ঈদ হলো খুশির দিন। বিশ্বের মুসলিমগণ দুটি ঈদ উৎসব করেন। একটি রোযার শেষে ঈদুলফিতর। আরেকটি হলো কুরবানির ঈদ বা ঈদুলআযহা। ঈদের দিন সারা এলাকার মুসল্লিগণ ঈদগাহে একত্রিত হন। দুই রাকআত ঈদের সালাত আদায় করে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ঈদের সালাত পড়া ওয়াজিব।
ঈদুলফিতর
পবিত্র রমযান মাসে সিয়াম সাধনার পর শাওয়াল মাসের প্রথম দিন হলো ঈদুলফিতর এর দিন। ঈদ অর্থ আনন্দ। ফিতর অর্থ রোযা ভঙ্গ করা। দীর্ঘ একমাস রোযা রাখার তাওফিক দানের জন্য মুসলিমগণ এদিন আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এটি নিছক আনন্দ উৎসবের দিন নয়।
এদিন পাড়া-প্রতিবেশী, গরিব-দুঃখীর খোঁজখবর নিতে হয়। বিধবা, ইয়াতীম, সকলের মুখে সাধ্যমতো হাসি ফুটানোর চেষ্টা করতে হয়। ধনীদের উপর এ দিন সাদকায়ে ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। কারণ আনন্দের দিন যাতে কেউ অভুক্ত না থাকে। ঈদের দিনে রোযা রাখা হারাম ।
ঈদের দিনের সুন্নত: সকালে গোসল করা, খুশবুমাখা, পরিষ্কার কাপড় পরা, মিষ্টি জাতীয় কিছু খাওয়া, ঈদের সালাত মাঠে আদায় করা।
ইমামের সাথে দুই রাকআত ঈদুলফিতরের সালাত আদায় করা ওয়াজিব। এতে ছয়টি অতিরিক্ত ওয়াজিব তাকবির দিতে হয়।
ঈদের সালাত আদায় করার নিয়ম
প্রথমে কাতার করে ইমামের পিছনে দাঁড়াব। নিয়ত করব। আল্লাহু আকবর বলে কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে তাহরিমা বাঁধব। সানা পাঠ করব। এরপর কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে ইমামের সাথে তিন তাকবির দিব। প্রথম দুইবার হাত না বেঁধে ছেড়ে রাখব। তৃতীয় তাকবির দিয়ে সালাতে হাত বাঁধার মতো দুই হাত বাঁধব। এরপর ইমাম সাহেব অন্যান্য সালাতের মতো সূরা ফাতিহা ও যে কোনো সূরা পাঠ করবেন এবং যথারীতি রুকু সিজদাহ্ করে প্রথম রাকআত শেষ করবেন। অতঃপর দ্বিতীয় রাকআতে ইমাম সাহেব সূরা ফাতিহা ও যে কোনো সূরা পাঠ করবেন। এরপর তিন তাকবির দিবেন। আমরাও তিনবার আল্লাহু আকবর বলব। তিনবারই কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে নামিয়ে রাখব, হাত বাঁধব না। পরে চতুর্থবার আল্লাহু আকবর বলে রুকু করব।
এরপর অন্যান্য সালাতের মতো সিজদাহ্ করব,তশাহহুদ, দরুদ, দোয়া মাসুরা পাঠ করে ইমামের সাথে সালাম ফিরাব। সালাত শেষে ইমাম সাহেব দুইটি খুতবা দেবেন। খুতবা শোনা ওয়াজিব।
পরিকল্পিত কাজ : শিক্ষার্থীরা ঈদুলফিতর-এর দিনের করণীয় কাজগুলোর একটি তালিকা তৈরি করবে। |
ঈদুলআযহা
দ্বিতীয় ঈদ হলো ঈদুলআযহা বা কুরবানির ঈদ। ইসলামের দৃষ্টিতে এটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। আল্লাহর নির্দেশে এদিন হযরত ইবরাহীম (আ) নিজপুত্র হযরত ইসমাঈল (আ)-কে আল্লাহর নির্দেশে কুরবানি করতে তৈরি হন। তাঁর এ ত্যাগের স্মৃতি স্বরূপ মুসলমানের উপর
কুরবানি ওয়াজিব করা হয়েছে।
যিলহজ মাসের দশম তারিখ ঈদুলআযহার দিন। ঈদুলফিতরের মতো এদিনও গোসল করে খুশবু মেখে পরিষ্কার কাপড় পরে ঈদগাহে একই নিয়মে দুই রাকআত ওয়াজিব সালাত আদায় করতে হয়। সালাত শেষে ইমাম দুইটি খুতবা দেবেন। খুতবা শোনা ওয়াজিব এদিন সালাতের আগে কিছু না খাওয়া ভালো। রাস্তায় জোরে জোরে তাকবির পড়া সুন্নত।
ঈদের তাকবির হলো: আল্লাহু আকবর আল্লাহু আকবর, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, ওয়া লিল্লাহিল হামদ।
যিলহজ মাসের নবম তারিখ ফজর থেকে তের তারিখ আসর পর্যন্ত ফরজ সালাত শেষে এই তাকবির পড়া ওয়াজিব। ঈদুলফিতরের দিন এই তাকবির আস্তে আস্তে পড়তে হয়।
সালাত শেষে কুরবানি করতে হয়। কুরবানির গোশত তিন ভাগ করে একভাগ নিজের জন্য রাখব, একভাগ আত্মীয়দের মাঝে বিতরণ করব, আরেক ভাগ গরিবদের মাঝে বণ্টন করব। এভাবে ঈদের খুশিতে সবাই শরিক হতে পারে। এতে সমাজে মধুর সম্পর্ক স্থাপিত হয় ।
আমরা ঈদের এ মহান শিক্ষা নিজেদের জীবনে বাস্তবায়িত করব। সবার সঙ্গে মিলেমিশে ঈদের আনন্দ উপভোগ করব। ঈদের এ শিক্ষাকে সমাজে ছড়িয়ে দেব।
আরও দেখুন...