প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে যেমন সহজ করেছে তেমনি কম্পিউটারের ব্যবহৃত বিভিন্ন সফটওয়্যার আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন কাজকে বেগবান করেছে। কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারের মাধ্যমে ব্যবহারকারী তার প্রয়োজন অনুযায়ী নির্দিষ্ট কাজকে সম্পাদন করতে পারে। এটি মূলত ব্যবহারকারী বা বিভিন্ন তথ্যের উপরে নির্ভর করে কাজ করে। এটি ভিজুয়াল নির্মন, সমন্বয় সংস্থান, পরিসংখ্যান বা গণনা করে থাকে। এছাড়া তথ্য রক্ষণাবেক্ষণে এটি কাজ করে থাকে।
অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার কম্পিউটারে বিভিন্ন ধরনের ব্যবহারিক কাজের জন্য তৈরি হয়। কাজের প্রকৃতি অনুসারে সাধারণত বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রাম তৈরি করা হয়। তাই ব্যবহারকারী যে সকল সফটওয়্যার ব্যবহার করে ব্যবহারিক সমস্যা সমাধান বা ডেটা প্রক্রিয়াকরণের কাজ করতে পারে তাকে অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রাম বলে। যেমন-
১. Word Processing Package Program :
Word Star, Word Perfect, Ms-Word
২. Spreadsheet Package Program
: Lotus 1-2-3, Ms-Excel, Quattro Pro
৩। Database Package Program
: Access, SQL, Oracle ইত্যাদি।
অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
১। সাধারণ ব্যবহারিক প্রোগ্রাম (General Application Program)
২। অ্যাপ্লিকেশন সুনির্দিষ্ট প্রোগ্রাম বা কাস্টমাইজ প্রোগ্রাম (Application Customized Program)
■ সাধারণ ব্যবহারিক প্রোগ্রাম (General Application Program) : ব্যবহারিক সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক তৈরি যে সমস্ত বাণিজ্যিক সফটওয়্যার পাওয়া যায় তাকে সাধারণ অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রাম বলে। সাধারণ অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামের সাহায্যে ব্যবহারকারী প্রাত্যহিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহারিক সমস্যা সমাধান করতে পারে। যেমন- ওয়েব ব্রাউজিং, ই-মেইল, ওয়ার্ড প্রসেসিং, স্প্রেডশিট প্রোগ্রাম, ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট, গ্রাফিক্স এবং ডেস্কটপ পাবলিশিং ইত্যাদি কাজ সম্পন্ন করতে পারেন। উল্লেখযোগ্য সাধারণ অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামগুলো হচ্ছে-
১. সফটওয়্যার স্যুইট-এম এস অফিস, লোটাস স্মার্ট স্যুইট, কোরল ড্র ইত্যাদি।
২. ওয়েব ব্রাউজার ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার, নেটস্কেপ নেভিগেটর, নেটস্কেপ কমিউনিকেটর ইত্যাদি।
৩. ইলেকট্রনিক মেইল বা ই-মেইল, ইন্টারনেট মেইল, ইউডোরা প্রো, ইন্টারনেট এক্সপ্লেয়ার ইত্যাদি।
৪. ডেস্কটপ পাবলিশিং-পেজ মেকার, পাবলিশার, ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর প্রভৃতি ।
▪️ অ্যাপ্লিকেশন সুনির্দিষ্ট প্রোগ্রাম : কোনো বিশেষ বা সুনির্দিষ্ট সমস্যা সমাধান করার জন্য যে সমস্ত প্রোগ্রাম রচনা করা হয় তাকে অ্যাপ্লিকেশন সুনির্দিষ্ট প্রোগ্রাম বলে। সমস্যার ধরণ ও প্রকৃতি অনুসারে ব্যবহারকারী অ্যাপ্লিকেশন সুনির্দিষ্ট প্রোগ্রাম তৈরি করে থাকেন। এ ধরনের প্রোগ্রাম সাধারণত উচ্চস্তরের ভাষায় লিখা হয় অথবা কোন সাধারণ অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার ব্যবহার করে ব্যবহারকারী তার প্রয়োজনানুসারে প্রোগ্রাম তৈরি করে থাকেন। উদাহরণ স্বরূপ-ব্যাংকিং কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের ব্যাংক সফটওয়্যার, একাউন্টিংয়ের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের একাউন্টিং সফটওয়্যার, সেলস ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার, ইলেকট্রনিক কমার্স, ইনভেন্টারি কন্ট্রোল সফটওয়্যার, পেরোল সিস্টেম, টিকেট রিজার্ভেশন সিস্টেম সফটওয়্যার ইত্যাদি হচ্ছে অ্যাপ্লিকেশন সুনির্দিষ্ট প্রোগ্রাম।
প্যাকেজ প্রোগ্রাম : কম্পিউটার ব্যবহারকারী তাঁর প্রয়োজন মত নিজেই প্রোগ্রাম রচনা করতে পারেন। এজন্য অবশ্যই তাঁকে অভিজ্ঞ প্রোগ্রামার হতে হয়। তবে সকল ব্যবহারকারী অভিজ্ঞ প্রোগ্রাম ডেভেলপার নয় ফলে সকল ব্যবহারকারীর পক্ষে প্রোগ্রাম তৈরি করা সম্ভব হয় না। ব্যবহাকারীদের চাহিদা অনুধাবন করে কম্পিউটার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ছাড়াও অনেক বাণিজ্যিক সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান কিছু সাধারণ প্রোগ্রাম তৈরি করে বাজারজাত করে থাকেন। এসব প্রোগ্রামকে সফটওয়্যার প্যাকেজ অথবা প্যাকেজ প্রোগ্রাম বলা হয় । লিপি প্রস্তুতের জন্য ব্যবহৃত এমএস ওয়ার্ড (MS Word) এবং ওয়ার্ড পারফেক্ট (Word Perfect ) বাণিজ্যিক প্যাকেজ প্রোগ্রামের উদাহরণ। সংগঠনের বিচারে বাণিজ্যিক প্যাকেজ প্রোগ্রামসমূহকে দুইভাবে ভাগ করা যায়। ভাগ দুইটি হলো-
১. একক-প্রক্রিয়া প্যাকেজ ও
২. একীভূত (ইনটিগ্রেটেড) প্যাকেজ
▪️একক প্রক্রিয়া প্যাকেজ: শুধু এক ধরনের সমস্যা সমাধানের জন্য একক-প্রক্রিয়া প্যাকেজ ব্যবহার করা হয়। প্রোগ্রাম রচনার পরিবর্তে এসব প্যাকেজ ব্যবহার করে সহজে সমস্যা সমাধান করা যায়। লিপি প্রস্তুতের জন্য ব্যবহৃত ওয়ার্ডস্টার, ভকসরাইটার, ওয়ার্ড, ওয়ার্ড-পারফেক্ট এবং গ্রাফ বা চার্ট, পাই-চার্ট তৈরির জন্য ব্যবহৃত গ্রাফ, হাভার্ড গ্রাফিক্স, একক-প্রক্রিয়া প্যাকেজ প্রোগ্রামের উদাহরণ। একক-প্রক্রিয়া প্যাকেজ দিয়ে পৃথকভাবে এসব কাজ করতে হলে প্রতিটি প্রক্রিয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রোগ্রাম ও ডেটা ফাইলকে কম্পিউটারে পড়ে নিয়ে প্রক্রিয়াকরণ করতে হয়। এতে বিপত্তিও ঘটতে পারে; অনেক সময় একটি প্রোগ্রাম দিয়ে তৈরি ডেটা বা ফাইল অন্য প্রোগ্রামের জন্য গ্রহণযোগ্য হয় না।
■ একীভুত প্যাকেজ : একাধিক প্রক্রিয়া সমাধানের জন্য অনেক রকম বাণিজ্যিক প্যাকেজ পাওয়া যায়। এ ধরনের প্যাকেজ প্রোগ্রামকে একীভূত প্যাকেজ বলা হয়। একীভূত প্যাকেজে বিভিন্ন প্রক্রিয়া সমাধানের জন্য অনেক রকম প্রোগ্রামের সমন্বয় করা হয়। একই ফাইলের ডেটা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে হলে একীভূত প্যাকেজ সহায়ক। একীভূত প্যাকেজ প্রোগ্রামের সহায়তায় কম্পিউটার ব্যবহারকারীর কর্মদক্ষতা বহুগুণ বাড়ানো সম্ভব। তবে একীভূত প্যাকেজের জন্য বৃহৎ মেমরি দরকার হয়। বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হলে একীভূত প্যাকেজের জন্য গতিসহ আরও কিছু সুযোগ-সুবিধা উৎসর্গ করতে হতে পারে। এ হিসাবে শুধু বহুল ব্যবহৃত প্রক্রিয়ার জন্য একক-প্রক্রিয়া প্যাকেজ ব্যবহার করা সুবিধাজনক হতে পারে।
ফ্রিওয়্যার ও অপেন সোর্স : ফ্রিওয়্যার হলো বিনামূল্যে প্রাপ্ত সফটওয়্যার। যে সমস্ত সফটওয়্যার সংগ্রহ ও ব্যবহার করতে হলে সফটওয়্যার নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের কোন অনুমোদন কিংবা রয়্যালটি (Royalty) দিতে হয় না তাকে ফ্রিওয়্যার বলে। অন্যভাবে বলা যায়, অনেক প্রোগ্রামার বা প্রতিষ্ঠান তাদের উদ্ভাবিত সফটওয়্যার সর্বসাধারণের ব্যবহারের সুযোগ দেয়। এসব সফটওয়্যারকে ফ্রিওয়্যার বলে। যে কেউ ফ্রিওয়্যারের সোর্স কোড পেতে পারেন এবং তা উন্নয়ন করে নিজে ব্যবহার কিংবা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে পারেন।
ফ্রিওয়্যার সবার জন্য উন্মুক্ত। কাজেই যে কেহ চাইলেই ফ্রিওয়্যার কপি করে ব্যবহার করতে পারে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ফ্রিওয়্যার সংগ্রহ করা যেতে পারে।
শেয়ারওয়্যার : শেয়ারওয়্যার হলো এমন কিছু সফটওয়্যার যেগুলো বিভিন্ন শর্ত সাপেক্ষে সংগ্রহ ও ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে তাদের শেয়ারওয়্যার বলে। শেয়ারওয়্যার অনেকটা ফ্রিওয়্যারের মতোই তবে সামান্য রেজিষ্ট্রেশন ফিস এর বিনিময়ে শেয়ারওয়্যার ব্যবহার করা যায়। ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনেক রকম শেয়ারওয়্যার সংগ্রহ করা যায়।
বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারের গুরুত্বপূর্ণ প্যাকেজ বা অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারসমূহ হলো ওয়ার্ড প্রসেসিং, স্প্রেডশিট বিশ্লেষণ, ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, গ্রাফিক্স ডিজাইন প্রোগ্রাম ইত্যাদি।
▪️ওয়ার্ড প্রসেসিং (Word Processing)
ওয়ার্ড (Word) শব্দের অর্থ শব্দ আর প্রসেসিং (Processing) শব্দের অর্থ প্রক্রিয়াকরণ। কম্পিউটারের সাহায্যে বর্ণমালা, সংখ্যা, চিহ্ন বা শব্দ ব্যবহার করে ডকুমেন্ট বা লিপি তৈরি করা উক্ত ডকুমেন্টকে সম্পাদনাই হলো ওয়ার্ড প্রসেসিং। বর্তমানে কম্পিউটার প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে চমৎকারভাবে ওয়ার্ড প্রসেসিংয়ের কাজ করা যায়। অর্থাৎ ডকুমেন্ট তৈরি ও প্রসেসিংয়ের জন্য ব্যবহৃত এক বিশেষ ধরনের কম্পিউটারের ব্যবস্থাকে ওয়ার্ড প্রসেসর বলে। মূলত লেখালেখির কাজ করার জন্য ব্যবহৃত অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামকেই ওয়ার্ড প্রসেসর বা ওয়ার্ড প্রসেসিং প্রোগ্রাম বলে। আধুনিক ডকুমেন্ট তৈরির ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজ প্রোগ্রাম রয়েছে। উল্লেখযোগ্য ওয়ার্ড প্রসেসর প্রোগ্রামসমূহ হলো— মাইক্রোসফট ওয়ার্ড (Microsoft Word ), ওয়ার্ডস্টার ( Wordstar), ওয়ার্ডপারফেক্ট (Wordperfect), ল্যাটেক্স (Latex), নোড প্যাড (Note Pad), ম্যাকরাইট (Mac Write), ওয়ার্ড প্যাড (Word Pad), ওপেন অফিস রাইটার ইত্যাদি। তবে বর্তমানে পিসিতে গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস পরিবেশে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড (Microsoft Word) হচ্ছে বহুল ব্যবহৃত এবং ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় ওয়ার্ড প্রসেসর প্রোগ্রাম। ওয়ার্ড প্রসেসর প্যাকেজ দিয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডকুমেন্ট প্রস্তুতকরণে অনেক সুবিধা পাওয়া যায়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সুবিধাসমূহ হলো-
১. ওয়ার্ড প্রসেসর প্রোগ্রাম ব্যবহার করে সহজে ও নিখুঁতভাবে চিঠিপত্র, রিপোর্ট ও ডকুমেন্ট তৈরি করা যায় এবং সংরক্ষণ করা যায়।
২. প্রয়োজনে সংরক্ষিত ডকুমেন্টের অনেক অনুলিপি বা কপি তৈরি করা যায় ।
৩. প্রিন্টারের সাহায্যে ডকুমেন্টের প্রিন্ট বা মুদ্রণ নেয়া যায়।
৪. মেমোরিতে সংরক্ষিত ডকুমেন্ট পুনরায় ব্যবহার করা যায় বা প্রয়োজনে অন্য মাধ্যমে প্রেরণ করা যায়।
৫. একই সাথে একাধিক ডকুমেন্ট নিয়ে কাজ করা যায়।
৬. ডকুমেন্টে বিভিন্ন ধরনের ফন্ট ব্যবহার করা যায়।
৭. ডকুমেন্টের অপ্রয়োজনীয় কোনো লেখা বা অংশ মুছে দেওয়া যায় ।
৮. ডকুমেন্টের অংশ বিশেষ বা সম্পূর্ণ অংশ এক ডকুমেন্ট থেকে অন্য ডকুমেন্টে স্থানান্তর করা যায়।
৯. ডকুমেন্টের যেকোনো অংশ ব্লক করে বোল্ড, আন্ডার লাইন, ইটালিক ইত্যাদি করা যায়।
১০. ডকুমেন্টের বানান ও ব্যাকরণগত ভুল নির্ণয় এবং সংশোধন করা যায়।
১১. ডকুমেন্টের যেকোনো স্থানে ছবি, গ্রাফ বা চার্ট সংযোজন করে ডকুমেন্টকে আকর্ষণীয় করা যায় ।
১২. ইচ্ছামতো টেবিল তৈরি করা যায় এবং টেবিলের ফরমেটিং কাজ করা যায়।
১৩. Find Replace কমান্ড ব্যবহার করে বড় কোনো ডকুমেন্টে অল্প সময়ে শব্দ খোঁজা যায় এবং প্রতিস্থাপন করা যায়।
১৪. অনেক সময় একই ডকুমেন্ট বারবার ব্যবহারের প্রয়োজন হয় তখন সেটিকে টেমপ্লেট আকারে সংরক্ষণ
করে রাখা যায়। যেমন- ল্যাব রিপোর্ট প্রস্তুত করতে টেমপ্লেট ব্যবহার করা হয়।
১৫. নিরাপত্তার জন্য ডকুমেন্টে পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা যায়।
▪️ স্প্রেডশিট (Spread Sheet)
অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারগুলোর মধ্যে স্প্রেডশিট সফটওয়্যার একটি অন্যতম সফটওয়্যার। Spread Sheet শব্দটির আভিধানিক অর্থ হলো ছড়ানো পাতা। গ্রাফ কাগজের ন্যায় X অক্ষ এবং Y অক্ষ বরাবর ছোট ঘরের ন্যায় অনেক ঘর সম্বলিত বড় শিটকে স্প্রেডশিট বলে। যে প্যাকেজ প্রোগ্রামের সাহায্যে রো এবং কলাম ব্যবহার করে হিসাব-নিকাশের কাজ করা হয় তাকে স্প্রেডশিট বিশ্লেষণ প্যাকেজ প্রোগ্রাম বলে। উইন্ডোজভিত্তিক স্প্রেডশিট প্রোগ্রামের সাহায্যে জটিল গাণিতিক হিসাব-নিকাশ, অর্থনৈতিক ও পরিসংখ্যানিক হিসাব-নিকাশ এবং যুক্তিমূলক কার্যক্রমসহ তথ্য ব্যবস্থাপনার কাজও করা যায়। স্প্রেডশিট সফটওয়্যারকে ইলেকট্রনিক স্প্রেডশিট প্রোগ্রামও বলে। উল্লেখযোগ্য স্প্রেডশিট প্রোগ্রামসমূহ হলো— মাইক্রোসফট এক্সেল (MS-Excel), লোটাস ১-২-৩ (Lotus 1-2-3), কোয়াট্রোপ্রো (Quatro Pro), মাল্টিপ্ল্যান (Multiplan ), সুপার ক্যাল্ক (Super Calc) ইত্যাদি।
প্রথম বাণিজ্যিক স্প্রেডশিট প্রোগ্রাম হলো ভিসিক্যালক (Visicale), যা ১৯৭৮ সালে বাজারে আসে। এরপর আরও অধিক সুবিধা নিয়ে ১৯৮৩ সালে বাজারে আসে লোটাস ১-২- 3 (Lotus 1-2-3)। লোটাসের চেয়ে আরো উন্নতমানের সুবিধা নিয়ে ১৯৮৫ সালে আবির্ভাব হয় মাইক্রোসফট এক্সেল। স্প্রেডশিট এ্যানালাইসিস প্রোগ্রামের একটি বহুল ব্যবহৃত অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার হলো মাইক্রোসফট এক্সেল। এক্সেলের বিভিন্ন সংস্করণ বাজারে এসেছে। তারমধ্যে Excel 5.0 এবং Excel ৭.০ বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এক্সেল '৯৭-এর পরের ভার্সন হলো এক্সেল ২০০০। ২০০১ সালে অফিস XP এর অধীনের XP এক্সেল হলো এক্সেলের সর্বশেষ ভার্সন। একটি স্ট্যান্ডার্ড ইলেকট্রনিক স্প্রেডশিট বিশ্লেষণ প্রোগ্রামের বৈশিষ্ট্যসমূহ ও সুবিধা নিম্নরূপ-
১. সহজেই গাণিতিক, পরিসংখ্যানগত ও অর্থগত হিসাব-নিকাশ করা যায়।
২. একটি সেলের সাথে অন্য এক বা একাধিক সেলের সম্পর্ক স্থাপন করা যায়।
৩. স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফর্মুলা ব্যবহার করে কাজ করা যায়।
৪. স্প্রেডশিটে একটি ওয়ার্কশিটের সাথে অপর এক বা একাধিক ওয়ার্কশিটের সম্পর্ক স্থাপন করা যায়।
৫. স্প্রেডশিটে প্রয়োজন অনুসারে ম্যাক্রো তৈরি করা যায় ও সহজেই ব্যবহার করা যায়।
৬. স্প্রেডশিটে রো ও কলাম-এর দৈর্ঘ্য প্রয়োজন অনুসারে বাড়ানো বা কমানো যায়।
৭. স্প্রেডশিটে বিভিন্ন ধরনের ডেটা ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের গ্রাফ বা চার্ট ব্যবহার করা যায়।
৮. লেখার আকার-আকৃতি পরিবর্তন করা যায় এবং প্রয়োজন অনুসারে লেখাকে সেলের ডানে বা বামে বা মাঝখানে সাজানো যায়।
৯. প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন ছবি সংযোজন করা যায়। অডিও/ভিডিও সংযোজন করা যায়।
১১. বিভিন্ন ধরনের ফাংশন ব্যবহারের সুবিধা পাওয়া যায়।
১২. স্প্রেডশিট প্রোগ্রামে ডেটাবেজ প্রোগ্রামে ব্যবহৃত ফাইল নিয়ে কাজ করা যায়।
▪️ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (Database Management System )
DBMS-এর পূর্ণ অর্থ হলো Database Management System ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম হচ্ছে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত তথ্য এবং সে তথ্য পর্যালোচনা করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রোগ্রামের সমষ্টি। অর্থাৎ ডেটাবেজ তৈরি, সংরক্ষণ, পরিবর্তন, নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার কাজে ব্যবহৃত সফটওয়্যারই হলো ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম। ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ডেটাবেজ ও ডেটাবেজ ব্যবহারকারীর মধ্যে সমন্বয়কারী সফটওয়্যার হিসেবে কাজ করে। সাধারণত ডেটাবেজকে বিভিন্নভাবে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য DBMS ব্যবহৃত হয়। আবার DBMS-এর অন্তর্গত প্রোগ্রামসমূহ ডেটাবেজ তৈরি, ডেটা প্রবেশ করানো, ডেটার আধুনিকীকরণ, ডেটা এডিটিং ইত্যাদি কাজ করার জন্য DBMS ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। যেমন— মাইক্রোসফট অ্যাকসেস (Microsoft Accsess), মাইক্রোসফট ভিজুয়াল বেসিক (Microsoft Visual Basic) মাইক্রোসফট ফক্সপ্রো (Microsoft Foxpro), এসকিউএল (SQL), জাভা ( Java), প্যারাডক্স (Paradox), ডিবেজ (Dbase), পাওয়ার বিল্ডার (Power Builder), ডেলফি (Delphi), ইনফরমিক্স (Informix), ওরাকল (Oracle) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য ।
ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্টের সুবিধা
১. ডেটার বাহুল্যতা কমায়।
২. রেকর্ডের ভিত্তিতে আধুনিকীকরণ করা যায় ।
৩. বিভিন্ন ধরনের রিপোর্ট তৈরি করা যায়।
৪. বিভিন্ন ধরনের ব্যবহারের জন্য ডেটা সংরক্ষণ করা যায়।
৫. সহজে ডেটাবেজ থেকে নির্দিষ্ট রেকর্ড অনুসন্ধান করা যায় ।
৬. ডেটার সঠিকতার নিশ্চয়তা প্রদান করা যায় ।
৭. প্রয়োজনীয় ডেটা সংগ্রহ করে রিপোর্ট তৈরি করা যায় ।
৮. ডেটার অননুমোদিত ব্যবহার রোধ করা যায় ইত্যাদি।
ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের কাজ
১. প্রয়োজন অনুযায়ী ডেটাবেজ তৈরি করা।
২. তথ্য আহরণ জমা ও আপডেট করা
৩. ব্যবহারকারী নিয়ন্ত্রণ করা।
৪. নতুন রেকর্ড অন্তর্ভুক্ত করা।
৫. প্রয়োজন অনুযায়ী রেকর্ড মুছে ফেলা।
৬. ডেটার বানান ও সংখ্যার ভুল অনুসন্ধান ও সংশোধন করা ৭. প্রয়োজনীয় ডেটা বা রেকর্ড অনুসন্ধান ও ব্যবহার করা।
৮. রেকর্ডসমূহকে নির্দিষ্ট নিয়মে সাজানো।
৯. ডেটার নিরাপত্তা বিধান করা।
১০. ফর্ম ও রিপোর্ট তৈরি করা এবং প্রয়োজনীয় ডেটাবেজের প্রিন্ট নেওয়া ।
১১. ডেটার Redundancy (অপ্রয়োজনীয়তা) কমানো ।
গ্রাফিক্স ডিজাইন প্রোগ্রাম (Graphics Design Program)
বর্তমানে গ্রাফিক্স ডিজাইন খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি পেশাগত কাজ। এই কাজের মাধ্যমে হাজার হাজার লোক তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে। গ্রাফিক্স হলো দৃশ্যমান ইমেজ বা ছবি, যা বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে দৃশ্যমান করে তোলা হয়। অর্থাৎ গ্রাফিক্স ডিজাইন হলো 'একটি সৃষ্টিশীল প্রসেস বা পদ্ধতি, যা শিল্প ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে নিজস্ব আইডিয়াগুলো প্রকাশ করে'। বিখ্যাত ডিজাইনার Neville Brody-এর মতে, “ডিজাইন প্রয়োজনসমূহ, তথ্য এবং কালারের এমন একটি সংশ্লেষণ, যা এর অংশসমূহের সমষ্টির থেকেও বেশি কিছু তৈরি করে। বিভিন্ন সফটওয়্যার ব্যবহার করে কম্পিউটারের মাধ্যম গ্রাফিক্স ডিজাইনের কাজ করা হয়। যেমন— এডোবি ফটোশপ, এডোবি ইলাস্ট্রেটর, এডোবি ফ্লাশ ইত্যাদি ।
গ্রাফিক্স ডিজাইনের মাধ্যমে পত্রপত্রিকা তৈরি, বইয়ের কভার, ফটো এডিটিং, পোস্টার তৈরি, বিভিন্ন ধরনের ছবি তৈরি করা, ছবি পরিবর্তন করা, পরিবর্ধন করা, ছবি সংযোজন করা, ছবির ওপর বিভিন্ন লেখা বসানো, ছবি ছোট করা, ছবির অপ্রয়োজনীয় অংশ কেটে ফেলা, কয়েকটি ছবিকে একত্রে করে একটি ছবিতে রূপান্তর করা ইত্যাদি যাবতীয় কাজ করা যায়। তাছাড়া ছবিতে বিভিন্ন ধরনের ইফেক্ট প্রয়োগ করা ও নিজের আইডিয়া থেকে ছবিকে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করা সম্ভব।
মাইক্রোসফট পাওয়ার পয়েন্ট (MS-Power Point)
মাইক্রোসফট পাওয়ার পয়েন্ট হলো একটি প্রেজেন্টেশন প্রোগ্রাম। এটি একটি গ্রাফিক্স প্যাকেজ প্রোগ্রাম। উইন্ডোজভিত্তিক এই প্রোগ্রাম উৎপত্তি সময় থেকে কতিপয় সংস্করণ (Version) অতিক্রম করে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে Powerpoint 2019। Powerpoint-এর সাহায্যে পণ্যের বিজ্ঞাপন, মিটিংয়ের আলোচ্য বিষয়, উৎপাদন প্রতিবেদন, ডেটা উপস্থাপনা, গ্রাফচার্ট উপস্থাপন ইত্যাদি কাজ করা যায়। মূলত Powerpoint-এর আগমনে টেলিভিশনের বিজ্ঞাপন উপস্থাপনায় অভূতপূর্ব চমক সৃষ্টি হয়েছে। টেলিভিশনের পর্দায় দেখা যায় বিজ্ঞাপনের কোনো অংশ যেন আকাশ থেকে উড়ে আসছে, পর্দার কর্নার থেকে ভেসে ভেসে আসছে, আবার পর্দা ভেদ করে আসছে। আবার কোনো কোনো লেখা টাইপ করার মতো করে আসে। এ সবই পাওয়ার পয়েন্ট এর অবদান ।
পাওয়ার পয়েন্টের ব্যবহার বা সুবিধা
কম্পিউটার যেসব সহযোগিতা প্রদান করে তার মধ্যে গ্রাফিক্স সংক্রান্ত সহযোগিতা অন্যতম। গ্রাফিক্স প্রোগ্রাম হিসেবে Powerpoint-এর নিম্নোক্ত সুবিধাদি উল্লেখযোগ্য—
১. পাওয়ার পয়েন্টের তৈরিকৃত স্লাইডসমূহকে কম্পিউটারের ছোট পর্দা থেকে বড় পর্দায় দর্শকবৃন্দকে দেখানো যায়।
২. স্লাইডসমূহে এনিমেশন ইফেক্ট (প্রাণ সঞ্চারণ) তৈরি করে টেলিভিশনের ন্যায় বহুল প্রচার মাধ্যমে বিজ্ঞাপনসহ অন্যান্য সব কিছু প্রদর্শন করানো যায়।
৩. নির্দিষ্ট ডেটার ভিত্তিতে সহজে চার্ট উপস্থাপনা সম্ভব হয়।
৪. অন্য প্যাকেজ Excel, MS-Word-এর ফাইলের বিষয়বস্তুকে লিংক করে পাওয়ার পয়েন্ট স্লাইড হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
৫. নির্দিষ্ট টেক্সট, টাইটেল এবং গ্রাফিক্স সম্বলিত স্লাইড বানানো যায়।
৬. স্লাইডে Movie, Sound ও ছবি সংযোজন করা যায়।
৭. মিটিং রিমাইন্ডার (reminder) সাহায্যে মিটিংয়ের আলোচ্য বিষয় প্রণয়ন, সময় নির্ধারণ ইত্যাদির কাজ করা যায়।
৮. এছাড়া Excel, MS-Word-এর প্রচলিত অনেক সুযোগ-সুবিধা Powerpoint-এ বিদ্যমান।
কম্পিউটারের সাহায্যে শব্দ প্রক্রিয়াকরণ করা হয় বলে একে ওয়ার্ড প্রসেসর বা শব্দ প্রক্রিয়াকারক বলে। ওয়ার্ড প্রসেসিং এর জন্য বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজ প্রোগ্রাম পাওয়া যায়। কম্পিউটারের বহুল ব্যবহৃত কয়েকটি ওয়ার্ড প্রসেসর প্যাকেজের নাম হলো-
১. মাইক্রোসফ্ট ওয়ার্ড (Microsoft Word )
২. ম্যাকরাইট (Mac Write)
৩. ওয়ার্ড পারফেক্ট (Word Perfect )
৪. নোট প্যাড (Note Pad)
৫. ওয়ার্ড প্যাড (Word Pad)
৬. ওয়ার্ড স্টার (Word Star )
৭. পিএফএস : রাইট (PFS: Write) ইত্যাদি।
৮. ল্যাটেক্স (Latex )
প্রধানত লেখালেখির কাজ করার জন্য ব্যবহৃত অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামকেই ওয়ার্ড প্রসেসর বা ওয়ার্ড প্রসেসিং প্রোগ্রাম বলে। স্ট্যান্ডার্ড ওয়ার্ড প্রসেসর হিসেবে কোনো স্বীকৃতি ওয়ার্ড প্রসেসর নেই। ওয়ার্ড প্রসেসিং প্রোগ্রাম হিসেবে ১৯৮১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মাইক্রো প্রো ইন্টারন্যাশনাল এর তৈরি Word Star ছিল কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের জন্য এক চমকপ্রদ উপহার। Word Star দিয়ে কম্পিউটারে এত সহজে, স্বাচ্ছন্দে লেখালেখির কাজ করা যায় কম্পিউটার ব্যবহারকারীরা কখনও তা ভাবতেই পারেনি। তখন শুধু স্ট্যান্ডার্ড নয়, Word Star-ই ছিল একমাত্র ওয়ার্ড প্রসেসিং প্রোগ্রাম।
বর্তমানে Microsoft word হলো বহুল ব্যবহৃত এবং ব্যাপকভাবে সমাদৃত ওয়ার্ড প্রসেসিং প্রোগ্রাম। Microsoft word-এর জনপ্রিয়তার কাছে Windows বা Mac কোনো প্লাটফর্মে word Perfect টিকতে পারেনি। Microsoft word আইবিএম পিসি, Windows ও Mac অপারেটিং সিস্টেম উভয় প্লাটফর্মে অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং বহুল ব্যবহৃত ওয়ার্ড প্রসেসিং প্রোগ্রাম। আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে ম্যাকিনটশ কম্পিউটারে Microsoft word প্রথমে চালু হয়। এরপর আইবিএম পিসি, উইন্ডোজ পরিবেশে Microsoft word এর ব্যবহার শুরু হয়। এখন আইবিএম পিসি, Windows Windows 95/98/2000/Me/XP/Vesta এবং Windows NT অপারেটিং সিস্টেমে ও ম্যাকিনটশ কম্পিউটারের ওয়ার্ড প্রসেসিং প্রোগ্রাম হিসেবে Microsoft Word এর ব্যাপক ব্যবহার। কাজেই Microsoft Word প্রোগ্রামকে বর্তমানের স্ট্যান্ডার্ড ওয়ার্ড প্রসেসিং প্রোগ্রাম বলে। কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে দেখা যাবে যে, Microsoft Word এর চেয়ে আরো উন্নত সফটওয়্যার চলে আসবে।
স্ট্যান্ডার্ড ওয়ার্ড প্রসেসর প্যাকেজ হতে প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধা
১. ওয়ার্ড প্রসেসর প্যাকেজ ব্যবহার করে সহজে কোনো ডকুমেন্ট তৈরি করা যায়।
২. মেমোরিতে লিপি সংরক্ষণ (save) এবং প্রয়োজনে সংরক্ষিত লিপির অনুলিপি (copy) প্রস্তুত করা যায়।
৩. মেমোরিতে সংরক্ষিত ডকুমেন্ট বা ফাইল প্রিন্টারের মাধ্যমে কাগজে প্রিন্ট করা যায় অথবা অন্য কোনো মাধ্যমে প্রেরণ করা যায়।
৪. লেখার মাঝখানে নতুন কোনো লেখা সন্নিবেশিত করা যায় এবং অপ্রয়োজনীয় কোনো লেখা মুছে দেয়া যায় ।
৫. কোনো ফাইলে লেখার যে কোনো অংশ অন্য যে কোনো অংশে কপি বা স্থানান্তর করা যায় ।
৬. এক ফাইলের লেখা অন্য ফাইলে যে কোনো অংশে কপি বা স্থানান্তর করা যায়।
৭. বানান ভুল ও ব্যাকরণগত ভুল নির্ণয় ও সংশোধণ করা যায়।
৮. ডকুমেন্টের মাঝে যে কোনো শব্দের পরিবর্তে নতুন শব্দ প্রতিস্থাপন (Replace) করা যায়।
৯. ডকুমেন্টের মাঝে যে কোনো অংশ ব্লক করে Bold, Underline, Italic, Shadow ইত্যাদি করা যায়।
১০. ডকুমেন্টের যে কোনো শব্দ, বাক্য ও অংশের ফন্ট পরিবর্তন করা যায়।
১১. এক্ষেত্রে সর্টিং, সার্চিং, মেইলমার্জ, শর্ট হ্যান্ড ও গাণিতিক সুবিধা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
১২. প্রয়োজনে ডকুমেন্টকে কম্পিউটার মেমোরিতে সংরক্ষণ করা যায় ।
১৩. প্রোগ্রাম ব্যবহারের মাধ্যমে লেখার বানান ভুল সংশোধন করা যায় ।
১৪. প্রিন্টারের সাহায্যে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কপি ছাপানো যায় ।
উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যের জন্য বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় আমাদের দেশেও ওয়ার্ডপ্রসেসর প্যাকেজের ব্যবহার ও জনপ্রিয়তা অনেক। বর্তমানে আমাদের দেশে সাধারণ টাইপ রাইটারের বদলে ওয়ার্ড প্রসেসর এর ব্যবহারও দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে আমাদের দেশের মুদ্রণ শিল্পে এর ব্যবহার ব্যাপক রয়েছে।
স্প্রেডশিট (Spread Sheet) : শব্দটির আভিধানিক অর্থ হলো ছড়ানো পাতা (Spread অর্থ ছড়ানো এবং Sheet অর্থ পাতা)। সুবিশাল স্প্রেডশিটের যে অংশে কাজ করা হয় তাকে ওয়ার্কশিট বলা হয়। মূলত: এক বা একাধিক ওয়ার্কশিট নিয়েই তৈরি হয় একটি ওয়ার্কবুক। একটি খাতায় যেমন কয়েকটি পৃষ্ঠায় লেখা যায় তেমনি ভিন্ন ভিন্ন ওয়ার্কশিট খুলে সেখানে কাজ করা যায়। ওয়ার্কবুকে ডেটা ও ইনফরমেশন সংরক্ষণ ও প্রয়োগ করা হয়।
১. সেলের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন : স্প্রেডশিটের একটি সেলকে অপর একটি সেলের সাথে সম্পর্কযুক্ত করা যায়। অর্থাৎ একটি ঘরের মান পরিবর্তিত হলে ঐ ঘরের সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য ঘরের মানও স্বয়ংক্রিয় ভাবে পরিবর্তিত হয়।
২. শিটের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন : স্প্রেডশিটে একটি ওয়ার্কশিটের সাথে অপর একটি ওয়ার্কশিটের সম্পর্ক স্থাপন করা যায়। এক্ষেত্রে একটিতে পরিবর্তন হলে ঐ ওয়ার্কশিটের সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য শিটের মানও স্বয়ংক্রিয় ভাবে পরিবর্তিত হয়।
৩. স্বয়ংক্রিয় ফর্মুলার ব্যবহার : স্প্রেডশিটে অনেক আধুনিক এবং এতে স্বয়ংক্রিয় ফর্মুলা ব্যবহার করা যায়।
৪. ফাংশনের ব্যবহার : বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য স্প্রেডশিট প্রোগ্রামে ৯টি ক্যাটাগরিতে মোট ৪৮৫টি ফাংশন রয়েছে। এদের সাহায্যে বিভিন্ন ধরনের সমস্যাকে খুব সহজে সমাধান করা যায়। তাছাড়া ব্যবহারকারীরা ইচ্ছা করলে প্রয়োজনীয় ফাংশন তৈরি করে নিতে পারে ।
৫. ম্যাক্রো এর ব্যবহার : স্প্রেডশিটে রয়েছে ম্যাক্রো ব্যবহারের সুবিধা এবং ব্যবহারযোগ্য ম্যাক্রো। একই কাজ বারবার করতে হয় এমন সব কাজের সমষ্টিকে Macro তৈরির মাধ্যমে একটি Single Action- এ রূপান্তর করে পরবর্তীতে যতবার ইচ্ছা ব্যবহার করা যায়।
৬. শর্তের সহজ বিশ্লেষণ : সঠিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য অনেক সময় গাণিতিক বিশ্লেষণের পাশাপাশি যুক্তিগত সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হয়। স্প্রেডশিট এখানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
৭. সেলের সাইজ পরিবর্তন : স্প্রেডশিটে ইচ্ছামতো সেলের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ পরিবর্তন করা যায় ।
৮. গ্রাফ বা চার্টের ব্যবহার: স্প্রেডশিটে গ্রাফ বা চার্ট ব্যবহারের মাধ্যমে খুব আকর্ষণীয়ভাবে তথ্যকে উপস্থাপন করা যায়।
৯. ডেটাবেজের ব্যবহার : স্প্রেডশিটে অন্য কোনো ডেটাবেজ প্রোগ্রামে ব্যবহৃত ফাইল নিয়ে কাজ করা যায়। ফলে দক্ষ ডেটাবেজ ব্যবহারের মধ্য দিয়ে তথ্যের দ্রুত নির্ভুল এবং কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যায়।
১০. বিভিন্ন রকম ফন্টের ব্যবহার : ডকুমেন্টের আকর্ষণীয়তা এবং বৈচিত্রতা বাড়ানোর জন্য এখানে নানা রকম ফন্ট ব্যবহার করা যায়।
১১. ছবি ও শব্দের সংযোজন : তথ্যকে সহজে বোঝানোর জন্য এখানে নানারকম ছবি ও শব্দ সংযোজন করা যায়।
▪️ স্প্রেডশিট উপস্থাপনার বৈশিষ্ট্য
১. শব্দের বিভিন্ন ধরনের আকার আকৃতি ও রংয়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের ফন্ট ব্যবহার করা যায়।
২. সেলের সাইজ পরিবর্তন করে শব্দ বা সংখ্যাকে সেলের যে কোনো স্থানে স্থাপন করা যায়।
৩.কোন নির্দিষ্ট সেল বা কোনো Drawing কিংবা কোনো নির্দিষ্ট Topic এর উপর সাত (৭) রকম বর্ডারব্যবহার করা যায় ।
৪. সেল, রেঞ্জ, কলাম বা সারি কিংবা কোনো Topic কে নির্দিষ্ট এরিয়াতে স্থাপন করে এতে বিভিন্ন Shade দেওয়া যায়।
৫. নিজের ইচ্ছামতো পিকচার তৈরি করে ব্যবহার করা যায়।
৬. বিভিন্ন ধরনের চার্ট তৈরি করে এতে লিজেন্ড, লেখা, তীর, প্যাটার্ন ও বিভিন্ন ধরনের Symbol ব্যবহার করা যায়।
৭.স্প্রেডশিটের সাথে অডিও/ভিডিও যুক্ত করা যায়।
৮. একটি পূর্ণাঙ্গ ডেটাকে বিভিন্ন Sub-data তে ভাগ করা যায়।
৯. তাৎক্ষণিকভাবে চার্টের ভিউ দেখে পরিবর্তন করা যায়।
১০. সংক্ষিপ্ত বা ওয়ার্কশিটের নির্দিষ্ট অংশের জুম নেওয়া যায়।
স্প্রেডশিটের বিভিন্ন ধরনের ব্যবহার
কম্পিউটারের কীবোর্ডকে কলমের মতো ব্যবহার করে স্প্রেডশিটে বিভিন্ন আক্ষরিক ও গাণিতিক তথ্য লেখা যায়। গাণিতিক তথ্যগুলোকে বিভিন্ন ফর্মুলা ও ফাংশন ব্যবহার করে হিসাব-নিকাশ করা যায়। এক কথায় হিসাব সংক্রান্ত প্রায় সমস্ত কাজই স্প্রেডশিটে করা যায়। তবে মোটামুটিভাবে স্প্রেডশিটের সাহায্যে আমরা সাধারণত যে কাজগুলো করে থাকি তা হলো-
১. দৈনন্দিন হিসাব সংরক্ষণ তৈরি করা;
২. ডেটা সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করা;
৩. বার্ষিক প্রতিবেদন প্রণয়ন ও বাজেট প্রণয়ন করা;
৪. ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় যাবতীয় হিসাব বিষয়ক বিশ্লেষণ করা;
৫. আয়কর ও অন্যান্য হিসাব তৈরিকরণ করা;
৬. বৈজ্ঞানিক ক্যালকুলেশন করা;
৭. বেতনের হিসাব তৈরিকরণ করা;
৮. মজুদ পরিমাণ ও নিয়ন্ত্রণ করা;
৯. কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন সংক্রান্ত হিসাব
১০. এয়ারলাইন্স রিজার্ভেশন তৈরি করা;
১১. নির্বাচনের ভোট গণনায়;
১২. খেলোয়াড়ের প্রদর্শিত ক্রীড়াকৌশল মূল্যায়নে;
১৩. গাণিতিক, ত্রিকোনমিতিক এবং পরিসংখ্যানিক ফাংশন ব্যবহার করা ;
১৪. বিভিন্ন ধরনের আর্থিক ব্যবস্থাপনা;
১৫. তথ্যকে আকর্ষণীয় করে উপস্থাপনের জন্য বিভিন্ন ধরনের চার্ট বা গ্রাফ তৈরি করা;
১৬. ম্যাক্রো ব্যবহার করে কোনো কাজ রেকর্ড করে পরবর্তীতে তা বারবার ব্যবহার করা ইত্যাদি।
মাইক্রোসফট পাওয়ার পয়েন্ট হলো একটি প্রেজেন্টেশন প্রোগ্রাম। এটি একটি গ্রাফিক্স প্যাকেজ প্রোগ্রাম। সভা, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম, কর্মশালা ইত্যাদিতে কম্পিউটারের সাহায্যে আকর্ষণীয় এবং কার্যকরভাবে তথ্য উপস্থাপন করার জন্য প্রধানত প্রেজেন্টেশন সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়। যেমন— পাওয়ার পয়েন্ট, পিকাসা, ইমপ্রেস ইত্যাদি। পাওয়ার পয়েন্ট হচ্ছে মাইক্রোসফট অফিসের অন্তর্ভুক্ত একটি জনপ্রিয় সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশন। এই সফটওয়্যারটিকে প্রেজেন্টেশন সফটওয়্যার বলে। প্রেজেন্টেশন সফটওয়্যার হিসেবে পাওয়ার পয়েন্টের সুবিধা নিম্নে উল্লেখ করা হলো— গ্রাফিক্স প্রোগ্রাম হিসেবে Powerpoint-এর নিম্নোক্ত সুবিধাদি উল্লেখযোগ্য—
• পাওয়ার পয়েন্টের সাহায্যে লেখা, ছবি, অডিও/ভিডিও গ্রাফ ইত্যাদি সমন্বয়ে আকর্ষণীয়ভাবে তথ্যাদি উপস্থাপন করা যায়।
• সভা, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম কর্মশালা ইত্যাদিতে কার্যকরভাবে তথ্য উপস্থাপন করার জন্য পাওয়ার পয়েন্ট সফটওয়্যারটি খুব সহজে এবং চমৎকারভাবে ব্যবহার করা যায়।
• স্লাইডসমূহে এনিমেশন ইফেক্ট তৈরি করে টেলিভিশনের ন্যায় বহুল প্রচার মাধ্যমে বিজ্ঞাপনসহ সব কিছু প্রদর্শন করানো যায়।
• নির্দিষ্ট ডেটার ভিত্তিতে সহজে চার্ট উপস্থাপনা সম্ভব হয়।
• অন্য প্যাকেজ Excel, MS-Word-এর ফাইলের বিষয়বস্তুকে লিংক করে পাওয়ার পয়েন্ট স্লাইড হিসেবে ব্যবহার করা যায় ।
• নির্দিষ্ট টেক্সট, টাইটেল এবং গ্রাফিক্স সম্বলিত স্লাইড বানানো যায় ।
• স্লাইডে Movie এবং Sound ও ছবি সংযোজন করা যায়।
আরও দেখুন...