একটি সংক্রমণযোগ্য ভাইরাস কণাকে ভিরিয়ন (virion) বলে । ভাইরাসের গঠনগত প্রধান দুটি উপাদান হলো ক্যাপসিড (প্রোটিন) ও নিউক্লিক এসিড। এগুলোকে নিউক্লিওক্যাপসিড বা নিউক্লিওপ্রোটিন কণাও বলা হয়। এই ভাইরাসের ক্ষেত্রে সাধারণত নিউক্লিওক্যাপসিড কণার বাইরে যে বহিরাবরণ থাকে তার নাম এনভেলপ (envelope) খুব কম ক্ষেত্রে ভাইরাসের দেহে কয়েকটি এনজাইম-এর সন্ধান পাওয়া গেছে। নিচে একটি সাধারণ ভাইরাসের বিভিন্ন অংশের গঠন ও কাজ বর্ণনা করা হলো।
ক্যাপসিড (Capsid) : ভাইরাস দেহের মধ্যভাগে নিউক্লিক এসিডকে ঘিরে থাকা প্রোটিন আবরণকে ক্যাপসিড বলে। ক্যাপসিড প্রকৃতপক্ষে অসংখ্য প্রোটিন সাব-ইউনিট বা উপ-একক নিয়ে গঠিত, এগুলোকে ক্যাপসোমিয়ার (capsomcre) বলে ক্যাপসিড গঠনে ক্যাপসোমিয়ারের সজ্জাক্রমে প্রতিসাম্য (symmetry) থাকে। ক্যাপসিড সাধারণত প্রোটিন নির্মিত হলেও ক্ষেত্রবিশেষে এতে স্নেহ পদার্থ ও শ্বেতসারও পাওয়া যায়। অন্তঃস্থ নিউক্লিক এসিডকে রক্ষা করা ক্যাপসিডের প্রধান কাজ। এ ছাড়া ক্যাপসিড অ্যান্টিজেন হিসেবেও কাজ করে।
নিউক্লিওয়েড (Nucleoid): ক্যাপসিড মধ্যস্থ নিউক্লিক এসিডকে নিউক্লিওয়েড বলে। নিউক্লিওয়েড সবসময় যে কোনো একধরনের নিউক্লিক এসিড অর্থাৎ DNA বা RNA নিয়ে গঠিত। DNA দ্বিসূত্রক বা একসূত্রক হয়। আবার RNA-ও একসূত্রক বা দ্বিসূত্রক হতে পারে। দ্বিসূত্রক DNA যুক্ত ভাইরাস হচ্ছে T2 T4, ফাজ ভাইরাস। একসূত্র DNA ভাইরাস হচ্ছে কলিফাজ ইত্যাদি। একসূত্রক RNA যুক্ত ভাইরাস হলো TMV। রিওভাইরাস দ্বিসূত্রক RNA যুক্ত ভাইরাস। সাধারণত একটি মাত্র নিউক্লিক এসিড অণু নিয়ে নিউক্লিওয়েড গঠিত হলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে একাধিক অগ্র থাকতে পারে। যেমন-রেট্রো ভাইরাসে দুইঅণু একসূত্রক RNA থাকে। নিউক্লিওয়েড কুন্ডলিত অবস্থায় থাকে। নিউক্লিওয়েড হচ্ছে ভাইরাসের বংশগতি বস্তু। পোষকদেহ সংক্রমণ ও প্রতিলিপি গঠনে নিউক্লিওয়েড প্রধান ভূমিকা পালন করে।
এনভেলপ (Envelope): কিছু সংখ্যক প্রাণী ভাইরাস, খুব কম সংখ্যক উদ্ভিদ ও ব্যাকটেরিয়াল ভাইরাসে ক্যাপসিডের বাইরে একটি ১০-১৫ nm পুরু আবরণ থাকে একে এনভেলপ বলে। এটি প্রোটিন, লিপিড ও শর্করা নিয়ে গঠিত। এনভেলপের গঠনগত একককে পেলপোমিয়ার (pelpomere) বলে । এনভেলপযুক্ত ভাইরাসকে লিপোভাইরাস (Lipovirus) বলা হয়। এনভেলপের বহিঃতল মসৃণ বা কাঁটাযুক্ত হতে পারে, কাঁটাগুলোকে স্পাইক (spike) বলে। এনভেলপবিহীন ভাইরাসকে নগ্ন ভাইরাস (naked virus) বলে।
এনজাইম (Enzymes) : ভাইরাসের দেহে সবসময় এনজাইম থাকে না। কিছু ক্ষেত্রে এনজাইমের উপস্থিতি দেখা যায়, যেমন-ব্যাকটেরিওফাজে লাইসোজাইম, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসে নিউরামিনিডেজ এবং অন্যান্য এনজাইমের মধ্যে আছে RNA পলিমারেজ, RNA ট্রান্সক্রিপটেজ, রিভাস ট্রান্সক্রিপটেজ ইত্যাদি।)
দুটি ভাইরাসের গঠন – TMV ও T2 ফাজ
১. টোবাকো মোজাইক ভাইরাস (Tobacco Mosaic Virus) বা TMV :
দন্ডাকৃতির এই ভাইরাসটির দৈর্ঘ্য ২৮০ nm থেকে ৩০০ nm এবং প্রস্থ ১৫ nm থেকে ১৮ nm পর্যন্ত হয়ে থাকে। TMV ভাইরাস প্রোটিন ও RNA দিয়ে গঠিত । বাইরের পুরু প্রোটিন আবরণটিকে ক্যাপসিড বলে। ক্যাপসিড বহু উপএকক দিয়ে গঠিত। এদের নাম ক্যাপসেমিয়ার TMV তে প্রায় ২২০০ ক্যাপসোমিয়ার পাওয়া যায়।
প্রতিটি ক্যাপসোমিয়ারে ১৫৮ অ্যামিনো এসিড
থাকে। ক্যাপসিডের অভ্যন্তরে একসূত্রক RNA কোর
(core) থাকে। RNA সূত্রটি ৬৫০০ নিউক্লিওটাইড
দিয়ে গঠিত। ওজন হিসেবে এর শতকরা প্রায় ৯৫
ভাগই প্রোটিন। TMV-এর আণবিক ওজন ৩৭ মিলিয়ন ডাল্টন এবং RNA-এর আণবিক ওজন ২.৪
মিলিয়ন ডাল্টন। প্রতিটি প্রোটিন উপ-এককের মানবিক ওজন ১৭,০০০ ডাস্টন
২. ব্যাকটেরিওফাজ বা T2 ফাজ (Bacteriophage or T2 Phage ):
T2, ব্যাকটেরিওফাজ সর্বাধিক পরিচিত ভাইরাস। এর গঠন বেশ জটিল হলেও এ সম্পর্কে অপেক্ষাকৃত ভালভাবে জানা গেছে। এর দৈহিক গঠন ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ ব্যাঙাচি /শুক্রাণুর মতো । T2 ফাজদের দেহকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়, যথা-
মাথা ও লেজ ।
মাথা (Head)
মাথাটি স্ফীত ও ষড়ভূজাকৃতির । এর বাইরের আবরণ দ্বিস্তরী প্রোটিন বা ক্যাপসিড (capsid) দ্বারা তৈরী । প্যাঁচানো DNA বিদ্যমান। দ্বিসূত্রকবিশিষ্ট
মাথার অভ্যন্তরের দৈর্ঘ্য প্রায় ৯৩-১০০ ন্যানোমিটার (nm) এবং প্রস্থ প্রায় ৬৫ ন্যানোমিটার (nm)। DNA তে প্রায় ১৫০টি জিন রয়েছে।
লেজ (Tail) :
মাথার নিচের লম্বা, ফাঁপা অংশটিই লেজ। লেজ এর দৈর্ঘ্য ১০০ ন্যানোমিটার এবং ব্যাস প্রায় ২৫ ন্যানোমিটার। লেজের আবরণটি সাধারণত দৃঢ় ও সংকোচনশীল। তবে কোন কোন ফাজ এর লেজ নরম, নমনীয় ও আবরণবিহীন। লেজের ভিতরে কোন DNA থাকে না, লেজ ও মাথার সংযোগস্থলে একটি কলার (collar) অবস্থিত। লেজের নিচের প্রান্ত কিছুটা সরু হয়ে ভিত্তি ফলক বা বেসপ্লেট (base plate) তৈরি করে। (বেসপ্লেট এর চারপাশে ৬টি (৩ + ৩) সরু ও লম্বা স্পর্শক তন্তু এবং কতকগুলো (ক্ষেত্রবিশেষে ৩টি) কাঁটা থাকে যাদেরকে স্পাইক (spike) বলে। এ তত্ত্ব ও স্পাইক এর মাধ্যমে এরা পোষককোষ ব্যাকটেরিয়াকে আক্রমণ করে। T2 ফাজ যেহেতু অকোষীয় বস্তু তাই এতে কোন নিউক্লিয়াস, সাইটোপ্লাজম, সাইটোপ্লাজমীয় পর্দা ও অঙ্গাণু নেই।