দ্বিতীয় অধ্যায়
ঈশ্বর
আমরা আগেই জেনেছি যে ঈশ্বর সর্বশক্তিমান ও নিরাকার। তিনিই সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। ঈশ্বর নিরাকার হলেও সব স্থানে একই সময়ে উপস্থিত আছেন। তিনি সবকিছু করতে পারেন। তিনি এত শক্তিশালী ও তাঁর এত গুণ যে সারা জীবন জানার চেষ্টা করেও তাঁকে সম্পূর্ণভাবে জানা যাবে না। এখানে আমরা ঈশ্বরের তিনটি বিশেষ গুণ নিয়ে আলোচনা করব। আমরা জানব যে, ঈশ্বর সর্বশক্তিমান, দয়ালু ও পবিত্র।
ঈশ্বর সর্বশক্তিমান
ঈশ্বর সকল শক্তির উৎস। তিনি অনন্ত ও অসীম। তিনি প্রথম ও শেষ। তিনি এত শক্তিশালী যে একই সাথে তিনি সর্বত্র বিরাজমান। ঈশ্বরের সবচেয়ে বড় বিশেষ শক্তি হলো তাঁর ভালোবাসা। ভালোবাসার কারণেই তিনি সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। তিনি তাঁর নিজের মতো করে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। সবকিছু দেখাশুনা ও যত্ন করার জন্য তিনি মানুষকে দায়িত্ব দিয়েছেন। তিনি সর্বশক্তিমান হয়েও মানুষের মাঝে বাস করার জন্য মানুষ হয়ে জন্মগ্রহণ করেছেন।
ঈশ্বর দয়ালু
দয়া হলো একটি মহৎ গুণ। এটি তাঁর ভালোবাসার প্রকাশ। দয়াকে অন্যকথায় অনুগ্রহ বলা হয়। দয়া অর্থ অন্যের দুঃখ দেখে কিছু করার অনুভূতি। দয়া দিয়ে আবার দানশীলতাও বোঝায়। ঈশ্বর দয়ালু। তাঁর দয়া অসীম। ঈশ্বরের দয়া ছাড়া আমরা বাঁচতে পারি না। তিনি দয়া করে অর্থাৎ ভালোবেসে আমাদের সৃষ্টি করেছেন। তিনি আমাদের লালনপালন করেন। সবসময় বিপদ-আপদের হাত থেকে রক্ষা করেন। আমরা তাঁর বিরুদ্ধে কোনো দোষ করে ক্ষমা চাইলে তিনি আমাদের ক্ষমা করে দেন। যীশুর মধ্য দিয়ে আমরা তাঁর অসীম দয়ার কথা জানতে পারি। যীশু আমাদের কাছে ক্ষমাশীল ও দয়ালু পিতার ঘটনার মাধ্যমে পিতার ক্ষমা ও দয়ার কথা অত্যন্ত সুন্দরভাবে বর্ণনা করেন। সেখানে আমরা দেখেছি, সন্তানরা দোষ করলেও পিতা ক্ষমা করার জন্য সর্বদা প্রস্তুত । পবিত্র বাইবেলে আমরা দেখেছি ছোট ছেলে যখন ফিরে এসেছিল তখন পিতা তাকে নতুন জামা, জুতা ও আংটি দিয়ে বরণ করে নিয়েছেন। তার জন্য ভোজের ব্যবস্থা করে আনন্দউৎসব করেছেন। আমরা সব সময় ঈশ্বরের কাছে অনেক কিছু চাই। আমরা তাঁর কাছে ভালো পড়াশুনা করার জ্ঞানবুদ্ধি চাই,
ভালো মানুষ হওয়ার শক্তি চাই, পাপের ক্ষমা চাই। প্রতিদিনই আমরা এরকম আরও কত কিছুই না ঈশ্বরের কাছে চাই। তিনি হলেন মঙ্গলময়। তিনি দেখেন আমাদের জন্য কী কী দরকার। আমাদের যা যা দরকার তা তিনি আমাদের দেন। এমন কত কিছু আছে যেগুলো আমরা তাঁর কাছে চাই না। তবুও তিনি সেগুলো আমাদের দেন। কারণ তিনি অসীমরূপে দয়ালু।
ঈশ্বর পবিত্র
পবিত্র অর্থ পুণ্য, বিশুদ্ধ, খাঁটি, নিষ্পাপ ও নির্মল। ঈশ্বর সম্পূর্ণ পবিত্র। তিনি সকল পবিত্রতার উৎস। আমরা জানি, যা কিছু খাঁটি নয় তা বেশি দিন টিকে থাকে না, তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। ঈশ্বর সম্পূর্ণ খাঁটি ও বিশুদ্ধ বলে তিনি অমর। তাঁর কোনো বিনাশ নাই। তিনি সম্পূর্ণ পবিত্র। তাই তিনি ছিলেন, আছেন ও চিরকাল থাকবেন।
ঈশ্বরের মতো পবিত্র ও দয়ালু হওয়া
প্রভু যীশু আমাদের বলেন, “তোমাদের স্বর্গনিবাসী পিতা যেমন সম্পূর্ণ পবিত্র, তেমনি তোমাদেরও হতে হবে সম্পূর্ণ পবিত্র” (মথি ৫:৪৮)। আমাদের পবিত্র হতে হবে কারণ আমরা তাঁর কাছ থেকে এসেছি। মৃত্যুর পর আমরা আবার তাঁর কাছে যেতে চাই। যদি মৃত্যুর পর আমাদের আত্মা তাঁর সাথে এক হতে পারে তবে আমরা চিরকাল সুখে বাস করতে পারব। সেজন্য যীশু আমাদের পবিত্র হতে বলেন। পৃথিবীতে থাকাকালেই আমাদের সেই পবিত্রতা লাভের চেষ্টা করতে হবে। যীশু এসে আমাদেরকে পথ দেখিয়েছেন। আমরা যদি যীশুর মতো জীবন যাপন করি তবে আমরা পবিত্র হতে পারি। যীশু বলেছেন, শিশুর মতো সরল, নম্র ও পবিত্র মানুষেরাই স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে। কারণ তাদের মধ্যেই ঈশ্বরের পবিত্রতা রয়েছে।
দয়ালু ও পবিত্র হওয়ার কয়েকটি উপায়
(১) প্রতি রবিবার (নিয়মিত) খ্রিষ্টযাগ (প্রভুর ভোজ) বা প্রার্থনা সভায় যোগদান করা।
(২) গির্জা কাছে থাকলে প্রতিদিনই খ্রিষ্টযাগে (উপাসনায়) যোগদান করা ।
(৩) প্রতি মাসে অন্তত একবার পাপ স্বীকার করা ।
(৪) ঈশ্বরের দশ আজ্ঞা পালনে নির্মল শিশুদের প্রতি যীশুর দয়া ও ভালোবাসা বিশ্বস্ত থাকা ।
(৫) প্রতিদিন একটু একটু করে পবিত্র বাইবেল পাঠ করা ও বাইবেলের শিক্ষা অনুসারে চলা ৷
(৬) প্রতি সন্ধ্যায় পবিত্র জপমালা বা সান্ধ্য প্রার্থনা করা।
(৭) যথাসাধ্য দয়া ও সেবার কাজ করা।
কী শিখলাম
ঈশ্বর সর্বশক্তিমান, দয়ালু ও পবিত্র। তাঁর নির্দেশিত পথ অনুসরণ করে আমরা তাঁর মতো দয়ালু ও পবিত্র হতে পারি।
পরিকল্পিত কাজ
১। তুমি ঈশ্বরের কাছ থেকে কী কী দয়া পাচ্ছ দলীয় আলোচনার মাধ্যমে তার একটি তালিকা প্রস্তুত কর।
২। প্রত্যেকে সপ্তাহে কমপক্ষে ৩টি দয়ার কাজ কর।
অনুশীলনী
১। শূন্যস্থান পূরণ কর
(ক) ঈশ্বর নিরাকার হলেও সবস্থানে----------------আছেন।
(খ) ঈশ্বরের দয়া-------------।
(গ) ঈশ্বরের দয়া ছাড়া আমরা------------------ পারি না ।
(ঘ) ঈশ্বর সকল----------------- উৎস।
(ঙ) ঈশ্বরের দশ আজ্ঞা পালনে---------------থাকা ৷
৩। সঠিক উত্তরটিতে টিক (✓) চিহ্ন দাও
৩.১। প্রতি সন্ধ্যায় কোন প্রার্থনা করা দরকার?
(ক) নভেনা
(খ) জপমালা
(গ) খ্রিষ্টযাগ
(ঘ) দূত সংবাদ
৩.২ কোন কাজ যথাসাধ্য পরিমাণে করতে হবে?
(ক) দয়া ও ভালোবাসা
(খ) ভালোবাসা ও সেবা
(গ) দয়া ও সেবা
(ঘ) পবিত্রতা ও ভালোবাসা
৩.৩ কে সম্পূর্ণরূপে পবিত্ৰ ?
(ক) স্বর্গনিবাসী পিতা (খ) ধার্মিক মানুষ
(গ) সরল মানুষ (ঘ) সাধুব্যক্তি
৩.৪ কোন বিষয়টি বেশি দিন টিকে থাকে?
(ক) যা অসত্য (খ) যা অশুদ্ধ
(গ) যা খাঁটি
(ঘ) যা খাঁটি নয়
৩.৫ কোন শিক্ষা অনুসারে আমাদের চলা উচিত?
(ক) বাইবেলের
(খ) জপমালার
(গ) খ্রিষ্টযাগের (ঘ) প্রার্থনার
৪। সংক্ষেপে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও
(ক) কীভাবে চললে আমরা পবিত্র হতে পারি?
(খ) যীশু আমাদের কেমন হতে বলেন?
(গ) মৃত্যুর পর আমরা কার কাছে যেতে চাই?
৫। নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও
(ক) দয়ালু ও পবিত্র হওয়ার পাঁচটি উপায় লেখ ।
(খ) আমরা ঈশ্বরের কাছে কী চাই?
আরও দেখুন...