লসিকাঃ লসিকা হচ্ছে দেহের টিস্যুরস (tissue fluid)। দেহের সমস্ত টিস্যু রক্তপূর্ণ কৈশিকজালিকায় (capillaries) বেষ্টিত থাকে। রক্তের কিছু উপাদান কৈশিকজালিকার প্রাচীর ভেদ করে কোষের চারপাশে অবস্থান করে। এ উপাদানগুলোকে সম্মিলিতভাবে লসিকা বা লিম্ফ বলে। এ টিস্যুরসে লোহিত কণিকা, অণুচক্রিকা এবং রক্তে প্রাপ্ত অধিকাংশ প্রোটিন অনুপস্থিত।
লসিকার উপাদান : লসিকাকে দুটি অংশে ভাগ করা যায়, যেমন কোষ উপাদান ও কোষবিহীন উপাদান । লসিকার কোষ উপাদান হলো শ্বেতকণিকার লিম্ফোসাইট। প্রতি ঘন মিলিলিটার লসিকায় প্রায় ৫০০-৭৫০০০ লিম্ফোসাইট রয়েছে। লসিকার কোষবিহীন উপাদানের মধ্যে রয়েছে ৯৪% পানি এবং ৬% কঠিন পদার্থ। কঠিন পদার্থের মধ্যে প্রোটিন, লিপিড, শর্করা, ইউরিয়া, ইউরিক এসিড, ক্রিয়েটিনিন, এনজাইম, অ্যান্টিবডি, অজৈব পদার্থ ইত্যাদি প্রধান । লসিকায় অ্যালবুমিন, গ্লোবিউলিন, ফাইব্রিনোজেন ও সামান্য প্রোথম্বিন জাতীয় প্রোটিন থাকে। ক্ষুধার্ত অবস্থায় লসিকায় ক্যাটের পরিমাণ কম থাকে। বেশি চর্বিযুক্ত খাবার খেলে লসিকায় ফ্যাটের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং লসিকা দুধের মতো সাদা দেখায়। এ ধরনের লসিকাকে কাইল (chyle) বলে।
লসিকাতন্ত্র (Lymphatic system): যে তন্ত্রের মাধ্যমে সমগ্র দেহে লসিকা রস প্রবাহিত হয় তাকে লসিকাতন্ত্র বলে। লসিকানালি ও লসিকাপর্ব বা লসিকাগ্রন্থির সমন্বয়ে লসিকাতন্ত্র গঠন করে। যে বিশেষ ধরনের নালিকার মাধ্যমে লসিকা সমগ্র দেহে পরিবাহিত হয় অদের লসিকানালি (lymp vessels) বলে ।অন্ত্রের প্রাচীরে সুবিকশিত লসিকানালিগুলোকে ল্যাকটিয়েল (kacteal) বলে। লসিকানালিতে কিছুটা পর পর এক ধরনের গোলাকার বা ডিম্বাকার স্ফীতি দেখা যায়। এদের নাম লসিকা পর্ব (lymph nodes) বা লসিকা গ্রন্থি (lymph gland)। এদের সংখ্যা রক্তকণির ৪০০-৭০০। প্লীহা (spleen), টনসিল (tonsil), অ্যাডেনয়েড জালক (adenoid) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য লসিকাপর্ব। গ্রীবা, বগলে ও কুঁচকিতে অধিক সংখ্যক লসিকাপর্ব থাকে।
লসিকার কাজঃ
* আন্তঃকোষীয় উন্মুক্ত স্থান থেকে অধিকাংশ প্রোটিন অণু লসিকার মাধ্যমে রক্তে ফিরে আসে এবং যেসব লিপিড কণা কৈশিকনালিকার সূক্ষ্ণ ছিদ্র অতিক্রম করতে পারে না সেগুলো লসিকার মাধ্যমে পরিবাহিত হয়।
* দেহের যেসব টিস্যুতে রক্ত পৌঁছাতে পারেনা লসিকার মাধ্যমে সেসব টিস্যুতে পুষ্টি ও অক্সিজেন পরিবাহিত হয়।
* লসিকাস্থিত শ্বেত কণিকা (লিম্ফোসাইট ও মনোসাইট) দেহের প্রতিরক্ষায় অবদান রাখে।
* লসিকা থেকে উৎপন্ন অ্যান্টিবডি প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।