পাইরুভিক এসিড থেকে উৎপাদিত ২-কার্বন বিশিষ্ট যৌগ অ্যাসিটাইল Co-A একটি জটিল চক্রের মাধ্যমে জারিত হয়ে CO2 এবং পানি প্রস্তুত করে। এ চক্রটির বিশদ বিবরণ ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের প্রাণরসায়নবিদ স্যার হ্যানস ক্রেবস (Sir Hans Adolf Krebs, 1900 – 1981) প্রদান করেছিলেন । এজন্য তাঁর নামানুসারে এ চক্রকে ক্রেবস চক্র বলা হয়। এ চক্রের প্রথম উৎপাদিত যৌগ সাইট্রিক এসিড হওয়ায় ক্রেবস চক্রকে সাইট্রিক এসিড চক্র (Citric Acid Cycle)-ও বলে। সাইট্রিক এসিডে তিনটি কার্বক্সিল -COOH) গ্রুপ থাকায় একে বর্তমানে ট্রাই কার্বক্সিলিক এসিড চক্র বা টিসিএ চক্র (Tricarboxylic Acid Cycle বা TCA Cycle) বলে। ক্রেবস চক্রের সমগ্র বিক্রিয়াগুলো মাইটোকন্ড্রিয়ার মাতৃকার মধ্যে সম্পন্ন হয়। প্রকৃতপক্ষে, পাইরুভিক এসিডের সবাত জারণ (Aerobic Oxidation of Pyruvic Acid) ক্রেবস চক্রের মাধ্যমেই ঘটে
উদ্ভিদ ও প্রাণীর ক্রেবস চক্রের পার্থক্যঃ
১. উদ্ভিদে সাকসিনিল Co-A সিনথেটেজ ATP তৈরি করে কিন্তু প্রাণীতে GTP তৈরি হয়। GTP পরে একটি এনজাইম বিক্রিয়ার মাধ্যমে ATP-তে রূপান্তরিত হয়।
২. আজ পর্যন্ত পরীক্ষাকৃত সকল উদ্ভিদ মাইটোকন্ডিয়াতে NAD - malic enzyme পাওয়া গিয়াছে) এই এনজাইম ম্যালিক এসিড (ম্যালেট) কে পাইরুভিক এসিড-এ রূপান্তরিত করে যা অ্যাসিটাইল Co-A সৃষ্টির মাধ্যমে ক্রেবস চকে প্রবেশ করে। প্রাণীতে এরূপ বিক্রিয়া ঘটে না ।
ক্রেবস চক্রের গুরুত্বঃ
১. ক্রেবস চক্র শক্তি উৎপাদনের প্রধান কেন্দ্র । শ্বসনে উৎপাদিত শক্তির অধিকাংশ এ চক্রের মাধ্যমে ঘটে ।
২. শর্করা, ফ্যাটি এসিড এবং অ্যামিনো এসিডের জারণের সাধারণ পথ হচ্ছে ক্রবস চক্র।
৩. ক্রেবস চক্রে প্রতি অণু গ্লুকোজের সম্পূর্ণ জারণে ২৪ অণু ATP উৎপন্ন হয়।
৪. ৫- কিটোগ্লটাকি এসিড ও অক্সালো অ্যাসেটিক এসিড N2 বিপাকের সাথে সরাসরি যোগসূত্র স্থাপন করে।
৫. ক্রেবস চক্রে উৎপন্ন সাক্সিনিল Co-Aক্লোরোফিল, হিমোগ্লোবিন, সাইট্রোক্রোম প্রভৃতি যৌগ সংশ্লেষে অংশ গ্রহণ করে।
৬. ক্রেবস চক্রে উৎপন্ন অক্সালো অ্যাসেটিক এসিড পিরিমিডিন, অ্যালকালয়েড যৌগ তৈরিতে অংশ গ্রহণ করে।
৭. ক্রেবস চক্রে উৎপন্ন জৈব এসিডগুলো জৈব এসিড বিপাকে অংশগ্রহণ করে।
৮. আমরা শ্বসনে যে কার্বন ডাইঅক্সাইড ত্যাগ করি তা এই চক্র থেকেই উৎপন্ন হয়।