পরমাণুর গঠন সম্পর্কিত বোরের তত্ত্ব থেকে আমরা জানি যে, পরমাণুর অভ্যন্তরে ইলেকট্রনসমূহ নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে কেবল কয়েকটি অনুমোদিত কক্ষপথে আবর্তন করে। এই কক্ষপথগুলোর ব্যাসার্ধ সুনির্দিষ্ট।
কোয়ান্টাম তত্ত্ব থেকে এই সকল ব্যাসার্ধের মান পাওয়া যায়। একটি পরমাণুর প্রতিটি ইলেকট্রনেরই একটি নির্দিষ্ট শক্তি থাকে। এই শক্তির পরিমাণ নির্ভর করে ইলেকট্রনটি কোন্ কক্ষপথে নিউক্লিয়াসকে আবর্তন করছে তার উপর। কক্ষপথের ব্যাসার্ধ যত বড় হয় ইলেকট্রনের শক্তিও তত বেশি হয়।
যদি কোনো ইলেকট্রনকে তাপ, আলো ইত্যাদি রূপে কিছু নির্দিষ্ট পরিমাণ অতিরিক্ত শক্তি প্রদান করা হয়, তাহলে ইলেকট্রনটি পরবর্তী উচ্চতর কক্ষপথে উন্নীত হয়। পরমাণুর এই অবস্থাকে উত্তেজিত অবস্থা বলে। এই অবস্থা কিন্তু বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না; কেননা ইলেকট্রনটি পুনরায় তাপ, আলো বা অন্যান্য বিকিরণের মাধ্যমে শক্তি হারিয়ে মূল নিম্নতর কক্ষপথে ফিরে আসে।
পরমাণুতে ইলেকট্রনের বিভিন্ন কক্ষপথের সাথে সংশ্লিষ্ট শক্তিকে সাধারণত একটি রৈখিক চিত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়ে থাকে। এই চিত্রে শক্তি বিভিন্ন স্তরে বিন্যস্ত থাকে। এই চিত্রকে শক্তি স্তর রৈখিক চিত্র বলে [চিত্র : ১০.১ ]। প্রথম কক্ষপথ প্রথম শক্তিস্তর, দ্বিতীয় কক্ষপথ দ্বিতীয় শক্তিস্তর ইত্যাদি নির্দেশ করে (চিত্র : ১০.১)। সুতরাং দেখা যায়, কক্ষপথটি যত বড় হবে, ইলেকট্রনের শক্তি তত বেশি হবে এবং শক্তিস্তর তত উচ্চ হবে।
একটি বিচ্ছিন্ন পরমাণুর বেলায় কোনো একটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে আবর্তনরত ইলেকট্রনগুলোর একটি সুনির্দিষ্ট শক্তি থাকবে। কিন্তু পরমাণুটি যদি কোনো কঠিন পদার্থের অন্তর্ভুক্ত হয় তাহলে সেই পরমাণুর ইলেকট্রনগুলোর শক্তির সেই সুনির্দিষ্ট মান থাকে না। কঠিন পদার্থের প্রতিটি পরমাণু তার আশেপাশের ঘন সন্নিবিষ্ট অন্যান্য পরমাণু দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার কারণে কোনো একটি কক্ষপথের যে কোনো দুটি ইলেকট্রনের চারপাশের আধান পরিবেশ এক রকম থাকে না। ফলে যে কোনো একটি কক্ষপথে আবর্তনরত দুটি ইলেকট্রনের শক্তির মানও হুবহু এক থাকে না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, প্রথম কক্ষপথের দুটি ইলেকট্রনের শক্তির সামান্য তারতম্য ঘটবে। যেহেতু কোনো কঠিন পদার্থে কোটি কোটি প্রথম কক্ষপথের ইলেকট্রন বিদ্যমান, সেহেতু এই সকল ভিন্ন ভিন্ন ইলেকট্রন ভিন্ন ভিন্ন শক্তিস্তরের একটি পাল্লা সৃষ্টি করে যাকে শক্তি ব্যান্ড বলা হয় ।
প্রথম কক্ষপথের ইলেকট্রন দ্বারা সৃষ্ট শক্তি ব্যান্ড হলো প্রথম শক্তি ব্যান্ড । অনুরূপভাবে দ্বিতীয়, তৃতীয় কক্ষপথের ইলেকট্রন দ্বারা সৃষ্ট শক্তি ব্যান্ডকে যথাক্রমে দ্বিতীয় শক্তি ব্যান্ড ও তৃতীয় শক্তি ব্যান্ড বলে [চিত্র : ১০.২ক]। কঠিন পদার্থের অনেকগুলো শক্তি ব্যান্ড থাকে যার মধ্যে তিনটি হচ্ছে প্রধান। এগুলো হচ্ছে যোজন ব্যান্ড, পরিবহন ব্যান্ড এবং নিষিদ্ধ ব্যান্ড [চিত্র : ১০.২খ]।
যোজন ব্যান্ড : পরমাণুর সবচেয়ে বাইরের কক্ষপথে অবস্থিত ইলেকট্রনকে যোজন ইলেকট্রন বলে। যোজন ইলেকট্রনগুলোর শক্তির পাল্লা বা ব্যান্ডকে যোজন ব্যান্ড বলে। একটি সাধারণ পরমাণুতে দূরতম কক্ষপথের ইলেকট্রনের শক্তি থাকে সর্বোচ্চ। এই ব্যান্ড পূর্ণ বা আংশিক পূর্ণ থাকতে পারে। নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ক্ষেত্রে যোজন ব্যান্ড পূর্ণ থাকে। ফলে এ গ্যাসগুলো আর নতুন কোনো ইলেকট্রন গ্রহণ করতে পারে না। অন্যান্য পদার্থে যোজন ব্যান্ড আংশিক পূর্ণ থাকে। আংশিক পূর্ণ যোজন ব্যান্ড আরো কিছু সংখ্যক ইলেকট্রন গ্রহণ করতে পারে।
কোনো কোনো পদার্থে বিশেষ করে ধাতব পদার্থে যোজন ইলেকট্রনগুলো নিউক্লিয়াসের সাথে শিথিলভাবে যুক্ত থাকে । সাধারণ তাপমাত্রায় এই সকল ইলেকট্রন নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ থেকে মুক্ত হয়ে যেতে পারে। পরিবাহীতে এই সকল মুক্ত ইলেকট্রন তড়িৎ পরিবহন করে থাকে ।
পরিবহন ব্যান্ডের সকল ইলেকট্রনই মুক্ত ইলেকট্রন। যদি কোনো বস্তুতে পরিবহন ব্যান্ড ফাঁকা থাকে তাহলে সেই বস্তুতে তড়িৎ পরিবহন সম্ভব হয় না। এই বস্তুকে অন্তরক বলে। অন্তরকে পরিবহন ব্যান্ড সম্পূর্ণ ফাঁকা থাকে, আর যোজন ব্যান্ড আংশিক পূর্ণ থাকে।
এই নিষিদ্ধ শক্তি অঞ্চলে কোনো অনুমোদিত শক্তি অবস্থা বা স্তর না থাকায় এ অঞ্চলে কোনো ইলেকট্রন থাকতে পারে না। কোনো বস্তুতে নিষিদ্ধ শক্তি ব্যবধান যত বেশি হবে, যোজন ইলেকট্রনগুলোও পরমাণুতে তত দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ থাকবে। কোনো ইলেকট্রনকে যোজন ব্যান্ড থেকে পরিবহন ব্যান্ডে নিতে হলে অর্থাৎ কোনো যোজন ইলেকট্রনকে মুক্ত করতে হলে নিষিদ্ধ শক্তি ব্যবধানের সমমানের বাহ্যিক শক্তি সরবরাহ করতে হবে।
তড়িৎ পরিবাহিতা ধর্মের ওপর ভিত্তি করে কঠিন পদার্থকে তিন শ্রেণিকে ভাগ করা যায়— যথা: অপরিবাহী, পরিবাহী এবং সেমিকন্ডাক্টর বা অর্ধপরিবাহী । ব্যান্ড তত্ত্বের দ্বারা এদের প্রত্যেকের আচরণ ব্যাখ্যা করা যায়।
অপরিবাহী বা অন্তরক : যে সকল পদার্থের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ চলতে পারে না তাদেরকে অপরিবাহী বলে। যেমন কাচ, কাঠ ইত্যাদি। অপরিবাহীর আপেক্ষিক রোধ অনেক বেশি—প্রায় 1012 m ক্রমের।
অপরিবাহীতে যোজন ব্যান্ড ইলেকট্রন দ্বারা আংশিক পূর্ণ থাকে এবং পরিবহন ব্যান্ড ফাঁকা থাকে। এছাড়া যোজন ব্যান্ড এবং পরিবহন ব্যান্ডের মধ্যবর্তী শক্তি ব্যবধান অনেক বেশি, 6 eV থেকে 15 eV এর মতো (চিত্র : ১০.৩)। ফলে সাধারণ তাপমাত্রায় অপরিবাহীর দুই প্রান্তে বিভব পার্থক্য প্রয়োগ করলেও এ থেকে ইলেকট্রনগুলো উচ্চতর শক্তিস্তরে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সংগ্রহ করতে পারে না । এ জন্য সাধারণ তাপমাত্রায় অপরিবাহীর ভেতর দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ চলে না।
পরিবাহী : যে সকল পদার্থের মধ্য দিয়ে সহজে তড়িৎ প্রবাহ চলতে পারে তাদেরকে পরিবাহী বলে। সাধারণত ধাতব পদার্থ তড়ি সুপরিবাহী হয়। তামা, রুপা, অ্যালুমিনিয়াম ইত্যাদি সুপরিবাহী।
পরিবাহীর আপেক্ষিক রোধ কম হয়—–প্রায় 10-8mm ক্রমের। পরিবাহীতে অনেক মুক্ত ইলেকট্রন থাকে। পরিবাহীতে যোজন ব্যান্ড এবং পরিবহন ব্যান্ডের মাঝে শক্তি ব্যবধান তো থাকেই না বরং কিছু অংশে এদের উপরিলেপন ঘটে (চিত্র : ১০.৪)। এ জন্য পরিবাহীর দুই প্রান্তে সামান্য বিভব পার্থক্য ঘটলেই মুক্ত ইলেকট্রনগুলো তড়িৎ প্রবাহের সৃষ্টি করে।
যেমন— জার্মেনিয়াম, সিলিকন ইত্যাদি। এদের আপেক্ষিক রোধ 10-4 m ক্রমের। কিন্তু কেবল আপেক্ষিক রোধ দিয়েই সেমিকন্ডাক্টর চিহ্নিত করা হয় না। কেননা কিছু সংকরও আছে যাদের আপেক্ষিক রোধ জার্মেনিয়াম, সিলিকন প্রভৃতির সমক্রমের কিন্তু সেগুলো সেমিকন্ডাক্টর নয়। সেমিকন্ডাক্টরের আরো কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। যেমন, এর আপেক্ষিকবোধ 10-4m ক্রমের। এতে কোনো অপদ্রব্য মিশালে এর তড়িৎ পরিবাহিতাঙ্ক বৃদ্ধি পায়। পরমশূন্য তাপমাত্রায় (OK, শূন্য কেলভিন) এরা অপরিবাহী। একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রা পাল্লা পর্যন্ত এর রোধ তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে হ্রাস পায়। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে এর তড়িৎ পরিবাহিতা বৃদ্ধি পায়। দুই প্রান্তের মধ্যবর্তী বিভব পার্থক্য বৃদ্ধি করলে এর তড়িৎ পরিবাহিতাঙ্ক বৃদ্ধি পায়। এদের পরিবহন ও যোজন ব্যান্ডের মধ্যে শক্তি পার্থক্য l.l eV বা এর কম (চিত্র : ১০.৫)।
সুতরাং বলা যায় যে,
জার্মেনিয়াম হচ্ছে একটি বহুল ব্যবহৃত আদর্শ সেমিকন্ডাক্টর বা অর্ধপরিবাহী। জার্মেনিয়ামের সর্বশেষ কক্ষপথে চারটি যোজন ইলেকট্রন আছে। কিন্তু এই যোজন ইলেকট্রনগুলো মুক্ত ইলেক্ট্রন নয়। কেননা অন্যান্য পরমাণুর মতো জার্মেনিয়াম পরমাণুও তার শেষ কক্ষপথটি আটটি ইলেকট্রন দ্বারা পূর্ণ করতে চায়। এটি করতে গিয়ে ১০.৬ চিত্রের ন্যায় প্রতিটি জার্মেনিয়াম পরমাণু অন্য চারটি জার্মেনিয়াম পরমাণুর মাঝখানে নিজেকে স্থাপন করে। এতে প্রতিটি পার্শ্ববর্তী পরমাণু মধ্যবর্তী পরমাণুটির সাথে একটি যোজন ইলেকট্রন ভাগাভাগি করে নেয়। এই ভাগাভাগির ঘটনায় মধ্যবর্তী পরমাণুটি তার সর্বশেষ কক্ষপথটি আটটি ইলেকট্রন দ্বারা পূর্ণ করে। এভাবে মধ্যবর্তী পরমাণুটি সহযোজী বন্ধন (Covalent bond) সৃষ্টি করে। সহযোজী বন্ধন সৃষ্টির এই প্রক্রিয়ায় একটি পরমাণুর প্রতিটি যোজন ইলেকট্রন তার পার্শ্ববর্তী পরমাণুর যোজন ইলেকট্রনের সাথে সরাসরি বন্ধন তৈরি করে। অর্থাৎ যোজন ইলেকট্রনগুলো অন্যান্য পরমাণুর সাথে সম্পৃক্ত হয়ে যায়। ফলে সেমিকন্ডাক্টরে যোজন ইলেকট্রনগুলো মুক্ত থাকে না।
যে পদার্থে পরমাণু বা অণুগুলো একটি সুনির্দিষ্ট প্যাটার্নে সজ্জিত থাকে তাকে কেলাস বলে। সকল সেমিকন্ডাক্টরের গঠন কেলাসিত। এ জন্য এক টুকরা জার্মেনিয়ামকে সাধারণভাবে জার্মেনিয়াম কেলাস বলা হয়ে থাকে।
সেমিকন্ডাক্টরে যোজন শক্তি ব্যান্ড প্রায় পূর্ণ থাকে এবং পরিবহন ব্যান্ড প্রায় ফাঁকা থাকে। এ ছাড়া যোজন ব্যান্ড ও পরিবহন ব্যান্ডের মধ্যবর্তী শক্তি ব্যবধান খুব কম থাকে। ১০.৭ চিত্রের জার্মেনিয়াম ও সিলিকনের শক্তি ব্যান্ড রৈখিক চিত্র থেকে দেখা যায় যে, কক্ষ তাপমাত্রায় জার্মেনিয়ামের জন্য এটি 0.7eV এবং সিলিকনের জন্য 1.1 eV। ফলে তুলনামূলকভাবে কম শক্তি প্রয়োগেই ইলেকট্রনগুলোকে যোজন ব্যান্ড থেকে পরিবহন ব্যান্ডে স্থানাস্তর সম্ভব হয়।
পরমশূন্য তাপমাত্রায় (OK) সেমিকন্ডাক্টরে ইলেকট্রনগুলো পরমাণুতে দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ থাকে। এই তাপমাত্রায় সহযোজী বন্ধনগুলো খুবই সবল হয় এবং সবগুলো যোজন ইলেকট্রনই সহযোজী বন্ধন তৈরিতে ব্যস্ত থাকে, ফলে কোনো মুক্ত ইলেকট্রন থাকে না এবং সেমিকন্ডাক্টর কেলাস এই অবস্থায় যোজন ব্যান্ড পূর্ণ থাকে এবং যোজন ব্যান্ড ও পরিবহন ব্যান্ডের মাঝে শক্তির ব্যবধান বিরাট হয় [চিত্র : ১০৮] । ফলে কোনো যোজন ইলেকট্রন পরিবহন ব্যান্ডে এসে মুক্ত ইলেকট্রনে পরিণত হতে পারে না। মুক্ত ইলেকট্রন না থাকার কারণে সেমিকন্ডাক্টর এই তাপমাত্রার বিশুদ্ধ অপরিবাহী বা অন্তরকের ন্যায় আচরণ করে।
যখন তাপমাত্রা বৃদ্ধি করা হয় তখন তাপ শক্তির কারণে কিছু সংখ্যক সহযোজী বন্ধন ভেঙে যায় এবং কিছু ইলেকট্রন মুক্ত হয়। ১০.৯ চিত্রে শক্তি ব্যান্ড রেখাচিত্র দেখানো হয়েছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকলে কিছু সংখ্যক যোজন ইলেকট্রন পরিবহন ব্যান্ডে প্রবেশ করার মতো যথেষ্ট শক্তি অর্জন করে এবং মুক্ত ইলেকট্রনে পরিণত হয় । এখন বিভব পার্থক্য প্রয়োগ করা হলে মুক্ত ইলেকট্রনগুলো তড়িৎপ্রবাহ সৃষ্টি করে। যখনই একটি যোজন ইলেকট্রন পরিবহন ব্যান্ডে প্রবেশ করে তখনই যোজন ব্যান্ডে একটি শূন্যস্থান বা গর্ত বা 'হোল' (hole) সৃষ্টি হয়। আমরা পরবর্তী অনুচ্ছেদে দেখব কীভাবে এই হোল বা গর্তগুলো তড়িৎপ্রবাহ সৃষ্টি করে।
ইলেকট্রন হলো ঋণাত্মক তড়িৎবাহী একটি মৌলিক কণা। এর আধানের মান 1.6 x 10-19C এবং ভর 9.1 x 10-31 kg. এগুলো পরমাণুর কেন্দ্রের বহিস্থ কক্ষপথে আবর্তন করে। উপযুক্ত শক্তি প্রয়োগ করে ইলেকট্রনকে কক্ষভ্রষ্ট করা যায় বা কক্ষ থেকে বের করে নেয়া যায়।
হোল হলো কোনো কঠিন পদার্থের ল্যাটিস কাঠামোতে ইলেকট্রনের খালি করা অবস্থান যা চলমান ধনাত্মক আধান বাহক হিসাবে আচরণ করে। কোনো সেমিকন্ডাক্টর পদার্থের কোনো কক্ষে স্থায়ী ঘূর্ণায়মান ইলেকট্রন কোনো কারণে মুক্ত হয়ে গেলে সেখানে শূন্যতার সৃষ্টি হয়। এরই নাম হোল (Hole)। অন্য কোনো কক্ষ থেকে ইলেকট্রন এসে এই শূন্যস্থান দখল করলে ইলেকট্রন প্রদানকারী কক্ষও আবার ইলেকট্রন শূন্য হয়ে পড়ে এবং তড়িৎ পরিবহন ঘটে। ফলে একটি ধনাত্মক আধানের মতো ভূমিকা পালন করে হোল সমগ্র পদার্থের মধ্য দিয়ে গমন করেন।
সেমিকন্ডাক্টর সাধারণত দুই ধরনের হয়। যথা—
যে সকল সেমিকন্ডাক্টরে কোনো অপদ্রব্য মেশানো হয় না তাদেরকে ইনট্রিন্সিক বা অন্তর্জাত সেমিকন্ডাক্টর বলে। পর্যায় সারণির চতুর্থ সারির পরমাণু কেলাস যেমন, কার্বন (C), সিলিকন (Si), জার্মেনিয়াম (Ge), টিন (Sn) এ সকল পদার্থে মুক্ত ইলেকট্রনের সংখ্যা বেশ কম। ফলে এদের পরিবাহিতাঙ্ক খুব বেশি নয়।
অন্তর্জাত সেমিকন্ডাক্টরে অতিসামান্য অপদ্রব্য নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে (প্রায় এক কোটি পরমাণুতে একটি পরমাণু) মেশালে এতে বিপুল পরিমাণে মুক্ত ইলেক্ট্রন বা হোল সৃষ্টি হয়। ফলে এর পরিবাহিতা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। অপদ্রব্য মেশানো সেমিকন্ডাক্টরকে এক্সট্রিপিক বা বহির্জাত সেমিকন্ডাক্টর বলে। পরিবাহিতা বৃদ্ধির জন্য বিশুদ্ধ সেমিকন্ডাক্টরে অপদ্রব্য মেশানোকে ডোপায়ন বা ডোপিং (doping) বলে। ডোপায়নের জন্য দুই ধরনের অপদ্রব্য ব্যবহার করা হয় :
এক্সট্রিন্সিক বা বহির্জাত সেমিকন্ডাক্টর দুই ধরনের হয়, যথা : p টাইপ এবং n টাইপ। ডোপিত মৌলের প্রকৃতি থেকে নির্ধারিত হয় সেমিকন্ডাক্টরটি p টাইপ (ধনাত্মক টাইপ) হবে, না n টাইপ (ঋণাত্মক টাইপ) হবে।
জার্মেনিয়াম বা সিলিকনের পরমাণুতে যদি উপযুক্ত মাত্রায় (প্রায় এক কোটিতে একটি) কোনো ত্রিযোজী মৌল (অর্থাৎ যার পরমাণুতে তিনটি যোজন ইলেক্ট্রন আছে যেমন গ্যালিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম ইত্যাদি) মেশানো হয় তাহলে ঐ কেলাসের গঠনের কোনোরূপ পরিবর্তন হয় না কিন্তু পার্শ্ববর্তী চতুর্থোজী ধাতুর সাথে সহযোজী বন্ধন গঠন করতে এর একটি ইলেকট্রন ঘাটতি পড়ে। ফলে কেলাসে একটি ধনাত্মক হোল সৃষ্টি হয় (চিত্র : ১০:১০)। এই জাতীয় অপদ্রব্য মিশ্রণে সৃষ্ট হোল পূরণ করতে অন্য একটি ইলেকট্রনের প্রয়োজন হয়। ত্রিযোজী অপদ্রব্য ইলেকট্রন গ্রহণ করে বলে এদেরকে বলা হয় গ্রাহক (acceptor) পরমাণু। জার্মেনিয়াম বা সিলিকনে প্রতিটি গ্যালিয়াম বা অ্যালুমিনিয়াম পরমাণু একটি করে হোল সৃষ্টি করে। ফলে সামান্য পরিমাণ গ্যালিয়াম বা অ্যালুমিনিয়াম লক্ষ লক্ষ হোল সৃষ্টি করে। গ্রাহক পরমাণুর বহিখোলকে সাতটি যোজন ইলেকট্রন ও একটি হোল থাকে। হোলটি একটি ইলেকট্রন দ্বারা পূর্ণ হলে পরমাণুটির খোলকের গঠন স্থিতিশীল হয়। ধনাত্মক হোল ইলেকট্রনকে গ্রহণ করে ফলে ইলেকট্রন জার্মেনিয়াম বা সিলিকনের মধ্যে গতিশীল বা চলমান থাকে। এভাবে ইলেকট্রন পরমাণু থেকে পরমাণুতে গমন করে। যে ইলেকট্রনটি হোলে চলে যায় তা যে পরমাণু থেকে এটি আসে তাতে একটি হোল সৃষ্টি করে আসে। সেই হোলকে দখল করার জন্য অন্য একটি ইলেকট্রন আসে। এই ইলেকট্রনটিও রেখে আসে আরেকটি ধনাত্মক হোল। যেন মনে হয় ধনাত্মক হোল পদার্থের মধ্যে ইলেকট্রনের গতির দিকের বিপরীত দিকে গতিশীল বা চলমান । এখানে গরিষ্ঠ আধান বাহক হলো হোল। এই ধরনের পদার্থের নাম p-টাইপ সেমিকন্ডাক্টর পদার্থ ।
p-টাইপ সেমিকন্ডাক্টরে পরিবহন ঘটে প্রধানত ধনাত্মক আধান বা হোলের দরুন। এখানে ঋণাত্মক আধান বা ইলেকট্রন হলো লঘিষ্ঠ আধান বাহক।
জার্মেনিয়াম বা সিলিকনের কেলাসে যদি উপযুক্ত মাত্রায় (প্রায় এক কোটি পরমাণুতে একটি) কোনো পঞ্চযোজী মৌল (অর্থাৎ যার পরমাণুতে পাঁচটি যোজন ইলেকট্রন আছে, যেমন আর্সেনিক, এন্টিমনি ইত্যাদি) মেশানো হয় তাহলে ঐ কেলাসের গঠনের কোনোরূপ পরিবর্তন হয় না এবং মিশ্রিত পরমাণুর পাঁচটি যোজন ইলেকট্রনের মধ্যে চারটি জার্মেনিয়াম বা সিলিকনের পরমাণুর সাথে সহযোজী বন্ধন সৃষ্টি করে এবং একটি উদ্বৃত্ত থাকে (চিত্র : ১০.১১)। এই উদ্বৃত্ত ইলেকট্রনকে খুব সামান্য শক্তি সরবরাহে মুক্ত করা যায় এবং এরাই সেমিকন্ডাক্টরের পরিবাহিতা বৃদ্ধি করে। পঞ্চযোজী অপদ্রব্য ইলেকট্রন দান করে বলে এদের দাতা (donner) পরমাণু বলে। ইলেকট্রনের দ্বারা পরিবাহিতা বৃদ্ধি পায় বলে এই ধরনের এক্সট্রিন্সিক সেমিকন্ডাক্টরকে n- টাইপ সেমিকন্ডাক্টর বলে। জার্মেনিয়াম বা সিলিকনে প্রতিটি আর্সেনিক বা এন্টিমনি পরমাণু একটি করে ইলেট্রন দান করে। ফলে সামান্য পরিমাণ আর্সেনিক বা এন্টিমনি লক্ষ লক্ষ ইলেকট্রন দান করে। -টাইপ বন্ধুকে ইলেকট্রন সমৃদ্ধ বস্তু বলা হয়। -টাইপ সেমিকন্ডাক্টরে পরিবহন ঘটে প্রধানত ঋণাত্মক আধান বা ইলেকট্রনের জন্য। এতে গরিষ্ঠ বাহক (majority carrier) হলো ইলেকট্রন এবং লঘিষ্ঠ বাহক ( minority carrier) হলো হোল।
পূর্বের আলোচনা থেকে দেখা যায় যে, p-টাইপ সেমিকন্ডাক্টরে তড়িৎপ্রবাহ হয় হোল-এর জন্য এবং n -টাইপ সেমিকন্ডাক্টরে তড়িৎপ্রবাহ হয় অতিরিক্ত ইলেকট্রনের জন্য। এতে সাধারণভাবে ধারণা হতে পারে p-টাইপ বস্তুতে অতিরিক্ত ধনাত্মক আধানে এবং n -টাইপ বস্তুতে অতিরিক্ত ঋণাত্মক আধান রয়েছে বা মনে হতে পারে p-টাইপ বস্তু হচ্ছে ধনাত্মক আধানে আহিত বস্তু আর -টাইপ বস্তু হচ্ছে ঋণাত্মক আধান আহিত বস্তু। প্রকৃত অবস্থা কিন্তু তা নয়। একথা সত্য যে -টাইপ বস্তুতে অতিরিক্ত কিছু ইলেকট্রন আছে। কিন্তু এই অতিরিক্ত ইলেকট্রন সরবরাহ করে দাতা অপদ্রব্য, এই দাতা অপদ্রব্য নিজে তড়িৎ নিরপেক্ষ। যখন অপদ্রব্য মেশানো হয় তখন যাকে 'অতিরিক্ত ইলেক্ট্রন' বলা হয় প্রকৃতপক্ষে তা সেমিকন্ডাক্টর কেলাসে সহযোজী বন্ধন গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক ইলেক্ট্রনের অতিরিক্ত। এই অতিরিক্ত ইলেকট্রন মুক্ত ইলেকট্রন এবং এরা সেমিকন্ডাক্টরের পরিবাহিতা বৃদ্ধি করে। p-টাইপ সেমিকন্ডাক্টরে একইভাবে অতিরিক্ত হোল পাওয়া যায়। তাই বলা যায়, p-টাইপ ও n-টাইপ সেমিকন্ডাক্টর প্রকৃতপক্ষে তড়িৎ নিরপেক্ষ।
ট্রানজিস্টরের আবিষ্কার ইলেকট্রনিক্সের জগতে বিপ্লব এনেছে। ১৯৪৮ সালে জে. বার্ডিন ও ডব্লিউ. এইচ. ব্রাটেইন ট্রানজিস্টর আবিষ্কার করেন। এই ক্ষুদ্র সেমিকন্ডাক্টরটি তড়িত সংকেতকে বিবর্ধন করতে পারে এবং উচ্চগতি সুইচ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। ট্রানজিস্টর তাই ইলেকট্রনিক সার্কিট বা বর্তনীতে বিবর্ধক ও সুইচ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
চিত্র ১০.১৯ : n-pn এবং p-n-p ট্রানজিস্টরের সাধারণ চিত্র ও বর্তনী প্রতীক।
দুই শ্রেণির সেমিকন্ডাক্টরের (n-টাইপ ও p-টাইপ) তিনটি দিয়ে ট্রানজিস্টর তৈরি করা হয়। এতে একটি p-টাইপের কেলাসের উভয় পার্শ্বে একটি করে n-টাইপ কেলাস বা -টাইপের কেলাসের উভয় দিকে একটি করে p-টাইপ কেলাস স্যান্ডউইচ করে যথাক্রমে n-p-n বা p-n-p জংশন তৈরি করা হয়। এদেরকে যথাক্রমে n-p-n ট্রানজিস্টর ও p-n-p ট্রানজিস্টর বলা হয়।
এরকমভাবে সজ্জিত কেলাসের প্রথমটিকে নিঃসারক (emitter), মাঝেরটিকে পীঠ বা ভূমি (base) এবং অন্য পাশেরটিকে সংগ্রাহক (collector) বলা হয় (চিত্র : ১০.১৯)।
ট্রানজিস্টরের এক পাশের অংশ যা আধান সরবরাহ করে তাকে নিঃসারক বলে। নিঃসারককে পীঠের সাপেক্ষে সর্বদা সম্মুখী বায়াসে সংযোগ দেওয়া হয় (চিত্র : ১০.20 ) ।
ট্রানজিস্টরের অন্যপাশের অংশ যা আধান সংগ্রহ করে তাকে সংগ্রাহক বলে। সংগ্রাহককে সর্বদা বিমুখী বায়াসে সংযোগ দেওয়া হয় (চিত্র : ১০. ২০ ) ।
নিঃসারক ও সংগ্রাহকের মাঝের অংশকে পীঠ বা ভূমি বলা হয়। ট্রানজিস্টরের পীঠ-নিঃসারক জংশন সম্মুখী বায়াস প্রদান করা হয় যাতে করে নিঃসারক বর্তনীর রোধ কম হয়। সংগ্রাহক বর্তনীর রোধ বৃদ্ধিকল্পে পীঠ-সংগ্রাহক জংশনে বিমুখী বায়াস প্রদান করা হয়।
ট্রানজিস্টরের পীঠ নিঃসারকের তুলনায় খুবই পাতলা হয়। পক্ষান্তরে, সংগ্রাহক নিঃসারকের তুলনায় প্রশস্ত হয় চিত্র (১০:২১)। তবে আঁকার সুবিধার্থে নিঃসারক ও সংগ্রাহককে সমান আকৃতির দেখানো হয়ে থাকে (চিত্র ১০-১৯)। (১০-১৯) চিত্রে বর্তনীতে ব্যবহৃত ট্রানজিস্টরের প্রতীক দেখানো হয়েছে।
আমরা যে সংখ্যা বা নম্বর পদ্ধতির সাথে বেশি পরিচিত তা হলো ডেসিমেল বা দশমিক নম্বর পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে দশ ডিজিট বা অঙ্ক রয়েছে যার মাধ্যমে এই পদ্ধতির সকল সংখ্যা লেখা যায়। এসব ডিজিট হচ্ছে 0, 1, 2, 3, 4, 5, 6, 7, 8, 9 । ডেসিমেল পদ্ধতিতে 9 এর চেয়ে বড় কোনো সংখ্যা লিখতে হলে দুই বা ততোধিক ডেসিমেল ডিজিট সংযুক্ত করতে হয় বা মিলাতে হয়। উদাহরণ হিসাবে আমরা যদি 9 এর পরবর্তী বড় সংখ্যা দশ লিখতে চাই তাহলে আমাদের এই পদ্ধতির দ্বিতীয় সংখ্যা । এর পর প্রথম সংখ্যা 0 লিখতে হয়। অর্থাৎ 10 লিখতে হয়। একভাবে আমরা 11 12 13 .......... 19 ইত্যাদি লিখতে পারি। 19 এর বড় কোনো সংখ্যা লিখতে আমরা তৃতীয় ডিজিট 2 এর পর প্রথম, দ্বিতীয় তৃতীয়, চতুর্থ ইত্যাদি ডিজিট লিখে 20, 21, 22 ...... ইত্যাদি লিখতে হয় । এভাবে আমরা 99 পর্যন্ত লিখে থাকি। 99 এর পরের সংখ্যা লিখতে গেলে আমাদের তিনটি ডিজিট পাশাপাশি লিখতে হয় এবং আমরা একশ লিখি এভাবে 100 অর্থাৎ দ্বিতীয় ডিজিটের পর দুটি প্রথম ডিজিট লিখতে হয়। এভাবে আমরা যত বড় ইচ্ছে সংখ্যা লিখতে পারি। ডেসিমেল পদ্ধতির বেস বা ভিত্তি হলো 10 (দশ)। কোনো নম্বর পদ্ধতির বেস হলো ঐ নম্বর পদ্ধতির মোট ডিজিট সংখ্যা। এই পদ্ধতিতে ডিজিট দশটি তাই এর বেস 10।
উদাহরণ : ডেসিমেল পদ্ধতিতে 1967 কে নিম্নোক্তভাবে প্রকাশ করা যায়।
1967 = 1000+ 900 +60 +7
= 1 x 103 +9 × 102 + 6 x 101 +7 x 100
0.1967 = 1 x 10-1+ 9 x 10-2+6x 103+7 × 10-4
এবং 26.296 = 2 x 101 + 6 x 100 + 2 x 10-1 + 9 × 10-2 + 6 x 10
বাইনারি নম্বর পদ্ধতিতে কোনো সংখ্যাকে বোঝাতে মাত্র দুটি ডিজিট 0 এবং 1 ব্যবহৃত হয়। এই পদ্ধতিতে 1 এর বড় কোনো সংখ্যা লিখতে হলে । এর পরে 0 বা 1 দিতে হয়। যেমন 2 লিখতে হলে 10 লিখতে হয় । 3 লিখতে হলে 11 হিসাবে। 10 কে পড়তে হয় এক শূন্য (one zero) এবং 11 কে পড়তে হয় এক-এক ( one-one)। তিন লেখার পর বাইনারি ডিজিট শেষ হয়ে যায়। সুতরাং এরপর চার লিখতে হলে আমাদের লিখতে হয় দশমিক পদ্ধতিতে যেমন 1 এর পর দুটি শূন্য দিয়ে লেখা হয়। সুতরাং বাইনারি পদ্ধতিতে 4 লিখতে আমাদের দ্বিতীয় ডিজিট 1 এর পর প্রথম ডিজিট ( দুইবার লিখতে হয়। সুতরাং বাইনারি পদ্ধতিতে 4 (চার) লিখতে হয় 100 হিসাবে। পড়তে হয় এক-শূন্য শূন্য। 5 সমতুল বাইনারি সংখ্যা হলো 101।
নিচের সারণিতে ডেসিমেল নম্বরের সমতুল্য বাইনারি নম্বর দেখানো হলো।
সারণি 10.1: ডেসিমেল ও বাইনারি সংখ্যার সমতুল্যতা।
ডেসিমেল নম্বর | বাইনারি নম্বর |
---|---|
0 | 0 |
1 | 1 |
2 | 10 |
3 | 11 |
4 | 100 |
5 | 101 |
6 | 110 |
7 | 111 |
8 | 1000 |
9 | 1001 |
বাইনারি সংখ্যায় বেস হলো 2। সুতরাং যে কোনো বাইনারি সংখ্যাকে নিচের মতো ডেসিমেল নম্বরে প্রকাশ করা যায়।
(111)2 = 1 x 22 + 1 x 21 + 1 x 20
=4+2+1=7
সুতরাং ( 111 )2 = (7)10
1001 = 1 × 23 + 0 x 22 + 0 x 21 + 1 x 20
=8+0+0+1=9
সুতরাং ( 1001)2 = (9)10
8 bit = 1 byte
1024 byte = 1 Kilobyte (KB)
1024 Kilobyte = 1 Megabyte (MB)
1024 Megabyte = 1 Gigabyte (GB)
লজিক গেট হলো লজিক বর্তনীর নির্মাণের মৌলিক উপাদান । লজিক বর্তনী হলো একটি ডিজিটাল বর্তনী বা সার্কিট। লজিক সার্কিটের ইনপুট বা আন্তর্গামী টার্মিনালের অবস্থা বা শর্ত থেকে আউটপুট বা বহির্গামিতার ভবিষ্যদ্বাণী করা যায়। এই বর্তনীতে ইনপুট ও আউটপুটের মধ্যে যৌক্তিক সম্পর্ক বিদ্যমান। তাই এদের বলা হয় লজিক গেট।
ডিজিটাল সার্কিটে লজিক গেট ব্যবহার করে যৌক্তিক সম্পর্ক স্থাপন করে ইনপুট ভোল্টেজকে আউটপুট ভোল্টেজে রূপান্তর করা হয়। লজিক গেট হলো একটি ডিজিটাল বর্তনী যা বুলিয়ান বীজগণিতের সমীকরণগুলোকে বাস্তবায়িত করে।
লজিক গেটের এক বা একাধিক ইনপুট থাকতে পারে। কিন্তু আউটপুট হবে শুধু একটিই। ইনপুট ও আউটপুটের সম্ভাব্য মানের সম্পর্ককে একটি সারণির মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। একে বলা হয় ট্রুথ টেবিল (Truth table)। সুতরাং লজিক গেটের ট্রুথ টেবিল হলো সেই সারণি যা লজিক গেটের সকল সম্ভাব্য ইনপুট ও আউটপুট প্রদর্শন করে। ডিজিটাল ইলেকট্রনিক্সের তিনটি মৌলিক লজিক গেট হলো (i) OR গেট (ii) AND গেট ও (iii) NOT গেট। এই তিনটি মৌলিক গেটের বিভিন্ন সমবায় বা সংযুক্তির মাধ্যমে তৈরি করা হয় NOR গেট, XOR গেট ও NAND গেট।
OR গেটে দুই বা ততোধিক ইনপুট সিগন্যাল থাকে। কিন্তু আউটপুট সিগন্যাল থাকে মাত্র একটি। বড় হাতের অক্ষর A ও B দ্বারা ইনপুট নির্দেশ করা হয় এবং আউটপুট নির্দেশ করা হয় Y দ্বারা। একে OR গেট বলা হয়। কারণ এতে যদি যে কোনো বা সকল ইনপুট ভোল্টেজ উচ্চ থাকে তাহলে আউটপুট ভোল্টেজ উচ্চ হবে।
নিজে কর: ১০:৩০ (ক) চিত্রানুযায়ী একটি বর্তনী তৈরি কর । এখানে দুটি সুইচ A ও B সমান্তরাল সংযোগে রয়েছে। এই সমবায়কে একটি ব্যাটারি, একটি বাল্ব ও একটি রোধের সাথে শ্রেণি সংযোগ যুক্ত করা হয়েছে। এবার A সুইচটি বন্ধ কর। A সুইচটি খুলে R সুইচটি বন্ধ। কর। এবার একসঙ্গে A ও B সুইচটি বন্ধ কর। কী দেখলো বাল্বটি তখনই জ্বলে যখন A অথবা B অথবা A ও B উভয় সুইচটি বন্ধ থাকে। এটি OR গেটের একটি ব্যবহারিক প্রয়োগ। |
---|
OR গেটের লজিক সঙ্কেত হলো (চিত্র ১০.৩০ (খ)),
Y = A + B
নিজে কর : ১০.৩১ (ক) চিত্রানুযায়ী একটি বর্তনী তৈরি কর। এখানে সুইচ A ও B একটি ব্যাটারি ও বাঘের সাথে শ্রেণি সংযোগে যুক্ত আছে। (ক) A ও B উভয় সুইচ খুলে দাও। (খ) এবার A সুইচ খুলে B সুইচ বন্ধ কর। (গ) B সুইচ খুলে A. সুইচ বন্ধ কর। (ঘ) সুইচ A ও B উভয়ই বন্ধ কর। কী দেখলে? |
---|
প্রথম তিন ক্ষেত্রে বাল্ব জ্বলবে না। শুধুমাত্র বাল্ব জ্বলবে যখন A এবং B উভয় সুইচই বন্ধ থাকবে। এটি একটি AND গেট।
AND গেটের ট্রুথ টেবিল হলো (সারণি ১০.৪ )
A | B | Y |
---|---|---|
0 | 0 | 0 |
0 | 1 | 0 |
1 | 0 | 0 |
1 | 1 | 1 |
AND গেটের বুলিয়ান প্রকাশ হলো, Y=A.B
Y = আউটপুট, A ও B হলো ইনপুট এবং হলো AND অপারেশন যা গুণের কাজ করে। AND গেটের লজিকাল সংকেত চিত্র ১০-৩১ (খ)-এ দেখানো হলো—
NOT গেটে একটি ইনপুট ও একটি আউটপুট থাকে। একে ইনভার্টারও বলা হয়। NOT লজিককে ট্রানজিস্টর দিয়েও কাজ করানো যায়।
প্রথম ক্ষেত্রে বাল্বটি জ্বলবে। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে বাল্বটি জ্বলবে না। এটি একটি NOT গেট। NOT গেটের সংকেত এবং ট্রুথ টেবিল হলো-
NOT গেটের বুলিয়ান প্রকাশ হলো
Y = A
এখানে A = Y আউটপুট এর অর্থ Ā ( = Y) A এর বিপরীত।
তিনটি মৌলিক গেট OR, AND এবং NOT এর সমবায়ে বিভিন্ন প্রকার জটিল ডিজিটাল বর্তনী তৈরি হয়েছে।
এগুলো হলো—
১. NAND গেট ।
২. NOR গেট।
৩. XOR গেট।
8. X NOR গেট।
AND গেটের আউটপুটে Y' কে, NOT গেটের ইনপুটের সাথে সংযুক্ত করে NAND গেট পাওয়া যায় [চিত্র ১০.৩৩ (ক)]। NAND গেট লজিক সংকেত [চিত্র ১০.৩৩ (খ)] তে দেখানো হয়েছে।
২. NOR গেট : OR গেটের আউটপুট Y' কে NOT গেটের ইনপুটের সাথে সংযুক্ত করে NOR গেট পাওয়া যায় (চিত্র ১০.৩৪ক.)। NOR গেটে লজিক সংকেত চিত্র ১০.৩৪ খ তে দেওয়া হলো।
OR গেট ও NOT গেটের ট্রুথ টেবিলকে একত্রিত NOR গেটের ট্রুথ টেবিল পাওয়া যায়।
NOR গেটের বুলিয়ান রাশিমালা বা প্রকাশ হলো :
Y=
এর অর্থ হলো Y, A অথবা B নয়, যা A ও B এর বিপরীত।
OR গেট, AND গেট এবং NOT গেট সংযুক্ত করে XOR গেট পাওয়া যায় (চিত্র ১০.৩৫ ক)। এর লজিক সংকেত চিত্র ১০.৩৫ খ তে দেওয়া হলো—
XOR গেটের আউটপুট তখনই 1 হবে যখন আউটপুট শুধুই পৃথক হবে। এই গেটের ট্রুথ টেবিল নিচে দেওয়া হলো—
এই বর্তনী ইলেকট্রনিক বর্তনীতে প্রায়শই ব্যবহৃত হয় বলে একে এক্সক্লুসিভ (exclusive) OR গেট বলা হয়।
৪. X NOR গেট X NOR গেটের সাথে NOT গেট যোগ করে X NOR গেট পাওয়া যায়, যার লজিক সংকেত (চিত্র ১০.৩৬) ও টুথ টেবিল (সারণি ১০.৯) নিচে দেওয়া হলো—
NAND গেট থেকে বিভিন্ন সংযোগের মাধ্যমে NOT গেট, AND গেট ও OR গেট পেতে পারি।
NAND গেটের দুটি ইনপুটকে সংযুক্ত করে একটিতে রূপান্তরিত করে NOT গেট পাওয়া যায়। NAND গেটের জন্য ট্রুথ টেবিল তৈরি করে এর ট্রুথ টেবিল পাওয়া যায়। নিচে এই গেটের লজিক সঙ্কেত (চিত্র ১০.৩৭) ও ট্রুথ টেবিল (সারণি ১০.১০) দেওয়া হলো :
NAND গেটের আউটপুটকে NAND গেট থেকে তৈরি NOT গেটের ইনপুটের সাথে যুক্ত করে AND গেট পাওয়া যায়। নিচের চিত্রে (১০.৩৮) এ রকম একটি AND গেট দেখানো হলো।
A ও B ইনপুটদ্বয়কে NAND গেট থেকে তৈরি দুটি পৃথক NOT গেটের সাথে সংযুক্ত কর এবং ইনপুটকে বিপরীত করে A ও B করো। এই বিপরীত আউটপুট দুটিকে NAND গেটের আউটপুটে সংযুক্ত করো (চিত্র ১০.৩৯) এবং ট্রুথ টেবিল তৈরি কর। দেখা যায় যে, সংযুক্ত বর্তনীয় আউটপুট ও OR গেটের আউটপুট একই।
একটি p-টাইপ সেমিকন্ডাক্টর ও একটি n-টাইপ সেমিকন্ডাক্টর সমন্বয়ে p-n জংশন তৈরি হয়। দুটি সেমিকন্ডাক্টর সমন্বয়ে গঠিত বলে একে সেমিকন্ডাক্টর ডায়োড বলে। এই জংশন তড়িৎপ্রবাহ একদিকে প্রবাহিত করে বা একমুখী করে, তাই এর অপর নাম সেমিকন্ডাক্টর রেকটিফায়ার। প্রকৃতপক্ষে দুটি সেমিকন্ডাক্টরকে জোড়া লাগিয়ে ডায়োড তৈরি করা হয় না। একটি বিশুদ্ধ সেমিকন্ডাক্টর কেলাসকে এমনভাবে ডোপায়ন করা হয় যাতে একদিকে p-টাইপ ও অন্যদিকে n-টাইপ অঞ্চলের উদ্ভব হয় এবং মাঝে একটা জংশন তৈরি হয়। p-টাইপ ও n-টাইপ সেমিকন্ডাক্টরের স্পর্শতলকে জংশন বা সংযোগ তল বলে। ডায়োডের বর্তনী প্রতীক হচ্ছে এবং ব্লক চিত্র হচ্ছে [p[n]। একটি - p-টাইপ সেমিকন্ডাক্টরের অভ্যন্তরে বহুসংখ্যক হোল ও অতি অল্পসংখ্যক ইলেকট্রন থাকে। হোলের সংখ্যা কেলাসের মধ্যে ঋণাত্মক আয়নিত গ্রাহক পরমাণুর সমান। একইভাবে একটি -টাইপ সেমিকন্ডাক্টরের মধ্যে বহুসংখ্যক মুক্ত ইলেকট্রন এবং অতি অল্পসংখ্যক হোল থাকে এবং ঐ মুক্ত ইলেকট্রনের সংখ্যা কেলাসের মধ্যকার ধনাত্মক আয়নিত দাতা পরমাণুর সমান ।
p-n জংশন সৃষ্টির সাথে সাথে p-অঞ্চলে হোলের সংখ্যা n-অঞ্চলের হোলের সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি বলে ব্যাপনের নিয়ম অনুযায়ী p-অঞ্চলের হোলগুলো n-অঞ্চলে যেতে চেষ্টা করে যাতে p ও n অঞ্চলের সর্বত্র হোলের সংখ্যা ঘনত্ব সমান হয়। একইভাবে n অঞ্চল থেকে কিছু ইলেকট্রন p-অঞ্চলে যেতে চেষ্টা করে।
p-অঞ্চল হতে হোলগুলো n-অঞ্চলে প্রবেশ করে n-অঞ্চলের মুক্ত ইলেকট্রনের সাথে মিলিত হয়ে তড়িৎ নিরপেক্ষ হয় ফলে সমসংখ্যক ধনাত্মক দাতা আয়ন উন্মুক্ত হয়। আবার -অঞ্চল হতে একই প্রক্রিয়ায় মুক্ত ইলেকট্রনগুলো p- অঞ্চলে প্রবেশ করে সেখানকার হোলের সাথে মিলিত হয়ে তড়িৎ নিরপেক্ষ হয় এবং সমসংখ্যক ঋণাত্মক গ্রাহক আয়ন উন্মুক্ত করে। ফলে p-অঞ্চলে কিছু ঋণাত্মক আয়ন এবং n-অঞ্চলে কিছু ধনাত্মক আয়নের উদ্ভব হয় (চিত্র : ১০.১২)। এভাবে যথেষ্ট সংখ্যক গ্রাহক ও দাতা আয়ন উক্ত হওয়ার পর ব্যাপন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হবে। এখন n- অঞ্চলের ধনাত্মক আধান p-অঞ্চল থেকে হোলের আগমন এবং p অঞ্চলের ঋণাত্মক আধান n অঞ্চল থেকে ইলেকট্রনের আগমনকে বাধা দেবে। ফলে সংযোগস্থলে একটা বিভব প্রাচীরের উদ্ভব হবে যা বিভব বাধা সৃষ্টি করবে। এই বিভব বাধার বাইরে উভয়দিকে কেলাস তড়িৎ নিরপেক্ষ অবস্থায় থাকে। শুধু বিভব বাধা অংশে ” অঞ্চলে ধনাত্মক আয়ন এবং p-অঞ্চলে ঋণাত্মক আয়ন দেখা যায়। p-n জংশনের এ অংশকে মুক্ত আধানহীন স্তর বা নিঃশেষিত স্তর বা ডিপলেশন স্তর বলে।
এখন p-n জংশনে বহিস্থ ভোল্টেজ প্রয়োগ করা হলে তড়িৎ প্রবাহ হবে। তবে সেটা নির্ভর করবে ভোল্টেজ কীভাবে প্রয়োগ করা হবে তার ওপর। p-n জংশনে বহিস্থ ভোল্টেজ-এর প্রয়োগ দুভাবে হতে পারে। যথা-
p-n জংশনে যদি কোনো বহিস্থ ভোল্টেজ বা বিভব পার্থক্য প্রয়োগ করা হয় তাহলে তড়িৎপ্রবাহ ঘটে। ভোল্টেজ যদি এমনভাবে প্রয়োগ করা হয় যে কোষের ধনাত্মক প্রাপ্ত p-টাইপ বস্তুর সাথে এবং ঋণাত্মক প্রাপ্ত -টাইপ বস্তুর সাথে সংযুক্ত হয় তাহলে তাকে সম্মুখী ঝোঁক বলে (চিত্র ১০.১৩)। এক্ষেত্রে কোষের ধনাত্মক প্রাপ্ত ইলেকট্রনগুলোকে বামে অর্থাৎ p-টাইপ বস্তুর দিকে এবং কোষের ঋণাত্মক প্রান্ত হোলগুলোকে ডানে অর্থাৎ -টাইপ বস্তুর দিকে টানবে। ফলে n-টাইপ বস্তু থেকে ইলেকট্রন জংশন পার হয়ে p টাইপ বস্তুতে যাবে এবং হোল জংশন পার হয়ে n-টাইপ বস্তুতে প্রবেশ করবে। ব্যাপারটি এরকম যে n-টাইপ বস্তু থেকে ইলেকট্রন জংশন পার হয়ে p-টাইপ বস্তুতে গিয়ে এর হোলগুলো পূর্ণ করবে। ফলে p-n জংশন ও বহিস্থ বর্তনীতে তড়িৎ প্রবাহ চলবে। এই প্রবাহকে বলা হয় সম্মুখী প্রবাহ। এই ধরনের সংযোগকে বলা হয় সম্মুখী ঝোঁক।
এক্ষেত্রে n-টাইপ বন্ধুর মুক্ত ইলেকট্রন ব্যাটারির ধনাত্মক প্রাপ্তের আকর্ষণের ফলে n-টাইপ ৰঙ্কুতেই থেকে যাবে p জংশন পার হয়ে কিছুতেই p টাইপ বন্ধুতে যেতে পারবে না। p-টাইপ বস্তুর 'হোল'ও p-টাইপ বস্তুতেই থেকে যাবে। ফলে ডিপলেশন স্তরের প্রশস্ততা বৃদ্ধি পাবে এবং জংশন দিয়ে কোনো তড়িৎপ্রবাহ চলবেনা। এ ধরনের সংযোগকে বলা হয় বিমুখী ঝোঁক।
উপরিউক্ত ঘটনা থেকে বোঝা যায় যে, ডোস্টেজ প্রয়োগ করা হলে p-n জংশন শুধু ইলেকট্রন এক অভিমুখে প্রবাহের অনুমতি দেয়। অর্থাৎ এই জংশনে ইলেকট্রনের প্রবাহ একমুখী। সুতরাং এটি রেকটিফায়ার হিসেবে কাজ করে। তাই সেমিকন্ডাক্টরকে ডায়োড রেকটিফায়ার বলে।
একটি p-n জংশনের দুই প্রান্তে ভোল্টেজ প্রয়োগ করলে তড়িৎ প্রবাহ পাওয়া যায়। ভোল্টেজ পরিবর্তনের সাথে তড়িৎ প্রবাহের যে পরিবর্তন ঘটে লেখচিত্রের মাধ্যমে তার উপস্থাপনকে p-n জংশনের বৈশিষ্ট্য লেখ বা ডায়োডের বৈশিষ্ট্য লেখ বা I-V লেখ বলে। চিত্র ১০.১৫-এ প্রদর্শিত বর্তনীতে রয়েছে একটি জংশন ডায়োড, তড়িৎ প্রবাহ পরিমাপের জন্য একটি মিলিঅ্যামিটার (mA) এবং ভোল্টেজ মাপার জন্য একটি ভোল্টমিটার (V), তড়িচ্চালক শক্তির উৎস (E), পরিবর্তনশীল রোধ (Rh) ইত্যাদি ।
পরিবর্তনশীল রোধের মান বদলিয়ে বর্তনীতে ভোল্টেজের মান পরিবর্তন করা হয়। প্রযুক্ত ভোল্টেজ ও প্রাপ্ত তড়িৎ প্রবাহের লেখচিত্র আঁকলে তা চিত্র ১০.১৬ এর মতো হবে।
ডায়োডের বৈশিষ্ট্য লেখ থেকে দেখা যায় যে, সম্মুখী ঝোঁকের ক্ষেত্রে স্বল্প ভোল্টেজ পার্থক্যের জন্য তড়িৎ প্রবাহের পরিমাণ দ্রুত বৃদ্ধি পায় কিন্তু বিমুখী ঝোঁকের ক্ষেত্রে ভোল্টেজের পার্থক্য যতই বাড়ানো হোক না কেন তড়িৎ প্রবাহের মানের পরিবর্তন খুবই কম সুয়; এমনকি প্রায় স্থির থাকে। এই অবস্থায় ভোল্টেজ আরো বাড়াতে থাকলে শেষে এক সময় হঠাৎ করে বিপুল পরিমাণ তড়িৎ প্রবাহ পাওয়া যায়, যেন মনে হয় p-n জংশনের বিভব বাধা একেবারে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বিমুখী ঝোঁকের ক্ষেত্রে যে ভোল্টেজের জন্য এরূপ ঘটে তাকে জেনার ভোল্টেজ বা জেনার বিভব (Zener Voltage) বলে। 1934 সালে জেনার কর্তৃক আবিষ্কৃত ডায়োডের এই ক্রিয়াকে জেনার ক্রিয়া বলে। এই ভোল্টেজ প্রয়োগে জংশন ডায়োডের কার্যক্ষমতা বিনষ্ট হয়ে যেতে পারে। এজন্য এই ভোল্টেজকে বিনাশী ভোল্টেজও বলে।
গতীয় রোধ : যে বিভব পার্থক্যে p-n জংশন কাজ করে তাকে গতীয় রোধ বলে। p- জংশনে প্রযুক্ত বিভ পার্থক্যে ক্ষুদ্র পরিবর্তন V এর জন্য আনুষঙ্গিক তড়িৎপ্রবাহের ক্ষুদ্র পরিবর্তন l এর অনুপাতকে গতীয় রোধ বলে । গাণিতিকভাবে গতীয় রোধ R হলো,
বেশির ভাগ ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি বা বর্তনী পরিচালনার জন্য নিরবচ্ছিন্ন একমুখী প্রবাহ বা ডিসি প্রবাহ প্রয়োজন হয়। ব্যাটারি বা শুষ্ক কোষই হচ্ছে ডিসি প্রবাহের প্রধান উৎস। কিন্তু এদের ভোল্টেজ বেশ কম এবং এগুলো প্রায়ই পরিবর্তন করতে হয় বলে বেশ ব্যয়বহুল। এ কারণে আমরা যদি আমাদের বৈদ্যুতিক লাইনের দিক পরিবর্তী তথা এসি ভোল্টেজকে একমুখী তথা ডিসি ভোল্টেজ-এ রূপান্তরিত করতে পারি তা ব্যবহারে যেমন সুবিধাজনক হয় তেমনি সাশ্রয়ীও হয়। এসি ভোল্টেজকে ডিসি ভোল্টেজে রূপান্তর করার পদ্ধতিকে বলা হয় রেকটিফিকেশন বা একমুখীকরণ।
বর্তনী সংযোগ : পূর্ণতরঙ্গ ব্রিজ রেকটিফায়ার তৈরি করার জন্য প্রয়োজন হয় চারটি ডায়োড। D1, D2,D3 এবং D4 ডায়োড চারটি দিয়ে ১০.১৭ চিত্রের ন্যায় একটি ব্রিজ গঠন করা হয়। যে এসি উৎসকে রেকটিফাই বা একমুখী করতে হবে সেটি একটি ট্রান্সফর্মারের মাধ্যমে ব্রিজের দুই বিপরীত কৌণিক বিন্দুতে চিত্রানুযায়ী সংযোগ দেওয়া হয়। ব্রিজের অন্য দুই কৌণিক বিন্দুতে ভূ-সংযুক্তির মাধ্যমে লোড রেজিস্টান্স, RL যুক্ত করা হয় ।
কার্যনীতি : পূর্ণতরঙ্গ ব্রিজ রেকটিফায়ারে এসি অন্তর্গামী উৎসের দুই চক্রই কাজে লাগানো হয়। গৌণ ভোল্টেজের ধনাত্মক অর্ধচক্রের জন্য ট্রান্সফার্মারের P প্রান্ত ধনাত্মক এবং প্রাস্ত Q ঋণাত্মক হয়। ফলে D1 ও D3 ডায়োড সম্মুখ ঝোঁক প্রাপ্ত হয়। সুতরাং শুধুমাত্র D1 ও D3 ডায়োডের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত হয়। এই ডায়োড দুটি লোড রেজিস্টান্স RL এর সাথে শ্রেণি সমবায়ে সংযুক্ত হবে। (চিত্র ১০.১৮ ক)। তড়িৎ প্রবাহ তীর চিহ্ন দিয়ে দেখানো হয়েছে। তড়িৎ A থেকে লোড রেজিস্ট্যান্সের মধ্য দিয়ে B এর দিকে প্রবাহিত হবে। RL এর দুই প্রান্তে ডিসি বহির্গামী পাওয়া যাবে।
গৌণ কুণ্ডলীর ঋণাত্মক অর্ধচক্রের জন্য P প্রান্ত ঋণাত্মক এবং Q প্রাপ্ত ধনাত্মক হয়। ফলে D2 ও D4 ডায়োড সম্মুখী ঝোঁক প্রাপ্ত হয় এবং D1 ও D3 ডায়োড বিমুখী ঝোঁক প্রাপ্ত হয়। সুতরাং শুধুমাত্র D2 ও D4 ডায়োডের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত হয়। এই দুটি ডায়োড লোড রেজিস্ট্যান্স RL এর সাথে শ্রেণি সমবায়ে সংযুক্ত হয় (চিত্র ১০.১৮খ)। তড়িৎ প্রবাহ তীরচিহ্ন দিয়ে দেখানো হয়েছে। তড়িৎ A থেকে লোড রেজিস্ট্যান্স RL এর মধ্য দিয়ে B এর দিকে প্রবাহিত হবে। RL এর দুই প্রান্তে ডিসি বহির্গামী পাওয়া যাবে।
বর্তনীর প্রয়োজন অনুসারে তিন প্রকারের ট্রানজিস্টর বিন্যাস করা হয়।
এই বিন্যাসে পীঠ ও সংগ্রাহক নিয়ে বহির্গামী এবং পীঠ ও নিঃসারক নিয়ে অন্তর্গামী প্রান্ত গঠিত হয়। উভয় প্রান্তের সাথে পীঠ সংযুক্ত থাকে বলে একে সাধারণ পীঠ বিন্যাস বলে (চিত্র ১০-২২)।
এই বিন্যাসে নিঃসারক ও সংগ্রাহক নিয়ে বহির্গামী এবং নিঃসারক ও পীঠ নিয়ে অন্তর্গামী প্রান্ত গঠিত (চিত্র ১০:২৩)। উভয় প্রান্তের সাথে নিঃসারক সংযুক্ত থাকে বলে একে সাধারণ নিঃসারক বিন্যাস বলে।
এই বিন্যাসে সংগ্রাহক ও নিঃসারক নিয়ে বহির্গামী এবং সংগ্রাহক ও পীঠ নিয়ে অন্তর্গামী প্রাস্ত গঠিত হয় (চিত্র ১০-২৪)। এ ক্ষেত্রে উভয় প্রান্তের সাথে সংগ্রাহক যুক্ত থাকে বলে একে সাধারণ সংগ্রাহক বিন্যাস বলে।
চিত্র ১০-২৫-এ একটি npn ট্রানজিস্টর দেখানো হয়েছে যার নিঃসারক-পীঠ জংশনকে সম্মুখী এবং সংগ্রাহক-পীঠ জংশনকে বিমুখী বায়াস করা হয়েছে। সম্মুখী বায়াস - অঞ্চলের ইলেকট্রনগুলোকে পীঠের দিকে প্রবাহিত করে ফলে নিঃসরক প্রবাহ IE সৃষ্টি হয়। ইলেকট্রনগুলো p-টাইপ পীঠে প্রবেশ করার ফলে তারা সেখানকার হোল-এর সাথে মিলতে চায়। কিন্তু পীঠ খুব পাতলা হওয়ার কারণে সামান্য কিছু ইলেক্ট্রন (প্রায় 5%) হোল-এর সাথে মিলিত হয়ে খুব ক্ষুদ্র পীঠ প্রবাহ lB সৃষ্টি করে এবং বাকি ইলেক্ট্রনগুলো (প্রায় 95%) n-টাইপ সংগ্রাহক অঞ্চলে প্রবেশ করে এবং সংগ্রাহক প্রবাহ Ic সৃষ্টি করে। এভাবে প্রায় সম্পূর্ণ নিঃসারক
প্রবাহ সংগ্রাহক বর্তনীতে প্রবাহিত হয়। সুতরাং দেখা যায় নিঃসরক প্রবাহ হচ্ছে সংগ্রাহক ও পীঠ প্রবাহের সমষ্টির সমান। অর্থাৎ
lE=lB +lc…. (10.2)
(চিত্র ১০.২৬)-তে একটি pnp ট্রানজিস্টর দেখানো হয়েছে যার নিঃসারক পীঠ জংশনকে সম্মুখী এবং সংগ্রাহক পীঠ জংশনকে ৰিমুখী বায়াস করা হয়েছে। সম্মুখী বায়াসের ফলে p- টাইপ নিঃসারকের হোলগুলো পীঠের দিকে প্রবাহিত হয়ে নিঃসারক প্রবাহ IE তৈরি করে। হোলগুলো n-টাইপ পীঠে প্রবেশ করে সেখানকার ইলেকট্রনগুলোর সাথে মিলতে চায় । কিছু পীঠ খুব পাতলা হওয়ার কারণে সামান্য (প্রায় 5%) কিছু হোল ইলেকট্রনের সাথে মিলিত হয়ে খুব সামান্য পীঠ প্রবাহ lB তৈরি করে।
বাকি প্রায় 95% হোল p-টাইপ সংগ্রাহক অঞ্চলে প্রবেশ করে সংগ্রাহক প্রবাহ Ic তৈরি করে। এভাবে প্রায় সম্পূর্ণ নিঃসারক প্রবাহ সংগ্রাহক বর্তনীতে প্রবাহিত হয়। লক্ষণীয় যে, pnp ট্রানজিস্টরের ভিতরে তড়িৎ প্রবাহ হোল-এর প্রবাহের জন্য হয় কিন্তু বহিবর্তনীর সংযোগ তারের মধ্যে তড়িৎ প্রবাহ ইলেকট্রনের জন্যই হয়ে থাকে।
যদিও npn ও pnp ট্রানজিস্টরের কার্যনীতি একই রকম কিন্তু পার্থক্য এই যে, npn ট্রানজিস্টরে তড়িতের বাহক হলো প্রধানত ইলেকট্রন এবং pnp ট্রানজিস্টর তড়িতের বাহক হলো হোল ।
আমরা জানি যে, ইলেকট্রন অধিক দ্রুত তড়িৎবাহক। তাই উচ্চ কম্পাঙ্কের বর্তনী বা কম্পিউটার বর্তনীতে npn ট্রানজিস্টর ব্যবহার করা হয়। এ সকল বর্তনীতে সিগনালের প্রতি অতি দ্রুত সাড়া দিতে হয়।
যে যন্ত্র এর অন্তর্গামীতে প্রদত্ত সংকেত বহির্গামীতে বিবর্ধিত করে তাকে অ্যাম্পলিফায়ার বলে। ইলেকট্রনিক অ্যাম্পলিফায়ার দুর্বল অন্তর্গামী সংকেতকে বৃহৎ বহির্গামী সংকেতে পরিণত করে। ট্রানজিস্টর অ্যাম্পলিফায়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ১০.২৭ চিত্রে একটি সাধারণ নিঃসারক বিবর্ধকের বর্তনী দেখানো হয়েছে। নিঃসারক-পীঠ জংশনে একটি দুর্বল অন্তর্গামী সংকেত প্রদান করা হয় এবং সংগ্রাহক বর্তনীতে সংযুক্ত রোধ RL থেকে বহির্গামী সংকেত গ্রহণ করা হয়। ভালো বিবর্ধন বা অ্যাম্পলিফিকেশন পাওয়ার জন্য অন্তর্গামী বর্তনীকে সর্বদা সম্মুখী বায়াস করা হয় এবং তা করার জন্য অন্তর্গামী বর্তনীতে অন্তর্গামী সংকেতের অতিরিক্ত একটি ডি.সি. ভোল্টেজ VBB প্রয়োগ করতে হয় যাকে বায়াস ভোল্টেজ বলে।
সম্মুখী ঝোঁক দেওয়ায় অন্তর্গামী বর্তনীতে রোধ খুব কম হয়। নিঃসারক সংগ্রাহক বর্তনী অর্থাৎ বহির্গামী বর্তনীতে Vcc ব্যাটারির মাধ্যমে বিমুখী ঝোঁক প্রদান করা হয় ।
নিঃসারক পীঠ জংশনে প্রযুক্ত সংকেতের ধনাত্মক অর্ধচক্রের সময় জংশনের সম্মুখ ঝোঁক বৃদ্ধি পায় ফলে অধিক পরিমাণ ইলেকট্রন নিঃসারক থেকে পীঠ-এর মধ্য দিয়ে সংগ্রাহকে প্রবাহিত হয় এবং সংগ্রাহক প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। এই বেড়ে যাওয়া সংগ্রাহক প্রবাহ (Ic) লোড রেজিস্ট্যান্স RL-এ অধিক পরিমাণ বিভব পতন সৃষ্টি করে।
অর্থাৎ বহির্গামীতে অধিক ভোল্টেজ পাওয়া যায়। সংকেতের ঋণাত্মক অর্ধচক্রের জন্য নিঃসারক পীঠ জংশনের সম্মুখী ঝোঁক হ্রাস পায় ফলে সংগ্ৰাহক প্রবাহও কমে যায়। সংগ্রাহক প্রবাহ কমে যাওয়ায় বহির্গামী ভোল্টেজও হ্রাস পায় তবে তা' অন্তর্গামী থেকে বেশি হয়। এভাবে ট্রানজিস্টর কোনো দুর্বল সংকেতকে অ্যাম্পলিফাই বা বিবর্ধিত করে।
বাস্তবক্ষেত্রে বিবর্ধনের জন্য অনেকগুলো ট্রানজিস্টর ব্যবহার করা হয়ে থাকে। একটির বহির্গামী অপরটির অন্তর্গামী হিসেবে কাজ করে।
ট্রানজিস্টর অ্যাম্পলিফায়ারকে মাইক, ইন্টারকম, অ্যালার্ম, রেডিও ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।
সাধারণ পীঠ বিন্যাসে অন্তর্গামী প্রবাহ হচ্ছে নিঃসারক প্রবাহ IB এবং বহির্গামী প্রবাহ হচ্ছে সংগ্রাহক প্রবাহ Ic। সংগ্রাহক পীঠ ভোল্টেজ VCB ধ্রুব থাকলে Ic ও IE এর অনুপাতকে বলা হয় প্রবাহ বিবর্ধন গুণক । গাণিতিকভাবে,
.. (10.3)
সাধারণ নিঃসারক বিন্যাসের বেলায় অন্তর্গামী প্রবাহ হচ্ছে পীঠ প্রবাহ lB এবং বহির্গামী প্রবাহ হচ্ছে সংগ্রাহক প্রবাহ Ic. ধ্রুব VcE (সংগ্রাহক নিঃসারক ভোল্টেজের) এর বেলায়, Ic এর পরিবর্তন ও IB এর পরিবর্তন এর অনুপাতকে বলা হয় প্রবাহ লাভ । সুতরাং
ট্রানজিস্টরে পীঠ বা ভূমি বর্তনীতে তড়িৎপ্রবাহ না চললে সংগ্রাহক বর্তনীতে কোনো তড়িৎপ্রবাহ চলে না। সুতরাং ট্রানজিস্টরকে সুইচ হিসাবে ব্যবহার করা যায় যা পীঠ প্রবাহের পরিবর্তন ঘটিয়ে 'অন' ও 'অফ' করা যেতে পারে। ট্রানজিস্টর ব্যবহার করে বিভিন্ন রকম সুইচ তৈরি করা সম্ভব। এগুলো হলো-
যে রকম সুইচ হিসাবে ব্যবহার করা হোক না কেন বিবর্ধকের মতো পীঠ বর্তনীতে তড়িৎ প্রবাহের জন্য এতে একটি বিভব বিভাজক ব্যবহার করা হয়। নিচে একটি আলোক চালিত সুইচের কার্যপ্রণালি দেখানো হলো। এই বর্তনীর (চিত্র ১০.২৮) বাল্বটি আলোর উপস্থিতিতে জ্বলে ওঠে এবং অন্ধকারে নিভে যায়।
এখানে বিভব বিভাজকে একটি আলোক নির্ভরশীল রোধক (LDR) বা ফটো রেজিস্টর থাকে। অন্ধকারে এই ফটো রেজিস্টরের রোধ হয় প্রায় 1 MS2। এর ফলে উৎস ভোল্টেজের খুব সামান্য ভগ্নাংশ R রোধের দুই প্রান্তে পাওয়া যায় এতে করে পীঠ প্রবাহ খুবই সামান্য হয় যা ট্রানজিস্টরকে অন করতে পারে না। উজ্জ্বল আলোতে ফটো রেজিস্টারের রোধ মাত্র কয়েকশ ও'ম হয় । ফলে R এর দুই প্রান্তের ভোল্টেজ বৃদ্ধি পায় এতে করে পীঠ প্রবাহও বৃদ্ধি পায় ফলে ট্রানজিস্টর অন হয় এবং বাল্ব জ্বলে ওঠে।
ফটোরেজিস্টর এবং রোধ R এর অবস্থান বিনিময় করলে অন্ধকারে বাল্ব জ্বলে উঠবে এবং আলোতে বাল্ব নিভে যাবে।
ডেসিমেল থেকে বাইনারি নম্বরে রূপান্তর
আমরা জানি ডেসিমেল পদ্ধতির বেস হলো 10 এবং বাইনারি পদ্ধতির বেস হলো 2। ডেসিমেল পদ্ধতি থেকে বাইনারি পদ্ধতিতে রূপান্তরের দুটি ধারা হলো-
(১) ডেসিমেল নম্বরকে 2 দ্বারা বার বার ভাগ করতে হবে যতক্ষণ না ভাগফল শূন্য হয়।
(২) ভাগ শেষ বা অবশিষ্টকে উল্টো দিক থেকে পরপর পাশাপাশি সাজিয়ে বাইনারি নম্বর পাওয়া যাবে।
নিচের উদাহরণটি লক্ষ্য কর।
ভাগ | ভাগফল | ভাগশেষ |
---|---|---|
45÷2 22 ÷ 2 11÷2 5÷2 2÷2 1 ÷2 | 22 11 5 2 1 0 | 1 0 1 1 0 1 |
সমতুল বাইনারি নম্বর হলো অবশিষ্ট সংখ্যাগুলো নিচ থেকে উপরের দিকে অর্থাৎ 101101 |
সুতরাং, ( 45 )10 = (101101 )2
বাইনারি থেকে ডেসিমেলে রূপান্তর করতে হলে প্রত্যেকটি ডিজিটের স্থানীয় মানকে 2 এর সূচক হিসাবে লিখতে হবে। কোনো ডিজিটের ডান পাশে যতটি ডিজিট থাকবে ডিজিটকে 2 এর তত সূচক দিয়ে গুণ করতে হবে। এভাবে প্রত্যেকটি ডিজিটকে 2 এর সূচক দিয়ে গুণ করে যোগ করে ডেসিমেলের মান পাওয়া যায় এবং ভগ্নাংশের ক্ষেত্রে 2-1, 2-2, 2-3 ইত্যাদি দিয়ে প্রথম থেকে পরপর ক্রমান্বয়ে করে গুণফলকে যোগ করে ডেসিমেলের মান পাওয়া যায়।
(101001)2 = 1 x 25+0x24+1 x 23+0x22+0x21+ 1x 20 =32+0+8+0+0+1
=41 (101001)2
=(41)10
দুই অবস্থার (two states) যে কোনো ব্যবস্থার জন্য বাইনারি নম্বর পদ্ধতি অত্যন্ত জনপ্রিয় কিন্তু সমস্যা হলো বাইনারি পদ্ধতিতে প্রতিটি নম্বর বা সংখ্যা অত্যন্ত বড় হয়ে যায়। এ জন্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে অক্টাল নম্বর পদ্ধতি ও হেক্সাডেসিমেল নম্বর পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
অক্টাল পদ্ধতির বেস হলো ৮ (আট) এবং আটটি ডিজিট হলো 0, 12, 3, 4, 5, 6, 7 । এরা ডেসিমেল পদ্ধতির মতো একই ভৌত অর্থ বহন করে।
অক্টাল পদ্ধতির সংখ্যাকে ডেসিমেল পদ্ধতিতে রূপান্তর করা যায়। মনে কর আমরা 172 কে অক্টাল থেকে ডেসিমেলে রূপান্তর করতে চাই।
(172)8= 1 × 82 + 7 × 81 + 2 x 80
=64+56 +2
=(122)10
এখন যদি আমরা (122)10 কে অক্টালে রূপান্তর করতে চাই তাহলে আমরা নিম্নোক্তভাবে করতে পারি।
ভাগ | ভাগফল | ভাগশেষ | |
---|---|---|---|
122÷8 15÷8 1÷8 | 15 1 0 | 2 7 1 |
এখানে ভাগশেষ বা অবশিষ্টকে নিচ থেকে ওপরের দিকের পাশাপাশি সাজিয়ে লিখলে অক্টাল সংখ্যা পাওয়া যায়। এখানে অক্টাল সংখ্যা হলো 172 সুতরাং
(122)10 = (172)8
অক্টাল থেকে বাইনারিতে রূপান্তর করার জন্য তিনটি বিট একত্রিত করে করা হয়। নিচে এরকম রূপান্তর দেখানো হলো—
অক্টাল | বাইনারি |
1 2 3 4 5 6 7 | 001 010 011 100 101 110 111 |
0, 1, 2, 3, 4, 5, 6, 7, 8, 9 A, B, C, D, E, F এখানে দ্বারা 10-15 ডিজিটকে A, B, C, D, E, F বোঝানো হয়েছে।
পূর্ণসংখ্যার জন্য প্রত্যেক ডিজিটের স্থানীয় মান হলো 16 এর ঊর্ধ্বমুখী সূচক এবং ভগ্নাংশের ক্ষেত্রে প্রতি ডিজিটের স্থানীয় মান হলো 16 এর নিম্নমুখী সূচক
নিচের সারণিতে তিন রকম নম্বর বা সংখ্যায় রূপান্তর দেখানো হলো :
ডেসিমেল নম্বর | হেক্সাডেসিমেল নম্বর | বাইনারি নম্বর | অক্টাল নম্বর |
---|---|---|---|
0 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 | 0 1 2 3 4 5 6 7 8 9 A B C D E F | 0000 10001 0010 0011 0100 0101 0110 0111 1000 1001 1010 1011 1100 1101 1110 1111 | 0 1 2 3 4 5 6 7 10 11 12 13 14 15 16 17 |
এই ধরনের রূপান্তরে সবচেয়ে কম তাৎপর্যপূর্ণ ডিজিট এর সূচক হলো 16° এর পরবর্তী ডিজিটগুলোর সূচক হবে 161, 162.....… ইত্যাদি।
এখন আমরা 19E হেক্সাডেসিমেল নম্বরকে ডেসিমেল সংখায় রূপান্তর করব।
(19E)16 = 1 x 162 + 9 x 161 + 14 x 160 [ যেহেতু E = 14 ]
= 256 +144 +14= 414
:- (19E)16 = (414)10
এখন আমরা (414)10 কে হেক্সাডেসিমেল নম্বরে রূপান্তর করব।
ভাগ | ভাগফল | ভাগশেষ | |
---|---|---|---|
414÷16 25 ÷ 16 1 ÷ 16 | 25 1 0 | 14 = E 9 1 |
:- (414)10 =(19E)16
নিচের চারটি নিয়মে বাইনারি নম্বরের যোগ করা যায়
(1) 0 + 0 = 0 অর্থাৎ শূন্যের সঙ্গে শূন্য যোগ করলে শূন্য হয়।
(2) 1 + 0 = 1 অর্থাৎ এক এর সাথে শূন্য যোগ করলে 1 হয়।
(3) 0 + 1 = 1 অর্থাৎ 0 এর সাথে এক যোগ করলে 1 হয়।
(4) 1 + 1 = 0 হাতে থাকে 1 ।
বাইনারি যোগের ক্ষেত্রে ডান দিক থেকে বাম দিকে যোগ হবে এবং হাতের এক বাম দিকের অংকগুলোর সাথে যোগ হবে।
এবার আমরা বাইনারি কয়েকটি যোগ করব।
এখন, 1101.01= 1x23+1 x 22+ 1x21+1 x 20+0x2-1+ 1x2-2
=8+4+1+.25 = 13.25
বাইনারি সংখ্যায় বিয়োগ নিচের নিয়মগুলো মেনে চলে।
বাইনারি সংখ্যার ভাগ দশমিক পদ্ধতির নিয়মেই করা হয়। নিচের উদাহরণগুলো লক্ষ করলেই তা বোঝা যাবে।
কম্পিউটার ব্যবস্থার ইলেকট্রনিক সার্কিট বা বর্তনীর কার্যনীতির ভিত্তি হলো জর্জ বুলি (George Boole) আবিষ্কৃত বুলিয়ান বীজগণিতের নীতি। বুলিয়ান বীজগণিত এমন যৌক্তিক বর্ণনা (logical statement) নিয়ে আলোচনা করে যার দুটি মাত্র মান থাকে হয় সত্যমান (true value) না হয় মিথ্যা মান (false value)। বাইনারি পদ্ধতি অনুযায়ী ডিজিটাল বর্তনী শুধু দুটি অবস্থা 'অন' (ON) এবং 'অফ' (OFF) চিনতে পারে। বুলিয়ান চলক যা যৌক্তিক বর্ণনায় সত্য মানকে (truevalue) কে । এবং এর মিথ্যা মানকে 0 দ্বারা নির্দেশ করা হয়। বুলিয়ান বীজগণিতে তিনটি মৌলিক অপারেটর ব্যবহার করা হয় ; এরা হলো (i) OR, (ii) AND, (iii) NOT । বুলিয়ান বীজগণিতে
(i) যোগ চিহ্ন + দ্বারা OR বোঝানো হয়। Y = A + B এটা পড়তে হয় Y, A অথবা B এর সমান।
(ii) গুণ চিহ্ন (x বা.) দ্বারা AND বোঝানো হয়। Y = A B, পড়তে হয় Y, A এবং এর B মান সমান।
(iii) বার চিহ্ন (—) দ্বারা NOT বোঝানো হয়। Y =Ā, একে Y, NOT A হিসাবে পড়তে হয়, Y এর মান A এর মানের সমান নয়।
আরও দেখুন...