আল্লাহ তায়ালা মাটি দিয়ে মানবদেহ তৈরি করলেন। তাতে আত্মা দিলেন। এরপর এই দেহ প্রাণবন্ত হয়ে উঠল। ইনিই হলেন পৃথিবীর আদি মানব হযরত আদম (আ)।
আল্লাহ ফেরেশতাদের আদেশ দিলেন: “আদম তোমাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। তোমরা তাঁকে সম্মান জানাও। তাঁর সম্মানে তাঁকে সিজদাহ্ কর।” সবাই তাঁকে সম্মান দেখাল। তাঁকে সিজদাহ্ করল। তবে এই ফেরেশতাদের সাথে ছিল এক জিন। নাম তার আজাজিল। সে আদমকে সিজদাহ্ করল না। সে বলল: আমি আগুনের তৈরি। আদম মাটির তৈরি। আমি আদম অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। আমি তাকে সম্মান করব না। সিজদাহ্ করব না। সে আদমকে সিজদাহ্ করল না।
আজাজিল ছিল অহংকারী। আল্লাহ অহংকারীকে ভালোবাসেন না। আল্লাহ আজাজিলের ওপর অসন্তুষ্ট হলেন। আজাজিল হয়ে গেল শয়তান। নাম হলো তার ইবলিস। ইবলিস আল্লাহর আদেশ অমান্য করার দরুন অভিশপ্ত শয়তান হয়ে গেল ৷
আল্লাহ তায়ালা হযরত আদম (আ) কে জান্নাতের মধ্যে থাকতে দিলেন। আদম জান্নাতে আরাম-আয়েশ ও সুখ-শান্তিতে থাকতে লাগলেন। কিন্তু এই অফুরন্ত আরাম- আয়েশের মধ্যেও তিনি নিঃসঙ্গ অনুভব করছিলেন। তাই দয়াময় আল্লাহ হযরত আদম (আ)-এর এক সঙ্গিনী বানালেন। নাম তাঁর হাওয়া (আ)।
আল্লাহ তাঁদের বললেন : “তোমরা উভয়ে জান্নাতে থাক। খুশিমতো পানাহার করো, আরাম-আয়েশ ও আনন্দ উপভোগ করো। কিন্তু সাবধান! কখনও এ গাছটির কাছে যেও না। যদি যাও তাহলে খুবই অন্যায় হবে। দারুণ ক্ষতি হবে।”
হযরত আদম (আ) এবং হযরত হাওয়া (আ) আল্লাহর হুকুম মেনে জান্নাতের মধ্যে মনের সুখে দিন কাটাতে লাগলেন। কিন্তু শয়তান ইবলিস অপমানের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য পথ খুঁজতে লাগল। সে জান্নাতে প্রবেশ করে তাঁদের ক্ষতি করার ফন্দি আঁটল। অবশেষে একদিন তাঁদের ধোঁকা দিল। ঐ নিষিদ্ধ গাছের ফল খাওয়াতে সক্ষম হলো। তাঁরা ইবলিসের প্ররোচনায় ঐ ফল খেয়ে আল্লাহর আদেশ অমান্য করলেন।
আল্লাহর আদেশ অমান্য করায় আল্লাহ তাঁদের ওপর ভীষণ অসন্তুষ্ট হলেন। তিনি তাঁদের জান্নাত থেকে বের করে দিলেন। তাঁদের দুজনকে পৃথিবীতে নামিয়ে দিলেন। তাঁরা পৃথিবীতে এসে নিজেদের ভুল বুঝতে পারলেন। অনেক দিন যাবৎ সবসময় কাঁদতে থাকলেন। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে লাগলেন। তওবা করতে থাকলেন ।
অবশেষে আল্লাহ তায়ালা তাঁদের দোয়া কবুল করলেন। তাঁদেরকে ক্ষমা করে দিলেন। তাঁদের তওবা কবুল করলেন। তাঁরা পৃথিবীতে নতুন জীবন শুরু করলেন। সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে থাকলেন। তাঁদের সন্তান হলো। পৃথিবী মানুষে ভরে উঠল। শুরু হলো মানবজাতির পথযাত্রা ।
হযরত আদম (আ) আল্লাহর তাওহিদে বিশ্বাস করতেন। তিনি তাঁর সন্তানদের বললেন : “তোমাদের ও সারা বিশ্বের স্রষ্টা আল্লাহ। তিনি এক। তাঁর কোনো শরিক নেই। তোমরা শুধু তাঁরই ইবাদত করবে। তাঁরই কাছে মাথা নত করবে। তাঁরই কাছে সাহায্য চাইবে। তাহলে আল্লাহ তোমাদের শান্তি দেবেন। তোমরা জান্নাত লাভ করবে।
আর যদি তোমরা আল্লাহকে বিশ্বাস না কর। তাঁকে না মান। তাহলে দুঃখ পাবে। কষ্ট পাবে। আল্লাহ তোমাদের ওপর অসন্তুষ্ট হবে। তোমরা জাহান্নামের কঠিন শাস্তি ভোগ করবে।”
হযরত আদম (আ) ছিলেন প্রথম মানুষ এবং প্রথম নবি। আমরা সবাই তাঁর বংশধর। আমরা সবাই তাঁর জীবনাদর্শে উৎসাহিত হবো। আমরা ভুল বা অন্যায় করলে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইব। তওবা করব। আমাদের সন্তানদের ইসলাম শিক্ষায় গড়ে তুলব । আল্লাহর ইবাদত করব। সর্বদা আল্লাহকে খুশি রাখব। তাহলে পৃথিবীতে আমরা সুখ পাব। শান্তি পাব। মৃত্যুর পরও শান্তি পাব। জান্নাত লাভ করব। জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাব।
পরিকল্পিত কাজ:
হযরত আদম (আ) তাঁর সন্তানদের যে উপদেশ বাণী দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা তা খাতায় সুন্দর করে লিখবে।
আরও দেখুন...