর্বাঙ্গ মিলিত অবস্থায় সিজদাহ করবে। মাথা যথাসম্ভব হাঁটুর কাছে রাখবে। ঊরু পায়ের নলার সাথে এবং হাতের বাজু গাজরের সাথে মিলিয়ে রাখবে। সিজদাহে অন্তত তিনবার 'সুবহানা রাব্বিয়াল আলা” কলতে হয়। এরপর আল্লাহ্ আকবর বলে সোজা হয়ে বসে দুই হাত হাঁটুর ওপর রাখবে। তারপর আল্লাহ্ আকবর বলে দ্বিতীয় সিজদাহ্ করবে এবং পূর্বের মতো তসবি পড়বে। এরপর 'আল্লাহু আকবর' বলে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে। এভাবে প্রথম রাকআত শেষ হবে। এরপর দ্বিতীয় রামাত শুরু হবে। দ্বিতীয় রাকআতেও প্রথম রাকআতের মতো যথারীতি সুরা ফাতিহা ও অন্য সুরা পড়ে রুকু, সিজদাহ্ করে সোজা হয়ে বসতে হবে। তাশাহহুদ, দরুদ ও দোয়া মাসুরা পড়ে ডানে ও বামে মুখ ফিরিয়ে আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ” বলতে হবে। এভাবে দুই রাকআত বিশিষ্ট সালাত শেষ হবে।

তিন বা চার রাকআত বিশিষ্ট সালাত হলে তাশাহহুদ অর্থাৎ আবদুহু ওয়া রাসুলুহ পর্যন্ত পড়ে ‘আল্লাহ আকবর' বলে দাঁড়াতে হবে। এরপর পূর্বের মতো তৃতীয় ও চতুর্থ রাকআত শেষ করতে হবে। ওয়াজিব ও সুন্নত সালাত হলে তৃতীয় ও চতুর্থ রাকআতে সুরা ফাতিহার সঙ্গে অন্য সূরা পড়তে হবে। কিন্তু ফরজ হলে অন্য সূরা মেলাতে হবে না। এভাবে যথারীতি তাশাহহুদ, দরূদ, দোয়া মাসুরা পড়ে প্রথমে ডানে এবং পরে বামে মুখ ফিরিয়ে সালামের মাধ্যমে সালাত শেষ করতে হবে।

 

Content added By

সালাতের আহকাম, আরকান

322
322

সালাত শুরু করার আগে এবং সালাতের ভেতরে কতকগুলো কাজ আছে। এগুলো অবশ্যই পালন করতে হয়। এগুলোর যে কোনো একটি ছুটে গেলে সালাত হয় না। এই কাজগুলোকে সালাতের ফরজ বলে। সালাতের ফরজ ১৪টি। সালাতের এই ফরজ কাজগুলো দুই ভাগে বিভক্ত। ১. আহকাম, ২. আরকান।

আহকাম

সালাত শুরু করার আগে যে ফরজ কাজগুলো আছে, সেগুলোকে সালাতের আহকাম বা শর্ত বলে। আহকাম ৭টি :

১. শরীর পাক : প্রয়োজনমতো ওযু, গোসল বা তায়াম্মুমের মাধ্যমে শরীর পাক- পবিত্র করা ৷ 

২. কাপড় পাক : পরিধানের কাপড় পাক হওয়া। 

৩. জায়গা পাক : সালাত আদায়ের স্থান পাক হওয়া। 

8. সতর ঢাকা : পুরুষের নাভি থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত এবং স্ত্রীলোকের মুখমণ্ডল, হাতের কবজি এবং পায়ের পাতা ছাড়া সমস্ত শরীর ঢাকা। 

৫. কিবলামুখী হওয়া : কাবার দিকে মুখ করে সালাত আদায় করা ৷ 

৬. ওয়াক্ত হওয়া : সালাতের নির্ধারিত সময় হওয়া । 

৭. নিয়ত করা : যে ওয়াক্তের সালাত আদায় করবে মনে মনে তার নিয়ত করা।

 

আরকান

সালাতের ভেতরে যে ফরজ কাজগুলো আছে সেগুলোকে সালাতের আরকান বলে। আরকান মোট ৭টি :

১. তাকবিরে তাহরিমা : আল্লাহু আকবর বলে সালাত শুরু করা। 

২. কেয়াম : দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করা। তবে দাঁড়াতে সক্ষম না হলে বসে বা শুয়ে যে কোনো অবস্থায় সালাত আদায় করতে হয়। 

৩. কেরাত : কুরআন মজিদের কিছু অংশ পাঠ করা। 

৪. রুকু করা। 

৫. সিজদাহ্ করা। 

৬. শেষ বৈঠকে বসা : যে বৈঠকে তাশাহুদ, দরুদ, দোয়া মাসুরা পড়ে সালামের মাধ্যমে সালাত শেষ করা হয়,তাকেই বলে শেষ বৈঠক। 

৭. সালামের মাধ্যমে সালাত শেষ করা হয়।

আমরা সালাতের ফরজ কাজগুলো খুব গুরুত্ব ও সতর্কতার সাথে পালন করব। কারণ ভুলেও কোনো ফরজ কাজ বাদ পড়লে সালাত হয় না। পুনরায় আদায় করতে হয়।

পরিকল্পিত কাজ : শিক্ষার্থীরা খাতায় সালাতের আহকাম-আরকানগুলোর একটি তালিকা প্রস্তুত করবে।

 

Content added By

সালাতের ওয়াজিব

20
20

ওয়াজিব মানে অবশ্য করণীয়। গুরুত্বের দিক দিয়ে ফরজের পরেই ওয়াজিবের স্থান। সালাতের মধ্যে কতগুলো ওয়াজিব কাজ আছে। এর যে কোনো একটিও ইচ্ছা করে বাদ দিলে সালাত আদায় হয় না। ভুলে বাদ পড়লে সাহু সিজদাহ্ দিতে হয়। সালাতের ওয়াজিব ১৪টি। যথা :

১. প্রত্যেক রাকআতে সূরা ফাতিহা পড়া।

২. সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা বা কুরআনের কিছু অংশ পড়া। 

৩. সালাতের ফরজ ও ওয়াজিবগুলো আদায় করার সময় ধারাবাহিকতা রক্ষা করা ৷ 

8. রুকু করার পর সোজা হয়ে দাঁড়ানো । 

৫. দুই সিজদার মাঝখানে সোজা হয়ে বসা। 

৬. তিন বা চার রাকআত বিশিষ্ট সালাতে দ্বিতীয় রাকআতের পর তাশাহহুদ পড়ার জন্য বসা। 

৭. সালাতের শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ পড়া। 

৮. মাগরিব, এশার ফরজের প্রথম দুই রাকআতে এবং ফজর ও জুমুআর ফরজ সালাতে এবং দুই ঈদের সালাতে ইমামের সরবে কুরআন পাঠ করা এবং অন্যান্য সালাতে নীরবে পাঠ করা। 

৯. বিতর সালাতে দোয়া কুনুত পড়া । 

১০. দুই ঈদের সালাতে অতিরিক্ত ছয় তাকবির বলা । 

১১. রুকু ও সিজদায় কমপক্ষে এক তসবি পরিমাণ অবস্থান । 

১২. সালাতে সিজদাহ্র আয়াত পাঠ করে তিলাওয়াতে সিজদাহ্ করা। কুরআন মজিদে এমন বিশেষ ১৪টি আয়াত আছে, যা পাঠ করলে বা শুনলে সিজদাহ্ করতে হবে।

১৩. আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাজুল্লাহ বলে সালাত শেষ করা। 

১৪. ভুলে কোনো ওয়াজিব কাজ বাদ পড়লে সাহু সিজদাহ্ দেওয়া।

 

সাহু সিজদাহ্

সাহু মানে ভুল। সিজদাহ সাহু মানে ভুল সংশোধনের সিজদাহ্ ।

আমরা আগেই জেনেছি, ইচ্ছা করে কোনো ওয়াজিব বাদ দিলে সালাত হয় না। কিন্তু ভুলে কোনো ওয়াজিব বাদ পড়লে তা সংশোধনের উপায় আছে। আর সে উপায় হলো সাহু সিজদাহ্ করা।

সাধু সিজদাহ্ আদার করার নিয়ম

সালাতের শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ পড়ার পর শুধু ডান দিকে সালাম ফেরাব। তারপর আল্লাহ্ আকবর বলে দুটি সিজদায় করব। সিজদাহু এর পরে তাশাহহ্রদ, দরুদ ও দোয়া মাসুরা পড়ব। তারপর ডানে-বামে সালাম ফিরিয়ে সালাত শেষ করব।

পরিকল্পিত কাজ : শিক্ষার্থীরা সালাতের ওয়াজিবগুলোর একটি তালিকা খাতায় তৈরি করবে।

Content added By

মসজিদের আদব

16
16

মসজিদ অর্থ সিজদাহ্ করার স্থান। সালাত আদায়ের জন্য নির্ধারিত ইবাদতখানাকে মসজিদ বলে। মসজিদে মুসলমানগণ প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত জামানাতের সাথে আদায় করেন। মসজিদে কেবলমাত্র আল্লাহর ইবাদত এবং ইবাদতের সাথে সংশ্লিষ্ট কাজ করা হয়। এ জন্যই মসজিদকে বায়তুল্লাহ বা আল্লাহর ঘর বলা হয়। নিজেদের বাড়িতে বা অন্য কোনো পবিত্র স্থানেও সালাত আদায় করা যায়। তবে মসজিদে জামাআতের সাথে সালাত আদায় করলে অনেক বেশি সওয়াৰ হয়।

দুনিয়ার মধ্যে আল্লাহ তায়ালার কাছে সবচেয়ে প্রিয় স্থান হলো মসজিদ। যারা পাঁচ ওয়াক সালাত মসজিদে জামাআতের সাথে আদায় করে, আল্লাহ তাদের খুব ভালোবাসেন।

পৃথিবীতে অসংখ্য মসজিদ আছে। বাংলাদেশে দুই লাখেরও বেশি মসজিদ আছে। ঢাকা শহরকে বলা হয় মসজিদের শহর। দুনিয়ার সকল মসজিদই আল্লাহর ঘর। সকল মসজিদই পবিত্র ও সম্মানিত। তবে তিনটি মসজিদের মর্যাদা বেশি। এগুলো হলো মসজিদে হারাম বা কাবা শরিফ। কাবা শরিফ মক্কায় অবস্থিত। মসজিদে নববি বা মদিনার মসজিদ এবং মসজিদে আকসা বা বায়তুল মুকাদ্দাস। মসজিদে আকসা জেরুজালেমে অবস্থিত। 

আমরা জানি মসজিদ হলো আল্লাহর ঘর। দুনিয়ার সবচেয়ে পবিত্র ও সম্মানিত স্থান। আল্লাহ তায়ালা আমাদের খালিক, মালিক। তিনি আমাদের জীবন-মৃত্যুরও মালিক। পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে বান্দার সাক্ষাৎ ঘটে। বান্দা তার মাবুদের দরবারে হাজিরা দেয়। আল্লাহর দরবারে অতি বিনয় ও বিনম্রভাবে হাজির হতে হবে। অত্যন্ত কাতরভাবে অন্তরের আকুতি জানাতে হবে। সুতরাং মসজিদের কতগুলো আদব মেনে চলতে হয়। যেমন :

১. পাক-পবিত্র শরীর ও পোশাক নিয়ে মসজিদে প্রবেশ করতে হয়।

২. পবিত্র মন ও বিনয়-বিনম্রতার সাথে মসজিদে প্রবেশ করা।

৩. মসজিদে প্রবেশের সময় এ দোয়া পড়া- 

বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাফ তাহলী আবওয়াবা রাহমাতিকা।

অর্থ : হে আল্লাহ, আমার জন্য তোমার রহমতের দরজাগুলো খুলে দাও।

8. মসজিদে প্রবেশের সময় হুড়োহুড়ি, ধাক্কা-ধাক্কি না করা। মসজিদে কোনো খালি জায়গা দেখে বসা। নিজে না গিয়ে অন্যকে সামনে যেতে বলা উচিত নয়। বেশি জায়গা জুড়ে না বসে, অন্যদের বসার জায়গা করে দেওয়া।

৫. লোকজনকে ডিঙিয়ে সামনের দিকে না যাওয়া। 

৬. মসজিদে কোনো অপ্রয়োজনীয় কথা না বলা । 

৭. নীরবতা পালন করা। উচ্চস্বরে কথা না বলা । 

৮. কুরআন তিলাওয়াত ও ধর্মীয় কথাবার্তা শোনা। 

৯. কোনো অবস্থাতেই হৈ চৈ, শোরগোল না করা।

১০. সালাতরত কোনো মুসল্লির সামনে দিয়ে যাতায়াত না করা। 

১১. মোবাইল খোলা রেখে বা অন্য কোনোভাবে মসজিদের শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করা 

১২. মসজিদে বিনয় ও একাগ্রতার সাথে ইবাদত করা। 

১৩. মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় এ দোয়া পড়া-

আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন ফাদলিকা।

অর্থ : হে আল্লাহ আমি তোমার অনুগ্রহ কামনা করছি।

মসজিদ প্রধানত সালাত আদায়ের জন্য তৈরি হলেও একে কেন্দ্র করে ইসলামি শিক্ষা দীক্ষা পরিচালনা করা যায়। সুন্দর সমাজ ও শিক্ষা-সংস্কৃতি সৃষ্টিতে মসজিদ পুরুত্বপূর্ণ- ভূমিকা রাখতে পারে। মক্তবেও গণশিক্ষা পরিচালিত হতে পারে।

পরিকল্পিত কাজ : শিক্ষার্থীরা মসজিদের আদবগুলোর একটি তালিকা খাতায় তৈরি করবে।

Content added By

সাওম

44
44

সাওম আরবি শব্দ। এর অর্থ বিরত থাকা, আত্মসংযম। একে বহুবচনে সিয়াম বলে। সাওমকে ফারসি ভাষায় রোযা বলা হয় ৷

আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সুবহে সাদিক থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ইত্যাদি থেকে বিরত থাকাকে সাওম বলে।

গুরুত্ব ও তাৎপর্য

ইসলামের প্রধান পাঁচটি রুকনের মধ্যে সাওম একটি। মৌলিক ইবাদতগুলোর মধ্যে ইমান ও সালাতের পরেই সাওমের স্থান। সাওম ধনী-দরিদ্র সকল মুসলমানের ওপর ফরজ ইবাদত। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- 'হে ইমানদারগণ! তোমাদের ওপর সিয়াম ফরজ করা হলো।' (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৩)। 

যেহেতু সাধ্যকে ফরজ করা হয়েছে, সুতরাং যে তা অস্বীকার করবে, সে কাফির হয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি বিনা ওজরে পালন করবে না সে গুনাহগার হবে ।

সাওম শুধু আমাদের জন্যই ফরজ নয়, আমাদের পূর্ববর্তী উম্মতদের ওপরও ফরজ ছিল। সাওম পালনের মূল উদ্দেশ্য হলো তাকওয়া অর্জন করা। তাকওয়া মানে আল্লাহকে ভয় করা, সব রকম পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা, সংযম অবলম্বন করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।' (সূরা বাকারা, আয়াত : ১৮৩) 

সাওমের মাধ্যমে তাকওয়া শুধু অর্জনই হয় না, এতে তাকওয়ার অনুশীলন ও প্রশিক্ষণ হয়ে থাকে। পাপাচার ও লোভ-লালসা থেকে বিরত থাকা সহজ কাজ নয়। এ জন্য দীর্ঘমেয়াদি বাস্তব প্রশিক্ষণ ও অনুশীলন প্রয়োজন। আর এই বাস্তব প্রশিক্ষণ ও অনুশীলন হয় দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার মাধ্যমে ।

এটি আত্মসংযম ও আত্মশুদ্ধির উৎকৃষ্ট উপায়। সাওম পালনকালে মুমিন ব্যক্তি কু-প্রবৃত্তি, কামনা-বাসনা ও লোভ-লালসা থেকে নিজেকে বিরত রাখে। সিয়াম পালনকারীর সামনে যত লোভনীয় খাবার আসুক, যতই ক্ষুধা-তৃষ্ণা লাগুক সূর্যাস্ত না হওয়া পর্যন্ত সে কিছুই খায় না। যেখানে দেখার মতো কেউ নেই সেখানেও এক বিন্দু পানি পান করে না ।

 

সাওম হলো আত্মরক্ষা ও আত্মশুদ্ধির ঢাল

সাওম পালনের সময় মিথ্যা, প্রতারণা, হিংসা-বিদ্বেষ, পরনিন্দা, পরচর্চা, ধূমপান ইত্যাদি ত্যাগ করতে হয়। সুতরাং এসব পাপকর্ম ও বদভ্যাস ত্যাগ করা সহজ হয়। এ জন্য সাওমকে আত্মরক্ষার ঢাল বলা হয়েছে। রাসুল (স) বলেছেন,

সাওম পালন উন্নত চরিত্র ও আদর্শ সমাজ গঠনে সহায়ক এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাওম পালনের সময় লোভ-লালসা, পাপাচার, মিথ্যাচার, ঝগড়া-বিবাদ, ত্যাগ করতে হয়। অশ্লীল কথা ও খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে হয়। এতে ব্যক্তি চরিত্র যেমন উন্নত হয়, তেমনি সুন্দর সমাজ গঠনেও সহায়ক হয় ।

সাওম পালনের মাধ্যমে মানুষ পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে ওঠে। পানাহার ত্যাগের মাধ্যমে ধনীরা দরিদ্রের অনাহারে-অর্ধাহারে জীবনযাপনের কষ্ট প্রত্যক্ষভাবে এবং বাস্তবে বুঝতে পারে। ক্ষুধার কী জ্বালা, তা তারা অনুভব করতে পারে। তাই তারা দরিদ্রের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে ওঠে। তাদের সাহায্য-সহযোগিতা ও দান-খয়রাত করে। রাসুল (স) রমযানকে ‘সহানুভূতির মাস' বলে আখ্যায়িত করেছেন।

সাওম পালনে অনেক ধৈর্যের প্রয়োজন হয়। তাই এ মাসকে ধৈর্যের মাস বলা হয়েছে। আর এই ধৈর্যের পুরস্কার হিসেবে হাদিস শরিফে জান্নাত দানের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

সাওমের মাসকে ফজিলতের দিক দিয়ে তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রথম অংশ রহমতের, দ্বিতীয় অংশ মাগফিরাতের এবং তৃতীয় অংশ নাজাতের। নাজাত মানে জাহান্নামের শাস্তি থেকে মুক্তি।

সাওম একমাত্র আল্লাহরই জন্য নিবেদিত। তাই এর পুরস্কার স্বয়ং আল্লাহ দেবেন। আল্লাহ্ বলেন, 'সাওম কেবল আমারই জন্য, আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব।' (বুখারি ও মুসলিম)

শুধু সাওম পালনেই ফজিলত নয়; সাওমের সম্মান করলে, সাওম পালনকারীর সম্মান ও সেবা করলেও অনেক সওয়াব পাওয়া যায়। কোনো সাওম পালনকারীকে ইফতার করালে তার সাওমের সমান সওয়াব পাওয়া যাবে। এতে সাওম পালনকারীর সওয়াবে কোনো ঘাটতি হবে না।

সাপ্তম পালনকারীর জন্য দুইটি খুশির ক্ষণ, একটি তার ইফতারের সময় এবং আর একটি আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের সময়। সাওম পালনকারী আল্লাহ তায়ালার কাছে উচ্চতর ব্যক্তিত্বের মর্যাদা লাভ করবে। সুতরাং সাওমের গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফজিলত অপরিসীম।

সাওমের নিয়ত

রমযানের শেষ রাতে সেহরি খাওয়ার পর এই বলে সাওমের নিয়ত করতে হয়- 'হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল রমযান মাসের ফরজ সাওম রাখার নিয়ত করলাম। তুমি দয়া করে আমার সাওম কবুল করো।'

ইফতারের সময় বলতে হয় : 

বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা লাকা সমূহ ওয়া আলা রিজকিকা আফতারতু।

অর্থ : 'হে আল্লাহ! তোমারই জন্য সাওম রেখেছি এবং তোমার দেওয়া রিজিক দ্বারা ইফতার করছি।”

 

তারাবির সালাত

রমযানে এশার সালাত আদারের পর তারাবির সালাত আদায় করতে হয়। তারাবির সালাত বিশ রাকআত। এ সালাত আদায় করা সুন্নত। রাসূল (স) বলেছেন, 'যে ব্যক্তি রমযান মাসে তারাবির সালাত আদায় করে, তার অতীতের গুনাহ মাফ হয়ে যায়।'

আমরা যথাযথভাবে রমযানের সাওম পালন করব। নিয়মিত তারাবি আদায় করব।

সাওম ভঙ্গ হয়, নষ্ট হয় এমন কোনো কাজ করব না। মিথ্যা কথা বলব না। পরনিন্দা ও পাপাচারে লিপ্ত হব না ।

Content added By

যাকাত

17
17

'যাকাত' শব্দের অর্থ পরিচ্ছন্নতা, পবিত্রতা ও বৃদ্ধি। মুসলমানদের নিসাব পরিমাণ ধন-সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ বছর পূর্তিতে আল্লাহ তায়ালার নির্ধারিত খাতসমূহে ব্যয় করাকে যাকাত বলে।

গুরুত্ব ও তাৎপর্য

ইসলামের পাঁচটি রুকনের মধ্যে সালাতের পরেই যাকাতের গুরুত্ব বেশি। কুরআন মজিদের বহু স্থানে আল্লাহ তায়ালা সালাতের সাথে যাকাতের কথাই উল্লেখ করে বলেছেন,

অর্থ :  “তোমরা সালাত কায়েম করো এবং যাকাত দাও।' (সূরা মুয্যাম্মিল, আয়াত: ২০)

যাকাত হচ্ছে আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত ধনীদের সম্পদে গরিব ও নিঃস্বদের অধিকার। যাকাত দেওয়া দরিদ্রদের প্রতি ধনীদের কোনো অনুগ্রহ বা অনুকম্পা নয়, বরং তার সম্পদকে পবিত্র করার এবং তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করার একটি অবশ্য করণীয় ব্যবস্থা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আর তাদের (ধনীদের) সম্পদে অবশ্যই দরিদ্র ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে।' (আল-যারিয়াত, আয়াত : ১৯)

আমরা জেনেছি, যাকাভের একটি অর্থ পবিত্রতা। যাকাত দিলে দাতার অন্তর কৃপণতার কলুবতা থেকে পবিত্র হয়। তার আমলনামা গুনাহ থেকে পবিত্র হয়। ধনীদের সম্পদে গরিবদের অধিকার আছে, একটি নির্দিষ্ট অংশ মিশে আছে। পরিবদের অংশ দিয়ে দিলে অবশিষ্ট সম্পদ মালিকের জন্য পবিত্র হয়ে যায়। যাকাত না দিলে তা ময়লাযুক্ত থাকে। যাকাত দিলে তা ময়লাযুক্ত হয়ে যায়।

যাকাতের আর এক অর্থ বৃদ্ধি। যাকাত দিলে যাকাত দাতার সওয়াব বৃদ্ধি হয়। সামান্য যাকাতের বিনিময়ে পরকালে প্রচুর পুরস্কার লাভ করবেন। শুধু তাই নয়, দুনিয়াতেও আল্লাহ তায়ালা তার সম্পদে রহমত ও বরকত দান করবেন। তার অর্জিত সম্পদ বৃদ্ধি পাবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'আর তোমরা যে সুদের কারবার করে থাক মানুষের সম্পদের সঙ্গে মিলে সম্পদ বৃদ্ধি পাওয়ার উদ্দেশ্যে, আল্লাহর কাছে তা মোটেই বৃদ্ধি পায় না। কিন্তু তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে যে যাকাত দিয়ে থাক, তাই কেবল বৃদ্ধি পায় এরাই সম্পদশালী।' (সুরা রুম, আয়াত : ৩৯)

যাকাত দিলে ধনী-গরিবের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি হয়, ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। মহানবি (স) বলেছেন,

অর্থ : যাকাত ইসলামের (ধনী-গরিবের মধ্যে) সেতুবন্ধ। (মুসলিম)।

যাকাত দিলে ধনী-গরিবের ব্যবধান কমে যায়। আল্লাহ তায়ালা আমাদের খানিক ও মালিক। সকল ধনসম্পদের মালিকও তিনি। সম্পদের মালিকানা আল্লাহর এ কথার বাস্তব প্রমাণ ঘটে যাকাতে। সম্পদের প্রকৃত মালিক মহান আল্লাহ বিধায় সম্পদ তাঁর বিধান অনুযায়ী গরিবদের মধ্যে বিতরণ করতে হবে। যাকাত না দিলে আল্লাহর মালিকানা অস্বীকার করা হয়। যারা সম্পদ পুঞ্জীভূত করে রাখে, যাকাত দেয় না, তাদের পরকালে কঠিন আজাব ভোগ করতে হবে।

 

যাকাতের নিসাব

নিসাব মানে নির্ধারিত পরিমাণ বা মাত্রা। যে পরিমাণ সম্পদ থাকলে যাকাত ফরজ হয়, তাকে নিসাব বলে। অর্থাৎ দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় ব্যয় বাদে নিসাব পরিমাণ মালের অধিকারী হলে বছর পূর্তিতে একটি নির্দিষ্ট অংশ আল্লাহর নির্ধারিত খাতে যাকাত দিতে হয়। নিম্নোক্ত সম্পদ নিসাব পরিমাণ থাকলে যাকাত দিতে হয়।

১. সোনা, রূপা (নগদ অর্থ ও গহনাপত্রসহ), ২. গবাদি পশু, ৩. জমিতে উৎপন্ন ফসল, ৪. ব্যবসা-বাণিজ্যের পণ্য, ৫. অর্জিত সম্পদ ইত্যাদি।

সোনা সাড়ে সাত ভরি বা সাড়ে সাত তোলা (৮৭.২৫ গ্রাম) অথবা রূপা সাড়ে বায়ান্ন তোলা (৬১২.২৫ গ্রাম) বা এর তৈরি গহনা থাকলে যাকাত দিতে হয়। এর কোনো একটি অথবা উভয়টির মূল্য পরিমাণ অন্য কোনো সম্পদ থাকলেও যাকাত দিতে হবে।

নিসাব পরিমাণ সম্পদের চল্লিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত দিতে হয়। প্রতি একশত টাকার যাকাত হয় আড়াই টাকা। উৎপাদিত ফসল, দ্রব্যাদি, পশু ইত্যাদির যাকাতের হিসাব কষে জানতে পারব।

 

যাকাতের মাসারিফ বা খাত

‘মাসারিফ' অর্থ ব্যয়ের খাতসমূহ। যাদের যাকাত দেওয়া যায় তাদেরকে বলে যাকাতের মাসারিফ। সবাইকে যাকাত দেওয়া যায় না। কেবলমাত্র আট শ্রেণির লোককে যাকাত দেওয়া যায়। তারা হলো :

১. ফকির বা অভাবগ্রস্ত,      ২. মিসকিন বা সম্বলহীন,    ৩. যাকাতের জন্য নিয়োজিত কর্মচারীবৃন্দ,    ৪. ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হতে পারে এমন ব্যক্তি     ৫. দাসমুক্তি,     ৬. ঋণগ্রস্ত,     ৭. আল্লাহর পথে সংগ্রামকারী ও     ৮. অসহায় পথিকদের জন্য। যাকাতের এ খাতগুলো আল্লাহর নির্ধারিত।

যাকাত দিলে মাল পবিত্র হয়। সম্পদ ও সওয়াব বৃদ্ধি পায়। ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য দূর হয়। মুসলিমদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের সেতুবন্ধ সৃষ্টি হয়। সমাজ থেকে অভাবজনিত অসামাজিক কার্যকলাপ ও অপরাধ দূর হয়। সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা স্থাপিত হয়। আল্লাহ তায়ালা খুশি হন।

যাকাত না দিলে ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান বৃদ্ধি পায়। বৈরিতা সৃষ্টি হয়। সমাজে অশান্তি সৃষ্টি হয়। আখিরাতে রয়েছে কঠিন আজাব। আমরা হিসাব করে নিয়মিত যাকাত দেওয়ার জন্য পিতা মাতাকে বলব। আল্লাহর পথে অকাতরে ব্যয় করব। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে সচেষ্ট হব ।

পরিকল্পিত কাজ : শিক্ষার্থীরা যাকাতের মাসারিফ অর্থাৎ যাদের যাকাত দেওয়া যায়, খাতায় তাদের একটি তালিকা তৈরি করবে।

Content added By

হজ

14
14

হজ শব্দের অর্থ— ইচ্ছা করা, সংকল্প করা, কোনো পবিত্র স্থান দর্শনের সংকল্প করা। আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময়ে, বিশেষ অবস্থায়, নির্দিষ্ট স্থানে, নির্ধারিত নিয়মে, নির্দিষ্ট কতগুলো অনুষ্ঠান পালন করাকে হজ বলে। নির্দিষ্ট সময় বলতে ৮ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত সময়কে বোঝায়। বিশেষ অবস্থা বলতে ইহরামের অবস্থাকে বোঝায়। নির্দিষ্ট স্থান বলতে কাবা শরিফ (সাফা-মারওয়াসহ) এবং তার আশপাশের আরাফাত, মিনা, মুজদালিফা প্রভৃতি স্থানকে বোঝায়। নির্দিষ্ট অনুষ্ঠান বলতে ইহরাম, তওয়াফ, সাঈ, ওকুফ (অবস্থান), কুরবানি প্রভৃতি হজের নির্ধারিত অনুষ্ঠানগুলোকে বোঝায়।

 

গুরুত্ব ও তাৎপর্য

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি হলো হজ। হজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদত। প্রত্যেক সুস্থ, প্রাপ্তবয়স্ক, বুদ্ধিমান ও সামর্থ্যবান মুসলিম নর-নারীর ওপর জীবনে একবার হজ করা ফরজ। এরপর যতবার হজ করবে, তা হবে নফল। নফল হজেও অনেক সওয়াব। 

হজ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

অর্থ : ‘আল্লাহর উদ্দেশ্যে বায়তুল্লাহ শরিফের হজ পালন করা মানুষের ওপর অবশ্য কর্তব্য; যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে।' (সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ৯৭)

যে সব লোক বায়তুল্লাহ্ পর্যন্ত যাতায়াতের দৈহিক ক্ষমতা রাখে এবং হজ থেকে ফিরে আসা পর্যন্ত পরিবারের আবশ্যকীয় ব্যয় বাদে যাতায়াতের খরচ বহন করতে সক্ষম তাদের ওপর হজ ফরজ। মহিলা হাজি হলে একজন পুরুষ সফরসঙ্গী থাকতে হবে এবং সফরসঙ্গীর ব্যয় নির্বাহে সক্ষম হতে হবে। মহিলা হাজির সফরসঙ্গী হবেন স্বামী অথবা এমন আত্মীয়, যার সাথে বিবাহ সম্পর্ক হারাম। যেমন-পিতা, ছেলে, ভাই, চাচা, মামা ইত্যাদি ।

কাবা আল্লাহর ঘর। পৃথিবীর প্রাচীনতম ইবাদতখানা। এটিই আমাদের কেবলা, বিশ্ব মুসলিমদের কেবলা এবং মিলনকেন্দ্র । সুতরাং হজ হচ্ছে বিশ্ব মুসলিমের মহাসম্মেলন। বিশ্ব মুসলিম যে এক, অখণ্ড উম্মত, হজ তার জ্বলন্ত প্রমাণ। গায়ের রং, মুখের ভাষা, আর জীবন পদ্ধতিতে যত পার্থক্যই থাকুক না কেন, এই সম্মেলনে তারা একাকার হয়ে যায়, তাদের সব পার্থক্য দূর হয়ে যায়। সকলের পরনে ইহরামের সাদা কাপড়। সকলের ধর্ম এক, উদ্দেশ্য এক, অন্তরে এক আল্লাহর ধ্যান, সকলেই আল্লাহর বান্দা। সকলেই ভাই ভাই। এ সবই মুসলিমদের বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্ব ও সাম্যের এক অপূর্ব পুলক শিহরণ জাগায়। তাদের মধ্যে ভালোবাসা গড়ে ওঠে। সবার কণ্ঠে একই আওয়াজ “লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক' । ‘হাজির হে আল্লাহ্ আমরা তোমার দরবারে হাজির।’ হজ প্রত্যেক হাজিকে মুসলিম বিশ্বের লাখো মুসলিমদের সাথে পরিচয়ের বিরাট সুযোগ করে দেয়। একটি সফরে বহু সফরের সুফল পাওয়া যায়। ইসলামের ঐক্য, সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ও প্রাণচাঞ্চল্য বজায় রাখার ব্যাপারে হজের তাৎপর্য অপরিসীম। হজ মানুষের অতীত জীবনের গুনাগুলো ধুয়ে-মুছে সাফ করে দেয়, মাফ করে দেয়। রাসুল (স) বলেছেন, “পানি যেমন ময়লা ধুয়ে পরিষ্কার করে দেয়, হজও তেমনি গুনাগুলোকে ধুয়ে পরিষ্কার করে দেয়।' (বুখারি)

রাসুল (স) আরও বলেছেন, 'যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ করল, তারপর কোনো অশ্লীল কাজ করল না, পাপ কাজ করল না, সে নবজাত শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে ফিরল। ' (বুখারি ও মুসলিম)।

হজের প্রধান কাজগুলো হলো ইহরাম বাঁধা, কাবাঘর তওয়াফ করা। সাফা-মারওয়ার মাঝে সাই করা। আরাফাত ময়দানে ওকুফ বা অবস্থান করা। মুজদালিফায় রাত্রি যাপন করা। মিনায় কুরবানি করা ইত্যাদি।

 

হজের ফরজ

হজের ফরজ তিনটি : ১. ইহরাম বাঁধা, ২. আরাফাতে অবস্থান এবং ৩. তওয়াফে যিয়ারত । কোনো ফরজ বাদ পড়লে হজ হয় না ৷

১. হজের প্রথম ফরজ হলো ইহরাম বাঁধা। হজ ও উমরার নিয়তে পবিত্রতা অর্জনের পরে সেলাইবিহীন কাপড় পরিধান করাকে ইহরাম বলে। মৃতপ্রায় ফকিরের বেশে আল্লাহর দরবারে হাজির হতে হয়। এ সময় রঙিন কাপড় পরা যাবে না। সুগন্ধি ব্যবহার করা যাবে না। চুল, নখ কাটা যাবে না। কোনো স্থলপ্রাণী শিকার করা যাবে না। এমনকি মশা, মাছি, উকুন ইত্যাদিও মারা যাবে না। সব ধরনের ঝগড়া, বিবাদ ও পাপকর্ম থেকে বিরত থাকতে হবে। ইহরামের সাথে সাথে “লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক, লা-শারিকা লাকা লাব্বায়েক, ইন্নাল হামদা ওয়াননি মাতা লাকাওয়াল মুল্ক লা শারিকা লাকা” দোয়াটি বারবার পড়তে হবে। একে বলে তালবিয়াহ ।

২. ওকুফ বা অবস্থান। হজ্জের দ্বিতীয় ফরজ হলো ৯ই জিলহজ তারিখে আরাফাত ময়দানে অবস্থান করা।

৩. তওয়াফে যিয়ারত। হজের তৃতীয় ফরজ হলো তওয়াফে যিয়ারত করা। কুরবানির দিনগুলোতে অর্থাৎ জিলহজ মাসের ১০-১২ তারিখের মধ্যে কাবাঘরে তওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করাকে তওয়াফে যিয়ারত বলে। এই তিন দিনের যেকোনো দিন এই তওয়াফ করা যায়। তবে প্রথম দিনে তওয়াফ করা উত্তম। এই তিন দিনের পরে তওয়াফ করলে দণ্ডস্বরূপ (দম) একটি কুরবানি করতে হবে।

Content added By

কুরবানি

13
13

কুরবানি শব্দের অর্থ নৈকট্য, ত্যাগ, উৎসর্গ। আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে ত্যাগ ও উৎসর্গ করা।

আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ত্যাগের মনোভাব নিয়ে ১০ জিলহজ হতে ১২ জিলহজ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে গৃহপালিত হালাল পশু আল্লাহর নামে উৎসর্গ করাকে কুরবানি বলে। কুরবানি করতে হয় উট, মহিষ, গরু, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা ইত্যাদি গৃহপালিত হালান, সুস্থ ও সবল পশু দ্বারা।

নিসাব পরিমাণ মালের মাণিক সকল প্রাপ্তবয়স্ক নর-নারীর ওপর কুরবানি করা ওয়াজিব।

কুরবানি আল্লাহর নবি হযরত ইবরাহীম (আ) ও হযরত ইসমাঈল (আ)-এর অতুলনীয় নিষ্ঠা ও অপূর্ব ত্যাগের পুণ্যময় স্মৃতি বহন করে। কুরবানি দ্বারা মুসলিম মিল্লাত ঘোষণা করে যে, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তারা জানমাল সবকিছু কুরবানি করতে প্রস্তুত । কুরবানির নজিরবিহীন ত্যাগের ইতিহাস স্মরণ করে মুসলমানগণ আল্লাহর দরবারে শপথ করেন যে, হে আল্লাহ! আমাদের জান-মাল, জীবন-মৃত্যু তোমারই জন্য উৎসর্গ করছি। তোমার সন্তুষ্টির জন্য আমরা যেভাবে পশু কুরবানি করছি, তেমনিভাবে আমাদের জীবন উৎসর্গ করতেও কুণ্ঠিত হব না।

কুরবানি করতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ত্যাগের মনোভাব নিয়ে। অহংকার বা পর্বের মনোভাব নিয়ে নয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'আল্লাহর নিকট সেগুলোর (কুরবানির পশুর) গোশত এবং রক্ত কিছুই পৌঁছায় না, পৌঁছায় শুধু তোমাদের তাকওয়া।' (সূরা হজ্জ, আয়াত: ৩৭)

মানুষের মধ্যে যেমন মনুষ্যত্ব আছে, তেমনি পশুত্বও আছে। কুরবানির অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে কুরবানির মাধ্যমে পশুত্বকে হত্যা করে মনুষ্যত্বকে জাগিয়ে তোলা ৷

১. আমরা আগেই জেনেছি যে, নিসাব পরিমাণ মালের মালিক মুসলিম নর- -নারীর ওপর কুরবানি ওয়াজিব। তবে নাবালেগের ওপর কুরবানি ওয়াজিব নয়, দিলে সওয়াব হয়।

২. জিলহজ মাসের ১০, ১১ এবং ১২ তারিখ পর্যন্ত কুরবানির সময়। তবে ঈদুল আযহার সালাতের পরে কুরবানি করতে হয়।

৩. ছাগল, ভেড়া, দুম্বা, গরু, মহিষ, উট ইত্যাদি গৃহপালিত হালাল, সুস্থ ও সবল পশু দ্বারা কুরবানি করতে হয়। পশুটি নির্দোষ ও নিখুঁত হওয়া বাঞ্ছনীয়।

৪. ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা জনপ্রতি একটি করে কুরবানি করতে হয়। গরু, মহিষ ও উট সাতজন পর্যন্ত শরিক হয়ে কুরবানি করা যায়। তবে সবার উদ্দেশ্যই আল্লাহর নৈকট্য লাভ হতে হবে। 

৫. ছাগল, ভেড়া ও দুম্বার বয়স কমপক্ষে এক বছর; গরু, মহিষ দুই বছর এবং উট কমপক্ষে পাঁচ বছর বয়সের হতে হবে। 

৬. কুরবানির গোশত সাধারণত তিন ভাগ করে এক ভাগ গরিব-মিসকিন, এক ভাগ আত্মীয় স্বজন এবং এক ভাগ নিজে রাখতে হয়। 

৭. কুরবানির গোশত বা চামড়া মজুরির বিনিময়ে দেওয়া যায় না। কুরবানির পশুর রক্ত ও বর্জ্য মাটিতে পুঁতে রাখতে হয়।

 

কুরবানি প্রচলনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

আল্লাহর আদেশে একদিন হযরত ইবরাহীম (আ) তাঁর স্ত্রী হাজেরা এবং তাঁদের বৃদ্ধ বয়সের একমাত্র শিশুপুত্র ইসমাঈল (আ)-কে মক্কায় তখনকার দিনে লুপ্ত কাবার নিকটবর্তী জনমানব শূন্য মরুভূমিতে রেখে চলে যান। আল্লাহ তায়ালার অপার করুণায় তাঁরা নিরাপদে থাকেন।

ইসমাঈল (আ) যখন কিশোর বয়সে উপনীত, তখন ইবরাহীম (আ) তাঁদের দেখতে এলেন। এবার তিনি এক কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হলেন। তিনি স্বপ্নে দেখলেন, আল্লাহ তাঁকে আদেশ করছেন প্রিয় পুত্র ইসমাঈল (আ)-কে কুরবানি করতে। একই স্বপ্ন দেখলেন বারবার। তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পুত্রকে কুরবানি করতে মনস্থির করলেন। তিনি তাঁর স্বপ্নের কথা ইসমাঈল (আ)-কে জানিয়ে বললেন, “হে বৎস! আমি স্বপ্নে দেখলাম আমি তোমাকে জবাই করছি। এখন তোমার অভিমত কী বলো।' উত্তরে ইসমাঈল (আ) বললেন, “হে আমার আব্বা, আপনি তাই করুন যা আপনাকে আদেশ করা হয়েছে। ইনশাআল্লাহ আমাকে ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন।' (সূরা আস-সাফফাত, আয়াত: ১০২)

পথে পিতা-পুত্রকে শয়তান ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তাঁরা শয়তানকে পাথর মেরে তাড়িয়ে দিলেন ।

ইবরাহীম (আ) আল্লাহর প্রতি তাঁর পুত্রের এমন আনুগত্য, নিষ্ঠা ও সাহসিকতাপূর্ণ উত্তরে খুশি হলেন। তিনি প্রাণপ্রিয় পুত্রকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কুরবানি করতে তাঁর গলায় ছুরি চালালেন। পুত্র ইসমাঈলও আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য ধারাল ছুরির নিচে মাথা পেতে দিলেন। এবারের কঠিন পরীক্ষায়ও পিতা-পুত্র উত্তীর্ণ হলেন। আল্লাহ তায়ালা কুরবানি কবুল করলেন এবং ইসমাঈলকে রক্ষা করলেন। তাঁর পরিবর্তে একটি দুম্বা কুরবানি হয়ে গেল।

আল্লাহ তায়ালার প্রতি হযরত ইবরাহীম (আ) ও তাঁর পুত্র ইসমাঈল (আ)-এর অপরিসীম আনুগত্য ও অপূর্ব ত্যাগের ঘটনাকে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য এবং মুসলিমদের ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত করার জন্য তখন থেকে কুরবানির প্রচলন রয়েছে। এটি চিরকালের জন্য মানবসমাজে একটি পবিত্র ধর্মানুষ্ঠানরূপে প্রতিষ্ঠিত।

 

কুরবানির শিক্ষা

১. মুসলিমদের ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত করাই কুরবানির উদ্দেশ্য। 

২. আমাদের জান-মাল, জীবন-ম -মৃত্যু আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করা। 

৩. কুরবানি দ্বারা আল্লাহ তায়ালা মানুষের তাকওয়া যাচাই করেন। আল্লাহর কাছে কুরবানির পশুর রক্ত, মাংস কিছুই পৌঁছায় না, পৌঁছায় শুধু অন্তরের তাকওয়া ও নিষ্ঠা । 

৪. মানুষের মধ্যে যেমন মনুষ্যত্ব আছে, তেমনি পশুত্বও আছে। কুরবানির মাধ্যমে পশুত্বকে হত্যা করে মনুষ্যত্বকে জাগিয়ে তোলা হয়। মানুষের লোভ-লালসা, হিংসা- বিদ্বেষ, অহংকার ইত্যাদি পাশবিক চরিত্র বিসর্জন দিয়ে মানবীয় গুণাবলি উজ্জীবিত করতে পারলেই কুরবানি স্বার্থক হয়।

৫. কুরবানির একটি অংশ পরিব-মিসকিনকে দিতে হয়, এতে তাদের একটু ভালো খাওয়ার সুযোগ হয়। আত্মীয়াজনকে দিতে হয়, এতে পরস্পরের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি হয়। সকলের মধ্যে আন্তরিকতা বৃদ্ধি পায়।

Content added By

আকিকা

11
11

'আকিকা' শব্দের অর্থ ভাঙা, কেটে ফেলা। সন্তান জন্মের সপ্তম দিনে সন্তানের কল্যাণ ও হিফাজত কামনার আল্লাহর ওয়াস্তে কুরবানির মতো কোনো গৃহপালিত হালাল পশু জবাই করাকে আকিকা বলে।

আকিকা করতে হয় আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে। আকিকা করা সুন্নত। এতে সন্তান যেমন আল্লাহর রহমতে বালা-মুসিবত ও বিপদ-আপদ থেকে নিরাপদ থাকে, তেমনি অনেক সওয়াব পাওয়া যায়। সন্তানের আকিকা করতে অবহেলা করা উচিত নয়। হাদিস শরিফে আছে— 'প্রতিটি নবজাত সন্তান আকিকার সাথে বন্দি। তার জন্যের সপ্তম দিনে তার পক্ষ থেকে পশু জবাই করতে হবে, তার নাম রাখতে হবে এবং তার মাথা মুণ্ডন করতে হবে।' (তিরমিজি)

রাসুল (স) নিজের আকিকা নিজেই করেছিলেন। তিনি অন্যকেও আকিকা করতে উৎসাহ দিতেন। সন্তান জনোর ৭ম দিনে আকিকা করা উত্তম। তবে ১৪, ২১ বা ২৮তম দিনেও আকিকা করা যায়।

মুসলিম পিতা-মাতাকে সন্তান জন্মের সপ্তম দিনে চারটি কাজ করতে হয়- 

১. সন্তানের সুন্দর ইসলামি নাম রাখা। নাম শুনলেই যেন বোঝা যায় যে, সে মুসলিম সন্তান। 

২. মাথা কামানো। 

৩. মাথার চুলের ওজন পরিমাণ সোনা বা রুপা দান করা। 

৪. আকিকা করা।

 

আদায়ের নিয়ম

ছেলে সন্তানের জন্য ছাগল, ভেড়া, দুম্বার দুটি অথবা গরু, মহিষ বা উটের দুই ভাগ এবং মেয়ে সন্তানের জন্য ছাগল, ভেড়া, দুম্বার একটি অথবা গরু, মহিষ বা উটের এক অংশ আকিকা দিলে যথেষ্ট হবে। হাদিসে আছে :

“ছেলে সন্তানের জন্য দুটি ছাঞ্চল ও মেয়ে সন্তানের জন্য একটি ছাগল জবেহ করাই যথেষ্ট।” (আবু দাউদ ও নাসায়ি)

সামর্থ্য না থাকলে ছেলে সন্তানের জন্যও একটি দেওয়া যাবে। যে সকল পশু দ্বারা কুরবানি করা যায়, সে সকল পশু দ্বারা আকিকা করা যায়। কুরবানির সাথে আকিকারও অংশীদার হওয়া যায়। কুরবানির পশুর গোশত যেভাবে বণ্টন করা উত্তম, আকিকার গোশতগু সেভাবে বণ্টন করা উত্তম। আকিকার পশুর চামড়াও গরিব মিসকিনদের দান করতে হয়।

Content added By

ব্যবহারিক দোয়া

15
15

পরম করুণাময় আল্লাহ আমাদের খালিক ও মালিক। তিনি আমাদের মাবুদ। আল্লাহর নাম নিয়ে তাঁর সন্তুষ্টির জন্য রাসুল (স)-এর দেখানো পথে যে কোনো বৈধ কাজই আল্লাহর ইবাদত। আল্লাহর রহমত ছাড়া কোনো কাজে সফলতা আসে না। আমরা সব সময় আল্লাহর রহমত চাইব, তাঁর কাছে সাহায্য চাইব। তাঁরই নাম নিয়ে ভালো কাজ শুরু করব। রাসুল (স) কোনো কাজ শুরু করার আগে দোয়া পড়তেন। আমরা কাজ শুরু করার আগে দোয়া পড়ে নেব। এগুলোকে বলা হয় ব্যবহারিক দোয়া । এগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন কাজের আগে পড়তে হয় ।

১. কোনো ভালো কাজ শুরু করার আগে বলব-

অর্থ : “দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে।”

২. খাওয়ার পরে আল্লাহর শোকর করে কলব -

অর্থ : “সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

৩. পরস্পর সাক্ষাৎ হলে কার -

অর্থ : আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক।

8. সালামের জবাবে বলব-

অর্থ : আপনার ওপরও শাস্তি ও রহমত বর্ষিত হোক।

৫. হাঁচি দিয়ে বলতে হয়-

অর্থ : সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

৬. যে শুনবে সে বলবে-

অর্থ : আল্লাহ আপনাকে রহমত করুন।

৭. ঘুমানোর আগে পড়তে হয়-

বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ও আহইয়া ।

অর্থ : হে আল্লাহ, তোমার নাম নিয়ে ঘুমাই, আর তোমার নাম নিয়েই জেগে উঠি ।

৮. ঘুম থেকে জেগে এ দোয়া পড়তে হয়-

বাংলা উচ্চারণ : আলহামদু লিল্লাহিল্লাবী আহুইয়ানা বা'দা মা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন নুপুর।

অর্থ : সকল প্রশংসা সেই আল্লাহর, যিনি আমাদের ঘুমের পর জাগালেন, তাঁর কাছেই আমরা পুনরায় ফিরে যাব।

৯. কোনো কবর দেখলে এই দোয়া পড়বে-

অর্থ : হে কবরবাসীগণ! তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক।

১০. মসজিদে প্রবেশের সময় এই দোয়া পড়তে হয়-

অর্থ : হে আল্লাহ! আমার জন্য তোমার রহমতের দরজাগুলো খুলে দাও।

১১. মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় পড়তে হয়-

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার অনুগ্রহ কামনা করছি।

আমরা ব্যবহারিক দোয়াগুলো ঠিকমতো শিখব এবং নিয়মিত পড়ব। এতে আল্লাহ তায়ালা খুশি হবেন। আমাদের কাজে বরকত ও সওয়াব হবে। বড় হয়ে আরও দোয়া শিখব।

পরিকল্পিত কাজ : শিক্ষার্থীরা মসজিদে প্রবেশের ও বের হওয়ার দোয়া খাতায় আরবি ও বাংলায় লিখবে।

Content added By

পরিচ্ছন্নতা

15
15

শরীর, পোশাক ও স্থান বা পরিবেশের পরিষ্কার, পরিপাটি, নির্মল ও ময়লামুক্ত অবস্থাকে বলে পরিচ্ছন্নতা। আর বিশেষ পদ্ধতিতে দেহ, মন, পোশাক ও পরিবেশের পরিচ্ছন্নতাকে বলে তাহারাত বা পবিত্রতা। পরিচ্ছন্নতা এবং পবিত্রতাকে আলাদা করা যায় না।

পরিচ্ছন্নতা বা পবিত্রতা ইমানের অঙ্গ। আল্লাহ তায়ালা চিরপবিত্র। যারা পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন ও পাকসাফ থাকে তাদেরকে আল্লাহ ভালোবাসেন। আমাদের প্রিয় নবি (স) সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতেন। তিনি সবাইকে পাকসাফ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে নির্দেশ দিতেন।

যারা অপরিচ্ছন্ন থাকে, নোংরা থাকে তাদের শরীর থেকে দুর্গন্ধ বের হয়। তাদের কেউ ভালোবাসে না, তাদের নানা রকম অসুখ-বিসুখ হয় ।

মুখ আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। আমরা মুখ দিয়ে খাবার খাই। কথা বলি। মুখ পরিষ্কার না থাকলে মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হয়। মানুষ তাকে ঘৃণা করে। লোক সমাজে লজ্জা পেতে হয়। মানুষেরও কষ্ট হয়। মহানবি (স) দুর্গন্ধযুক্ত কোনো কিছু খেয়ে মসজিদে যেতে নিষেধ করেছেন।

আমরা দাঁত দিয়ে চিবিয়ে খাবার খাই। এতে দাঁতের ফাঁকে খাদ্যকণা লেগে থাকে। প্রতিবার খাওয়ার পরে,বিশেষ করে ঘুমানোর আগে দাঁত না মাজলে দাঁতের ফাঁকে লেগে থাকা খাদ্যকণা পঁচে মুখে দুর্গন্ধ হয়। দাঁতের নানা রকম রোগ হয়। দাঁত পরিষ্কার রাখার জন্য ওযু করার আগে মিসওয়াক করতে হয়, দাঁত মাজতে হয়। রাসুল (স) বলেছেন- “আমার উম্মাতের কষ্ট না হলে, প্রত্যেক ওযুর আগে মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম'।

আমরা হাত দিয়ে নানা রকম কাজ করি। এতে হাত ময়লা হয়, নোংরা হয়। অনেক সময় হাতের নখ বড় হয়। বড় নখে অনেক ময়লা আটকে থাকে। আমরা হাত দিয়ে খাবার খাই। নোংরা হাতে খাবার খেলে খাবারের সাথে ময়লা পেটে চলে যায়। এতে নানা রকম পেটের অসুখ হয়। আমাদের নখ কেটে ছোট রাখতে হবে। ভালোভাবে হাত ধুয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। খাওয়ার আগে ও পরে ভালোভাবে হাত ধুতে হবে । পায়খানা প্রস্রাব থেকে ফিরে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে।

রাস্তা— ঘাটে চলাফেরা করার সময় আমাদের পায়ে ধুলা-ময়লা লাগে। পা নোংরা হয়ে যায়। কাজের শেষে পা ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হয়।

আমরা আমাদের শরীর, পোশাক ও পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখব, পরিচ্ছন্ন রাখতে সহায়তা করব।

পরিকল্পিত কাজ : কীভাবে পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা যায়,শিক্ষার্থীরা তার একটি কর্মপন্থা তৈরি করবে এবং ছুটির দিনে পরিবেশ -পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করবে।

Content added By

ধর্মীয় অনুশাসন পালনে আন্তরিকতা

14
14

ধর্মীয় অনুশাসন পালনে তথা ইবাদতে আন্তরিকতা ও নিষ্ঠা একান্ত আবশ্যক। ইবাদত অনুষ্ঠানের মূল কথা আল্লাহর উদ্দেশ্যেই নিবেদিত হতে হবে। নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা না থাকলে সালাত, সাওম, হজ ও যাকাতের মতো মৌলিক ইবাদতগুলোও ইবাদত হিসেবে গণ্য না-ও হতে পারে, যদি ঐ ইবাদতকারীর নিয়ত অসৎ ও আল্লাহবিমুখ হয় ।

আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্যের জন্য যে বিশেষ যোগ্যতা ও অনুশীলনের প্রয়োজন, তা গড়ে তোলে সালাত। সালাতের বহুমুখী শিক্ষা জীবনে প্রতিফলিত করতে পারলে অন্যান্য ইবাদত ও সৎকর্ম পালন করা সহজ হয়ে ওঠে। সালাতের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার সামনে চরম ও পরম দাসত্বের প্রমাণ দেওয়া হয়। বিনয় ও বিনম্রতার চরম পরীক্ষার প্রমাণ পায় ৷ সালাত হচ্ছে মুমিনের মিরাজ, আল্লাহ তায়ালার সান্নিধ্য লাভের উপায়। সালাত যেমন পাপ মুক্ত করে, তেমনি চরিত্রের উৎকর্ষ সাধন করে ।

পক্ষান্তরে সালাতে নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা না থাকলে, লোক দেখানোর জন্য সালাত আদায় করলে আল্লাহ তায়ালার কাছে সেই সালাতের কোনো মূল্য নেই। এই ধরনের সালাতের কোনো উপকারিতা নেই ৷

ধন-সম্পদের প্রতি মানুষের আকর্ষণ ও ভালোবাসা একান্ত সহজাত। এ সম্পদ প্রীতি মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে যেকোনো বৈধ-অবৈধ পথে সম্পদ অর্জন করতে চায়। এই সম্পদে সমাজের কোনো কল্যাণ হয় না। যাকাত ব্যবস্থার প্রধান গুরুত্ব হচ্ছে, যাকাত বিধান মানুষের মন মানসিকতার অভূতপূর্ব বিপ্লব সাধন করে। “সম্পদের মালিকানা আল্লাহর” এই ভাবধারার বাস্তব প্রমাণ ঘটে যাকাতে। সম্পদের প্রকৃত মালিক মহান আল্লাহ। তার বিধান অনুযায়ী সম্পদ বিতরণ করতে হবে সমাজের গরিব শ্রেণির মানুষের মধ্যে। মানুষের আধ্যাত্মিক ও সামাজিক জীবনে যাকাতের গুরুত্ব অপরিসীম। এতে হৃদয়-মন থেকে কৃপণতা দূর হয়। যাকাত দানে যেমন সম্পদ পবিত্ৰ হয়, তেমনি ব্যক্তি ও সমাজ থেকে হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি দূর হয়। ধনী-গরিবের মধ্যে সেতুবন্ধন তথা সামাজিক সম্প্রীতি সৃষ্টি হয়। সমাজে আর্থিক নিরাপত্তা ও ভারসাম্য সৃষ্টি হয়। যাকাত দিতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে। আর্থিক কর্তব্য পালনের উদ্দেশ্যে। দানশীলতা প্রদর্শনের উদ্দেশ্য থাকলে তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।

সাওম পালন বা সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মানুষের পাশবিকতার দমন এবং সৎ প্রবৃত্তির বিকাশ ঘটে। সাওম পালনে আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার প্রকৃত প্রমাণ পাওয়া যায়। সাওমের উদ্দেশ্যই হচ্ছে তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতি অর্জন করা। এতে সবর, সহানুভূতি ও সমবেদনার অনুশীলন হয়। সাওম হচ্ছে উচ্চ পর্যায়ের নৈতিকতার অনুশীলন ও পরিচর্যা।

মিথ্যা, অসৎকাজ ও অসৎচিন্তা ত্যাগ না করলে আল্লাহর কাছে সাওম কবুল হয় না।

আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে বান্দার গভীর সম্পর্ককে মানিয়ে নেওয়ার মাধ্যম হচ্ছে হজ। একজন আল্লাহ প্রেমিক বান্দা মায়াময় জগতের আকর্ষণ ছিন্ন করে আল্লাহর সান্নিধ্যে ছুটে যায়। ‘আল্লাহ আমি হাজির, আল্লাহ আমি হাজির' বলতে বলতে আল্লাহর ঘরের দোর গোড়ায় উপনীত হয়; আল্লাহ প্রেমে সিক্ত হয়ে অন্তরের আকুল প্রার্থনা জানায়। “আমি হাজির তোমার কাছে, আল্লাহ! আমি হাজির তোমার কাছে, সকল প্রশংসা ও নিয়ামত তোমারই, মালিকানা ও সার্বিক ক্ষমতা তোমারই। তোমার কোনো অংশীদার নেই।”

হজের মাধ্যমে আল্লাহর দরবারে হাজির হওয়ার অনুভূতির প্রতিফলন ঘটে। আল্লাহর ভালোবাসা, তাঁর প্রতি ভরসা ও আত্মত্যাগের মহান শিক্ষা নিহিত রয়েছে হজের প্রতিটি কাজে। কলহমুক্ত বিশ্ব সমাজ গঠন, বিশ্বভ্রাতৃত্ব, সাম্য ও আন্তর্জাতিক সমঝোতা সৃষ্টিতে হজের গুরুত্ব অপরিসীম। হজ বিশ্ব মুসলিমের মহাসম্মেলন। এর মাধ্যমে মহানবি (স) সাহাবা কেরাম ও পূর্ববর্তী নবিগণের স্মৃতি ও কীর্তির সাথে পরিচয় ঘটে। আবার এই হজ পালনে নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা না থাকলে হজের সুফল পাওয়া যায় না ৷

এতে প্রতীয়মান হয় যে, ধর্মীয় অনুশাসন পালনে নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা না থাকলে কোনো সুফল পাওয়া যায় না। অতএব আমরা পূর্ণ নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে ধর্মীয় অনুশাসনগুলো যথাযথভাবে পালন করব ।

Content added || updated By

সকল ধর্ম ও ধর্মাবলম্বীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া

23
23

ইসলাম উদার মানবতা বোধসম্পন্ন, পরমতসহিষ্ণু একটি আন্তর্জাতিক জীবনব্যবস্থা। ইসলাম সকল ধর্ম ও ধর্মাবলম্বীদের প্রতি উদার, সহনশীল ও শ্রদ্ধাশীল। ইসলামে যেমন আছে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় বা জাতীয় নীতিমালা, তেমনি আছে ন্যায়-নীতিভিত্তিক উদার, পরমতসহিষ্ণু, আন্তধর্মীয় ও আন্তর্জাতিক নীতিমালা। মানবতার ঐক্য, সংহতি, বিশ্বশান্তি ও বিশ্বভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় ইসলামের ভূমিকা অপরিসীম ৷ বিভিন্ন ধর্মের এবং ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য পারস্পরিক সম্পর্ক কিরূপ হওয়া উচিত, সে সম্পর্কে ইসলামে সুস্পষ্ট নীতিমালা বিদ্যমান ।

ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষ মূলগতভাবে একই পিতা-মাতা আদম (আ) ও হাওয়া (আ)— এর সন্তান। যদিও পরিবেশ ও পরিস্থিতির প্রভাবে তাদের মধ্যে বিভিন্নতা এসেছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “হে মানব জাতি, আমি তোমাদের একজন নর ও একজন নারী হতে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদের বহু গোত্রে ও সম্প্রদায়ে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পর পরিচিত হতে পার।' (সূরা হুজুরাত, আয়াত : ১৩)

ইসলাম মানবতার ঐক্যে বিশ্বাস করে, বিভেদ পছন্দ করে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

অর্থ : মানুষ ছিল একই উম্মতের অন্তর্ভুক্ত (সূরা বাকারা, আয়াত: ২১৩)

 

মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স) শুধু আরব দেশ, আরব জাতি বা শুধু মুসলমানদের জন্যই প্রেরিত হননি। তিনি গোটা মানব জাতির জন্য প্রেরিত ছিলেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“আমি আপনাকে গোটা মানবজাতির কাছেই পাঠিয়েছি।” (সূরা সাবা, আয়াত: ২৮)

ইসলামের মতো এমন উদারতার নজির আর কোথাও পাওয়া যাবে না। ইসলামের অন্যতম মূলনীতি হচ্ছে :

অর্থ : “রাসুলদের মধ্যে কোনো পার্থক্য করি না।” ( সূরা বাকারা, আয়াত: ২৮৫)।

সকল রাসুলের প্রতি বিশ্বাস করা মুসলিমদের ইমানের অঙ্গ। পারস্পরিক বিশ্বাস ও পারস্পরিক শ্রদ্ধা পোষণ করা সুসম্পর্ক গড়ে তোলার পূর্বশর্ত। বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা, বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা না থাকলে সুসম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে না। ইসলামের সংস্কৃতি ও আচার-অনুষ্ঠানেও পারস্পরিক সুসম্পর্ক গড়ে তোলার উপাদান পূর্ণ মাত্রায় বিদ্যমান।

হযরত মুহাম্মদ (স) মদিনায় হিজরত করেই মদিনা ও তার আশেপাশে বসবাসকারী গোত্রগুলোর সাথে একটি বিশ্বখ্যাত সনদপত্র সম্পাদন করেন, যা ইতিহাসে “মদিনা সনদ” নামে খ্যাত। এ সনদ সাম্যের মহান নীতি, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, জানমালের নিরাপত্তা, সকল ধর্মের স্বাধীনতা ও ধর্মীয় সহিষ্ণুতার ঘোষণা ও রক্ষাকবচ। এ সনদের মাধ্যমে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ভাষা-নির্বিশেষে সকল নাগরিকের সমান অধিকার তথা মানবাধিকার স্বীকৃত ও প্রতিষ্ঠিত হয়।

শুধু শান্তিকালীন নয়, যুদ্ধকালীন সময়ও ইসলাম অন্য ধর্ম, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং ধর্ম যাজকদের রক্ষা নিশ্চিত করত। এদের ধ্বংস বা আক্রমণ করা কড়াকড়িভাবে নিষিদ্ধ ছিল ।

মহানবি (স) ও মুসলিমগণ আক্রান্ত না হলে কারও বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতেন না। মহানবি (স) যুদ্ধের তুলনায় সন্ধি ও সুসম্পর্ক গড়ে তোলাকে বেশি অগ্রাধিকার দিতেন। হুদায়বিয়ায় তিনি কাফেরদের অন্যায় আবদার মেনে নিয়েও শান্তির উদ্দেশ্যে সন্ধি করেছিলেন। তিনি হাবশার রাজা আসহাম নাজ্জাশির সাথে অত্যন্ত মধুর সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন এবং তাঁর কাছে পত্র লিখেছিলেন। তাবুক বিজয়ের পর আয়লা অধিপতি ইউহান্নার সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। এভাবে বাহরাইন ও নাজরানের অধিবাসীদের সাথে সন্ধি চুক্তির মাধ্যমে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন।

মহানবি (স) হিজরতের পরেই মদিনা ও তার আশপাশের বিভিন্ন গোত্র ও রাষ্ট্রের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। তিনি রোম ও পারস্য সম্রাটসহ রাজন্যবর্গের কাছে উপঢৌকন পাঠাতেন এবং তাঁদের উপঢৌকন গ্রহণ করতেন। অনেকের কাছে শান্তিদূত ও পত্র পাঠিয়েছিলেন।

পরিকল্পিত কাজ : বিভিন্ন ধর্ম ও ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইসলামে যে নীতিমালা আছে তার একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করবে।

Content added By

অনুশীলনী

26
26

শূন্যস্থান পূরণ কর

১. ____ ইমানের অঙ্গ । 

২. সালাত দীন ইসলামের_____ ।

৩. সালাত ___ চাবি । 

8. ____ মানে সংক্ষিপ্তকরণ । 

৫. সালাতের ভেতরের ফরজগুলোকে ____ বলে। 

৬. ঢাকা শহরকে বলা হয় ___ শহর। 

৭. সাওমের মূল উদ্দেশ্য হলো ____ অর্জন করা ৷ 

৮. ___ অর্থ যাকাত ব্যয়ের খাতসমূহ । 

৯. জীবনে ____ হজ করা ফরজ। 

১০. পরস্পর সাক্ষাৎ হলে বলব ____।

 

বাম দিকের শব্দের সঙ্গে ডান দিকের শব্দের অর্থ মিলাও

 

     বাম                         ডান

১. ইবাদত                 ক্ষমা প্রার্থনা করা

২. সালাত                 ভ্রমণকারী

৩. মুসাফির              বিরত থাকা

৪. সাওম                  আনুগত্য

৫. যাকাত               নির্ধারিত পরিমাণ

৬. নিসাব                সংকল্প করা

৭. হজ                    পবিত্রতা ও বৃদ্ধি

৮. কুরবানি              ভেঙে ফেলা

৯. আকিকা               উৎসর্গ

 

সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন

(১) ইবাদত কাকে বলে ? 

(২) আল্লাহ আমাদের কেন সৃষ্টি করেছেন? 

(৩) ইসলামের রুকন কয়টি ও কী কী?

(৪) পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের নাম লেখ। 

(৫) সালাতের নিষিদ্ধ সময়গুলো কী কী?

(৬) মুসাফির কাকে বলে ? 

(৭) আহকাম কাকে বলে? 

(৮) আরকান কাকে বলে? 

(৯). সাওম কাকে বলে ? 

(১০) সাওমের মাসকে ফজিলতের দিক দিয়ে কয় ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে? 

(১১) যাকাত কাকে বলে ? 

(১২) হজ কাকে বলে ?

(১৩) হজের ফরজ কয়টি এবং কী কী? 

(১৪) কুরবানি কাকে বলে ? 

(১৫) আকিকা কাকে বলে ?

 

বর্ণনামূলক প্রশ্ন—

(১) ইবাদতের তাৎপর্য বর্ণনা কর। 

(২) সালাতের গুরুত্ব বর্ণনা কর। 

(৩) পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সময় বর্ণনা কর । 

(৪) সালাতের ফজিলত ও শিক্ষা বর্ণনা কর ৷

(৫) দুই রাকআত ফরজ সালাত আদায়ের নিয়ম লেখ ?

(৬) সালাতের আহকামগুলো লেখ । 

(৭) সালাতের আরকান বলতে কী বোঝ? আরকানগুলো কী কী?

(৮) সালাতের ওয়াজিবগুলো কী কী? 

(৯) মসজিদের আদবগুলো কী কী? 

(১০) সাওমের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সংক্ষেপে লেখ 

(১১) যাকাতের তাৎপর্য ও শিক্ষা বর্ণনা কর। 

(১২) যাকাতের মাসারিফ কয়টি ও কী কী,বর্ণনা কর। 

(১৩) হজের গুরুত্ব ও তাৎপর্য লেখ ৷ 

(১৪) হজের ফরজগুলো সংক্ষেপে বর্ণনা কর। 

(১৫) মুখ, দাঁত, হাত ও পা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার গুরুত্ব বর্ণনা কর। 

(১৬) কুরবানি প্রচলনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস বর্ণনা কর । 

(১৭) ধর্মীয় অনুশাসন পালনে নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার গুরুত্ব বর্ণনা কর। 

(১৮) সকল ধর্ম ও ধর্মাবলম্বীদের প্রতি উদার, সহিষ্ণু ও সহনশীল হওয়ার গুরুত্ব বর্ণনা কর ৷

Content added By

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

প্ৰাৰ্থনা
আনুগত্য
দান করা
সিয়াম সাধনা।
Promotion