গ্লাইকোলাইসিস প্রক্রিয়ার শেষ উৎপাদিত পদার্থটির নাম কি ?

Created: 2 years ago | Updated: 2 years ago
Updated: 2 years ago

গ্লাইকোলাইসিস (Glycolysis)

যে পর্যায়ক্রমিক রাসায়নিক বিক্রিয়ায় এক অণু গ্লুকোজ বিভিন্ন এনজাইমের কার্যকারিতার ভেঙ্গে দুই অণু পাইরুভিক এসিডে পরিণত হয় তাকে গ্লাইকোলাইসিস (glyco = sugar + lysis = splitting) বলে। জার্মান বিজ্ঞানী Gustave George Embden (1874-1933), Otto Meyerhof (1884-1951) ও Jakob Karol Parnas (1884 1949) কর্তৃক গ্লাইকোলাইসিসের বিক্রিয়াগুলো (১৯১৪-১৯২৪ সালে) আবিষ্কৃত হয়েছিল বলে তাদের নামানুসারে গ্লাইকোলাইসিসকে সংক্ষেপে EMP পথও বলা হয়। এসব বিক্রিয়ার জন্য মুক্ত অক্সিজেনের প্রয়োজন হয় না। তবে অক্সিজেনের উপস্থিতি এ প্রক্রিয়া সংঘটনের কোন বাধা সৃষ্টি করে না। শ্বসনিক বস্তু গ্লুকোজ ছাড়া অন্য কিছু হতে পারে। তবে শ্বসনিক বস্তু যাই হোক না কেন গ্লাইকোলাইসিসের পূর্বে সেসব বস্তুকে অবশ্যই গ্লুকোজে রূপান্তরিত হতে হয়। প্রকৃতপক্ষে, গ্লুকোজ থেকে গ্লাইকোলাইসিস আরম্ভ হয় এবং পাইরুভিক এসিড তৈরি করেই এর সমাপ্তি ঘটে। গ্লাইকোলাইসিস সবাত ও অবাত শ্বসনের প্রথম ধাপ কারণ এ প্রক্রিয়ায় O2-এর প্রয়োজন হয় না। বিক্রিয়াগুলো কোষের সাইটোপ্লাজমে অক্সিজেনের উপস্থিতি অথবা অণুপস্থিতিতে ঘটে থাকে। গ্লাইকোলাইসিসের ধাপগুলো ধারাবাহিকভাবে নিম্নরূপ :

(i) গ্লুকোজ অণু প্রথমে, ATP থেকে একটি ফসফেট গ্রহণ করে গ্লুকোজ-৬-ফসফেটযৌগ ও ADP প্রস্তুত করে । এ বিক্রিয়ায় হেক্সোকাইনেজ এনজাইম ক্রিয়াশীল হয়। বিক্রিয়াটি একমুখী ।

গ্লুকোজ + ATP → গ্লুকোজ-৬-ফসফেট + ADP

(ii) গ্লুকোজ-৬-ফসফেট ফসফোগুকোআইসোমারেজ নামক এনজাইমের প্রভাবে ফ্রুক্টোজ—৬-ফসফেটে পরিণত হয় ।

গ্লুকোজ-৬-ফসফেট→ ফ্রুক্টোজ-৬-ফসফেট

(iii) ফ্রুক্টোজ-৬-ফসফেট ফসফোফ্রুক্টোকাইনেজ এনজাইম ও ATP-র উপস্থিতিতে ফ্রুক্টোজ-১, ৬-বিস ফসফেট যৌগ ও ADP তৈরি করে। উৎপন্ন যৌগটি ৬-কার্বন যুক্ত।

ফ্রুক্টোজ-৬-ফসফেট + ATP → ফ্রুক্টোজ-১, ৬-বিস ফসফেট + ADP

(iv) ফ্রুক্টোজ-১, ৬-বিস ফসফেট অ্যালডোলেজ এনজাইমের প্রভাবে ৩-ফসফোগ্লিসারালডিহাইড এবং ডাইহাইড্রক্সি-অ্যাসিটোন ফসফেটে রূপান্তরিত হয় ।

গ্লুকোজ-১, ৬-বিস ফসফেট→ ৩-ফসফোগ্লিসারৱ্যালডিহাইড + ডাই হাইড্রক্সি-অ্যাসিটোন ফসফেট। 

৩-ফসফোগ্লিসারালডিহাইড থেকে গ্লাইকোলাইসিসের পরবর্তী বিক্রিয়া চলতে থাকে। এরপর ৩- ফসফোগ্লিসারালডিহাইড H3PO4 যারা ফসফরাসযুক্ত হয় এবং NAD+ দ্বারা জারিত হয়ে ১, ৩-বিস-ফসফোগ্লিসারিক এসিডে পরিণত হয়। বিক্রিয়াটি গ্লিসারালডিহাইড ডিহাইড্রোজিনেজ এনজাইম দ্বারা সম্পন্ন হয়।

৩.ফসফোগ্লিসার্যালডিহাইড+NAD + H3PO4→

১.৩-বিসফসফোগ্লিসারিক এসিড +NADH + H ডিহাইড্রোজিনেজ

(vi) ১, ৩-বিস-ফসফোগ্লিসারিক এসিড ফসফোগ্লিসারেট কাইনেজ এনজাইমের উপস্থিতিতে ৩-ফসফোগ্লিসারিক এসিডে পরিণত হয়। এই বিক্রিয়ায় ফসফরাস বিযুক্ত হয়ে ADP-র সঙ্গে যুক্ত হয় এবং ATP গঠন করে। 

১. ৩-বিস ফসফোগ্লিসারিক এসিড + ADP→ ৩-ফসফোগ্লিসারিক এসিড +ATP

(vii) ৩-ফসফোগ্লিসারিক এসিড ফসফোগ্লিসারেট মিউটেজ নামক এনজাইমের সহায়তায় ২-ফসফোগ্লিসারিক এসিডে পরিণত হয়।

৩-ফসফোগ্লিসারিক এসিড→২- ফসফোগ্লিসারিক এসিড

(viii) ২-ফসফোগ্লিসারিক এসিড পরবর্তী পর্যায়ে ইনোলেজ এনজাইমের প্রভাবে এক অণু পানি ত্যাগ করে ২- ফসফোইনোল পাইরুভিক এসিড উৎপন্ন করে।

২-ফসফোগ্লিসারিক এসিড→২-ফসফোইনোল পাইরুভিক এসিড +H 2O

(ix) গ্লাইকোলাইসিসের শেষ পর্যায়ে পাইরুভেট কাইনেজ এনজাইমের প্রভাবে ২-ফসফোইনোল পাইরুভিক এসিড থেকে ফসফেট মুক্ত হয়ে ATP ও পাইরুভিক এসিড উৎপন্ন হয় । 

২-ফসফোইনোল পাইরুভিক এসিড + ADP→ পাইরুভিক এসিড + ATP

গ্লাইকোলাইসিস প্রক্রিয়ায় প্রতি অণু গ্লুকোজ জারিত হয়ে ২ অণু পাইরুভিক এসিড উৎপন্ন করে। বিক্রিয়ার পর্যায়গুলোতে মোট ৪ অণু ATP উৎপন্ন হয় এবং ২ অণু ব্যয় হয় ফলে ৪-২ = ২ অণু ATP প্রকৃত (ncat) লাভ হয় । গ্লাইকোলাইসিস প্রক্রিয়ার একটি ধাপে উৎপন্ন ২ অণু NADH, থেকে সবাত শ্বসনের ক্ষেত্রে পরবর্তী পর্যায়ে ৩ অণু ATP পাওয়া যায়। গ্লাইকোলাইসিসের বিক্রিয়াগুলো কোষের সাইটোপ্লাজমে ঘটে থাকে।

গ্লাইকোলাইসিস-এর নিয়ন্ত্রণ

গ্লাইকোলাইসিস ত্বরান্বিত হয় ATP-এর ব্যবহার দ্রুত হলে, ATP-এর ব্যবহার হ্রাস পেলে প্রক্রিয়ার হার কমে যায়। গ্লুকোজ-এর প্রাপ্তি তথা সরবরাহের পরিমাণ এ প্রক্রিয়া দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। 

অ্যালোস্টেরিক এনজাইম ‘ফসফোফ্রুক্টোকাইনেজ' যা ফ্রুক্টোজ ১-ফসফেজ থেকে ফ্রুক্টোজ ১, ৬ বিসফসফেট তৈরি করতে সহায়তা করে, তার গতিময়তার উপর গ্লাইকোলাইসিস প্রক্রিয়া বহুলাংশে নির্ভরশীল। ATP দ্বারা এর কাজ বাধাগ্রস্ত হয় এবং ADP দ্বারা উদ্দীপ্ত হয়।

গ্লাইকোলাইসিস-এর গুরুত্বঃ

১. গ্লাইকোলাইসিস হচ্ছে সকল জীবকোষে গ্লুকোজ জারণের একটি পর্যায় এবং বিক্রিয়াগুলো সকল জীবে একই রকম।

২. গ্লাইকোলাইসিসের ফলে উৎপন্ন দুই অণু পাইরুভিক এসিড ক্রেবস চক্রের সাবস্ট্রেট হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

৩. গ্লাইকোলাইসিসের গ্লুকোজ থেকে পাইরুভিক এসিড পর্যন্ত উৎপন্ন একাধিক অন্তর্বর্তী যৌগগুলো জীবের বিভিন্ন বিপাকীয় কাজে ব্যবহৃত হয়।

৪. গ্লাইকোলাইসিসের ফলে ৪ অণু ATP উৎপন্ন হয় এবং অবাত শ্বসনকারী জীবদের ক্ষেত্রে এখানে উৎপন্ন ২ অণু NADH, অন্যান্য বিপাকীয় কাজে ব্যবহৃত হয়।

Content added By
Promotion