আমরা ধরেই নিই মানুষ এই পৃথিবীরই সন্তান। হাজার বছর ধরে মানবসভ্যতা এই গ্রহে বসবাস করছে, চাষ করছে, যুদ্ধ করছে, সৃষ্টি করছে। কিন্তু যদি প্রশ্ন উঠে—মানুষ কি আদতেই এই পৃথিবীর বাসিন্দা, না কি আমরা আসলে অন্য কোনো গ্রহ থেকে এসেছি? শুনতে অবাক লাগলেও, এই তত্ত্বটি শুধু বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি নয় বরং একটি গবেষণার ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে।
বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ও অনুমান
বিজ্ঞানীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব হলো Panspermia—যার মতে, পৃথিবীতে প্রাণের সূচনা হয়েছে মহাকাশ থেকে আসা অণুজীব বা জৈব উপাদান দ্বারা। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, কোনো গ্রহাণু বা ধূমকেতুতে থাকা জীবাণু পৃথিবীতে এসে জীবনের উৎপত্তি ঘটিয়েছে (Crick & Orgel, 1973)। আরেকটি সংস্করণ হল Directed Panspermia, যা প্রস্তাব করেন DNA-র আবিষ্কারক ফ্রান্সিস ক্রিক। তিনি বলেন, উন্নত গ্রহের বুদ্ধিমান প্রাণীরা ইচ্ছাকৃতভাবে জীবনের বীজ পৃথিবীতে পাঠিয়েছিল, একপ্রকার জৈবিক পরীক্ষার অংশ হিসেবে (Crick & Orgel, 1973)।
মানবদেহের পৃথিবীর সাথে অসামঞ্জস্য
বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেছেন, মানুষের শরীরের অনেক বৈশিষ্ট্য এই গ্রহের পরিবেশের সাথে পুরোপুরি খাপ খায় না। পিঠে ব্যথা, সূর্যের রশ্মিতে ক্ষতি, উচ্চ রক্তচাপ, শিশুর জটিল জন্মপ্রক্রিয়া ইত্যাদি এই ধারণাকে সমর্থন করে। অনেক গবেষক মনে করেন, এসব বৈশিষ্ট্য প্রমাণ করে যে মানবজাতি হয়তো এমন পরিবেশে বিবর্তিত হয়নি যেটি পৃথিবীর মতো।
প্রাচীন সভ্যতা ও পৌরাণিক রেফারেন্স
প্রাচীন সুমেরীয় সভ্যতায় Anunnaki নামক এক 'আকাশ থেকে আগত' প্রজাতির উল্লেখ আছে, যারা মানুষকে সৃষ্টি করেছে এমন দাবি করা হয় (Sitchin, 1976)। মিশরীয় পৌরাণিক কাহিনিতে ওসিরিস ও থথ—এদের মূল উৎস বলা হয়েছে তারামণ্ডল সিরিয়াস। মায়া সভ্যতায় 'তারার সন্তান' নামক কাহিনিতে বলা হয়েছে, তাদের পূর্বপুরুষেরা প্লেইয়াডিস নক্ষত্র থেকে এসেছে (Toth, 1999)।
ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি
ইসলামে বলা হয়েছে, আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে (সূরা হিজর: ২৬)। কিন্তু কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে বলা হয়েছে, তিনি মানুষকে আকাশ ও পৃথিবীর জ্ঞান দান করেছেন, ফেরেশতাদের শিক্ষা দিয়েছেন এবং আত্মা ফুঁকেছেন (সূরা বাকারা: ৩০–৩১)। তাফসির ইবন কাসির মতে, ফেরেশতারা মানুষের রক্তপাত সম্পর্কে আগে থেকেই জানতেন, যা কিছু গবেষকের মতে মানুষের পূর্ব অস্তিত্বের ইঙ্গিত দেয়। আত্মার আসমান থেকে আগমন, আর শরীরের মাটি থেকে সৃষ্টি—এই দ্বৈততা অনেক ধর্মতাত্ত্বিক ও দার্শনিকদের মতে মানুষের 'ভিন্ন গ্রহীয়' উৎসের ধারণাকে শক্তিশালী করে।
জেনেটিক তথ্য ও রহস্য
মানুষের DNA-তে কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে যা অন্য প্রাণীদের মধ্যে অনুপস্থিত। যেমন, Chromosome 2 দুটি আলাদা ক্রোমোজোমের সংযুক্ত রূপ যা অন্যান্য প্রাইমেটদের মধ্যে নেই। এটি অনেকের মতে একটি জেনেটিক প্রকৌশলের ফল। তাছাড়া, মানব DNA-র প্রায় ৯৮% 'Junk DNA' হিসেবে পরিচিত যার প্রকৃত কার্যকারিতা অজানা, তবে কেউ কেউ মনে করেন এটি একধরনের কোড যা ভবিষ্যতে সক্রিয় হতে পারে।
‘মানুষই পৃথিবীর এলিয়েন’—এই ধারণাটি যতটা বৈজ্ঞানিক, ততটাই দার্শনিক। এই তত্ত্ব শুধু আমাদের উৎপত্তি নিয়ে নয়, বরং আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন তোলে। মানুষ হয়তো পৃথিবীরই সন্তান, অথবা এক দূর গ্রহের 'বীজ'—যা এখন এই গ্রহে বিকশিত হচ্ছে। হয়তো আমরা এক মহাজাগতিক পরিকল্পনার অংশ, যার উত্তর এখনো অধরা। কিন্তু প্রশ্নটি বেঁচে থাকছে—আমরা আসলে কারা?
রেফারেন্স
- Crick, F. & Orgel, L. (1973). Directed Panspermia. Icarus.
- Sitchin, Z. (1976). The 12th Planet.
- Toth, M. (1999). The Hermetica.
- The Holy Quran: Surah Hijr: 26; Surah Baqarah: 30–31.
- Tafsir Ibn Kathir.
আপনি আমাকে যেকোনো প্রশ্ন করতে পারেন, যেমনঃ
Are you sure to start over?