কোন অবস্থায় Hydra সিস্ট তৈরি হয়?

Created: 2 years ago | Updated: 2 years ago
Updated: 2 years ago

Hydra–র জননঃ Hydra অযৌন ও যৌন উভয় প্রক্রিয়ায় বংশ বৃদ্ধি করে।  

অযৌন জনন (Asexual reproduction):
গ্যামেট উৎপাদন ছাড়াই যে জনন সম্পাদিত হয় তাকে অযৌন জনন বলে। এ ধরনের জনন পদ্ধতিতে একটি মাত্র জনিতা থেকেই নতুন জীবের সৃষ্টি হয়। Hydra দু’ভাবে অযৌন জনন সম্পন্ন করে, যথা— মুকুলোদগম ও বিভাজন।


১. মুকুলোদগম (Budding) : এটি অযৌন জননের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। বছরের সব ঋতুতেই বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ থাকায় এটি বেশি ঘটে। নিম্নোক্ত বেশ কয়েকটি ধাপে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়।

*প্রক্রিয়ার শুরুতে দেহের মধ্যাংশ বা নিম্নাংশের কোন স্থানের এপিডার্মিসের ইন্টারস্টিশিয়াল কোষ দ্রুত বিভাজিত হয়ে একটি ক্ষুদ্র স্ফীত অংশের সৃষ্টি করে।
স্ফীত অংশটি ক্রমশ বড় হয়ে ফাঁপা, নলাকার মুকুল (bud)-এ পরিণত হয়। এতে এপিডার্মিস, মেসোগ্লিয়া ও গ্যাস্ট্রোডার্মিস সৃষ্টি হয়।
*মাতৃহাইড্রার সিলেন্টেরন মুকুলের কেন্দ্রে প্রসারিত হয়।
*মুকুলটি মাতৃহাইড্রা থেকে পুষ্টি গ্রহণ করে বড় হয় এবং শীর্ষপ্রান্তে গঠিত হয় মুখছিদ্র, হাইপোস্টোম ও কর্ষিকা।
*এসময় মাতৃহাইড্রা ও মুকুলের সংযোগস্থলে একটি বৃত্তাকার খাঁজের সৃষ্টি হয়। খাঁজটি ক্রমে গভীর হয়ে মুকুল তথা অপত্য হাইড্রাকে মাতৃহাইড্রা থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
*অপত্য হাইড্রার বিচ্ছিন্ন হওয়ার প্রান্তে পাদ-চাকতি গঠিত হয়।
*শিশু হাইড্রা কিছুক্ষণ বিচরণের পর নিমজ্জিত কোনো বস্তুর সংলগ্ন হয়ে স্বাধীন জীবন যাপন শুরু করে।

ঘটনাক্রমে একটি Hydra-য় বেশ কয়েকটি মুকুলের সৃষ্টি হতে পারে। এসব মুকুল আবার নতুন মুকুল সৃষ্টি করতে পারে। সম্পূর্ণ মাতৃ Hydra-কে তখন একটি দলবদ্ধ প্রাণীর মতো দেখায়। মুকুল সৃষ্টি এবং মাতৃ Hydra থেকে পৃথক হয়ে স্বাধীন জীবন-যাপন করতে প্রায় তিন সপ্তাহ সময় লাগে।

২. বিভাজন (Fission) : বিভাজন কোনো স্বাভাবিক জনন প্রক্রিয়া নয় কারণ এটি দৈবাৎ সংঘটিত হয়। কোন বাহ্যিক কারণে হাইড্রার দেহ দুই বা ততোধিক খণ্ডে বিভক্ত হলে প্রত্যেক খণ্ড থেকে নতুন হাইড্রা জন্মায়। একে পুনরুৎপত্তি (regeneration) বলে, কারণ এ প্রক্রিয়ায় দেহের হারানো বা বিনষ্ট অংশ পুনর্গঠিত হয়।

প্রকৃতিবিজ্ঞানী ট্রেম্বলে (Trembley) ১৭৪৪ সালে সর্বপ্রথম Hydra-র পুনরুৎপত্তি ক্ষমতার কথা উল্লেখ করেন। এক্ষেত্রে বিচ্ছিন্ন অংশের ইন্টারস্টিশিয়াল কোষ অতিদ্রুত বিভক্ত ও রূপান্তরিত হয়ে বিভিন্ন কোষ সৃষ্টি করে। এসব কোষ দিয়ে দেহের এ ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্ন বিভিন্ন অংশ গঠনের মাধ্যমে অপত্য হাইড্রার বিকাশ ঘটে। সুতরাং হাইড্রার স্বাভাবিক মৃত্যু নেই। বিভাজন দুভাবে হতে পারে, যথা- অনুদৈর্ঘ্য বিভাজন ও অনুপ্রস্থ বিভাজন।

অনুদৈর্ঘ্য বিভাজন : হাইড্রার দেহ কোনো কারণে লম্বালম্বি দুই বা ততোধিক খন্ডে বিভক্ত হলে প্রত্যেক খণ্ড থেকে পৃথক হাইড্রার উৎপত্তি হয়।
অনুপ্রস্থ বিভাজন : কোনো কারণে হাইড্রার দেহ অনুপ্রস্থভাবে একাধিক খণ্ডে বিভক্ত হলে প্রত্যেক খণ্ড থেকে পুনরুৎপত্তি প্রক্রিয়ায় নতুন হাইড্রা জন্ম লাভ করে।


যৌন জনন (Sexual reproduction):

নিষেকের মাধ্যমে জাইগোট সৃষ্টির উদ্দেশে দুটি পরিণত জননকোষের (শুক্রাণু ও ডিম্বাণু) নিউক্লিয়াসের একীভবন প্রক্রিয়াকে যৌন জনন বলে। Hydra-র যৌন জননকে আলোচনার সুবিধার জন্য তিনটি শিরোনামভুক্ত করা যায়, যেমন- অস্থায়ী জননাঙ্গ সৃষ্টি, নিষেক ও পরিস্ফুটন।

১. অস্থায়ী জননাঙ্গ সৃষ্টি : অধিকাংশ হাইড্রা একলিঙ্গ (dioecious), তবে কিছু সংখ্যক উভলিঙ্গ (monoecious)–ও আছে। উভলিঙ্গ হলেও এদের স্বনিষেক ঘটে না, কারণ জননাঙ্গগুলো বিভিন্ন সময়ে পরিপক্কতা লাভ করে। প্রধানত শরৎকালে খাদ্য স্বল্পতার মতো প্রতিকূল পরিবেশে এদের দেহে অস্থায়ী জননাঙ্গের সৃষ্টি হয় এবং যৌন জনন ঘটে। পুরুষ ও স্ত্রী জননাঙ্গকে যথাক্রমে শুক্রাশয় ও ডিম্বাশয় বলে।

ক. শুক্রাশয়ের উৎপত্তি : প্রজনন ঋতুতে সাধারণত দেহের উপরের অর্ধাংশে ও হাইপোস্টোমের কাছাকাছি স্থানের এপিডার্মাল ইন্টারস্টিশিয়াল কোষের দ্রুত বিভাজনের ফলে এক বা একাধিক মোচাকার শুক্রাশয় (testis) সৃষ্টি হয়। এর শীর্ষে একটি বোঁটা বা নিপল (nipple) এবং পরিণত শুক্রাশয়ের অভ্যন্তরে থাকে অসংখ্য শুক্রাণু। শুক্রাশয়ে শুক্রাণু সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে স্পার্মাটোজেনেসিস (spermatogenesis) বা শুক্রাণুজনন বলে। শুক্রাশয়ের অভ্যন্তরে অবস্থিত ইন্টারস্টিশিয়াল কোষ বারংবার মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় বিভক্ত হয়ে স্পার্মাটোগোনিয়া (spermatogonia) সৃষ্টি করে। পরে এগুলো বৃদ্ধিলাভ করে স্পার্মাটোসাইট (spermatocyte)-এ পরিণত হয়। প্রত্যেক স্পার্মাটোসাইট মিয়োসিস বিভাজনের ফলে ৪টি করে হ্যাপয়েড স্পার্মাটিড (spermatid) উৎপন্ন করে। প্রত্যেক স্পার্মাটিড একেকটি শুক্রাণু sperm-তে পরিণত হয়। প্রত্যেক পরিণত শুক্রাণু নিউক্লিয়াসযুক্ত একটি স্ফীত মস্তক (head), সেন্ট্রিওলযুক্ত একটি সংকীর্ণ মধ্যখন্ড (middle piece) এবং একটি লম্বা, সরু, বিচলনক্ষম লেজ (tail) নিয়ে গঠিত।


খ. ডিম্বাশয়ের উৎপত্তি  : প্রজনন ঋতুতে দেহের নিচের অর্ধাংশে, কিন্তু পদতলের সামান্য উপরে এপিডার্মিসের একটি বা দুটি স্থানের কিছু ইন্টারস্টিশিয়াল কোষের বারংবার বিভাজনের ফলে সাধারণত একটি বা দুটি গোলাকার ডিম্বাশয় (ovary) সৃষ্টি করে। প্রত্যেক ডিম্বাশয় থেকে একটি করে ডিম্বাণু (ovam) সৃষ্টি হয়। ডিম্বাশয়ের অভ্যন্তরে ডিম্বাণু সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে উওজেনেসিস (oogenesis) বা ডিম্বাণুজনন বলে।

প্রথমে ইন্টারস্টিশিয়াল কোষ মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় বিভক্ত হয়ে ওগোনিয়া (oogonia) গঠন করে। এগুলোর মধ্যে কেন্দ্রস্থ একটি কোষ বড় হয়ে উওসাইট (oocyte)-এ পরিণত হয় এবং ছোট কোষগুলোকে গলাধঃকরণ করে। এটি তখন মিয়োসিস বিভাজন ঘটিয়ে ৩টি ক্ষুদ্র পোলার বডি (polar body) ও ১টি বড় সক্রিয় উওটিড (ootid) সৃষ্টি করে। উওটিডটি রূপান্তরিত হয়ে ডিম্বাণুতে পরিণত হয়। পোলার বডিগুলো বিলুপ্ত হয়ে যায়। ডিম্বাণুর পরিপূর্ণ বৃদ্ধির ফলে ডিম্বাশয়ের বহিরাবরণ ছিঁড়ে যায় এবং ডিম্বাণুকে উন্মুক্ত করে দেয়। এর চারদিকে তখন জিলেটিনের পিচ্ছিল আস্তরণ থাকে।


২. নিষেক (Fertilization) : শুক্রাণু পরিণত হলে শুক্রাশয়ের নিপল বিদীর্ণ করে ডিম্বাণুর সন্ধানে পানিতে ঝাঁকে ঝাঁকে সাঁতরাতে থাকে। ২৪ – ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করতে না পারলে এগুলো বিনষ্ট হয়ে যায়। অন্যদিকে, উন্মুক্ত হওয়ার পর অল্পদিনের মধ্যে নিষিক্ত না হলে ডিম্বাণুও নষ্ট হয়ে ক্রমশ ধ্বংস হতে থাকে। শুক্রাণুর ঝাঁক একেকটি ডিম্বাণুর চারদিক ঘিরে ফেলে। একাধিক শুক্রাণু ডিম্বাণুর আবরণ ভেদ করলেও একটি মাত্র শুক্রাণুর নিউক্লিয়াসই ডিম্বাণুর নিউক্লিয়াসের সাথে একীভূত হয়ে নিষেক সম্পন্ন করে এবং একটি ডিপ্লয়েড (2n) জাইগোট (zygote) গঠন করে।

৩. পরিস্ফুটন (Development) : যেসব ক্রমান্বয়িক পরিবর্তনের মাধ্যমে জাইগোট থেকে শিশু প্রাণীর উৎপত্তি ঘটে তাকে পরিস্ফুটন বলে। জাইগোট নানা ধরনের পরিস্ফুটন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ হাইড্রায় পরিণত হয়।

হাইড্রার পরিস্ফুটনকালে নিম্নোক্ত পর্যায়সমূহ দেখা যায়।

ক. মরুলা (Morula) : জাইগোট মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় বারবার বিভক্ত হয়ে বহুকোষী, নিরেট ও গোলাকার কোষপিণ্ডে পরিণত হয়। এর নাম মরুলা।

খ. ব্লাস্টুলা (Blastula) : শীঘ্রই মরুলার কোষগুলো একস্তরে সজ্জিত হয়ে একটি ফাঁপা, গোল ভ্রূণে পরিণত হয়। এর নাম ব্লাস্টুলা। ব্লাস্টুলার কোষগুলোকে ব্লাস্টোমিয়ার (blastomere) এবং কেন্দ্রে ফাঁকা গহ্বরকে ব্লাস্টোসিল (blastocoel) বলে।

গ. গ্যাস্ট্রুলা (Gastrula) : ব্লাস্টুলা গ্যাস্ট্রুলেশন (gastrulation) প্রক্রিয়ায় দ্বিস্তরবিশিষ্ট গ্যাস্ট্রুলায় পরিণত হয়। এটি এক্টোডার্ম, এন্ডোডার্ম ও আদি সিলেন্টেরন নিয়ে গঠিত। মাতৃদেহের সাথে সংযুক্ত এ গ্যাস্ট্রুলাকে স্টেরিওগ্যাস্ট্রুলা (stereogastrula) বলে। গ্যাস্ট্রুলার চারদিকে একটি কাইটিন নির্মিত কাঁটাযুক্ত সিস্ট (cyst) আবরণী গঠিত হয়। সিস্টবদ্ধ ভ্রূণটি মাতৃহাইড্রা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পানির তলদেশে চলে যায়।

ঘ. হাইড্রুলা (Hydrula) : বসন্তের শুরুতে অনুকূল তাপমাত্রায় সিস্টের মধ্যেই ভ্রূণটি ক্রমশ লম্বা হতে থাকে এবং এর অগ্রপ্রান্তে হাইপোস্টোম, মুখছিদ্র ও কর্ষিকা এবং পশ্চাৎপ্রান্তে পাদ-চাকতি গঠিত হয়। ভ্রূণের এ দশাকে হাইড্রুলা বলে। হাইড্রুলা সিস্টের আবরণী বিদীর্ণ করে পানিতে বেরিয়ে আসে এবং স্বাধীন জীবন যাপন শুরু করে।

Content added By
Promotion