ওজোনের বৈশিষ্ট্য কি কি?

Created: 2 years ago | Updated: 1 year ago
Updated: 1 year ago

পৃথিবীকে বেষ্ঠন করে যে বিভিন্ন রকম গ্যাসের অবস্থান লক্ষ্য করা যায়, তাকেই বায়ুমণ্ডল বলে। এই গ্যাস গুলি পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষন শক্তির দ্বারা পৃথিবীর উপর স্তর সৃষ্টির মাধ্যমে অবস্থান করে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল গঠন করেছে। এই বায়ুমণ্ডল সূর্য থেকে আগত অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে, তাপ শোষণের মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠ কে উত্তপ্ত করে ও দৈনিক উষ্ণতার প্রসরকে হ্রাসের মাধ্যমে পৃথিবীকে প্রানধারনের উপযুক্ত করে তুলেছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বায়ুমণ্ডলের উচ্চতা প্রায় ১৬ থেকে ২৯ কিলোমিটার। বায়ুমণ্ডলীয় বিভিন্ন গ্যাস তথা বায়ুমণ্ডলের গঠনগত উপাদান এবং বিভিন্ন উচ্চতায় এই উপাদান গুলির অবস্থানের উপর ভিত্তিকে করে বিভক্ত বিভিন্ন বায়ুমণ্ডলীয়  স্তর গুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হল।  এটি অনুমান করা হয় পৃথিবী বায়ুমণ্ডলের প্রায় ৯৭% সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ২৯ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত।


 

বায়ুমণ্ডলের উপাদান সমূহ –


পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল মূলত তিন ধরণের উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত – ১. বিভিন্ন রকমের গ্যাস ২. জলীয় বাষ্প ৩. ধূলিকনা

১. গ্যাসীয় উপাদান – বায়ুমণ্ডলে বিভিন্ন ধরণের গ্যাসের সমন্বয়ে গঠিত । যেমন – নাইট্রোজেন (৭৮%), অক্সিজেন (২১%) বায়ুমণ্ডলের প্রধান গ্যাস যা মোট গ্যাসের প্রায় ৯৯% দখল করে আছে।  বাকি ১% অধিকার করে আছে আর্গন (০.৯৩%), কার্বন-ডাই-অক্সাইড (০.০৩%), নিয়ন (০.০০১৮%), হিলিয়াম, ওজোন, হাইড্রোজেন, মিথেন প্রভৃতি।

ক. অক্সিজেন – জীবজগতের বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেন অপরিহার্য কারণ জীব তাদের শ্বাসকার্যের জন্য বায়ুমণ্ডলের অক্সিজেন গ্রহন করে। অক্সিজেন ছাড়া জীব জগতের বেঁচে থাকা সম্ভব হত না।

খ. নাইট্রোজেন – বায়ুমণ্ডলের অপর একটি গুরুত্বপূর্ন গ্যাস হল নাইট্রোজেন যা বায়ুমণ্ডলের মোট গ্যাসের প্রায় ৭৮% দখল করে আছে। নাইট্রোজেন উদ্ভিদ ও প্রানীর কোশের গঠনে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে।

গ. কার্বন ডাই অক্সাইড – বায়ুমণ্ডলের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ন গ্যাস কার্বন ডাই অক্সাইড যা বায়ুমণ্ডলের শুষ্ক গ্যাসের মাত্র ০.০৩% দখল করে আছে। সবুজ উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার সময় বায়ুমণ্ডলের সময় বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহন করে। কার্বন ডাই অক্সাইড পার্থিব বিকিরনের কিছু অংশ শোষণ করে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তাই এই গ্যাস পৃথিবীর জলবায়ু নিয়ন্ত্রনে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে।

ঘ. ওজোন – অপর একটি গুরুত্বপূর্ন গ্যাস হল ওজোন, যা খুব অল্প পরিমানে উদ্ধ বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত রয়েছে। যার পরিমান মাত্র ০.০০০৫% । ওজোন গ্যাসের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যায় ২০ থেকে ২৫ কিমি উচ্চতার মধ্যে। এই ওজোন গ্যাস সূর্য থেকে আগত অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে জীবজগতকে তার ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে রক্ষা করে।

২. জলীয় বাষ্প – বায়ুমণ্ডলের একটি পরিবর্তনশীল উপাদান হল জলীয় বাষ্প, বায়ুতে যার পরিমান অতি সামান্য। বায়ুতে উপস্থিত জলীয় বাষ্পের পরিমান শীতল শুষ্ক জলবায়ুতে মাত্র ০.০২%  এবং ক্রান্তীয় আর্দ্র জলবায়ুতে ৪% মতো হয়ে থাকে।  

কার্বন ডাই অক্সাইডের মতো জলীয় বাষ্পও কোন স্থানের জলবায়ু ও আবহাওয়ার পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা গ্রহন করে থাকে। জলীয় বাষ্প কেবলমাত্র পার্থিব বিকিরনের দীর্ঘ তরঙ্গ শোষণ করে না তা আগত সৌর বিকিরনের কিছু অংশ শোষণ করতেও সক্ষম। এই জলীয় বাষ্প মেঘ ও বৃষ্টিপাতের প্রধান উৎস।

এই জলীয় বাস্পের প্রায় ৯০% রয়েছে মাত্র ৬ কিলোমিটারের মধ্যে এবং মাত্র ১% বা তারও কম জলীয় বাষ্প ১০ কিমির উদ্ধে পাওয়া যায়।

৩. বায়ুমণ্ডলে ক্ষুদ্র কঠিন কনা বা অ্যারোসল – বায়ুতে উপস্থিত সমস্ত রকম কঠিন কনা গুলি কে অ্যারোসল বলা হয়ে থাকে। আবহবিদদের মতে এই সূক্ষ্ম কনা গুলি বায়ুমণ্ডলে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে থাকে। যেমন – এই কনা গুলি সূর্য থেকে আগত তাপের কিছু অংশ শোষণ করতে যেমন সক্ষম তেমনি এই কনা গুলির দ্বারা সৌর তাপের কিছু অংশ প্রতিফলিত হয়ে আবার মহাশূন্যে ফিরে যায়। আকাশের যে নীল রঙ দেখা যায় তার মূল কারণ হচ্ছে এই ক্ষুদ্র ধূলিকনার দ্বারা সূর্যের আলোর বিচ্ছূরন। এই ধূলিকনা গুলি আকাশে মেঘ ও কুয়াশা সৃষ্টি তে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে।         


 

বায়ুমণ্ডলের স্তর বিন্যাস

তাপমাত্রা ও বায়ুর চাপের ওপর ভিত্তি করে বায়ুমণ্ডল কে মোট পাঁচটি স্তরে ভাগ করা হয়। যথা – ১. ট্রপোস্ফিয়ার   ২. স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার  ৩. মেসোস্ফিয়ার  ৪. থার্মোস্ফিয়ার  ৫. এক্সোস্ফিয়ার


১. ট্রপোস্ফিয়ার – বায়ুমণ্ডলের সর্বনিম্ন স্তরকে ট্রপোস্ফিয়ার বলা হয় । Teisserene de Bore ট্রপোস্ফিয়ার নামকরন করেন। ট্রপোস্ফিয়ার শব্দটির অর্থ region of mixing ।

ক. ট্রপোস্ফিয়ারের গড় উচ্চতা নিরক্ষরেখার উপর ১৬ কিমি এবং মেরুর উপর ৮ কিমি।

খ. এটি একটি গুরুত্বপূর্ন স্তর কারণ এখানে সমস্ত রকম আবহাওয়াগত ঘটনা ঘটে থাকে । যেমন – বৃষ্টিপাত, ঝড়, কুয়াশা, মেঘ, বর্জ্রপাত প্রভৃতি।

গ. ট্রপোস্ফিয়ারের একটি গুরুত্বপূর্ন বৈশিষ্ট্য হল এই স্তরে উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে তাপমাত্রা হ্রাস পায়, প্রতি হাজার মিটার উচ্চতা বৃদ্ধিতে ৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস করে। এই ঘটনাকে বলা হয় তাপমাত্রার স্বাভাবিক হ্রাস বা Normal Lapse rate ।

ঘ. ট্রপোস্ফিয়ারের উদ্ধ অংশ কে বলা হয় ট্রপোপজ। যা প্রায় ১.৫ কিমি গভীর। ট্রপোপজের উচ্চতা নিরক্ষরেখার উপর ১৭ কিমি এবং মেরুর ওপর ৯ থেকে ১০ কিমি। ট্রপোপজ কথার অর্থ হল “ সেখানে মিশ্রন বন্ধ হয়ে যায়”।


২. স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার – ট্রপোস্ফিয়ারের ওপরের অংশকে বলা হয় স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার। যার উচ্চতা ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৫০ কিমি।

ক. স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে উষ্ণতা বাড়তে থাকে এবং ৫০ কিমি উচ্চতায় তাপমাত্রা গিয়ে পৌঁছায় শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

খ. স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার তেমন কোন আবহাওয়া গত ঘটনা লক্ষ্য করা যায় না, তাই একে শান্ত মণ্ডল বলা হয়।

গ. স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের নিম্ন অংশে (১৫ থেকে ৩৫ কিমির মধ্যে) ওজোন গ্যাসের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়, যা আমাদের সূর্যের ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি থেকে রক্ষা করে।

ঘ. স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের ওপরের অংশ কে বলা হয় স্ট্র্যাটোপজ।


৩. মেসোস্ফিয়ার  - মেসোস্ফিয়ারের বিস্তৃতি ভূপৃষ্ঠ থেকে ৫০ থেকে ৮০ কিলোমিটারের মধ্যে।

ক. মেসোস্ফিয়ারে উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে উষ্ণতা আবার কমতে থাকে।

খ. বায়ুমণ্ডলের সমস্ত স্তরের মধ্যে মেসোস্ফিয়ার সবচেয়ে শীতল। মেসোস্ফিয়ারের উদ্ধে তাপমাত্রা – ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নেমে যায়।


৪. থার্মোস্ফিয়ার বা আয়নোস্ফিয়ার – মেসোস্ফিয়ারের পরবর্তী অংশকে থার্মোস্ফিয়ার বলা হয়। যেখানে উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে তাপমাত্রা দ্রুত বাড়তে থাকে। এটি অনুমান করা হয় যে থার্মোস্ফিয়ারের উপরের অংশে তাপমাত্রা প্রায় ১৭০০ ডিগ্রি। এই স্তরটি বিস্তৃতি ৮০ কিমি থেকে ৬৪০ কিমি পর্যন্ত।

৫. এক্সোস্ফিয়ার – বায়ুমণ্ডলের সর্বশেষ স্তর কে বলা হয় এক্সোস্ফিয়ার। এই স্তরে হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাসের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।

Content added || updated By
Promotion