পোশাকের যত্নে সবচেয়ে অধিক প্রচলিত পদ্ধতিটি হলো বস্ত্র ধৌতকরণ। বস্ত্র ধৌতকরণের মূল উদ্দেশ্য হলো-
নিম্নে বস্ত্র পরিষ্কারক এবং আনুষঙ্গিক দ্রব্যের তালিকা দেওয়া হলো :
পরিষ্কারক দ্রব্য
সাবান : সাবান একটি সহজলভ্য উত্তম পরিষ্কারক উপকরণ। বাড়ির বেশির ভাগ কাপড়ই সাবান দিয়ে কাচা হয়। বাজারে বিভিন্ন প্রকার সাবান পাওয়া যায়। সাবানে কস্টিক সোডার পরিমাণ বেশি থাকলে সেই সাবান বস্ত্র পরিষ্কার করার জন্য উপযোগী নয়। বস্ত্ৰ পরিষ্কারক সাবানের কয়েকটা গুণ অবশ্যই থাকতে হবে। যেমন— সাবান দেখতে হলদে বা গাঢ় রঙের হবে না; সাবান এমন শক্ত হবে যাতে আঙ্গুলের সাহায্যে চাপ দিলে গর্ত হবে না; সাবানের গা মসৃণ হবে; সাবান পানির প্রসারণ ক্ষমতা ও ভিজানোর ক্ষমতা বাড়ায়; সাবান কাপড়ের ময়লাকে বের করে ধরে রাখে; পানি দিয়ে ধুলে ময়লাসহ সাবান ধুয়ে যায় এবং কাপড় পরিষ্কার হয়ে উঠে।
আনুষঙ্গিক দ্রব্য
বোরাক্স: বোরাক্স নামের এই পরিষ্কারক দ্রবণটি আমাদের দেশে সহজলভ্য নয়। বর্তমানে সোডিয়াম, কার্বণ, বরিক এসিড হতেও কিছু কিছু পরিমাণ বোরাক্স তৈরি করা হচ্ছে। বোরাক্স জলীয় দ্রবণ ক্ষারীয় তাই কাপড়ে কাঠিন্য এবং ঔজ্জ্বল্য সৃষ্টি করতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই দ্রব্যটি অনেক সময় কাপড়ের দাগ তুলতেও ব্যবহার করা হয়।
কাপড় কাচা সোডা : কাপড় কাচার সোডাকে সোডিয়াম কার্বনেট বলে। বেশি ময়লা তৈলাক্ত কাপড় সোডা দিয়ে সহজে পরিষ্কার করা যায়। বেশি ময়লা এবং তৈলাক্ত সুতি ও লিনেন কাপড় সিদ্ধ করা, জীবাণু মুক্ত করা ও দুর্গন্ধমুক্ত করার জন্য সোডা ব্যবহার করা হয়। তবে সবরকম কাপড়ে সোডা ব্যবহার করা ঠিক নয়। সোডার অতিরিক্ত ৰারের প্রভাবে রেশমি ও পশমি কাপড় নষ্ট হয়ে যায়।
গুঁড়া সাবান : বর্তমানে আমাদের দেশে গুঁড়া সাবানের বহুল ব্যবহার দেখা যায়। পাত্রে পরিমাণমতো পানি নিয়ে গুঁড়া সাবান দিয়ে সহজে অনেক কাপড় কাচা যায়। বাজারে বিভিন্ন নামে গুঁড়া সাবান পাওয়া যায়। এইসব গুঁড়া সাবানে ৰার জাতীয় উপাদান থাকে বলে কাপড়ের ধরন বুঝে ব্যবহার করতে হয়।
তুষের জল : তুষের জলকেও পরিষ্কারক দ্রব্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তুষের জল দিয়ে সিনটজ এবং কিটোন জাতীয় ছাপা ও রঙিন বস্ত্রাদি পরিষ্কার করা হয়। তুষকে ভূসিও বলা হয়। তুষকে একটা ন্যাকড়ায় জড়িয়ে পানিতে ভিজিয়ে রেখে যখন পানি বাদামি বর্ণ ধারণ করবে তখনই তুষের পানি ব্যবহার উপযোগী হবে।
অ্যামোনিয়া : এটা এক প্রকার তীব্র গ্যাস। সাধারণত পানিতে দ্রবীভূত অবস্থায় বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। সাদা রেশম ও পশমের বস্ত্রাদি পরিষ্কার করার জন্য খর পানি এই অ্যামোনিয়ার সাহায্যে মৃদু করা হয়। রঙিন বস্ত্রাদি এই প্রকার মৃদু জলে পরিষ্কার করা হয় না। কারণ অ্যামোনিয়ার ফলে রং চটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। কখনো কখনো কাপড়ের দাগ উঠানোর জন্যও ব্যবহার করা হয়।
রিঠা : প্রাচীনকাল থেকেই এই রিঠা ফল রেশম, পশমের বস্ত্রাদি পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। রিঠার খোসার মধ্যে স্যাপোনিন নামে একটা পদার্থ আছে এই স্যাপোনিনই কাপড়ের ময়লা পরিষ্কার করে। এতে কাপড়ের উজ্জ্বলতা, কোমলতা বাড়ায় ও রং ভালো থাকে ।
সিনথেটিক ডিটারজেন্ট : ডিটারজেন্ট এক ধরনের বারবিহীন পরিষ্কারক উপকরণ। রেশম, পশম ইত্যাদি মূল্যবান বস্ত্রাদি ডিটারজেন্টের সাহায্যে নির্ভয়ে পরিষ্কার করা যায়। রঙিন বস্ত্রাদির রং চটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না ।
ষ্টার্চ : চাল, আলু, ভুট্টা ইত্যাদি থেকে ষ্টাৰ্চ প্রস্তুত করা হয়। ষ্টার্চ ব্যবহারে কাপড়ের স্বাভাবিক কাঠিন্য এবং ধবধবে ভাব ফিরে আসে। ষ্টার্চ ব্যবহারের ফলে কাপড় সহজে ময়লা হয় না ।
গঁদ (Gam arabic): রেশম বস্ত্রের কাঠিন্য সৃষ্টি করতে এবং বস্ত্রের উজ্জ্বলতা আনতে ব্যবহৃত হয়।
নীল : কাপড় পরিষ্কার করার সময় সাবান ব্যবহারের ফলে কাপড়ে হলদে ভাবের সৃষ্টি হয়, একমাত্র নীল ব্যবহারের ফলে হলদে ভাব কেটে নীলাভ শুভ্রতা দেখা দেয়। কাপড়ে ব্যবহারের জন্য আলট্রামেরিন ( Ultramarine), প্রুশিয়ান (Prussian) এবং ইনডিগো বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। নীল তরল ও পাউডার দুইভাবেই বাজারে কিনতে পাওয়া যায়।
কাপড় মোলায়েমকারক : সিনথেটিক কাপড়ের জামাকাপড় কিছুদিন ব্যবহার করার পর একটু দৃঢ় প্রকৃতির হয়ে যায়। কাপড় মোলায়েমকারক ব্যবহার করলে কাপড় নরম ও কোমল থাকে। তবে বেশি ব্যবহার করলে কাপড়ের পানি শোষণ ক্ষমতা হ্রাস পায় ।
জীবাণুনাশক : কোনো সংক্রামক রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করার পর ব্যবহৃত জামাকাপড় জীবাণুমুক্ত করার জন্য জীবাণুনাশক উপকরণ দিয়ে ধোয়া হয়। যেমন : ক্লোরিন, ব্লিচিং ভিনিগার : বস্ত্র পরিষ্কারক দ্রব্য ভিনিগারকে কাপড়ের অতিরিক্ত নীল দূর করার জন্য ব্যবহার করা হয়। তা ছাড়া রঙিন কাপড়ের রং চটে গেলে পানিতে সামান্য ভিনিগার মিশিয়ে ওই পানিতে কিছুক্ষণ রাখলে রং ফিরে আসে।
লবণ : নতুন রঙিন কাপড়ের কাঁচা রং পাকা করার জন্য লবণের বহুল ব্যবহার দেখা যায়। রঙিন বস্ত্রাদি পরিষ্কার করার সময় সাবান পানিতে সামান্য পরিমাণে লবণ গুলে নিলে কাপড়ের রং নষ্ট হয় না। কাপড়ের দাগ তুলতেও লবণ ব্যবহার করা হয়।
কাজ - গৃহে ব্যবহৃত পরিষ্কারক এবং আনুষঙ্গিক দ্রব্যাদির একটি তালিকা তৈরি কর ।
আরও দেখুন...