ষষ্ঠ অধ্যায়
ঈশ্বরের দশ আজ্ঞা
দশ আজ্ঞা হলো ঈশ্বরের ভালোবাসার বিধান, মুক্তি ও স্বাধীনতার বিধান। এই আজ্ঞাগুলো ঠিকমতো বোঝা ও পালনের মধ্য দিয়ে আমরা ঈশ্বর ও মানুষের আরও কাছাকাছি যেতে পারি। এই আজ্ঞাগুলো আমাদের সুন্দর জীবনযাপনের পথ দেখায়। আগে আমরা ঈশ্বরের প্রথম আজ্ঞাটির অর্থ জেনেছি। এই অধ্যায়ে আমরা আরও দুইটি আজ্ঞার অর্থ জানব ও সেগুলো মেনে চলার চেষ্টা করব।
‘ঈশ্বরের নাম অনর্থক নিবে না' (দ্বিতীয় আজ্ঞা):
ঈশ্বর পবিত্র। তিনি সকল পবিত্রতার উৎস। তাঁর নাম উচ্চারণ করতে হলে আমাদের পবিত্রভাবে করতে হবে । ঈশ্বরের নামের গৌরব ও প্রশংসা করার মধ্য দিয়ে আমরা তাঁর প্রতি আমাদের ভালাবাসা প্রকাশ করি। তাঁর পবিত্র নামের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান দেখিয়ে তাঁর প্রতি অনুগত হয়ে উঠি। প্রভুর প্রার্থনার মধ্য দিয়ে আমরা স্বর্গস্থ পিতাকে বলি : ‘তোমার নাম পূজিত হোক'। এর মাধ্যমে আমরা প্রকাশ ও স্বীকার করি যে তিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন । তাই আমরা তাঁর নামের গৌরব করি ।
নিম্নলিখিতভাবে অযথা এবং অনর্থক ঈশ্বরের নাম নেওয়া হয়
ঈশ্বর আমাদের ভালোবাসেন ও আমাদের মঙ্গল চান। তিনি চান তাঁর পবিত্রতা আমাদের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হোক। কিন্তু আমরা দুর্বল মানুষ। কখনো কখনো আমরা স্বার্থপর হয়ে যাই। অনেকবার নিজের স্বার্থ উদ্ধার করার জন্য ঈশ্বরকে ব্যবহার করি। তাঁর নাম নানাভাবে অপব্যবহার করি। অনেক সময় আমাদের মনের উদ্দেশ্য পূরণ করার জন্য ঈশ্বরকে বাধ্য করতে চাই। যেমন:
১। মানত করা: কখনো কখনো আমরা ঈশ্বরের সাথে বেচাকেনার মনোভাব পোষণ করি। আমরা ঈশ্বরের কাছে অনেক কিছুর জন্য মানত করি। তাঁকে আমরা বলি, ঈশ্বরের কৃপায় আমি যদি পরীক্ষায় পাস করি তবে আমি গির্জায় এক প্যাকেট মোমবাতি দেব অথবা একটা খ্রিষ্টযাগ উৎসর্গ করব। প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বর আমাদের পরিশ্রম ও অধ্যবসায় দেখে আমাদের আশীর্বাদ করেন। তিনি চান আমরা যেন তাঁর কথামতো চলি ও তাঁকে ভালোবাসি ।
২। ক্ষুদ্র বিষয়ে ঈশ্বরের নামে শপথ করা: অনেক সময় আমরা খুব সামান্য বিষয়ে ঈশ্বরের নামে প্রতিজ্ঞা করে থাকি। যেমন আমরা বলি ঈশ্বরের নামে বা যীশুর নামে বলছি অথবা বাইবেল ছুঁয়ে বলছি আমি চুরি করি নি বা আমি এ কাজ করি নি। এ ধরনের প্রতিজ্ঞা করা বা দিব্যি দেওয়ার মধ্য দিয়ে আমরা ঈশ্বরের পবিত্র নামের অপমানই করে থাকি।
৩। অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে বা অন্যকে ঠকানোর জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা: নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য ধর্ম পালন করা বা প্রার্থনা করা উচিত নয়। অন্যের অমঙ্গল কামনা করা বা অন্যকে ঠকানো অথবা অভিশাপ দেওয়ার জন্য আমরা ঈশ্বরের নাম ব্যবহার করতে পারি না। ঈশ্বরের নাম নিয়ে চালাকি করাও উচিত নয়।
৪। নিজে চেষ্টা না করে ঈশ্বরকে সব সমস্যা সমাধান করতে বলা: ঈশ্বর আমাদের অনেক জ্ঞান, বুদ্ধি, শক্তি ও নানা রকম গুণ দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। তিনি চান আমরা যেন পরিশ্রম করি ও তাঁর দেওয়া গুণগুলো ব্যবহার করি। কিন্তু অনেক সময় আমরা সেগুলো ব্যবহার না করে শুধু ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করে থাকি। যেমন ভালোমতো পড়াশুনা না করে আমরা শুধু ঈশ্বরকে বলি, তিনি যেন আমাদের পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেন।
৫। ঈশ্বরকে দোষারোপ করা: আমাদের প্রতিদিনের জীবনে ভালো ও মন্দ নানা রকম ঘটনা ঘটে থাকে। কখনো কখনো আমাদের বিভিন্ন রকম বিপদ বা দুর্ঘটনাও ঘটে থাকে। তখন আমরা ঈশ্বরকে দোষারোপ করি, তাঁকে গালিগালাজ করি। তাঁর উপর বিশ্বাস পর্যন্ত হারিয়ে ফেলি। আমরা ভেবে দেখি না যে, দুর্ঘটনাটা হয়তো আমাদের বা অন্য কারও ভুলের জন্য ঘটেছে। কাজেই ঈশ্বরকে দোষারোপ করার মাধ্যমে আমরা ঈশ্বরের অপমান করে থাকি ।
সতর্কবাণী
“তুমি তোমার প্রভু পরমেশ্বরের নাম অযথা নেবে না। কারণ যে লোক পরমেশ্বরের নাম অযথা নেয়, তিনি তাকে শাস্তির হাত থেকে রেহাই দেবেন না” (যাত্রা- ২০:৭)। ঈশ্বর নিজেই আমাদের সতর্ক করে বলেছেন, আমরা যেন তাঁর নাম অযথা না নেই। সুতরাং ঈশ্বরের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা নিয়ে সতর্কতার সাথে তাঁর পবিত্র নাম উচ্চারণ করতে হবে। তাঁর নামের মহিমা ও গৌরব করতে হবে।
“রবিবার দিন (বিশ্রামবার) পালন করে তা শুদ্ধভাবে পালন করবে” (তৃতীয় আজ্ঞা): পবিত্র বাইবেলে প্রভু বলেছেন- “তুমি বিশ্রামবারের কথা স্মরণ রাখবে আর তা পবিত্রভাবে পালন করবে। ছয় দিন ধরে তুমি কাজ করবে, যা কিছু করার সবই করবে। কিন্তু সাত দিনের দিনটি হলো তোমার প্রভু পরমেশ্বরের কাছে নিবেদিত বিশ্রামবারের দিন। কারণ ঈশ্বর তো ছয় দিন এই আকাশ, পৃথিবী ও সমুদ্র এবং এই আকাশ, পৃথিবী ও সমুদ্রের মধ্যে যা কিছু রয়েছে, সবই সৃষ্টি করেছিলেন। কিন্তু সাত দিনের দিন তিনি বিশ্রাম নিয়েছিলেন । তাই ঈশ্বর এই বিশ্রামবারের দিনটিকে আশিসমণ্ডিত করে পবিত্র করেছেন” (যাত্রা: ২০ ৮–১১)।
বিশ্রামবার পালনের অর্থ
বিশ্রামবার পালন করার একটি মানবীয় দিক আছে। সেটি হলো: কাজ করলে আমাদের সবারই বিশ্রাম প্রয়োজন। বিশ্রাম না নিলে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়ি, কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলি। কিন্তু বিশ্রাম নিলে দেহ ও মনের শক্তি ফিরে পাই এবং পরে আরও ভালোভাবে কাজ করতে পারি। এটি মানুষের স্বাভাবিক প্রয়োজন। এই কারণে প্রতি দেশেই সরকার অনুমোদিত সাপ্তাহিক ছুটি থাকে। দ্বিতীয় দিকটি হলো আমাদের আধ্যাত্মিক দিক। ঈশ্বর বলেছেন, এই দিনটি পবিত্র। কাজেই আমাদের পবিত্রভাবে দিনটি পালন করতে হবে। পবিত্রভাবে দিনটি পালন করার অর্থ হচ্ছে ঈশ্বরের সান্নিধ্যে থেকে সময় কাটানো। অর্থাৎ আধ্যাত্মিক সাধনা করার মাধ্যমে দিনটি অতিবাহিত করা।
ঈশ্বরের আজ্ঞানুসারে চলার গুরুত্ব
আমরা ঈশ্বরের নাম অনর্থক নেব না এবং বিশ্রামবার পবিত্রভাবে পালন করব। কারণ :
(১) ঈশ্বর আমাদের সৃষ্টি করেছেন যেন আমরা তাঁকে ভালোবাসি ও শ্রদ্ধা করি
(২) যেন তাঁর নামের মহিমা ও গৌরব করি বিশ্রামবারে প্রভুর ভোজে অংশগ্রহণ
(৩) বিশ্রামবারে ঈশ্বরের উপাসনা করা প্রয়োজন (৪) পবিত্র ঈশ্বরের সাহচর্য লাভ করতে চাই
(৫) ঈশ্বরের মতো পবিত্র হওয়া আমাদের একটি আহ্বান
(৬) যা চিরকাল টিকে থাকে সে রকম ভালো কিছু অর্জন করতে চাই
(৭) অভাবী ও দীন দুঃখীদের সেবা করা আমাদের কর্তব্য (৮) দৈহিকভাবে ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে চাই
(৯) সমাজের অন্য ভাইবোনদের সাথে মেলামেশাও করা প্রয়োজন ।
কী শিখলাম
ঈশ্বরের নাম পবিত্র। অনর্থক ঈশ্বরের নাম উচ্চারণ করা ঠিক নয়। বিশ্রামবার পবিত্রভাবে পালন করা আমাদের সকলের কর্তব্য।
পরিকল্পিত কাজ
১। তুমি কীভাবে ঈশ্বরের নামের পবিত্রতা রক্ষা করে চলবে এরূপ তিনটি বিষয় লেখ
ও দলের মধ্যে সহভাগিতা কর।
২। তুমি কীভাবে নিয়মিত বিশ্রামবার পালন করতে চাও তা লেখ।
অনুশীলনী
১। শূন্যস্থান পূরণ কর
(ক) ঈশ্বরের নাম ...... নিবে না ।
(খ) ঈশ্বরের পবিত্র নামের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান দেখিয়ে তাঁর প্রতি আমরা…………….হয়ে উঠি ।
(গ) বিশ্রামবার…………. কাছে নিবেদিত ।
(ঘ) ঈশ্বরের মতো পবিত্র হওয়া আমাদের জন্য একটি .......।
(ঙ) সমাজের অন্য ভাইবোনদের সাথে…………………করা প্রয়োজন ।
৩। সঠিক উত্তরটিতে টিক (✓) চিহ্ন দাও
৩.১ কীভাবে আমরা ঈশ্বরের নাম অযথা নিই ?
(ক) ক্ষুদ্র বিষয়ে ঈশ্বরের নামে শপথ করে খ) অন্যকে দোষারোপ করে
(গ) অন্যকে মন্দ কথা বলে (ঘ) বিশ্রামবার পালন না করে
৩.২ বিশ্রামবার পালনের প্রকৃত অর্থ হলো –
(ক) কাজকর্ম সব বাদ দেওয়া
(খ) অলসভাবে সময় কাটানো
(গ) শুধু প্রার্থনা করা
(ঘ) প্রার্থনা ও বিশ্রাম করা
৩.৩ আমরা কেন ঈশ্বরের আজ্ঞা মেনে চলব?
(ক) বড় হওয়ার জন্য
(গ) স্বর্গে যাওয়ার জন্য
(খ) মানত করার জন্য
(ঘ) শপথ করার জন্য
৩.৪ ঈশ্বরের তৃতীয় আজ্ঞা অনুসারে বিশ্রামবার কোন দিন?
(ক) সোমবার
(খ) রবিবার
(গ) শুক্রবার
(ঘ) শনিবার
৩.৫ আমরা মানত করি, তার প্রকৃত কারণ কোনটি?
(ক) ঈশ্বরকে উপহার দিতে
(খ) নিজের স্বার্থের কারণে
(গ) গরিবদের সাহায্য করার জন্য
(ঘ) প্রভুকে খুশি করতে
৪। সংক্ষেপে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও
(ক) আমরা কীভাবে ঈশ্বরের নাম উচ্চারণ করব?
(খ) ঈশ্বর কখন আমাদের আশীর্বাদ করে থাকেন?
(গ) ঈশ্বর কতদিন ধরে সৃষ্টি কাজ করেছিলেন?
(ঘ) ঈশ্বর কেন আমাদের সৃষ্টি করেছেন?
৫। নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও
(ক) আমরা কীভাবে ঈশ্বরের নাম অনর্থক নিয়ে থাকি?
(খ) বিশ্রামবার পালনের অর্থ ব্যাখ্যা কর।
(গ) ঈশ্বরের আজ্ঞা অনুসারে চলার গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর।
আরও দেখুন...