খাদ্যকে দুইভাবে শ্রেণিবিভাগ করা যায়।
যথা: (ক) উদ্ভিদ ও প্রাণিজ উৎসের ওপর ভিত্তি করে।
(খ) শরীরে কাজের উপর ভিত্তি করে।
(ক) উদ্ভিজ্জ ও প্রাণীর উৎসের ওপর ভিত্তি করে খাদ্যকে নিম্নের ছক অনুযায়ী ভাগ করা যায়-
উদ্ভিদ থেকে | প্রাণী থেকে |
১. শস্য এবং শস্যজাত খাদ্য ২. চিনি এবং চিনিজাত খাদ্য ৩. সবজি এবং সবজিজাত খাদ্য ৪. ফল এবং ফলজাত খাদ্য ৫. ডাল এবং লিগুয়েমস ৬. তেলবীজ ৭. চা, কফি এবং কোকো ৮. মসলা জাতীয় | ১. মাংস ও মাংসজাতীয় খাদ্য ২. ডিম ও ডিমজাত খাদ্য ৩. মাছ ও মাছজাত খাদ্য ৪. দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত খাদ্য
|
শরীরের কাজের ওপর ভিত্তি করে খাদ্যকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-
১. শক্তিবর্ধক খাদ্য : শর্করার বা শ্বেতসার (Carbohydrate) যথা: চাল, গম, আলু চিনি, মধু, গুড়, ভুট্টা, কচু ইত্যাদি। স্নেহ বা চর্বি জাতীয় (Fat) যথা : তেল, চর্বি, ঘি ইত্যাদি।
২. দেহ বর্ধক খাদ্য : প্রোটিন বা আমিষ ও কিছু খনিজ লবণ (যথা- মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, ডাল, শিমের বিচি ইত্যাদি)
৩. রোগ প্রতিরোধক খাদ্য: ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণ, খনিজ লবণ ও পনি (যথা : ফলমূল, শাকসবজি ইত্যাদি)। তবে কোনো কোনো খাদ্য একাধিক কাজ করে থাকে এবং অনেক সময় অবস্থা বিশেষে এক শ্রেণির খাদ্যের কাজও করে থাকে। তাছাড়া যে কোনো একটি খাদ্যের কাজ অন্যান্য খাদ্যের কাজের পরিপূরক হতে পারে ।
১। শক্তিবর্ধক খাদ্য : যে সকল খাদ্য শরীরের তাপ বজায় রাখে, শরীরের অভ্যন্তরীণ ক্রিয়াকর্ম যেমন- পরিপাক ক্রিয়া, শ্বসন ক্রিয়া, রেচন ক্রিয়া ইত্যাদি এবং দৈনন্দিন কাজের জন্য শক্তি বা ক্যালরি জোগান দেয়, সেগুলোকে শক্তি বর্ধক খাদ্য বলে। স্বেতসার বা শর্করা ও স্নেহ বা চর্বি জাতীয় খাদ্য হতে আমাদের শরীর তাপ ও শক্তি পেয়ে থাকে। শক্তি ব্যতীত কোনো কাজ সম্পাদন করা সম্ভব নয়। তাপ ও শক্তির অভাবে শরীর দুর্বল হয় ও কাজ করার ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং শরীর রোগাক্রান্ত হয়ে যায়।
শক্তি বর্ধক
(ক) শস্য জাতীয় খাদ্য : চাল, চিড়া, মুড়ি, খৈ, আটা, কেক, বিস্কুট, সুজি, সেমাই, সাগু, বার্লি, চিনা, কাউন, জব, ভুট্টা, বাজরা, জোয়ার ইত্যাদি।
(খ) মূল জাতীয় খাদ্য : আলু, মিষ্টি আলু, কচু, কাসাভা ইত্যাদি ।
(গ) মিষ্টি জাতীয় খাদ্য : গুড়, চিনি, মধু, মিছরি ইত্যাদি।
(ঘ) ফল জাতীয় খাদ্য : কলা, খেজুর, আম, কাঁঠাল, পেপে, পেয়ারা, লিচু ইত্যাদি ।
স্নেহ বা তেল-
(ক) উদ্ভিজ্জ-সরিষা, সয়াবিন, নারিকেল, পাম, চিনাবাদাম, সূর্যমুখী, তিল, র্যাপসিড, তুলার বীচি, ভূট্টা।
(খ) প্রাণিজ - ঘি, মাখন, ছানা, পনির, ডিমের কুসুম, চর্বি ।
২। দেহবর্ধক খাদ্য : যে সকল খাদ্যদ্রব্য প্রধানত শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গঠন, বৃদ্ধি এবং ক্ষয়পূরণের কাজ করে থাকে, সেগুলোকে দেহবর্ধক খাদ্য বলে। এ সকল খাদ্য শরীরের কাঠামো অর্থাৎ হাড়, রক্ত ও ত্বক তৈরি করে থাকে। এছাড়া শরীরে তাপ ও শক্তি উৎপাদনের কাজও করে থাকে। জন্মের পর থেকে একটি শিশুর শরীর বৃদ্ধি পেতে থাকে। শিশুটি প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার সাথে সাথে তার শরীরে বৃদ্ধি হার কমে যায়। দেহের অন্যান্য জৈবিকক্রিয়া বিপাকক্রিয়া চলতে থাকে। দেহের ভিতর হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, যকৃৎ, পাকস্থলী, অস্ত্র, মস্তিষ্ক সব সময় কাজ করতে থাকে। একইভাবে দৈনিক হাঁটা চলা, কাজকর্ম, খেলাধুলা ইত্যাদি কায়িক শ্রমের জন্য আমাদের দেহ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। উক্ত ক্ষয় পূরণের জন্য দেহবর্ধক খাদ্য গ্রহণ করতে হয়।
দেহবর্ধক খাদ্যের উদাহরণ-
ক) উদ্ভিজ্জ উৎস- সকল প্রকার ডাল, বাদাম, মটরশুঁটি, সয়াবিন, শিমের বীচি ইত্যাদি ।
খ) প্রাণিজ উৎস- দুধ, ডিম, মাছ, মাংস, কলিজা ইত্যাদি ।
৩। রোগ প্রতিরোধক খাদ্য: যে সকল খাদ্যদ্রব্য শরীরকে বিভিন্ন রোগবালাই থেকে রক্ষা করে এবং রোগাক্রান্ত হলে সহজে শরীর সুস্থ করে তোলে, সেসব খাদ্যকে রোগ প্রতিরোধক খাদ্য বলে। সাধারণত ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণ ও খনিজ পদার্থসমূহ রোগ প্রতিরোধক খাদ্য হিসেবে কাজ করে। এসকল খাদ্যের অভাবে শরীরে নানা রকম অসুখ যেমন- রাতকানা, বেরিবেরি, স্কার্ভি, রিকেট, এনিমিয়া, গলগণ্ড ইত্যাদি হয়ে থাকে। রোগ প্রতিরোধক খাদ্যের উদাহরণ-
ক) উদ্ভিজ্জ উৎস- সব ধরনের শাকসবজি, ফল, ডাল তৈলবীজ, চিনাবাদাম।
খ) প্রাণিজ উৎস- ডিম, দুধ, মাংস, পনির, ঘি, মাখন, দই, কলিজা, মাছের তেল ইত্যাদি।
আরও দেখুন...