5 m উচ্চতা হতে একটি বলকে 20 m/s বেগে অনুভূমিকের সাথে 30° কোণে উপরের দিকে নিক্ষেপ করা হলো। তাহলে বলটির বিচরণ কাল কত? (A ball is thrown upward with an angle of 30° with the horizontal line from a height of 5 m with a velocity of 20 m/s. What will be the time of flight of the ball?)
সাধারণ অভিজ্ঞতার আলোকে বলের নিম্নোক্ত চারটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা যায়।
যেহেতু টানা বা ঠেলার মান ও দিক উভয়ই আছে, তাই বল একটি ভেক্টর রাশি। বলের দিক টানা বা ঠেলার দিকে।
যদি A বস্তু B বস্তুর ওপর একটি বল প্রয়োগ করে, তাহলে B বস্তুও A বস্তুর ওপর একটি বল প্রয়োগ করে।
যখন কোনো ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে ক্রিকেট বলকে আঘাত করা হয়, তখন ব্যাটটি ক্রিকেট বলের ওপর একটি বল প্রয়োগ করে। ক্রিকেট বলটিও কিন্তু ব্যাটের ওপর একটি বল প্রয়োগ করে।
যখন তুমি ফুটবলকে কিক্ কর, তখন তোমার পা ফুটবলটির সংস্পর্শে থাকা অবস্থায় তার উপর বল প্রয়োগ করে তার বেগের পরিবর্তন ঘটায়।
আমরা যখন কোনো রাবারের টুকরা বা স্প্রিং-এর দুই প্রান্ত ধরে টান দেই অর্থাৎ বল প্রয়োগ করি, তখন তা বিকৃত হয় ।
Fundamental Force
বিংশ শতাব্দীর পদার্থবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্জান বা উপলব্ধি হচ্ছে যে ইতোপূর্বে আমরা যে সকল বলের উল্লেখ করেছি। এবং আরো অনুল্লেখিত যে অসংখ্য বল রয়েছে সেগুলো কোনোটিই কিন্তু স্বাধীন বা মৌলিক নয়। এগুলোর উদ্ভব প্রকৃতির চারটি মৌলিক বল এবং তাদের মধ্যকার ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া বা মিথস্ক্রিয়া বা অন্তক্রিয়া (Interaction) থেকে।
এ মৌলিক বলগুলো হলো :
ভরের কারণে মহাবিশ্বের যেকোনো দুটি বস্তুর মধ্যকার পারস্পরিক আকর্ষণ বলকে মহাকর্ষ বলে। কোনো বস্তুর ওজন হচ্ছে মহাকর্ষ বলের ফলশ্রুতি। যদিও স্থল বস্তুগুলোর মধ্যকার মহাকর্ষ বল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ হতে পারে, কিন্তু চারটি মৌলিক বলের মধ্যে মহাকর্ষ বল হচ্ছে দুর্বলতম বল । অবশ্য এ কথাটি প্রযোজ্য হয় মৌলিক কণাগুলোর পারস্পরিক বল বিবেচনা করে তাদের আপেক্ষিক সবলতার বিচারে। যেমন, কোনো হাইড্রোজেন পরমাণুতে ইলেকট্রন ও প্রোটনের মধ্যকার মহাকর্ষ বল হচ্ছে 3.6 x 10-17 N; অপরপক্ষে এই কণা দুটির মধ্যকার স্থির তড়িৎ বল হচ্ছে 8.2 x 10-8 N। এখানে আমরা দেখি যে, স্থির তড়িৎ বলের তুলনায় মহাকর্ষ বল তাৎপর্যপূর্ণ নয় ।
মহাকর্ষ একটি সার্বজনীন বল। এ মহাবিশ্বের প্রত্যেক বন্ধুই অন্য বস্তুর কারণে এ বল অনুভব করে। এ বলের পাল্লা হচ্ছে অসীম। ভূ-পৃষ্ঠের সকল বস্তুই পৃথিবীর কারণে এ বল অনুভব করে। মহাকর্ষ বল সুনির্দিষ্টভাবে পৃথিবীর চারদিকে চাঁদের বা বিভিন্ন কৃত্রিম উপগ্রহের ঘূর্ণন, সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর বা বিভিন্ন গ্রহের গতিকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। নক্ষত্র, গ্যালাক্সি বা নক্ষত্রপুঞ্জ গঠনেও মহাকর্ষ বল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন যে বস্তুদ্বয়ের মধ্যে গ্রাভিটন নামে এক প্রকার কণার পারস্পরিক বিনিময়ের দ্বারা এই বল ক্রিয়াশীল হয়। অবশ্য অভিটনের অস্তিত্বের কোনো প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি।
দুটি আহিত কণা তাদের আধানের কারণে একে অপরের ওপর যে আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল প্রয়োগ করে তাকে তাড়িতচৌম্বক বল বলে। তড়িৎ বল এবং চৌম্বক বল ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। যখন দুটি আহিত কণা স্থির থাকে তখন তাদের ওপর কেবল তড়িৎ বল ক্রিয়া করে। যখন আহিত কণাগুলো গতিশীল থাকে তখনকার একটি অতিরিক্ত তড়িৎ বল হচ্ছে চৌম্বক বল।
সাধারণভাবে তড়িৎ প্রভাব ও চৌম্বক প্রভাব অবিচ্ছেদ্য সে কারণে বলটিকে তাড়িতচৌম্বক বল নামে অভিহিত করা হয়। মহাকর্ষ বলের ন্যায় তাড়িতচৌম্বক বলের পাল্লাও অসীম পর্যন্ত বিস্তৃত এবং এ বলের ক্রিয়ার জন্য কোনো মাধ্যমেরও প্রয়োজন হয় না। তাড়িতচৌম্বক বল মহাকর্ষ বলের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। উদাহরণস্বরূপ দুটি প্রোটনের মধ্যকার তাড়িতচৌম্বক বল এদের মধ্যকার মহাকর্ষ বলের চেয়ে 1036 গুণ বেশি।
আমরা জানি পদার্থ ইলেকট্রন, প্রোটন নামক আহিত কণা দিয়ে গঠিত। যেহেতু তাড়িতচৌম্বক বল মহাকর্ষ বলের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী তাই পারমাণবিক ও আণবিক ক্ষেত্রের সকল ঘটনা এই বল দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয়। অবশ্য অন্য দুটি বল কেবলমাত্র নিউক্লিয় ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তাই বলা যায়, অণুপরমাণুর গঠন, রাসায়নিক বিক্রিয়া, পদার্থের তাপীয় ও অন্যান্য ধর্ম তাড়িতচৌম্বক বলের ফল। লক্ষণীয় যে, আমাদের এই স্থল জগতের যাবতীয় বলসমূহ (মহাকর্ষ বল ব্যতীত) তড়িৎ বলের বহিঃপ্রকাশ। ঘর্ষণ বল, স্পর্শ বল, স্প্রিং বা অন্যান্য বিকৃত বস্তুর মধ্যকার বল আহিত কণাগুলোর তড়িৎ বলেরই ফলশ্রুতি। ফোটন নামক এর প্রকার ভরহীন ও আধানহীন কণার পারস্পরিক বিনিময়ের ফলে এই বল কার্যকর হয়। মহাকর্ষ বল সর্বদা আকর্ষণধর্মী । পক্ষান্তরে তাড়িতচৌম্বক বল আকর্ষণ বিকর্ষণ উভয়ধর্মী হতে পারে। আবার কোনো বস্তুর ভর কেবলমাত্র ধনাত্মক হতে পারে কিন্তু আধান ধনাত্মক বা ঋণাত্মক উভয় হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পদার্থ তড়িৎ নিরপেক্ষ অর্থাৎ ব্যাপকভাবে তড়িৎ বল শূন্য জার সকল জাগতিক ঘটনা মহাকর্ষ বল দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয় ।
সবল নিউক্লিয় বল প্রোটন ও নিউট্রনকে নিউক্লিয়াসে আবদ্ধ রাখে। এটা স্পষ্ট যে, কোনো ধরনের আকর্ষণীয় বল না থাকলে প্রোটনসমূহের মধ্যকার বিকর্ষণী বলের কারণে নিউক্লিয়াস অস্থিতিশীল হয়ে যেতো। এ আকর্ষণী বল মহাকর্ষীয় বল হতে পারে না কারণ তড়িত বলের তুলনায় মহাকর্ষীয় বল অতি অকিঞ্চিতকর। সুতরাং নিউক্লিয়াসের স্থায়িত্বের জন্যে একটি নতুন বলের প্রয়োজন হয় আর সেই বলই হচ্ছে সবল নিউক্লিয় বল যা সকল মৌলিক বলগুলোর মধ্যে সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী। তাড়িতচৌম্বক বল থেকে এটি প্রায় 100 গুণ বেশি শক্তিশালী। এটি আধান নিরপেক্ষ এবং এটি সমানভাবে প্রোটন- প্রোটন, নিউট্রন-নিউট্রন এবং প্রোটন-নিউট্রনের মধ্যে বোসন কণার পারস্পরিক বিনিময়ে কার্যকর হয়। পরবর্তীতে দেখা যায় প্রোটন ও নিউট্রন উভয়ই কোয়ার্ক নামক আরো মৌলিক কণিকা দিয়ে গঠিত আর কোয়া কণিকাগুলো প্রান নামে এক ধরনের আঠালো কণার পারস্পরিক বিনিময়ের ফলে উৎপন্ন তীব্র বলের প্রভাবে একত্রিত থাকে। এর পারা অত্যন্ত কম, প্রায় নিউক্লিয়াসের ব্যাসার্ধের সমতুল্য অর্থাৎ প্রায় 10-15 m এ বল নিউক্লিয়াসের স্থায়িত্বের নিয়ামক। উল্লেখ্য যে, ইলেকট্রনের মধ্যে এ ধরনের কোনো বল নেই।
দুর্বল নিউক্লিয় বলের উদ্ভব হয় যখন কোনো নিউক্লিয়াস থেকে রশ্মির নির্গমন ঘটে। রশ্মির নির্গমনের সময় নিউক্লিয়াস থেকে একটি ইলেকট্রন এবং একটি অনাহিত কণা নিউট্রিনো (neutrino) নির্গত হয়। দুর্বল নিউক্লিয় বল মহাকর্ষ বলের ন্যায় অত দুর্বল নয় তবে সবল নিউক্লিয় বল ও তাড়িতচৌম্বক বলের চেয়ে অনেকটাই দুর্বল। এ বলের পাল্লা খুবই কম প্রায় 10-16m থেকে 10-18 m বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন গেজ বোসন কণার পারস্পরিক বিনিয়োগের ফলে এই বল কার্যকর হয়।
সকল মৌলিক বলের জন্য বাহক কণিকা প্রয়োজন। তাড়িতচৌম্বক বলের জন্য এরকম বাহক কণিকা হচ্ছে ফোটন। এর অস্তিত্ব আমরা গত শতকের গোড়াতেই জানতে পেরেছি। সবল নিউক্লিয় বলের জন্য বাহক কণিকা হচ্ছে গুঅন (gluon)। মহাকর্ষ বলের জন্যও একটি বাহক কণিকা গ্রাভিটনের (graviton) প্রস্তাব করা হয়েছে। যদিও এখনো পর্যন্ত এর অস্তিত্বের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। আর দুর্বল নিউক্লিয় বলের জন্য বাহক কণিকাগুলো হচ্ছে W+, W এবং Z বোসন যা গেজ বোসন (gauge boson) নামেও পরিচিত।