বৃক্কঃ মানুষের উদর গহ্বরের পেছন অংশে, মেরুদন্ডের দুপাশে বক্ষপিঞ্জরের নিচে ও পৃষ্ঠপ্রাচীর সংলগ্ন হয়ে দুটি বৃক্ক (Kidney) যুক্ত থাকে। সাধারণত বাম বৃক্কটি ডান বৃক্কের চেয়ে সামান্য উপরে থাকে ।
বাহ্যিক গঠনঃ প্রতিটি বৃক্ক নিরেট, চাপা দেখতে অনেকটা শিম বীজের মতো এবং লালচে রংয়ের। একটি পরিণত বৃক্কের দৈর্ঘ্য ১০-১২ সেন্টিমিটার, প্রস্থ ৫-৬ সেন্টিমিটার এবং স্থলত্ব ৩ দিক অবতল। অবতল অংশের ভাঁজকে হাইলাম (hilum) বলে। প্রত্যেকটির ওজন পুরুষে ১৫০-১৭০ গ্রাম এবং স্ত্রীলোকে ১৩০-১৫০ গ্রাম। এই হাইলামের মধ্য দিয়ে ইউরেটার ও রেনাল শিরা বহির্গত হয় এবং রেনাল ধমনি ও স্নায়ু বৃক্কে প্রবেশ করে। সমগ্র বৃক্ক ক্যাপসুল (capsule) নামক তন্তুময় যোজক টিস্যুর সুদৃঢ় আবরণে বেষ্টিত।
বৃক্কের অন্তর্গঠনঃ লম্বচ্ছেদে দেখা যায়, প্রতিটি বৃক্ক তিনটি অঞ্চলে বিভক্ত, যথা-বাইরের কর্টেক্স (cortex), মাঝখানে অবস্থিত মেডুলা (medulla) এবং ভিতরে পেলভিস (pelvis)। পেলভিস হলো বৃক্ক অভ্যন্তরে বৃহৎ সংগ্রাহক স্থান, যা ইউরেটারের উপরের প্রসারিত অংশ থেকে গঠিত হয় এবং মেডুলার গঠনসমূহকে ইউরেটারের সাথে সংযুক্ত করে। মেডুলা ৮-১৮টি রেনাল পিরামিড (renal pyramid) নিয়ে গঠিত। রেনাল পিরামিড অনুদৈর্ঘ্যভাবে ডোরাকাটা এবং কৌণাকৃতি অঞ্চল। প্রতিটি পিরামিড শীর্ষ প্যাপিলায় শেষ হয়। প্যাপিলা হাইলামের দিকে নির্দেশিত। কর্টেক্স বৃক্কের সর্বাধিক বাইরের অংশ, এবং বহিঃস্থ কর্টিক্যাল (cortical) অঞ্চল ও অন্তঃস্থ জাক্সটেমেডুলারি (juxtamedulary) অঞ্চল নামক দুটি অঞ্চলে বিভক্ত। কর্টেক্স অঞ্চলে নেফ্রনের রেনাল করপাসল, প্রক্সিমাল প্যাচানো নালিকা অবস্থান করে।
বৃক্কের কাজঃ
* রক্ত থেকে প্রোটিন বিপাকে সৃষ্ট নাইট্রোজেন জাতীয় বর্জ্য অপসারণ করা।
* দেহে এবং রক্তে পানির ভারসাম্য রক্ষা করা।
* রক্তে সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফেট এবং ক্লোরাইডসহ বিভিন্ন লবণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা। * রক্তে অম্ল ও ক্ষারের ভারসাম্য রক্ষা করা।
* যথাযথ আয়নিক কম্পোজিশন বজায় রাখা।
* হরমোন (যথা-এরিথ্রোপোয়েটিন) নিঃসরণ করা।
* এনজাইম (যথা-রেনিন, Fennin) নিঃসরণ করা।
* রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা।
* দেহে প্রবিষ্ট প্রতিবিষ ও ভেষজ পদার্থসমূহকে দেহ থেকে অপসারণ করা।