তৃতীয় অধ্যায়
পবিত্র আত্মা
আগে আমরা জেনেছি যে পিতা, পুত্র ও পবিত্র আত্মা হলেন ত্রিব্যক্তি পরমেশ্বরের তিন ব্যক্তি। তিন ব্যক্তি মিলে এক ঈশ্বর। পিতা ঈশ্বর ও পুত্র ঈশ্বর সম্পর্কে আমরা আগে বিস্তারিত জানতে পেরেছি। এবার আমরা পবিত্র আত্মা ঈশ্বর সম্পর্কে জানব।
পবিত্র আত্মা
পবিত্র আত্মা হলেন ঈশ্বরের আত্মা। প্রবক্তা এজেকিয়েলের (যিহিষ্কেলের কথা অনুসারে, ঈশ্বর মানুষের কঠিন অন্তরের পরিবর্তে পবিত্র আত্মাকে দান করেন। সেই আত্মাকে পেয়ে মানুষ ঈশ্বরের আজ্ঞাগুলো মেনে চলার অনুপ্রেরণা পায় ৷ পবিত্র আত্মার শক্তিতে ঈশ্বরের পুত্র মানুষ হওয়ার জন্য মারীয়ার গর্ভে এসেছিলেন । দীক্ষাগুরু যোহন বলেছিলেন যে, যীশু এসে মানুষকে পবিত্র আত্মা ও আগুন দ্বারা দীক্ষাস্নাত করবেন। যীশু নিজেই একদিন দীক্ষাগুরু যোহনের কাছে এসে দীক্ষাস্নাত হলেন। তখন পবিত্র আত্মা কবুতরের আকারে তাঁর ওপর নেমে এসেছিলেন। প্রভু যীশু ঐশরাজ্যের বাণী প্রচার কাজ শুরু করেছেন পবিত্র আত্মার শক্তিতে। তিনি বলেন, “প্রভু পরমেশ্বরের আত্মা আমার ওপর অধিষ্ঠিত, কেননা, প্রভুই আমাকে অভিষিক্ত করেছেন” (লুক ৪:১৮)। যীশু স্বর্গারোহণের আগে শিষ্যদের বলেছিলেন,“তিনি একজন সহায়ককে পাঠিয়ে দিবেন।” শিষ্যদের তিনি আরও বলেছিলেন,“তাঁরা যেন সেই সহায়ককে না পাওয়া পর্যন্ত ঐ শহরেই থাকেন।” প্রভু যীশুর প্রতিশ্রুতি অনুসারে পবিত্র আত্মা শিষ্যদের উপর নেমে এসেছিলেন। তিনিই সেই সহায়ক। তিনি পিতা ও পুত্রের আত্মা। পবিত্র আত্মার মধ্য দিয়ে পিতা ও পুত্র উপস্থিত আছেন। দীক্ষাস্নানের মধ্য দিয়ে আমরা পবিত্র আত্মাকে পাই। তিনি সহায়ক হয়ে সর্বদা আমাদের সাথে রয়েছেন।
পবিত্র আত্মার কাজ
খ্রিষ্টমণ্ডলী হলো মানুষের একটি দেহের মতো। এর প্রত্যেকটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গে পবিত্র আত্মা প্রাণশক্তি দান করেন। তাঁর শক্তিতে পুরো মণ্ডলী পরিচালিত হয়। প্রেরিতশিষ্যদের প্রভু
যীশু বাণী প্রচারকাজে প্রেরণ করার সময় পবিত্র আত্মাকে দান করেছেন। সেই সময় থেকেই প্রেরিতগণ পবিত্র আত্মার শক্তিতে বাণী প্রচার করতে শুরু করেন। এখনো মণ্ডলীর সব মানুষ পবিত্র আত্মারই শক্তিতে প্রেরণকাজ করেন। দীক্ষাস্নাত সব খ্রিষ্টভক্তের অন্তরে পবিত্র আত্মা বাস করেন। তাই আমাদের প্রত্যেকের দেহ হলো পবিত্র আত্মার মন্দির। আমরা প্রার্থনা করি পবিত্র আত্মার শক্তিতে। পবিত্র আত্মা মণ্ডলীতে একতা বজায় রাখেন । আমরা পাপের ক্ষমা পাই পবিত্র আত্মারই শক্তিতে। ক্ষমা পেয়ে আমরা আবার ঈশ্বরের পবিত্রতা লাভ করি। তিনি আমাদের পাপের দাসত্ব থেকে মুক্ত করেন ও স্বাধীনতায় বেড়ে উঠতে শক্তি দেন। দীক্ষাস্নানের সময় আমরা পবিত্র আত্মাকে গ্রহণ করি। তাঁর কাছ থেকে আমরা সাতটি দান লাভ করি। তাঁর মাধ্যমে আমরা ঈশ্বরের কৃপা পেয়ে থাকি।
পবিত্র আত্মার প্রেরণায় চলা
পবিত্র আত্মার প্রেরণায় চলার অর্থ হলো তাঁর দানগুলোর শক্তিতে জীবনযাপন করা। আমরা পবিত্র আত্মার সাতটি দান পেয়ে থাকি। সেগুলো হলো: প্রজ্ঞা, বুদ্ধি, বিবেক, মনোবল, ঈশ্বরভীতি, ধর্মানুরাগ ও জ্ঞান। যারা পবিত্র আত্মার প্রেরণায় চলে, তাদের মধ্যে এই ফলগুলো দেখা যায়: ভালোবাসা, আনন্দ, শান্তি, সহিষ্ণুতা, সহৃদয়তা, মঙ্গলানুভবতা, বিশ্বস্ততা, কোমলতা, আত্মসংযম, ধৈর্য, বিশুদ্ধতা ও মৃদুতা। কিন্তু যারা পবিত্র আত্মার প্রেরণায় চলে না, তাদের মধ্যে দেখা যায়: যৌন অনাচার, অশুচিতা, উচ্ছৃঙ্খলতা, পৌত্তলিকতা, তন্ত্রমন্ত্র সাধন, শত্রুতা, বিবাদ, ঈর্ষা, ক্রোধ, রেষারেষি, মনোমালিন্য, দলাদলি,হিংসা,মাতলামি ইত্যাদি। যারা একতা বজায় রাখে, তারা পবিত্র আত্মার শক্তিতে চলে। কিন্তু যারা দলাদলি ও ঝগড়া-বিবাদ করে, তারা মন্দ আত্মার শক্তিতে চলে।
পবিত্র আত্মার প্রেরণায় চলার জন্য আমরা নিম্নলিখিতভাবে চেষ্টা করতে পারি
১। পবিত্র আত্মার সাথে বন্ধুত্ব করব অর্থাৎ অন্তরে পবিত্র আত্মার উপস্থিতি সব সময় উপলব্ধি করব।
২। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে জেগে সারা দিন মন্দতা পরিহার করে চলা ও পবিত্র আত্মার অনুপ্রেরণায় চলার কৃপা যাচনা করব।
৩। সব কাজের আগে, বিশেষত পড়াশুনার আগে পবিত্র আত্মার সহায়তা যাচনা করে
বিশেষ প্রার্থনা করব। আবার পড়াশুনার শেষে পবিত্র আত্মাকে ধন্যবাদ জানাব । ৪। প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে সারা দিনে পবিত্র আত্মাকে তাঁর পরিচালনার জন্য ধন্যবাদ জানাব।
৫। প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে পবিত্র বাইবেল থেকে কিছু অংশ ধ্যানপূর্ণভাবে পাঠ করব।
৬। গুরুজনদের পরামর্শ ও উপদেশ মেনে
চলব।
৭। অন্য বন্ধুদেরও পবিত্র আত্মার অনুপ্রেরণায় চলার পরামর্শ দেব।
কী শিখলাম
পবিত্র আত্মা হলেন ঈশ্বরের আত্মা। তিনি আমাদের সহায়ক। তিনি আমাদের বিভিন্ন দান ও ফল দ্বারা পরিপূর্ণ করেন।
পরিকল্পিত কাজ
১। মানুষ কী কী ভাবে পবিত্র আত্মার পরিচালনায় চলতে পারে তার একটি তালিকা তৈরি
কর।
২। নিচের প্রার্থনাটি মুখস্থ কর
হে পবিত্র আত্মা তুমি এসো, আমাদের হৃদয় পরিপূর্ণ কর, তোমার প্রেমাগ্নি আমাদের মধ্যে প্রজ্জ্বলিত কর, তোমার আত্মার প্রেরণায় বিশ্বের সৃষ্টি নতুন হয়ে উঠুক এবং সমস্ত পৃথিবী নবরূপ ধারণ করুক।
অনুশীলনী
১। শূন্যস্থান পূরণ কর
(ক) পবিত্র আত্মা হলেন---------------
(খ) পবিত্র আত্মার মধ্য দিয়ে---------------------ও পুত্র উপস্থিত আছেন ।
(গ) দীক্ষাস্নানের মধ্য দিয়ে আমরা----------- পাই ৷
(ঘ) খ্রিষ্টমণ্ডলী হলো মানুষের------------------মতো ৷
(ঙ) পবিত্র আত্মা মণ্ডলীতে----------------বজায় রাখেন।
৩। সঠিক উত্তরটিতে টিক (✓) চিহ্ন দাও
৩.১। কার শক্তিতে আমরা পাপের ক্ষমা পাই ?
(ক) ত্রিত্বের (খ) পিতার গ) পুত্রের (ঘ) পবিত্র আত্মার
৩.২ পবিত্র আত্মা খ্রিষ্টমণ্ডলীর প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গে কী শক্তি দান করেন?
(ক) প্রাণশক্তি (খ) জীবনীশক্তি (গ) সৃজনীশক্তি (ঘ) প্রেমশক্তি
৩.৩ আমরা পবিত্র আত্মার কয়টি দান পেয়ে থাকি?
(ক) ৩টি
(খ) ৫টি
(গ) ৭টি
(ঘ) ৯টি
৩.৪ পবিত্র আত্মার প্রেরণায় চলে কয়টি ফল লাভ করা যায়?
(ক) ১২টি
(খ) ১০টি
(গ) ৮টি
(ঘ) ৬টি
৩.৫ পবিত্র আত্মার মাধ্যমে আমরা ঈশ্বরের কাছ থেকে কী পেয়ে থাকি?
(ক) কৃপা
(খ) আশীর্বাদ
(গ) ক্ষমা
(ঘ) শক্তি
৪। সংক্ষেপে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও
(ক) পবিত্র আত্মার প্রেরণায় চলার অর্থ কী?
(খ) যারা দলাদলি ও ঝগড়া-বিবাদ করে তারা কিসের শক্তিতে চলে?
(গ) আমাদের বন্ধুদের কী পরামর্শ দেব?
৫। নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও
(ক) পবিত্র আত্মার সাতটি দান কী কী তা লেখ ৷
(খ) পবিত্র আত্মার প্রেরণায় চলার জন্য তুমি কীভাবে চেষ্টা করবে?
আরও দেখুন...