কুষ্ঠরোগ সম্পর্কে নিচের কোনটি সঠিক?
বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ, প্রাণী ও মানুষের রোগ সৃষ্টির সাথে ব্যাকটেরিয়া ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। এরা মানুষের কলেরা, টাইফয়েড, টিটেনাস, যুগ্মা, ডিপথেরিয়া, হুপিংকাশি, রক্ত আমাশয় ইত্যাদি রোগ সৃষ্টি করে। ধানের পাতার ব্লাইট, গমের টুন্ডু, আখের আঠাঝরা, গোল আলুর বাদামি পচা, লেবুর ক্যাংকার, টমেটো, আলু, শশা, কুমড়ার উইন্ট, সিমের ধ্বসা ইত্যাদি বহু রোগের জন্য এরা দায়ী। এখানে ব্যাকটেরিয়াজনিত ধান গাছের রাইট ও মানুষের কলেরা রোগ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
ধানের ধ্বসা বা ব্লাইট রোগ (Bacterial Blight of Rice) ধান গাছের পাতার এই রোগ Xanthomonas oryzae নামক ব্যাকটেরিয়াম-এর আক্রমণের ফলে ঘটে। ধান গাছের ক্ষতিকর রোগগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে জাপানে এ রোগের অস্তিত্বের বিবরণী প্রকাশিত হয়। জাপান, ফিলিপাইন, তাইওয়ান, চীন, মেক্সিকো প্রভৃতি দেশে এ রোগ মহামারী হয়ে এসেছিল। বর্তমানে ভারত ও লেবায় বাংলাদেশের ধান ফসলের জন্য এটি এক প্রধান সমস্যা।
রোগের উৎপত্তি ও বিস্তার : একাধিক উৎস থেকে রোগাক্রমণ ঘটতে পারে, যেমন- রোগাক্রান্ত বীজ, রোগাক্রান্ত খড়, জমিতে পড়ে থাকা রোগাক্রান্ত শস্যের অবশিষ্টাংশ ইত্যাদি। X. oryzae বীজ ও মাটির মধ্যে অনেকদিন বেঁচে থাকতে পারে । নানান আগাছা ব্যাকটেরিয়ার বেঁচে থাকার উপযোগী পরিবেশ। যে সব খাল-বিলের পানি ধানক্ষেতে সেচের জন্য ব্যবহার করা হয় তারমধ্যে ব্যাকটেরিয়া সারাবছর বেঁচে থাকতে পারে এবং দূষিত খাল-বিলের পানি গ্রীষ্মমন্ডলে রোগ উৎপত্তির অন্যতম প্রধান কারণ। সাধারণত পাতার উপরিস্থিত হাইডাথোডের ছিদ্র, কান্ডে নতুন শিকর গজানোর সময় পাতার গোড়ার দিকে যে ফাটল দেখা দেয় এবং অন্যান্য ক্ষতস্থান দিয়ে ব্যাকটেরিয়া ধানগাছের মধ্যে অণুপ্রবেশ করে । বীজতলা থেকে চারা উঠানোর সময় শিকড় ছিঁড়ে এবং চারা রোপনের আগে পাতার আগা কেটে ফেলার পথে রা জন্য যে ক্ষতের সৃষ্টি হয় তার মধ্য দিয়ে ব্যাকটেরিয়া সহজে গাছের মধ্যে প্রবেশ করে। আক্রান্ত গাছের পাতা থেকে পরিমা ব্যাকটেরিয়া বাতাস ও বৃষ্টির ছিটার সাহায্যে এক পাতা থেকে অন্য পাতায় এবং এক গাছ থেকে অন্য গাছে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ক্ষতের পানির মাধ্যমেও ব্যাকটেরিয়া মাঠের অন্যান্য ক্ষেতে ছড়িয়ে রোগ সংক্রমণ করে। রোগের লক্ষণ : সাধারণত চারা লাগানোর পাঁচ-ছয় সপ্তাহ পরে এ রোগ দেখা দেয়।
রোগের লক্ষণগুলো হচ্ছে-
১. প্রাথমিক অবস্থায় পাতার কিনারার দিকে পানি ভেজার মতো দাগ দেখা দেয়। ক্রমে ঐ দাগ হলদে থেকে সাদা আলোর রঙের জলছাপের মতো দাগ সৃষ্টি করে।
২. আক্রান্ত অংশ অনেকটা ঢেউ খেলানোর মতো দেখায় এবং কয়েক দিনের মধ্যে ঝলসে শুকিয়ে খড়ের রঙ ধারণ করে।
৩. দাগের একপ্রান্ত বা উভয় প্রান্তে অথবা ক্ষত পাতার যে কোন স্থান থেকে শুরু হয়ে দাগ ধীরে ধীরে পাতার সবস্তরে ছড়িয়ে পড়ে । সংবেদনশীল জাতের ধান গাছে দাগ পাতার খোলসের নিচ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে ।
৫. পাতায় সদ্য আক্রান্ত অংশে ভোরের দিকে দুধ বর্ণের আঠালো ফোঁটা জমতে দেখা যায় যা পরে শুকিয়ে কমলা রঙের ছোট ছোট পুতির দানার মতো আকার ধারণ করে।
৬. এসব দানা অসংখ্য ব্যাকটেরিয়ার সমন্বয়ে গঠিত যা সামান্য বাতাসে ধুলোর মতো উড়ে যায় ।
৭. ধানের ছড়া বন্ধ্যা হয়, তাই ফলন ৬০% পর্যন্ত কম হতে পারে।
প্রতিরোধ ও প্রতিকার
১. যেহেতু এ রোগ বীজধানের মাধ্যমে ছড়ায়, তাই এ রোগ নিয়ন্ত্রনের প্রধান উপায় বীজ শোধন । ব্লিচিং পাউডার (১০০ mg/ml) এবং জিঙ্ক সালফেট (২%) দিয়ে বীজ শোধন করলে রোগের আক্রমন বহুলাংশে কমে যায়।
২. ধান চাষের জন্য রোগ প্রতিরোধক্ষম প্রকরণ ব্যবহার করতে হবে।
৩. জমিতে অবশ্যই আগাছামুক্ত রাখতে হবে, ফসল কাটার পর জমি চাষে গোড়াগুলো জড়ো করে পুড়িয়ে ফেললে রোগের উৎস নষ্ট হয় এবং পুনরাক্রমনের সম্ভাবনা কমে।
৪. উঁচু জমিতে বীজতলা করতে হবে। যাতে অন্য জমির পানি বীজতলায় প্রবেশ করতে না পারে।
৫. বীজতলায় পানি কম রাখতে হবে, অতি বৃষ্টির সময় পানি সরানোর ব্যবস্থা রাখতে হবে ।
৬. বীজতলায় পানি কম রাখতে হবে, অতিবৃষ্টির সময় পানি সরানোর ব্যবস্থা রাখতে হবে। চারা থেকে চারার দূরত্ব, লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব, সার প্রয়োগ (বিশেষ করে ইউরিয়া) বিজ্ঞানসম্মত হতে হবে।
৭. বীজ বুনা বা চারা লাগানোর আগে জমিকে ভালোভাবে শুকাতে হবে, পরিত্যক্ত খড় ও আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলতে হবে'।
৮. রোপণের সময় চারাগাছের পাতা ছাঁটাই করা নিষেধ।
৯. নাইট্রোজেন সার বেশি ব্যবহার করা যাবে না।
১০.ফিনাইল সালফিউরিক এসিডের এম. ক্লোরামফেনিকল ১০-২০ লিটার পরিমাণে মিশিয়ে আক্রান্ত ক্ষেতে ছিটালে রোগ নিয়ন্ত্রণ হয়।
১১.বীজ বপনের আে ০.১% সিরিসান দ্রবণে ৮ ঘণ্টা ভিজিয়ে বীজবাহিত সংক্রমণ রোধ হয় ।