পরীক্ষণ ছাড়া রসায়নে যেমন অনুসন্ধান ও গবেষণা করা কঠিন, তেমনি রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার ব্যতীত রসায়নে পরীক্ষণ সাধারণত করা হয় না। অনেক রাসায়নিক পদার্থই স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষভাবে মারাত্বক ক্ষতি করে থাকে। অনেক দ্রব্য আছে যারা অতি সহজেই বিস্ফোরিত হতে পারে,বিষাক্ত, দাহ্য, স্বাস্থ্য সংবেদনশীল এবং ক্যান্সার সৃষ্টিকারী। তাহলে রাসায়নিক দ্রব্য সংগ্রহ এবং তা দিয়ে পরীক্ষণের পূর্বেই তার কার্যকারিতা সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান থাকা খুবই জরুরি।তাই আমাদের জানতে হবে কিভাবে রাসায়নিক দ্রব্য সংরক্ষণ করতে হয়? ও রাসায়নিক দ্রব্য সংরক্ষণে সতর্কতামূলক চিহ্ন।
সারাবিশ্বে পরীক্ষাগার বা গবেষণাগার, শিল্প-কারখানা, কৃষি, চিকিৎসা প্রভৃতি ক্ষেত্রে রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার তথা রাসায়নিক দ্রব্যের বাণিজ্য বেড়ে যাওয়ায় এদের সংক্ষণ ও ব্যবহারের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা জরুরি হয়ে পড়ে। এ সংক্রান্ত একটি সর্বজনীন নিয়ম (Globally Harmonized System) চালুর বিষয়কে সামনে রেখে জাতিসংঘের উদ্যোগে পরিবেশ ও উন্নয়ন নামে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সম্মেলনের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল- (ক) রাসায়নিক পদার্থকে ঝুঁকি ও ঝুঁকির মাত্রার ভিত্তিতে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা, (খ) ঝুঁকির সতর্কতা সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত ডাটাবেজ তৈরি করা এবং (গ) ঝুঁকি (hazard) ও ঝুঁকির মাত্রা বুঝাবার জন্য সর্বজনীন সাংকেতিক চিহ্ন নির্ধারণ করা। কোনো রাসায়নিক দ্রব্য সরবরাহ বা সংরক্ষণ করতে হলে তার পাত্রের গায়ে লেবেলের সাহায্যে শ্রেণিভেদ অনুযায়ী প্রয়ােজনীয় সাংকেতিক চিহ্ন প্রদান রা অবশ্যই বাঞ্ছনীয়। তাহলে ব্যবহারকারী সহজেই কোনাে রাসায়নিক দ্রব্যের পাত্রের গায়ে লেবেল দেখেই এর কার্যকারিতা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা নিতে পারবে এবং এর কার্যকারিতার ঝুঁকি মাথায় রেখে সংরক্ষণ ও ব্যবহার রতে পারবে।
যেমন বিপদজনক সাংকেতিক চিহ্ন সংবলিত কোনাে পাত্রের গায়ের লেবেল দেখে এটা বুঝা যাবে যে, পাত্রের রাসায়নিক দ্রব্যটি একটি মারাত্মক বিষাক্ত পদার্থ। সাথে সাথে ব্যবহারকারীর মাথায় এটাও কাজ করবে যে, ব্যবহারের সময় অবশ্যই বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, যাতে এটা শরীরের ভিতরে প্রবেশ করতে না পারে। এছাড়াও পরীক্ষার পর পরীক্ষণ মিশ্রণ উন্মুক্ত পরিবেশ ফেলে দেওয়া যাবে কি না বা পরিশােধন হবে কি না, সে সম্পর্কে ধারণা নিতে পারবে। সংগৃহীত রাসায়নিক দ্রব্য কোথায়, কীভাবে সংরক্ষণ করলে রাসায়নিক দ্রব্যের মান ঠিক থাকবে ও অনাকাঙ্ক্ষিত দূর্ঘটনা এড়ানাে যাবে, সেসব ধারণাও পাওয়া যাবে।
বিস্ফোরক (explosive) দ্রব্য, নিজে নিজেই বিক্রিয়া করতে পারে, যেমন– জৈব পার-অক্সাইড। নির্জন জায়গায় সংরক্ষণ করা, সাবধানে নাড়াচাড়া করা, ঘর্ষণ হতে পারে এমন জায়গায় না রাখা, অন্য পদার্থের সাথে মিশ্রণের সময় অতি ধীরে যুক্ত করা, ব্যবহারের সময় চোখে নিরাপদ চশমা পরা।
দাহ্য (flammable) পদার্থ- গ্যাস, তরল, কঠিন। সহজেই আগুন ধরতে পারে। বিক্রিয়া করে তাপ উৎপন্ন করে, যেমন— অ্যারােসােল, পেট্রোলিয়াম। এ ধরনের দ্রব্য আগুন বা তাপ থেকে দূরে রাখা, ঘর্ষণ হতে পারে এমন অবস্থায় না রাখা।
জারক (oxidizing agent) গ্যাস বা তরল পদার্থ, যেমন- ক্লোরিন গ্যাস। নিঃশ্বাসে গেলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে, ত্বকে লাগলে ক্ষত হতে পারে। গ্যাস হলে নিচ্ছিদ্রভাবে রাখা, জারণ বিক্রিয়া করতে পারে এমন পাত্রে না রাখা, ব্যবহারের সময় হাতে সুনির্দিষ্ট দস্তানা, চোখে নিরাপদ চশমা ও নাকে-মুখে মাস্ক ব্যবহার করা।
মারাত্মক বিষাক্ত পদার্থ (poison)- গ্যাস, তরল, কঠিন। নিশ্বাসে, ত্বকে লাগলে অথবা খেলে মৃত্যু হতে পারে। এ ধরনের পদার্থ অবশ্যই তালাবদ্ধ স্থানে সংরক্ষণ করা বাঞ্ছনীয়। ব্যবহারের সময় হাতে দস্তানা, চোখে নিরাপদ চশমা ও নাকে-মুখে মাস্ক (গ্যাস হলে) ব্যবহার করা। শরীরে প্রবেশ করতে পারে এমন অবস্থা এড়িয়ে চলা। পরীক্ষার পর পরীক্ষণ মিশ্রণের যথাযথ পরিশােধন করা।
দেহের শ্বাস-প্রশ্বাস সংক্রান্ত (respiratory) তন্ত্রের জন্য সংবেদনশীল, জীবানু সংক্রমণ ঘটাতে পারে (mutagenic), ক্যান্সার সৃষ্টি (carcinogenic) করতে পারে। সর্বসাধারণের বাইরে নিরাপদ স্থানে সংরক্ষণ করা, ব্যবহারের সময় হাতে দস্তানা, চোখে নিরাপদ চশমা ও নাকে-মুখে মাস্ক ব্যবহার করা। পরীক্ষণ মিশ্রণের সংগ্রহ ও যথাযথ পরিশােধন করা।
পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর, বিশেষ করে জলজ (aquatic) উদ্ভিদ ও প্রাণির জন্য ক্ষতিকর। এ ধরনের পদার্থ নদী-নালার পানিতে মিশতে দেওয়া উচিত নয়। পরীক্ষণ মিশ্রণ সংগ্রহ ও পরিশােধন করা।
আন্তর্জাতিক রশ্মি চিহ্নটি ১৯৪৬ সালে আমেরিকাতে প্রথম ব্যবহৃত হয়েছিল। চিহ্নটিকে ট্রিফয়েল (trefoil) ও বলা হয়। এটি দ্বারা অতিরিক্ত ক্ষতিকর তেজস্ক্রিয় রশ্মিকে (শক্তি) বুঝানাে হয়। এধরনের রশ্মি মানবদেহকে বিকলাঙ্গ করে দিতে পারে এবং শরীরে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। রশ্মি বের হতে না পারে এরকম ধরনের পুরু বা বিশেষ পাত্রে রাসায়নিক দ্রব্যাদি সংরক্ষণ করা। কাজ করার সময় নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা, উপযুক্ত পােশাক পরিধান করা, চোখে বিশেষ ধরনের
চশমা পরা ইত্যাদি।