ভ্যাক্সিন বা টিকা কে আবিষ্কান করেন? (Who is the inventor of vaccine?)

Created: 2 years ago | Updated: 1 year ago
Updated: 1 year ago

ভ্যাক্সিনেশন (Vaccination)

ভ্যাক্সিন প্রয়োগের মাধ্যমে অণুজীবের, বিশেষ করে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস-এর সংক্রমণ প্রতিরোধের উপায়কে ড্যাক্সিনেশন বলে। প্রক্রিয়াটি সাধারণভাবে টিকা দেওয়া (inoculation) নামে পরিচিত। নির্দিষ্ট রোগের ভ্যাক্সিন নির্দিষ্ট জীবাণু থেকেই সংগ্রহ ও উৎপন্ন করা হলেও প্রক্রিয়াগত কারণে এ পদার্থ মানবদেহে কোনো পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া বা রোগ সৃষ্টির পরিবর্তে দেহকে রোগমুক্ত রাখতে, রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে (রোগের চিকিৎসায় ভ্যাক্সিনের ব্যবহার পদ্ধতিকে ভ্যাক্সিনোথেরাপি (vaccinotherapy) বলে )

এডওয়ার্ড জেনার) (Dr. Edward Jenner) (১৭৯৬ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম গুটিবসন্তের (small pox) ভ্যাক্সিন আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে যুগান্তকারী 'ভ্যাক্সিন বিপ্লব' ঘটিয়ে মানুষের রোগমুক্ত দীর্ঘ সুন্দর জীবনের যে প্রত্যাশা জাগিয়েছেন তার ধারাবাহিকতায় আজ দ্বিতীয় জেনারেশন Second Generation) ভ্যাক্সিন হিসেবে হেপাটাইটিস'B ভ্যাক্সিন উৎপন্ন হয়েছে। কিন্তু AIDS ভ্যাক্সিন আজও উৎপন্ন হয়নি ।

১. ভ্যাক্সিনেশনের ফলে মানবদেহ এমন সব রোগ থেকে রক্ষা পায় যা থেকে শুধু অসুখ-বিসুখই নয়, দেহ পঙ্গু হয়ে যেতে পারে, মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। আমাদের ইমিউনতন্ত্রকে বাড়তি শক্তি যোগাতে ভ্যাক্সিন নিম্নোক্তভাবে সক্রিয় থাকে। অধিকাংশ ভ্যাক্সিনে রোগসৃষ্টিকারী মৃত বা দুর্বল জীবাণুর সামান্য অংশ থাকে। দেহে রোগসৃষ্টি করতে পারে এমন সক্রিয় জীবাণু থাকে না। কোন কোন ভ্যাক্সিনে জীবাণু একেবারেই থাকে না।

২. জীবাণুর অংশবিশেষসহ ভ্যাক্সিন যে দেহে প্রবেশ করে অ্যান্টিবডি সৃষ্টির মাধ্যমে ওই নির্দিষ্ট জীবাণুর প্রতি দেহকে অনাক্রম্য করে তোলে। এসব অ্যান্টিবডি নির্দিষ্ট রোগসৃষ্টিকারী জীবাণুকে ফাঁদে ফেলে হত্যা করে।

৩. মানবদেহে দুভাবে অ্যান্টিবডি উৎপন্ন হতে পারেঃ (ক) অসুস্থ হলে এবং (গ) ভ্যাক্সিন নিলে। 

জীবাণুর আক্রমণে অসুস্থ হয়ে রোগে ভুগে কষ্ট শেষে অ্যান্টিবডি উৎপাদনের চেয়ে আগেভাগেই সম্ভাব্য রোগের বিরুদ্ধে কার্যকর ভ্যাক্সিন গ্রহণ করা বেশি নিরাপদ। কারণ জীবাণুর আক্রমণে দেহ অসুস্থ হলে সম্পূর্ণ নিরোগ হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায় না। কারণ দেহ বিকলাঙ্গ হতে পারে, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কুৎসিত দাগ হতে পারে, কিংবা জীবন হানিও ঘটতে পারে। অতএব, ভ্যাক্সিনের মতো অস্ত্র থাকতে আমরা কেন দুর্ভোগ পোহাব ?

৪. ভ্যাক্সিন গ্রহণের ফলে সৃষ্ট অ্যান্টিবডি দেহে দীর্ঘদিন বা আজীবন উপস্থিত থাকে। অ্যান্টিবডিগুলো জানে কিভাবে জীবাণুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয়ী হতে হয়। অতএব, ভ্যাক্সিন নেওয়ার পর ভবিষ্যতে যদি আসল জীবাণু দেহে প্রবেশ করে তাহলে অ্যান্টিবডির কৌশলে দেহের প্রতিরক্ষাতন্ত্র জীবাণু ধ্বংসে সক্রিয় হবে। 

৫. অনেক ভ্যাক্সিন আছে যা একবার নিলে আজীবন দেহে কর্মক্ষম থাকে। মাঝে-মধ্যে অতিরিক্ত ডোজ (booster shot) নিতে হয় । 

৬. কিছু ভ্যাক্সিন রয়েছে যা মিশ্র ভ্যাক্সিন নামে পরিচিত। এক্ষেত্রে কয়েকটি রোগের ভ্যাক্সিন যুক্ত করে দেহে প্রবেশ করানো হয়, যেমন-MMR (Measles, Mumps and Rubella) ভ্যাক্সিন ।

৭. প্রতিটি মানবদেহ (শিশু বা বয়স্ক) নির্দিষ্ট রোগ-ব্যাধির বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় পূর্ণ থাকে। কিন্তু সবার প্রতিরক্ষাতন্ত্র এক ও সবল নয় বলে ভ্যাক্সিনের মাধ্যমে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে সবল করা হয়। শিশু বয়সে কয়েকটি রোগের ভ্যাক্সিন নেওয়া থাকলে পরিবারও থাকে নিশ্চিন্ত ।

ভ্যাক্সিনের গুরুত্ব / প্রয়োজনীয়তা (Importance of Vaccines) শৈশব ও কৈশোরকালীন সময়ে ভ্যাক্সিন প্রয়োগ করা হয়। পোলিও, টাইফয়েড, ডিপথেরিয়াসহ অন্যান্য মারাত্মক জীবন ঝুঁকিপূর্ণ ও আজীবন কষ্টকর রোগ-ব্যাধির কবল থেকে নিজের বংশধরকে বাঁচাতে সবাই তৎপর থাকেন। সুস্থ পরিবার ও জাতি গড়তে সুস্থ-সবল বংশধর প্রয়োজন। এ কারণে শৈশবেই ভ্যাক্সিন দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি সবদেশের সরকার বিবেচনা করে থাকে।

ভ্যাক্সিন সুষ্ঠুভাবে কাজ করে, এর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া সামান্য। পৃথিবীতে প্রতিবছর ৩ মিলিয়ন লোকের জীবন রক্ষা হয় এবং রোগের কষ্ট থেকে ও স্থায়ী বিকলাঙ্গ হওয়া থেকে রক্ষা পায় আরও কয়েক মিলিয়ন মানুষ। ভ্যাক্সিনে প্রতিরোধযোগ্য হাম, হুপিংকাশি, পোলিও, টাইফয়েড প্রভৃতি যে সম্ভাব্য জটিলতা (হাসপাতালে ভর্তি, অঙ্গচ্ছেদ, মস্তিষ্কের ক্ষতি, পঙ্গুত্ব, মেনিনজাইটিস, বধিরতা, এমনকি মৃত্যু) সৃষ্টি করে তা থেকে মুক্তি পায় শিশু যদি ভ্যাক্সিন না নিয়ে থাকে তাহলে রোগ ব্যাধি অন্য শিশুতে ছড়াতে পারে। এমন শিশু রোগাক্রান্ত হতে পারে যার দেহে ভ্যাক্সিন প্রয়োগ সম্ভব নয়। (যেমন-লিউকেমিয়া বা অন্য কোনো ক্যান্সার আক্রান্ত, কিংবা অনাক্রম্যতন্ত্রে সমস্যা আছে এমন)। শিশুকে ভ্যাক্সিন না দিলে রোগ-ব্যাধি প্রচণ্ড শক্তি নিয়ে আবার সমাজে ফিরে আসবে। ভ্যাক্সিনেশনের ফলে শিশু থাকবে সুস্থ-সবল, হাসি- খুশি। অসুখে ভুগে মনমরা হয়ে ঘড়ে বসে থাকবে না। প্রত্যেক পিতা-মাতাই সন্তানের সুস্বাস্থ্য কামনা করেন। এ আশা পূরণে ভ্যাক্সিনেশন হচ্ছে সর্বোত্তম পন্থা। 

অতএব, দুশ্চিন্তাহীন জীবন যাপনের জন্য শুধু নিজের সন্তানকেই নয়, সমাজের প্রত্যেক পিতা-মাতার কাছে ভ্যাক্সিনেশনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা প্রয়োজন।

Content added By
Promotion