Summary
এ অধ্যায়ে আমরা আবৃতবীজী উদ্ভিদের বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য ও অংশ সম্পর্কে আলোচনা করব। আমরা জানব এক সপুষ্পক উদ্ভিদের অংশগুলি, তাদের অবস্থান, বিভিন্ন প্রকারভেদ এবং কাজ সম্পর্কে।
- মূলের বৈশিষ্ট্য, অংশ, প্রকারভেদ ও কাজ ব্যাখ্যা করা হবে।
- কাণ্ডের বৈশিষ্ট্য, অংশ, প্রকারভেদ ও কাজ ব্যাখ্যা করা হবে।
- পাতার বৈশিষ্ট্য, অংশ, প্রকারভেদ ও কাজ ব্যাখ্যা করা হবে।
- উদ্ভিদ এবং মানবজীবনে মূল, কাণ্ড ও পাতার গুরুত্ব তুলে ধরা হবে।
- উদ্ভিদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শনের গুরুত্ব হবে।
অধ্যায় শেষে আমরা উদ্ভিদের বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সবিশেষ জানতে পারব।
ইতোপূর্বে আমরা বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য ও শ্রেণিকরণ সম্পর্কে জেনেছি। আমরা জানি, উন্নত উদ্ভিদ দুই ধরনের যথা নগ্নবীজী ও আবৃতবীজী উদ্ভিদ। আবৃতবীজী উদ্ভিদকে একটি আদর্শ উদ্ভিদ হিসেবে ধরে তার বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী তা আমরা এ অধ্যায়ে জানব। একটি সপুষ্পক উদ্ভিদের কোন কোন অংশ থাকে, কোথায় তাদের অবস্থান তা জানব। এর প্রধান অংশগুলোর প্রকারভেদ, কাজ ও মানবজীবনে এসব অঙ্গের অবদান কী তা আলোচনা করা হবে।

এই অধ্যায় শেষে আমরা
- উদ্ভিদের বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করতে পারব।
- মূলের প্রধান বৈশিষ্ট্য, বিভিন্ন অংশ, প্রকারভেদ এবং কাজ ব্যাখ্যা করতে পারব।
- কাণ্ডের প্রধান বৈশিষ্ট্য, বিভিন্ন অংশ, প্রকারভেদ এবং কাজ ব্যাখ্যা করতে পারব।
- পাতার প্রধান বৈশিষ্ট্য, বিভিন্ন অংশ, প্রকারভেদ এবং কাজ ব্যাখ্যা করতে পারব।
- উদ্ভিদ এবং মানবজীবনে মূল, কাণ্ড ও পাতার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করতে পারব।
- উদ্ভিদের প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ প্রদর্শন করব।
# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন
সুফিয়া বেগম তার বাড়ির আঙিনায় প্রথম বছর কুমড়া এবং পরবর্তী বছর পুঁইশাক আবাদ করলেন।
সুফিয়া বেগম তার বাড়ির আঙিনায় প্রথম বছর কুমড়া এবং পরবর্তী বছর পুঁইশাক আবাদ করলেন।

আমরা চারপাশের পরিবেশে অগণিত উদ্ভিদ দেখতে পাই। এসব উদ্ভিদের আকার ও গঠনে অনেক বিভিন্নতা লক্ষ করা যায়। কিছু কিছু উদ্ভিদের দেহে মূল কাণ্ড ও পাতা থাকে। এদের ফুল, ফল ও বীজ হয়। এরা সপুষ্পক উদ্ভিদ। যেমন- আম, জাম, ছোলা, লাউ, ধান, গম ইত্যাদি। ধান, গম, ঘাস একবীজপত্রী ও আম, কাঁঠাল, সরিষা, মরিচ দ্বিবীজপত্রী সপুষ্পক উদ্ভিদ। আবৃতবীজী সপুষ্পক উদ্ভিদকে আদর্শ উদ্ভিদ বলা হয় কারণ এরা সর্বোন্নত উদ্ভিদ।
একটি আদর্শ সপুষ্পক উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশ
একটি আদর্শ সপুষ্পক উদ্ভিদকে মূল, কাণ্ড, পাতা, ফুল, ফল প্রভৃতি অংশে বিভক্ত করা যায়।
বিটপ: উদ্ভিদের যে অংশগুলো মাটির উপরে থাকে তাদের একত্রে বিটপ বলে। বিটপে কাণ্ড, পাতা, ফুল ও ফল থাকে। কাণ্ডে পর্ব, পর্বমধ্য ও শীর্ষ মুকুল থাকে। ফুলগুলো পাতার কক্ষে উৎপন্ন হয়। ফুলে বৃতি, দল, পুংকেশর ও গর্ভাশয় থাকে। এ কথাগুলোর সাথে পাশের পরিচিত মরিচ গাছের চিত্র মিলিয়ে দেখি।

১। কাণ্ড: প্রধান মূলের সাথে লাগান মাটির উপরে উদ্ভিদের অংশটি কাণ্ড। কাণ্ডের গায়ে পর্ব ও পর্ব মধ্য থাকে। পর্ব থেকে পাতা উৎপন্ন হয়। কাণ্ড পাতা ও শাখা প্রশাখার ভার বহন করে।
২। পাতা: শাখা প্রশাখার গায়ে সৃষ্ট চ্যাপ্টা সবুজ অঙ্গটিই পাতা বা পত্র। পাতায় খাদ্য তৈরি হয়।
৩। ফুল: পত্র কক্ষে সাদা রঙের ছোটো ছোটো ফুল হয়। এই ফুল থেকে ফল অর্থাৎ মরিচ হয়।
৪। ফল: ফুল বুড়ো হয়ে ঝরে যায়। ঝরা ফুলের গোড়ায় ফুলের যে অংশটি থেকে যায় তা বড়ো হয়ে ফল সৃষ্টি করে। গর্ভাশয়ই বড়ো হয়ে ফলে পরিণত হয়। মরিচ গাছের ফলই মরিচ।
মূল: উদ্ভিদের পর্ব, পর্বমধ্য ও অগ্রমুকুলবিহীন অংশই মূল। সাধারণত মানুষ মনে করে উদ্ভিদের মাটির নিচের অংশই মুল। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ বক্তব্যটি সত্য তবে বিশেষ ক্ষেত্রে কাণ্ড, পত্র, ফুল, ফল মাটির নিচের জন্মে, যেমন-আদা, হলুদ, পিয়াজ ইত্যাদি। এ ব্যাপারে উপরের শ্রেণিতে তোমরা বিশদ জানতে পারবে।
| কাজ: বিদ্যালয়ের পাশে থেকে ছোট্ট একটি গাছ মূলসহ তুলে আন। এবার তার চিত্র এঁকে বিভিন্ন অংশের নাম লিখ। |
সাধারণত মূল ভ্রূণমূল হতে উৎপন্ন হয়। মূলে পাতা, ফুল বা ফল হয় না। সাধারণত মূল নিম্নগামী। ভূণমূলটি বৃদ্ধি পেয়ে প্রধান মূল গঠন করে। প্রধান মূল থেকে শাখা মূল, শাখা মূল থেকে প্রশাখা মূল উৎপন্ন হয়।
মূলকে কয়েকটি অংশে ভাগ করা যায়। এর শেষ প্রান্তে টুপির মতো অংশটি হচ্ছে মূলটুপি বা মূলত্র। আঘাত থেকে মূলকে রক্ষা করা এর কাজ। এর পেছনের মসৃণ অংশটি বর্ধিষ্ণু অঞ্চল। এ স্থানে মূলের বৃদ্ধি ঘটে। এই এলাকার পেছনে সূক্ষ্ম লোমশ মূলরোম অঞ্চল অবস্থিত। মূলরোম দিয়ে উদ্ভিদ পানি শোষণ করে। এই অঞ্চলের পর মূলের স্থায়ী এলাকা অবস্থিত। স্থায়ী অঞ্চল থেকে মূলের শাখা ও প্রশাখা সৃষ্টি হয়।

নূতন শব্দ: মূলরোম, মূলটুপি ও মূলত্র।
সব গাছের মূল কি এক ধরনের হয়? ধানের মূল আর আম গাছের মূল কি এক ধরনের? বটের ঝুরিও আসলে এক ধরনের মূল। উদ্ভিদের প্রয়োজনে এ মূলগুলো ভিন্নরূপ ধারণ করেছে। বটের ঝুরিমূল, কেয়া গাছের ঠেসমূল, পানের আরোহী মূল উদ্ভিদের প্রয়োজনে বিশেষ ধরনের কাজ করে।
আমরা খেয়াল করলে দেখব যে, সকল ধরনের উদ্ভিদের মূল এক রকমের নয়। একটি মরিচ বা একটি আম গাছের মূল অবশ্যই ধান, ভুট্টা বা ঘাস এর মূল হতে ভিন্ন রকমের। এরূপ ভিন্নতার জন্য মূলকে এর উৎপত্তি ও অবস্থান অনুযায়ী প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়, যথা- ১। স্থানিক মূল ও ২। অস্থানিক মূল।
১। স্থানিক মূল: ভ্রূণমূল বৃদ্ধি পেয়ে প্রধান মূল হিসেবে সরাসরি মাটিতে প্রবশ করে। প্রধান মূল শাখা প্রশাখা বিস্তার করে। তখন এদেরকে স্থানিক মূলতন্ত্র বা স্থানিক মূল বলে। যথা আম, জাম কাঁঠাল, লিচু, বেগুন, সরিষা, ইত্যাদি।

| কাজ: মূলসহ একটি মরিচের চারা ও একটি ধানের চারা সংগ্রহ কর। এদের মূলের মধ্যে কী কী পার্থক্য রয়েছে তার তালিকা কর। |
২। অস্থানিক মূল: এসব মূল ভ্রূণমূল থেকে উৎপন্ন না হয়ে কাণ্ড ও পাতা থেকে উৎপন্ন হয়। এরা দুই ধরনের। যথা- ক) গুচ্ছ মূল ও খ) অগুচ্ছ মূল।
ক) গুচ্ছ মূল: ধান, ঘাস, বাঁশ ইত্যাদি উদ্ভিদের মূল লক্ষ করলে দেখা যাবে যে, কাণ্ডের নিচের দিকে এক গুচ্ছ সরু মূল সৃষ্টি হয়েছে। এরা গুচ্ছমূল। ভ্রূণমূল নষ্ট হয়ে সে স্থান থেকেও গুচ্ছ মূল উৎপন্ন হতে পারে। সাধারণত একবীজপত্রী উদ্ভিদে গুচ্ছমূল থাকে। যেমন-ধান, নারিকেল, সুপারি ইত্যাদি।
খ) অগুচ্ছ মূল: এসব মূল একত্রে গাদাগাদি করে গুচ্ছাকারে জন্মায় না বরং পরস্পর থেকে আলাদা থাকে। কেয়া গাছের ঠেশমূল, বটের ঝুরিমুল এ ধরনের অগুচ্ছ মূল।
| কাজ: মূলসহ একটি ধানের চারা, সরিষার চারা, ঘাস তুলে এনে দেখ নারিকেল গাছের মূলের সাথে কোন কোনটি মিলে এবং অমিল কোথায় উল্লেখ কর। |
মূল নিম্নলিখিত কাজসমূহ করে থাকে:
১। মূল উদ্ভিদকে মাটির সাথে শক্তভাবে আটকে রাখে ফলে ঝড় বাতাসে সহজে হেলে পড়ে না।
২। মূল মাটি থেকে পানি ও খনিজ পদার্থ শোষণ করে। আমরা জানি, মূলে মূলরোম অঞ্চল বলে একটি অংশ থাকে। এখানে অসংখ্য সূক্ষ্ম সুক্ষ্ম রোম উৎপন্ন হয় যার মাধ্যমে উদ্ভিদ পানি ও খনিজ পদার্থ সংগ্রহ করে।
নতুন শব্দ: প্রধানমূল, স্থানিকমূল, অস্থানিকমূল, গুচ্ছমূল, শোষণ ও মূলরোম।
আমরা যখন আম পাড়তে গাছে উঠি, তখন মাটির ওপরে গাছের খাড়া লম্বা অংশটি আঁকড়ে ধরে তবেই গাছে উঠি। এটাই গাছের কাও। কুল গাছের যে ডালে বসে কুল খাই এগুলো শাখা। গাছের শাখাও কিন্তু কাণ্ডেরই অংশ। উদ্ভিদের যে অংশ থেকে শাখা-প্রশাখা পাতা উৎপন্ন হয়, তাই কাণ্ড। এতে পর্ব, পর্বমধ্য ও মুকুল থাকে।

১। পর্ব: কাণ্ডের যে স্থান থেকে পাতা বের হয় তাকে পর্ব বা সন্ধি বলে।
২। পর্বমধ্য: পাশাপাশি দুটি পর্বের মধ্যবর্তী অংশটি পর্বমধ্য। পর্বমধ্য গাছকে খাড়া রাখতে ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। পর্বমধ্য থেকে কোনো ধরনের মূল, পাতা বা শাখা সৃষ্টি হয় না।
৩। মুকুল: কাণ্ডের সাথে পাতা যে কোণ সৃষ্টি করে তাকে পত্রকক্ষ বলে। সাধারণত মুকুল এ পত্রকক্ষে জন্মে। তবে শাখার অগ্রভাগেও মুকুল সৃষ্টি হয়। কাক্ষিক মুকুল পত্রকক্ষে এবং শীর্ষ মুকুল কাণ্ড বা শাখার অগ্রভাগে জন্মে।
| কাজ: একটি বৃক্ষ হতে ছোট্ট একটি শাখা নিয়ে তার বিভিন্ন অংশ পরীক্ষা কর। এবার এর চিত্র আঁক এবং অংশগুলি চিহ্নিত করে দেখাও। |
নতুন শব্দ: শীর্ষমুকুল, পত্রকক্ষ, পর্ব, পর্বমধ্য ও কাক্ষিক মুকুল।
একটি আম গাছের কাণ্ড, একটি লাউগাছের কাণ্ড এবং একটি নারকেল গাছের কাণ্ড লক্ষ করি। কোনোটির কাণ্ড বেশ শক্ত, কোনোটি দুর্বল আবার কোনোটির মধ্যে কোনো শাখা-প্রশাখা নেই। এ থেকে ধারণা করা যায় যে কাণ্ড বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। তবে এদের প্রাথমিকভাবে দুইভাগে ভাগ করা যায়, যথা-১) সবল কাণ্ড ও ২) দুর্বল কাণ্ড।

১) সবল কাণ্ড: এসব কাণ্ড শক্ত ও খাড়াভাবে গাছকে দাঁড়াতে সাহায্য করে। যেমন: আম, জাম, নারিকেল, তাল ইত্যাদি গাছের কাণ্ড। এই কাণ্ডগুলোর কোনোটির শাখা-প্রশাখা থাকে আবার কোনোটির শাখা-প্রশাখা থাকে না।
ক) অশাখ কাণ্ড: এসব কাণ্ডের কোনো শাখা হয় না। কাণ্ডটি লম্বা হয়ে বেড়ে ওঠে। এর শীর্ষে পাতার মুকুট থাকে। খেয়াল করলে দেখবে নারিকেল, তাল, সুপারি ইত্যাদি গাছের কাণ্ড এ ধরনের হয়।
খ) শাখান্বিত কাণ্ড:
১. মঠ আকৃতি: কোনো কোনো গাছে প্রধান কাণ্ডটি থেকে এমনভাবে শাখা-প্রশাখা সৃষ্টি হয় যে পূর্ণাঙ্গ গাছটিকে একটি মঠের ন্যায় দেখায়। এ গাছের নিচের দিকের শাখাগুলো বড়ো এবং ক্রমান্বয়ে উপরের দিকের শাখাগুলো ছোটো হয়ে থাকে।
সম্পূর্ণ গাছটি নিচে থেকে উপরের দিকে ক্রমশ সরু হয়ে মঠের ন্যায় আকার ধারণ করে। দেবদারু, বিলেতি ঝাউ ইত্যাদি গাছে এ ধরনের কাণ্ড দেখা যায়।
২. গম্বুজ আকৃতি: কোনো কোনো গাছের প্রধান কাণ্ডটি খাটো ও মোটা হয় এবং শাখা ও প্রশাখাগুলো এমনভাবে এই প্রধান কাণ্ডে বিন্যস্ত হয় যে গাছটিকে একটি গম্বুজের ন্যায় দেখায়, যেমন- আম, কাঁঠাল, জাম ইত্যাদি।
৩. তৃণ কাণ্ড: এসব কাণ্ডে পর্ব ও পর্বমধ্য খুবই স্পষ্ট। পর্ব থেকে অস্থানিক মূল সৃষ্টি হতে দেখা যায়, যথা- বাঁশ, আখ ইত্যাদি। ক্ষেত্রবিশেষে এসব কাণ্ডের পর্বগুলো ফাঁপা বা ভরাট হতে পারে।
২) দুর্বল কাণ্ড: কিছু উদ্ভিদের কাণ্ড খাড়াভাবে দাঁড়াতে পারে না তাই মাটিতে বা মাচার উপরে বৃদ্ধি পায়। এদের কাণ্ডে সাধারণত কাষ্ঠ থাকে না তাই এরা দুর্বল ও নরম। এদের কোনোটি লতানো, কোনোটি শয়ান আবার কোনোটি আরোহিণী।

ক) ক্রিপার বা লতানো: এসব কাণ্ড মাটির উপর দিয়ে সমান্তরালভাবে বৃদ্ধি পায়। এদের প্রতিটি পর্ব থেকে গুচ্ছমূল বের হয়ে মাটিকে আঁকড়ে ধরে, যেমন- ঘাস, আমরুল ইত্যাদি।
খ) ট্রেইলার বা শয়ান: এসব কাণ্ড মাটির উপরে ছড়িয়ে পড়ে কিন্তু পর্ব থেকে মূল বের হয় না। যথা- পুঁই, মটরশুঁটি ইত্যাদি।
গ) আরোহিণী: এ সকল কাণ্ড কোনো অবলম্বনকে আঁকড়ে ধরে উপরের দিকে বেড়ে ওঠে, এরা ক্লাইম্বার বা আরোহিণী। যথা- শিম, পান, বেত ইত্যাদি।

| কাজ: তোমরা দল বেঁধে বিদ্যালয়ের কাছাকাছি এলাকা থেকে ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন গাছের কাণ্ড পর্যবেক্ষণ কর এবং কোন গাছের কাণ্ড কী ধরনের তা খাতায় নোট কর। শ্রেণিতে ফিরে কাণ্ডের শ্রেণিকরণ কর। |
গাছের কাণ্ড কী কী কাজ করে অনুমান করে তোমার খাতায় লিখ। এবার নিচের তালিকার সাথে তোমার তালিকা মিলিয়ে দেখ।
১। কাণ্ড পাতা, ফুল ও ফল এবং শাখা-প্রশাখার ভারবহন করে।
২। কাণ্ড শাখা-প্রশাখা ও পাতাকে আলোর দিকে তুলে ধরে যাতে সূর্যের আলো যথাযথভাবে পায়।
৩। কাও শোষিত পানি ও খনিজ লবণ শাখা-প্রশাখা, পাতা, ফুলে এবং ফলে পরিবহন করে।
৪। পাতায় প্রস্তুত খাদ্য কাণ্ডের মাধ্যমে দেহের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।
৫। কচি অবস্থায় সবুজ কাণ্ড সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে কিছু পরিমাণ খাদ্য প্রস্তুত করে।
কাণ্ড বা তার শাখা-প্রশাখার পর্ব থেকে পাশের দিকে উৎপন্ন চ্যাপ্টা অঙ্গটি হলো পাতা। পাতা সাধারণত চ্যাপ্টা ও সবুজ বর্ণের হয়। নিম্ন শ্রেণির উদ্ভিদে পাতা থাকে না। তবে ফার্ন ও মস জাতীয় উদ্ভিদে পাতার ন্যায় অঙ্গ থাকে। মসের পাতা প্রকৃত পাতা নয়। আদর্শ পাতায় পত্রমূল, বৃন্ত ও ফলক এ তিনটি অংশ থাকে। যেমন: আম, জবা ইত্যাদি। একটি জবা পাতা নিয়ে পরীক্ষা করলেই এর তিনটি অংশ দেখা যাবে, যেমন- ১) পত্রমূল, ২) বৃত্ত বা বোঁটা ও ৩) পত্রফলক।
১। পত্রমূল: পাতার এই অংশটি কাণ্ড বা শাখা-প্রশাখার গায়ে যুক্ত থাকে। কোনো কোনো উদ্ভিদের পত্রমূলের পাশ থেকে ছোট পত্রসদৃশ অংশ বের হয়। এগুলো উপপত্র। মটর গাছের পত্রমূলে এরূপ উপপত্র দেখা যায়।
২। বৃন্ত বা বোঁটা পাতার দণ্ডাকার অংশটি হলো বৃত্ত বা বোঁটা। বৃত্ত বা বোঁটা পত্রমূল ও ফলককে যুক্ত করে। শাপলা, পদ্ম ইত্যাদি উদ্ভিদের বৃত্ত খুব লম্বা হয়। আবার শিয়াল কাঁটা গাছের পাতায় কোনো বোঁটাই থাকে না।

| কাজ: বিদ্যালয়ের কাছাকাছি এলাকা থেকে যে কোনো একটি গাছের পাতা সংগ্রহ কর, পর্যবেক্ষণ কর ও চিত্র আঁক। |
বৃন্ত বা বোঁটা পত্রফলককে এমনভাবে ধরে রাখে, যাতে সবচেয়ে বেশি সূর্যের আলো পেতে পারে। এ ছাড়া কাণ্ড আর ফলকের মধ্যে পানি, খনিজ লবণ ও তৈরি খাদ্যের আদান-প্রদান করা এর কাজ।
৩। পত্রফলক: পত্র বৃন্তের উপরে চ্যাপ্টা সবুজ অংশটি পত্র ফলক। বৃন্তশীর্ষ হতে যে মোটা শিরাটি ফলকের অন্য প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে সেটি মধ্যশিরা। এই মধ্যশিরা থেকে শিরা-উপশিরা উৎপন্ন হয়। ফলকের কিনারাকে পত্র কিনারা বলে।
পাতার সাধারণ কাজ একটি পাতার সাধারণ কাজগুলি নিচে দেওয়া হলো:
ক) খাদ্য তৈরি করা পাতার প্রধান কাজ। সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় এরা খাদ্য প্রস্তুত করে।
খ) গ্যাসের আদান প্রদান করা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। শ্বাসকার্য পরিচালনার জন্য অক্সিজেন গ্রহণ করে এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড বের করে দেয়। আবার খাদ্য তৈরির জন্য কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে ও অক্সিজেন বের করে দেয়।
গ) উদ্ভিদ প্রয়োজনের তুলনায় অধিক পানি গ্রহণ করে থাকে। এই অতিরিক্ত পানি পাতার সাহায্যে বাষ্পাকারে বাইরে বের করে দেয়।
নতুন শব্দ: পত্রমূল, বৃন্ত বা বোঁটা ও পত্রফলক।
একটি আমের পাতা ও একটি তেঁতুলপাতা হাতে নিয়ে দেখলেই বুঝা যাবে যে আমপাতার ফলকটি অখণ্ডিত। কিন্তু তেঁতুলপাতাটির ফলক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে খণ্ডিত। পত্রফলকের এই বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে পত্রকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়, যথা- ১) সরলপত্র ও ২) যৌগিকপত্র।
১। সরলপত্র: সরলপত্রে বৃন্তের উপরে একটিমাত্র পত্র ফলক থাকে। আম, জাম, কাঁঠাল, বট ইত্যাদি উদ্ভিদের পাতা সরলপত্র। একটি সরল পত্রের কিনারা অখণ্ডিত বা অসম্পূর্ণভাবে খণ্ডিত থাকে।
২। যৌগিকপত্র: গোলাপ, নিম, তেঁতুল, কৃষ্ণচূড়া, নারকেল, সজনে ইত্যাদি উদ্ভিদের পাতা পরীক্ষা করে দেখলে দেখা যাবে যে প্রতিটি পাতার অনেকগুলো ছোটো ছোটো ফলক থাকে। এরা অণুফলক। যৌগিক পত্রের ফলকটি সম্পূর্ণভাবে খণ্ডিত হয় এবং খণ্ডিত অংশগুলো পরস্পর হতে আলাদাভাবে অণুফলক সৃষ্টি করে। অণুফলক বা পত্রকগুলো যে দণ্ডে সাজানো থাকে তাকে র্যাকিস বা অক্ষ বলে। বিভিন্ন ধরনের যৌগিকপত্র রয়েছে। পত্রকের বিন্যাস অনুযায়ী যৌগিকপত্র দুই ধরনের, যথা- i) পক্ষল যৌগিকপত্র এবং ii) করতলাকার যৌগিকপত্র।

নতুন শব্দ: সরলপাতা, যৌগিক পাতা ও মধ্যশিরা।
আমরা উদ্ভিদের উপর নানাভাবে নির্ভরশীল। খাদ্য, পোশাক, ঘরবাড়ি তৈরির উপকরণ, ঔষধ ইত্যাদি বহুবিধ সামগ্রী আমরা উদ্ভিদ থেকে পাই। প্রাণী থেকে প্রাপ্ত দ্রব্যাদিও পরোক্ষভাবে উদ্ভিদেরই অবদান।
ক) মূলের ব্যবহার: মুলা, গাজর, শালগম ইত্যাদি উদ্ভিদের মূল উপাদেয় সবজি। শতমূলী, সর্পগন্ধা ইত্যাদি উদ্ভিদের মূল থেকে দামি ঔষধ তৈরি হয়।
খ) কাণ্ডের ব্যবহার: বীরুৎ জাতীয় উদ্ভিদের নরম কাণ্ড আমরা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করি। গোল আলু, আদা, পুঁই, ডাটা, কচু বা ওলকচুর কাণ্ড আমরা সবজি হিসেবে গ্রহণ করি। খেজুর ও আখের কাণ্ড হতে পাওয়া রস উপাদেয় পানীয়। বড়ো বড়ো কাণ্ড থেকে আমরা ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র তৈরির কাঠ পেয়ে থাকি। পাট বা শণের কাণ্ড থেকে প্রাপ্ত আঁশ দিয়ে দড়ি, ছালা, কাপড় ইত্যাদি তৈরি হয়।
গ) পাতার ব্যবহার: লাউশাক, পুঁইশাক, লালশাক, পালং, পাটশাক ও কলমিশাক ছাড়াও আরও নানা
ধরনের শাক আমরা প্রতিদিন খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করি। কলা, তাল ও আনারস গাছের পাতা থেকে আঁশ পাওয়া যায়। এই আঁশ দিয়ে নানা ধরনের শৌখিন দ্রব্য তৈরি হয়। তালপাতা ও গোলপাতার ছাউনি দেওয়া ঘর তোমরা নিশ্চয়ই দেখেছ। তামাক পাতা থেকে বিড়ি-সিগারেট প্রস্তুত হয়। যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই খারাপ। খেজুর পাতা দিয়ে সুন্দর পাটি তৈরি হয়। তালপাতার পাখা তোমরা অনেকেই ব্যবহার করে থাকবে। বাসক, নিশিন্দা, কুর্চি, থানকুনি, গাঁদা ইত্যাদি গাছের পাতা থেকে মূল্যবান ঔষধ পাওয়া যায়।
নতুন শব্দ: মূল, কাণ্ড, মূলত্র, ভ্রূণ, শিরা, ফলক, বৃত্ত ও যৌগিকপত্র।
উদ্ভিদ আমাদের অনেক উপকার করে। এ জন্য উদ্ভিদের বেশি বেশি যত্ন করা দরকার। অকারণে কখনও গাছ কাটবে না বা গাছের ডাল ভাঙবে না। তোমার-আমার বলে কথা নেই, গাছ জাতীয় সম্পদ ও পৃথিবীর জলবায়ু সংরক্ষণের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। খরা, অনাবৃষ্টি, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঠেকাতেও গাছের যত্ন অতীব প্রয়োজনীয়। এসো আমরা অধিক গাছ লাগাই ও তার যত্ন নিই এবং অন্যদেরও এ ব্যাপারে উৎসাহিত করি। পশুপাখির প্রতি সদয় হওয়া খুবই প্রয়োজন। গৃহপালিত পশুপাখি আমাদের অনেক উপকার করে। বনের পশুপাখিও প্রকৃতির সম্পদ। এদেরও যত্ন নিতে হবে। অনর্থক পশুপাখি ধ্বংস করব না। অতিথি পাখি শিকার করব না। এ ব্যাপারে সবাইকে উৎসাহিত করা দরকার।
| কাজ: গাছের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য একটি র্যালি আয়োজন কর। |
এই অধ্যায়ে আমরা যা শিখলাম
• মূল পানি শোষণ করে এবং গাছকে মাটির সাথে বেঁধে রাখে। মূল প্রধানত দুই ধরনের, স্থানিক ও অস্থানিক।
• কাণ্ড শাখা, পাতা ও ফল-ফুলের ভার বহন করে। কাণ্ড প্রধানত দুই ধরনের, সবল কাণ্ড ও দুর্বল কাও।
• পর্ব থেকে সৃষ্ট পার্শ্বীয় চ্যাপ্টা ও সবুজ অংশটি পাতা। পাতা দুই ধরনের, সরল ও যৌগিক।
Read more