শৈবালের গঠনঃ গঠনগতভাবে শৈবালদের দেহ সরল প্রকৃতির । এরা এককোষী বা বহুকোষী হতে পারে । আয়তনে এরা আণুবীক্ষণিক (Prochlorococcus marincls, ব্যাস ০.৫ মাইক্রন) হতে শুরু করে ৬০ মিটার (বাদামী শৈবাল, Macrocystic pyrifera) পর্যন্ত দীর্ঘ ও বৃহৎ আকৃতির হয়। বাদামি ও লোহিত শৈবালের দেহ শাখা-প্রশাখাবিশিষ্ট ও জটিল । নিচে
শৈবালের অঙ্গজ ও কোষীয় গঠন বর্ণনা করা হলো।
দৈহিক গঠন (Vegetative structure):
কিছু এককোষী শৈবালের দেহে ফ্ল্যাজেলা থাকায় এরা সচল, যেমন-Chlamydomonas; আবার অন্যদের দেহ ফ্ল্যাজেলাবিহীন তাই নিশ্চল, যেমন- Navicula. অনেক এককোষী শৈবাল (নিশ্চল, সচল) কলোনি হিসেবে অবস্থান করে, যেমন-Volvox, সূত্রাকার (filamentous) শৈবালগুলো অশাখ, যেমন- Spirogyra কিংবা শাখান্বিত,যেমন—Pithophora হতে পারে। কিছু শৈবাল দেখতে শাখা-প্রশাখাযুক্ত উদ্ভিদের মতো, যেমন- Sargassum. কোন কোন শৈবালের দেহ পর্ব ও পর্বমধ্য নিয়ে গঠিত, যেমন- Chara কারও দেহ পাতার মতো চ্যাপ্টা, যেমন-Ulva, কৌন শৈবালের দেহ ফাঁপা নল (siphon)-এ গঠিত যেমন-Polysiphonia.
কোষীয় গঠন (Cell structure): শৈবালের কোষের গঠন অনেকটা উঁচুশ্রেণির উদ্ভিদকোষের মতোই। প্রতিটি কোষ দ্বিস্তরী মৃত কোষপ্রাচীর দিয়ে আবৃত। রাসায়নিকভাবে প্রাচীরটি বিভিন্ন ধরনের শর্করা যেমন-সেলুলোজ, পেকটিন, মিউসিলেজ প্রভৃতি দিয়ে গঠিত। কোন কোন ক্ষেত্রে কোষপ্রাচীরে প্রোটিন সঞ্চিত থাকে। কোষপ্রাচীরের ঠিক নিচেই রয়েছে লিপিড ও প্রোটিন দিয়ে তৈরি সজীব কোষঝিল্লি । কোষঝিল্লি দিয়ে পরিবেষ্টিত থকথকে জেলির মতো বস্তুটি সাইটোপ্লাজম । সাইটোপ্লাজমে সাধারণত একটি নিউক্লিয়াস, বৃহদাকার ক্লোরোপ্লাস্ট, মাইটোকন্ড্রিয়া, গলজি বস্তু, পাইরিনয়েড, রাইবোজোম ইত্যাদি অঙ্গাণু থাকে। শৈবালের কোষে প্রধানত শর্করা জাতীয় খাদ্যবস্তু সঞ্চিত থাকে। কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন শৈবালের, সঞ্চিত শর্করার প্রকৃতিও ভিন্ন ভিন্ন ধরনের হয়। যেমন, সবুজ শৈবালের ক্ষেত্রে সঞ্চিত খাদ্যবস্তু প্রধানত স্টার্চ বা শ্বেতসার, বাদামী শৈবালের ক্ষেত্রে সঞ্চিত খাদ্য ল্যামিনারিন ও ম্যানিটল, হলুদ-সোনালী শৈবালে সঞ্চিত শর্করা ডলিউটিন ও চর্বি, লোহিত শৈবালে ক্ষেত্রে ফ্লোরিডিয়ান স্টার্ট প্রভৃতি । এছাড়া শৈবালে সঞ্চিত খাদ্য হিসেবে চর্বি ও তৈল, লিউকোসিন, প্যারামাইলাম প্রভৃতি থাকে ।