6μF ও 4μF ধারেকত্বের দুটি ধারককে শ্রেণিতে সাজালে তুল্য ধারকত্ব কত হবে?

Created: 2 years ago | Updated: 1 year ago
Updated: 1 year ago

আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি একটি আহিত বস্তুর চারপাশে যে অঞ্চল জুড়ে তার তড়িৎ প্রভাব বিদ্যমান থাকে তাকে তড়িৎ ক্ষেত্র বলে। স্বাভাবিকভাবেই তড়িৎ ক্ষেত্রের সকল বিন্দুতে এর প্রভাব সমান থাকে না। বিভিন্ন বিন্দুতে এর প্রভাব বিভিন্ন হয়। বিন্দুটি আহিত বস্তুর যত নিকটে হবে তার প্রভাবও তত বেশি হবে। এই প্রভাব বোঝার জন্য তড়িৎ ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে একটি পরীক্ষণীয় আধান আনতে হয়। সেই পরীক্ষণীয় আধানের ওপর প্রযুক্ত বল দ্বারা এই তড়িৎ প্রভাব পরিমাপ করা হয়। এই পরীক্ষণীয় আধানটি হচ্ছে একক ধনাত্মক আধান অর্থাৎ এক কুলম্ব মানের একটি ধনাত্মক আধান। তড়িৎক্ষেত্রের এই প্রভাব বা সবলতাকে একটি রাশি দ্বারা বর্ণনা করা হয়। এই রাশিটিকে তড়িৎক্ষেত্রের প্রাবল্য বা তীব্রতা বা সবলতা (Electric Field intensity or Electric Field Strength) বলে। একে E দিয়ে প্রকাশ করা হয় । আজকাল অবশ্য শুধু তড়িৎক্ষেত্র বললেই তড়িৎক্ষেত্রের প্রাবল্য বা তীব্রতা বা সবলতাকেই বোঝানো হয় এবং তড়িৎক্ষেত্রকেই E দ্বারা নির্দেশ করা হয়। বলা হয় কোনো তড়িৎগ্রস্ত বস্তুর চারপাশে প্রত্যেক বিন্দুতে তড়িৎক্ষেত্র  E আছে। তড়িৎক্ষেত্র  E  এর মান বলতে তড়িৎ প্রাবল্যের মানকে বোঝানো হয়। তড়িৎক্ষেত্রের দিক বলতেই তড়িৎক্ষেত্রের প্রাবল্যের দিক বোঝায়। তড়িৎক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে একটি একক ধনাত্মক আধান স্থাপন করলে সেটি যে বল অনুভব করে তাকে ঐ বিন্দুর তড়িৎ প্রাবল্য বলে।

মান : তড়িৎক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে স্থাপিত + আধান যদি F বল অনুভব করে তাহলে ঐ বিন্দুতে তড়িৎ প্রাবল্যের মান হবে,

E=Fq.. (2.7)

চিত্র : ২.২

দিক : যেহেতু তড়িৎ প্রাবল্য হলো একক ধনাত্মক আধানের ওপর ক্রিয়াশীল বল, সুতরাং প্রাবল্যের দিক আছে এবং এটি একটি ভেক্টর রাশি। একক ধনাত্মক আধান যে দিকে বল অনুভব করে তড়িৎ প্রাবল্যের দিক হয় সে দিকে। সুতরাং (2.7) সমীকরণকে ভেক্টররূপে লেখা যায়,

E=Fq

২.২ চিত্রে A ধনাত্মক আধানে আহিত বন্ধু হওয়ায় P বিন্দুতে স্থাপিত +q ধনাত্মক আধানটি PB বরাবর বিকর্ষণ বল অনুভব করবে। সুতরাং P বিন্দুতে তড়িৎ প্রাবল্যের দিক হবে PB বরাবর। কিন্তু A বন্ধুটি যদি ঋণাত্মক আধানে আহিত হয়, তাহলে P বিন্দুতে স্থাপিত ধনাত্মক আধানটি PA বরাবর আকর্ষণ বল অনুভব করবে, ফলে প্রাবল্যের দিক হবে PA বরাবর।

একক : (2.8) সমীকরণ থেকে দেখা যায়, বলের একককে আধানের একক দিয়ে ভাগ করলে তড়িৎ প্রাবল্যের একক পাওয়া যায়। এই একক হচ্ছে নিউটন/ কুলম্ব (NC-1)।

কোনো বিন্দুর তড়িৎ প্রাবল্য 50 NC-1 বলতে বোঝায় ঐ বিন্দুতে স্থাপিত 1C কুলম্ব আধান 50 N বল অনুভব করে।

বলের সাথে প্রাবল্যের সম্পর্ক

(2.8) সমীকরণ থেকে দেখা যায়, তড়িৎক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে স্থাপিত কোনো আধানের ওপর ক্রিয়াশীল বল,

F=qE

বা, F = qE

অর্থাৎ তড়িৎক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে স্থাপিত কোনো আধানের ওপর ক্রিয়াশীল বল ঐ বিন্দুতে প্রাবল্য এবং স্থাপিত আধানের গুণফলের সমান। ধনাত্মক আধান প্রাবল্যের অভিমুখে বল লাভ করে আর ঋণাত্মক আধান প্রাবল্যের বিপরীত দিকে বল লাভ করে।

তড়িৎক্ষেত্রের কোনো বিন্দুর প্রাবল্যের রাশিমালা

চিত্র :২.৩

ধরা যাক, K তড়িৎ মাধ্যমাঙ্কবিশিষ্ট কোনো মাধ্যমে A বিন্দুতে একটি ধনাত্মক আধান + q অবস্থিত। এই আধান থেকে r দূরত্বে P বিন্দুতে তড়িৎ প্রাবল্য নির্ণয় করতে হবে।

ধরি, P বিন্দুতে একটি ক্ষুদ্র আধান + qo স্থাপন করা হলো [চিত্র ২.৩]। এখন q আধানের ওপর ক্রিয়াশীল বল,

F= 14πokqqor2..  (2.10)

কিন্তু তড়িৎ প্রাবল্য হচ্ছে একটি একক ধনাত্মক আধানের ওপর বল।

সুতরাং P বিন্দুর তড়িৎ প্রাবল্য,

E=Fqo… (2.11)

(2.10) সমীকরণ থেকে F এর মান বসিয়ে আমরা পাই,

E=14ποKqqor2qoE=14ποKqr2

+q আধানটি শূন্যস্থান বা বায়ু মাধ্যমে স্থাপিত হলে তড়িৎ মাধ্যমাঙ্ক K এর মান 1 ধরা হয়। সে ক্ষেত্রে, তড়িৎ প্রাবল্য হবে,

E=14ποqr2

দিক : E একটি ভেক্টর রাশি। এর দিক হবে A ও P বিন্দুর সংযোজক সরলরেখা বরাবর। q ধনাত্মক হলে বহির্মুখী অর্থাৎ PB বরাবর আর q ঋণাত্মক হলে অন্তর্মুখী অর্থাৎ PA বরাবর।

 

তড়িৎ ক্ষেত্রের বিভব (Potential of Electric Field)

একটি আহিত বস্তুর চার পাশে তার প্রভাব অঞ্চলের তথা তড়িৎ ক্ষেত্রের প্রত্যেক বিন্দুর যেমন প্রাবল্য থাকে, তেমনি প্রত্যেক বিন্দুর বিভবও থাকে। তড়িৎ প্রাবল্য থেকে আমরা জানতে পারি, কোনো বিন্দুতে একটি আধান স্থাপন করলে সেটি কোন দিকে কত বল লাভ করবে। তড়িৎ বিভব থেকে আমরা জানতে পারবো তড়িৎ ক্ষেত্রে একটি মুক্ত আধান কোন দিকে চলবে, ক্ষেত্র সৃষ্টিকারী আধানটির দিকে নাকি ক্ষেত্র সৃষ্টিকারী আধানটি থেকে দূরে সরে যাবে।

কোনো আহিত বস্তুর তড়িৎক্ষেত্রের মধ্যে একটি আধানকে এক বিন্দু থেকে অন্য বিন্দুতে স্থানাস্তর করা হলে কিছু কাজ সম্পন্ন হয়। ক্ষেত্র সৃষ্টিকারী আধানটি ধনাত্মক হলে একটি ধনাত্মক আধানকে বস্তুর দিকে আনতে বিকর্ষণ বলের বিরুদ্ধে কাজ করতে হয়। সুতরাং অসীম থেকে একটি একক ধনাত্মক আধানকে বস্তুর যত নিকটবর্তী কোনো বিন্দুতে আনতে হবে তত বেশি কাজ করতে হবে। সুতরাং ধনাত্মকভাবে আহিত একটি বস্তুর তড়িৎক্ষেত্রের মধ্যে একটি বিন্দু আধানকে বস্তুটির যত নিকটে আনতে হবে তার বিভবও তত বেশি হবে। ক্ষেত্র সৃষ্টিকারী আহিত বস্তুটি ঋণাত্মকভাবে আহিত হলে একটি একক ধনাত্মক আধানকে ঐ বস্তুর দিকে আনতে আকর্ষণ বল দ্বারা কাজ সম্পন্ন হবে।

অসীম থেকে প্রতি একক ধনাত্মক আধানকে তড়িৎক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে আনতে সম্পন্ন কাজের পরিমাণকে ঐ বিন্দুর তড়িৎ বিভব বলে।

 মান : অসীম থেকে ক্ষুদ্র আধান g কে তড়িৎক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে আনতে যদি সম্পন্ন কাজের পরিমাণ W হয়,তবে ঐ বিন্দুর বিভব V হবে,

V=Wq

যেহেতু বিভব হচ্ছে নির্দিষ্ট পরিমাণের কাজ, কাজেই এর কোনো দিক নেই । সুতরাং বিভব একটি স্কেলার রাশি। ধনাত্মকভাবে আহিত বস্তুর তড়িৎক্ষেত্রে স্থাপিত একটি ধনাত্মক আধান যদি মুক্তভাবে চলতে পারে, তবে সেটি ধনাত্মকভাবে আহিত বস্তু থেকে দূরে সরে যাবে। সুতরাং বলা চলে ধনাত্মক আধান উচ্চ বিভব থেকে নিম্ন বিভবের দিকে চলে। অপরপক্ষে ঋণাত্মক আধান ধনাত্মকভাবে আহিত বস্তুর দিকে চলে। সুতরাং ঋণাত্মক আধান নিম্ন বিভব থেকে উচ্চ বিভবের দিকে চলে । ঋণাত্মকভাবে আহিত বস্তুর তড়িৎক্ষেত্রে অসীম থেকে ধনাত্মক আধান বস্তুর দিকে আসতে নিজেই কাজ করে। ফলে আধানটি শক্তি হারায় এবং তড়িৎক্ষেত্রের কোনো বিন্দুর বিভবকে ঋণাত্মক ধরা হয়।

একক: (2.14 ) সমীকরণ থেকে দেখা যায় কাজের একককে আধানের একক দিয়ে ভাগ করে বিভবের একক পাওয়া যায়। এস. আইতে বিভবের একক ভোল্ট (V)।

  আধান 9 = 1 কুলম্ব (C) হলে যদি কাজ W= 1 জুল (J) হয় তাহলে বিভব V = 1 ভোল্ট (V) হয়।

অসীম থেকে প্রতি কুলম্ব (IC) ধনাত্মক আধানকে তড়িৎক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে আনতে যদি এক জুল (1J) কাজ সম্পন্ন হয়, তবে ঐ বিন্দুর বিভবকে এক ভোল্ট (1V) বলে । 

:- 1V=1 J1 C=1 J C-1

তড়িৎক্ষেত্রের কোনো বিন্দুর বিভব 25 V বলতে বোঝায় অসীম থেকে প্রতি কুলম্ব ধনাত্মক আধানকে তড়িৎক্ষেত্রের ঐ বিন্দুতে আনতে 25J কাজ সম্পন্ন হয়।

 

 

 

 

 

Content added || updated By
Promotion